bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












প্রথম ধরেছে কলি!
আবু এন. এম. ওয়াহিদ



এখানে হেমন্ত এ বার বিদায় নিয়েছে - বেশ ক’দিন হলো। ইতিমধ্যে বারোমাসি সবুজগুলো বাদে বাকি সব গাছের সতেজ পাতা হলুদ হয়ে নানা রঙের ঝিলিক মেখে চিরাচরিত নিয়মে একে একে মাটিতে ঝরে পড়েছে। পাতা-বিহীন উদাম ডালপালারাও যে এক অপরূপ রূপ আছে, আপন চোখে না দেখলে তা বিশ্বাস হয় না! এ সময় গাছগুলো একেবারেই বাড়ে না, যেন ঘুমিয়ে থাকে, বসন্তে জীবন্ত হয়ে জেগে ওঠার শক্তি সঞ্চয় করে। আর কী হয়, শীতল বাতাস বইতে শুরু করে, আকাশের সাদা সাদা মেঘ তুষার হয়ে পড়ি পড়ি করে, আবার পড়েও। এরই মাঝে বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টারও শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা হল খালি করে ফিরেছে যার যার মায়ের কোলে, যার মা নেই তারও তো থাকার একটা জায়গা আছে। সহকর্মীরা সবাই ছুটি কাটাচ্ছে, বেড়াচ্ছে, আনন্দ উপভোগ করছে, অথচ আমি এই শীতের সকালে আজও অফিসে এসেছি। ইদানীং কাজে দারুণ ব্যস্ততা যাচ্ছে। তাই নতুন লেখায় হাত দেব কী, এ নিয়ে ভাবতেও পারছি না। গতরাতে একটি বড় কাজ শেষ করে এনেছি মাত্র, ফলে আজ একটু স্বস্তিতে আছি, খানিকটা ফুরসৎও পেয়েছি। ভাবছি, আজকের দিনটা চাপমুক্ত থাকব, ভালই যাবে। অফিসে বসে সুযোগ পেলে এই ফাঁকে যদি দু’কলম লিখতে পারি, তাই ভাবতে বসা। ও-মা! বসতে না বসতেই ‘কলেজ-ডিন’ ডেকে পাঠিয়েছেন, এক গাদা নতুন কাজের বোঝা বুঝিয়ে দিয়েছেন, আমার লেখালেখি আপাতত এখানেই বন্ধ হয়ে গেল। এখন যা বলছি, তা পরের দিনের কাহিনী।

বাকিরা যখন ছুটিতে তখন আমি কেন এখানে? প্রশ্নটি যথার্থই। সংক্ষেপে যদি উত্তর দিই - তা হলে বলব, বাড়তি ‘প্রশাসনিক দায়িত্ব’ আর কি - কাজ বেড়েছে, কিঞ্চিৎ আয়ও বটে, তার সাথে আমার ছুটিছাটা সব কাটছাঁট হয়ে গেছে - আর কিছু নয়! এই তো জীবন - যোগ আর বিয়োগ! একটা বাড়ে, তো আরেকটা কমে যায়! ভালো কিছু যার যোগ হয় না, তারও হয়! তার জীবনে ‘বিয়োগ’-টাই বার বার ‘যোগ’ হয়ে দেখা দেয় - ক্রমান্বয়ে বাড়ে দুঃখজ্বালা, বাড়ে এক রাশ মর্মবেদনা! এ-ও তো আরেক জীবন - মেনে নিন বা না নিন। কেন এমন হয়, কেবল তিনিই জানেন - যিনি সব জানেন, সব দেখেন।

ভূমিকা সেরে এবার সরাসরি চলে আসি মূল কথায়। সেদিন সকালে অফিসে এসে যা দেখেছিলাম তার ওপর নির্ভর করে ভাবছি একটি গল্প শুনাব আজ। আর ওই গল্পের খাতিরে উপরের ছবিগুলোকে আমি এ ভাবে সাজিয়েছি। দেখতেই পাচ্ছেন, কালো মাটিতে ভরপুর একটি রঙিন প্লাস্টিকের পট। এতে পোঁতা আছে একটি ছোট্ট ফুলগাছের চারা। চারাটি আমার সেক্রেটারি আমাকে উপহার দিয়েছে, আমি রোপণ করেছি নরম হাতে মমতা মেখে - নির্ভেজাল ভালোবাসায়, ফুলের আশায়! তার পর যে ছবিটি দেখছেন তা তুলেছি তার ক’দিন পরেই স্থানীয় শপিং-মলের এক কোণে। ছোট্ট একটি দোকানে ঘুরতে ঘুরতে আচমকা এক টেবিলের ওপর এমন ফুল দেখে কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম, মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রইলাম, বার বার দেখলাম, ছবিও তুললাম। আশায় আশায় বুক বাঁধলাম, ক’দিন পর আমার চারাগাছও বড় হবে, এভাবে ফুল দেবে - রক্তজবার মতন ছোট ছোট লাল ফুল!

তৃতীয় ছবিটির প্রসঙ্গে আসব পরে তার আগে একটুখানি বলে নেই এই ফুলের কথা, যে ফুলের নাম আমি জানি না। হাতের কাছে যাদেরকে দেখিয়েছি, তারাও জানে না। নাম জানলে গুগল থেকে এমন ফুলের আরও অনেক কথা জানা যেত। নাম না জেনেও কেবল চোখে দেখে দেখে যা শিখলাম, তাই বা কম কী। ছবিটি ভালো করে দেখে নিন, এ ফুল গাছের কোনও কাঁটা নেই, ডালপালা নেই, নেই উপরের দিকে হাত বাড়ানো। মাটি থেকে চ্যাপ্টা সবুজ পাতা লতার মতো বেড়ে ওঠে এবং চারদিকে নুয়ে গিয়ে ছড়িয়ে পড়ে। মরুভূমির ক্যাকটাস জাতীয় এ এক অদ্ভুত উদ্ভিদ! পাতাগুলো দেখতে কাটা কাটা পাতলা, গায়ে কাঁটা আছে, আঙ্গুলে খোঁচা লাগলে রক্ত বেরোয় আর ফুল হয় সেই রক্তবরণ।

ফুলের রঙটাই আসল - কড়া লাল রঙ, দেখে দেখে নয়ন-জোড়া শীতল হয়ে যায়! কিন্তু মন ভরে না একটুও, নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে টেনে নেওয়ার মতো এতে কোনও সুবাস নেই, তাই গন্ধে উদ্বেলিত করে না কাঙালের হৃদয়। লাল-সবুজের রঙ - বাংলাদেশের পতাকার কথা মনে করিয়ে দেয়। ঘরের ভেতর ফুলগুলি নিশানের মতো পতপত করে ওড়ে না, বাতাসে দোল খায় না, মধুর লোভে এখানে মৌমাছি আসে না, প্রজাপতিও না, তবে ফুলকে ঘিরে মশার চেয়েও ছোট গুঁড়িগুঁড়ি পোকা ওড়া-উড়ি করে হামেশা। এ-খানে ও-খানে বসে, খাবারের ঘ্রাণ শুঁকে, ভীষণ বিরক্তিকর! এমন নিষ্পাপ ক্ষুদ্র প্রাণ - তা কেড়ে নিতেও কষ্ট হয়।

আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু এই গাছে পাতা ছাড়া কিছু নেই, তাই ফুল ফুটে লম্বা পাতার মাথায়। ফুলের আশায় আমার চারা গাছের গোঁড়ায় পানি দিতে দিতে এক দিন দেখলাম, একটি পাতার সম্মুখ ভাগে একটি কলি বেরিয়েছে, কী সুন্দর! যেন চোখ মেলে দুনিয়ার আলো দেখতে চায়, মুখ খুলে কিছু একটা বলতে চায়। তার সব না বলা কথা নিয়েই আজ আমার এই কথামালা।

পাতা থেকে ফুলের কলি, এটা কেবল ক্যাকটাসের বেলাই সম্ভব! আমি তো খুশিতে আটখানা! আমার সেক্রেটারিকে দেখালাম। সেও আনন্দে আহ্লাদিত। কিন্তু চার দিন যেতে না যেতে দেখি, না ফোটা ফুলের কলিটা আমার ফাইল ক্যাবিনেটের ওপর আলোর নিচে পাতার ছায়ায় ঝরে পড়ে আছে। আহা! আমার প্রত্যাশার কী করুণ অপমৃত্যু! কলিটার দিকে ফিরে তাকান, দেখুন - কী সুন্দর গোলাপি (পিঙ্ক) রঙ, যেন এক নতুন লিপস্টিক - তরুণীর হ্যান্ডব্যাগই হতে পারে যার শেষ আশ্রয়স্থল! অথচ ফুটলে এই রঙ বদলে যায়, হয়ে ওঠে রক্তকরবীর মতই টকটকে লাল। এ-ও তো আরেক আশ্চর্য নিদর্শন! বিস্ময়ে ভরা বিশাল এই প্রকৃতি, যে দিকে তাকাই, সে দিকেই শেখার আছে অনেক কিছু, তবু আমরা শিখি না, বুঝেও বুঝি। তবু মানুষ আমরা - স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি!

ফিরে আসি আমার অফিসে, সেই দিনের সেই সকালের কথায়। ঝরে পড়া ফুলের কলিটি দেখে মনটা খুব ভারি হয়ে গেলো, কলিটাকে অবহেলায় এভাবে পড়ে থাকতে দেখে বড় মায়া হলো, দুঃখ পেলাম! ভাবলাম, ফুল নিয়ে যুগে যুগে যত গান, যত কথা, যত কবিতা, যত লেখা, যত সাহিত্য রচিত হয়েছে, কলি নিয়ে কী তেমন কেউ গভীর ভাবে কিছু ভেবেছে, কেউ কী কিছু লিখেছে, তেমন কিছু কি কেউ করেছে? পড়াশোনা ছাড়া, গবেষণা ছাড়াই তাৎক্ষণিক যা মনে এলো, তাই বলছি। কে না জানে, রবি ঠাকুর শুধু লেখেননি, তিনি সুরেও বেঁধেছেন,

‘আমার মল্লিকা বনে - যখন প্রথম ধরেছে কলি
আমার মল্লিকা বনে
তোমার লাগিয়া তখনই বন্ধু বেঁধেছিনু অঞ্জলি
আমার মল্লিকা বনে .....’

আহা, কী সুন্দর বাণী, কী মধুর সুর! শুধু কী তাই তিনি আরও লিখেছেন:

‘বল গোলাপ মোরে বল
তুই ফুটিবি সখি কবে
ফুল ফুটিছে চারি পাশ
চাঁদ হাসিছে সুধা হাস
বায়ু ফেলিছে মৃদু শ্বাস
পাখি গাহিছে মধু রবে
তুই ফুটিবি সখি কবে
বল গোলাপ মোরে বল....’

এই গান শুনলে আমার মন আপনা থেকে নেচে ওঠে। এখানে তিনি ফুলের বদলে কলিকেই সম্বোধন করেছেন। কারণ ফোটার আগে গোলাপ তো আর ফুল হয়নি, তখন তো সে একটি ‘কলি’-মাত্র। আমি নিশ্চিত কলি নিয়ে আরও আছে অনেকের অনেক কথা, সুন্দর সুন্দর কথা, কিন্তু বন্ধুগণ, আমার বিদ্যার দৌড় এখানেই শেষ। তাই, আজ ‘কলি’-র গল্প আর এগোবে না। সুযোগ পেলে হবে হয়তো বা আরেক দিন। না হলে নতুন আরেক গল্প তৈরি হবে - ‘কুঁড়ি’ নিয়ে - আহা, কচি সবুজ পাতার ‘কুঁড়ি!’


ন্যাশভিল, টেনেসি, ইউএসএ





লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com




Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Jun-2022

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far