bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’
আবু এন. এম. ওয়াহিদ



জীবনে বেনিফিট ছাড়া আমরা কেউই কিছু করি না, করতে চাইও না। এটা মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। ব্যাপারটা নারী-পুরুষ ছেলে-বুড়ো সবার বেলায়ই মোটামুটি সমানভাবে প্রযোজ্য। একটি অবুঝ শিশুকেও তার মায়ের কোল থেকে নিতে গেলে হাতে একটি ললিপপ ধরিয়ে দিতে হয়। আপনারা জানেন, বাংলা ভাষায় একটি কথা খুবই মশহুর, ‘নিজের বোঝ পাগলেও বুঝে।’ আর সব পাগল যে পাগল নয়, সেটা পরখ করে দেখতে গেলেও আপনাকে ‘বেনিফিট’ এস্তেমাল করতে হবে। পাগলের হাতে পাঁচ শ’ টাকার একখানা নোট তুলে দিয়ে দেখুন সে কী করে। যত্ন করে কোমরে গুঁজে রাখে, না তাচ্ছিল্যভরে ছিঁড়ে ফেলে দেয়। এতে বুঝে যাবেন পাগলটি আসল না নকল।

যারা ‘ফি সাবিলিল্লাহ্’ দান-খয়রাত করে থাকেন, তাঁরা কি বেনিফিট ছাড়া করেন? তাই বা বলি কী করে! তাঁদেরও বেনিফিট আছে বৈকি! তবে সেটা ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না এবং দেখাও যায় না। তাঁরা নগদানগদ কিছু চান না, আর মানুষের কাছে তো নয়ই। তাঁরা তাঁদের লিল্লাহ্-সদগার বদলা আল্লাহর কাছে পরকালে হাসানা চান এবং নিয়ত সহি থাকলে তাঁরা তা পাবেনও। শুধু পাবেনই না, এক টাকায় সাত শ’ টাকা কিংবা তার চেয়েও বেশি।

এবার দেখা যাক যারা আল্লাহ মানে না, পরকাল বিশ্বাস করে না, তারা কী করে? তারা কী দান-দক্ষিণা করে? আলবৎ করে। কোনো কোনো সময় বরং ধার্মিকদের চেয়ে অধার্মিকরা আরো বেশি বদান্যতা দেখায়। যে ধর্ম মানে না, সে দরিদ্র-সেবার বিনিময়ে কোনো মানুষের কাছে কোনো বৈষয়িক বেনিফিট চায় না, মানুষটি আল্লাহর নিকট সওয়াবও চায় না। তবে সে যা চায়, তা ষোল আনাই পায়। আর সেটা হল তার আত্মতৃপ্তি, মনের প্রশান্তি! এই আত্মতৃপ্তি ও প্রশান্তির আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা আছে জানি, কিন্তু তার বৈষয়িক মাজেজা কী? তা আমার মাথায় আসে না!

ভূমিকা শেষে এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। উনিশ শ’ আশি দশকের একেবারে গোড়ার কথা। আমি তখন বোস্টনের নর্থ-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের একজন নতুন গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট এবং টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট (টিএ)। আমার সুপারভাইজার কোরিয়ান বংশোদ্ভূত অধ্যাপক সাংগু কিম। টিএ হিসেবে তাঁর জন্য আমাকে সপ্তাহে বিশ ঘণ্টা কাজ করার কথা। শুরুতে তিনি আমার ব্যাকগ্রাউন্ড একটু জেনে নিলেন এবং ক্লাস-স্কেজুলের একটি কপি দিয়ে তাঁর দায়িত্ব সারলেন। আমি তাঁর ইন্স্ট্র্রাক্শন্স ঠিকমত বুঝলাম কি না, তিনি তা বুঝে নেওয়ার দরকার মনে করলেন না। দুই কিংবা তিন দিন যেতে না যেতে ড. কিম আমাকে তাঁর অফিসে ডেকে পাঠালেন। রেগেমেগে বললেন, আমি কেন সোমবার ও বুধবার ক্লাসে যাইনি। ছেলেমেয়েরা ক্লাসে আমার জন্য অপেক্ষা করে করে দু’দিনই চলে গেছে, পরে ডিপার্টমেন্টে কমপ্লেনও করেছে। তিনি আমাকে আরো বললেন, ‘তুমি জান আমি তোমাকে এখনই বরখাস্ত করে দিতে পারি।’ আমি বললাম, ‘আমি নতুন এসেছি মাত্র, নর্থ-ইস্টার্নের নিয়ম-কানুন জানি না। আমাকে কেউ বলেনি যে, টিএদেরকে এখানে টিউটোরিয়াল ক্লাসে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়াতে হয়। আমি ম্যানিটোবায়ও টিএ ছিলাম; সেখানে এ কাজে ছাত্রদের পড়াতে হত না। তুমি আমাকে শুধু টিউটোরিয়াল ক্লাসের স্কেজুল দিয়েছ। কী করতে হবে তা বুঝিয়ে বলনি। তুমি যদি আমাকে এখন কাজে অব্যাহতি দাও, তাহলে আমাকে পথে বসতে হবে, আমার তো আর যাওয়ার কোনো জায়গা নেই।

মনে হল আমার কোনো কথাই ড. কিমের বিশ্বাস হচ্ছিল না। তাঁর সন্দেহ, আমি একটি দায়িত্বহীন উচ্ছৃঙ্খল যুবক, ইচ্ছা করে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোথাও গিয়ে নেশা-টেশা করেছি! তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি বিয়ে করেছ? এখানে বউ নিয়ে থাক না একা আছ?’ আমি বললাম, আমার বউ আছে এবং আমার সাথেই, শুধু তাই নয়, সে এখন অন্তঃসত্ত্বা, আগস্টে আমাদের প্রথম বাচ্চা হবে। এবার তাঁর একটু দয়া হলো। নিশ্চয়ই ভেবেছেন, ‘বিবাহিত ছেলে, বাপ হতে চলেছে, এত দায়িত্বহীন হওয়ার কথা নয়, অল্প সময়ে হয়তো বা সত্যি সত্যি তার কাজ বুঝে উঠতে পারেনি।’ তিনি বললেন, ‘প্রথমবার, তাই তোমাকে ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’ দিলাম। আর যদি এমন ঘটনা ঘটে তবে তোমাকে আমি তাৎক্ষণিক টিএশীপ থেকে ছাঁটাই করব।’ পয়লাবারের মত শুনলাম ইংরেজি বাক্যাংশ ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’ জেনে নিলাম তার মানে, শিখে নিলাম একটি নতুন কথা। ড. কিম কথাটি এক্জেক্টলি এভাবে বলেছিলেন, না তাঁর কথায় একটু তারতম্য ছিল, তা স্পষ্ট মনে নেই, কিন্তু সহি কথাটি যে আমার সহিভাবে শেখা হয়নি সেটা জানলাম বুড়ো বয়সে এসে মাত্র সেদিন। সঙ্গে থাকুন, এ প্রসঙ্গে ফিরে আসব আবার।

আপনারা জেনে খুশি হবেন আমার নর্থ-ইস্টার্ন জীবনে এমন ঘটনা আর কোনো দিন ঘটেনি, এবং প্রথম কোয়ার্টারে তাঁরই পড়ানো গ্র্যাজুয়েট মাইক্রো ক্লাসে স্ট্র্যাট 'A' পেয়ে পরে ড. কিমের অনেক আনুকূল্যও হাসিল করেছিলাম।

সেদিন ড. কিম আমাকে ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’ দিলেন। যখন পেছন ফিরে তাকাই তখন বুঝতে পারি, উনিশ শ’ ষাট-সত্তরের দশকে আমার বাবাও আমাদের বাড়ির কাজের লোকদের একটি বেনিফিট দিতেন। তবে সেটা অন্য কিসিমের। শুনুন এবার সে কাহিনী। আমাদের পরিবার ছিল একটি বিশাল একান্নবর্তী পরিবার। বাচ্চা-কাচ্চা, মাদ্রাসার তালবা, মসজিদের ইমাম, বংশানুক্রমিক পেটে-ভাতে কাজের লোক, বেতনভোগ কৃষি-শ্রমিক, গরু-মহিষের রাখাল, রান্নাঘরের হেল্পিং হ্যান্ড, ইত্যাদি মিলে খাওয়ার লোক ছিল ৩০-৩৫-এর মত। দিনে আমরা তিন বেলা ভাত খেতাম। প্রতি বেলা ঘরে রান্না হত কমপক্ষে মাঝারি সাইজের দুই ডেকচি সাদা চালের ভাত এবং বড় এক ডেকচি লাল চালের ভাত। বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী মনিব পক্ষের জন্য ছিল সাদা ভাত এবং শ্রমিক পক্ষের জন্য বরাদ্দ ছিল লাল ভাত। এখানে বলে রাখা ভালো সাদার প্রতি আমাদের আকর্ষণ চিরাচরিত এবং তখন বাজারে লাল চালের দাম ছিল সাদার চেয়ে অনেক সস্তা। আমি লাল-সাদা দু’টোই খেয়েছি। আমার কাছে স্বাদে তেমন কোনো তফাৎ মনে হয়নি, বরং লাল ভাত আমার কাছে সাদাটার চেয়ে বেশি মজা লাগত। তখন বুঝতাম না, কিন্তু এখন জানি লাল ভাতের খাদ্য উপাদান এবং পুষ্টিগুণ মানও সাদার চেয়ে অনেক বেশি। এদেশে লাল চালের দাম সাদা চালের কমছে কম তিনগুণ। আজই আমি ১০ পাউন্ডের এক ব্যাগ শ্রীলঙ্কান লাল চাল কিনে এনেছি। এখন কথা হলো আমার বাবা-চাচারা যদি লাল ভাতের কিম্মতের কথা জানতেন, তাহলে কি এমন ভাত-নীতি বাড়িতে চালু করতেন? নিশ্চয়ই না। তাই আমার বাবা মনের অজান্তে বাড়ির কাজের লোকদের একটি বেনিফিট দিয়ে গেছেন। ওই বেনিফিটকে কি বলা যায়, ‘দি বেনিফিট অফ দি ইগনোরেন্স’? হোয়াই নট?

এই দুই বেনিফিট দুই ধরনের এবং তাদের মধ্যে মিলের চেয়ে অমিলই বেশি। সে অমিলটি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ঢাকার বন্ধু ইবনে আয়াজ রানাকে ধন্যবাদ! সঠিক জ্ঞান ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারলে ‘দি বেনিফিট অফ দি ইগনোরেন্স’এর সমাধান সম্ভব, কিন্তু প্রতিপক্ষের মনের খবর না জানলে, ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’-এর কোনো বিহিত করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। আর মানুষের মনের কথা তো আল্লাহ ছাড়া কারো পক্ষে জানার কোনো উপায়ও নেই! এখানে এক কর্তা যতখানি অসহায়, অন্যজন তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ।

এবার দেখি আজকের এ লেখার শানে-নযুলটি কী। আমার সাম্প্রতিক এক লেখায় আমি ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’ কথাটি ব্যবহার করতে গিয়ে একটি ভুল করেছিলাম। আমার লেখা ওই বাক্যাংশে ‘দি’ অর্টিকলটি মিসিং ছিল। এটা অসাবধানতার ভুল নয়, বরং জানার গলতির ভুল। লেখাটি পড়ে আমার বন্ধু আনিস চৌধুরী তাৎক্ষণিক ভুলটি ধরিয়ে দিল। আমি সাথে সাথে শুধরে নিলাম। নিতান্ত আপনজন না হলে আজকাল আর কেউ কারো ভুল ধরিয়ে দেয় না। অবশ্য তারও যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে। কারো ভুল ধরিয়ে দিতে গেলে অনেক বড় ঝুঁকি নিতে হয়। ভুল শুধরাতে গেলে কোন বন্ধু কখন কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে সেটা জানা খুবই কঠিন। আর জানা থাকলেই বা কী? সব সময় তো মানুষের মনমেজাজ সমান থাকে না। তাই বেশিরভাগ মানুষই কারো ভুল ধরতে যায় না। অবশ্য আমার বন্ধুদের মাঝে মাহবুব এবং আনিস তার ব্যতিক্রম। বিষয়টি নিয়ে আমি বেশ কিছুক্ষণ ভাবলাম, চিন্তা করলাম, এ নিয়ে একটি আলাদা শর্ট পিস লেখা যায় কি না। ভাবতে ভাবতে লিখতে শুরু করে দিলাম এবং এসে দাঁড়ালাম এই জায়গায়।

বন্ধুগণ, লেখাটা কেমন হয়েছে, এর গুণমানের বিচার আপনাদের হাতে রইল, তবে আমি একে আর দু’ চারটা নিবন্ধের মত করে দেখতে চাই না। এটি একটি বিশেষ রচনা। আজকের এ বয়ানকে যদি বলি, ‘ভুল থেকে ফুটে ওঠা ফুল’ তাহলে কেমন হয়? আর আপনারা যদি একে ফুল বলতে রাজি হন, তাহলে এ ফুল আনিসেরই প্রাপ্য। ‘...ফুটে ওঠা..’ এই ফুলকে আজ আমি সযত্নে সপে দিতে চাই বন্ধুবর আনিস চৌধুরীর করকমলে। কালের আবর্তে আনিসের হাতে এ ফুল একদিন বাসি হয়ে যাবে, শুকিয়ে রং বিবর্ণ হবে, ফুলের পাপড়িগুলোর বাঁধন শিথিল হয়ে যাবে, কিন্তু এর সুরভি কোনো কালেও ফুরাবার নয়, বাতাসে মিশে হাওয়া হওয়ারও নয়। তাজা বসরাই গোলাপের মত যুগ যুগ ধরে সে ফুল নীরবে মধুর সুগন্ধি বিলাবে জগতের তাবৎ বন্ধুদের নাকে, বন্ধুত্বের মহিমায় মনমাতানো সব সুর বাজাবে তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে, কানে কানে। ‘...ফুটে ওঠা..’ ফুলের সুবাস সমীরে তরঙ্গ তুলে ছুঁয়ে যাবে সকল বন্ধুদের হৃদয়-মন, আর অনাদি কাল ধরে শুনিয়ে যাবে বন্ধুর প্রতি বন্ধুর দাবির কথা, আবদারের কথা, বন্ধুত্বের মমতা মাখা মধুর মধুর স্মৃতির কথা, প্রাণের কথা! বিয়ন্ড অল ডাউটস, ‘দি বেনিফিট অফ দি ডাউট’ অমর হউক, অমলিন বন্ধুত্বের প্রতীক রূপে!





লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com








Share on Facebook               Home Page             Published on: 3-Jun-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far