নামে কী বা আসে যায় আবু এন এম ওয়াহিদ
গোলাপকে যে নামেই ডাকুন, সে সুগন্ধ বিলাবেই, আর গোবরকে গন্ধরাজ বলে যতই ঘাঁটাঘাঁটি করুন, তাতে খুশবু বেরোবে না। তার মানে, নামের কারণে কোনো বস্তুর অন্তর্নিহিত গুণাগুণের হেরফের হয় না। চুনকে দই মনে করে খেলেও মুখ ঠিকই পোড়াবে, রসগোল্লার নাম বদলিয়ে তেঁতুল রাখতে পারেন, কিন্তু এতে তার রসালো মিষ্টি-মধুর স্বাদে কোনো তারতম্য হবে না। মানুষের নামের বেলাও কি এই সহজ-সরল নিয়ম খাটে? উত্তর - ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ দু’টোই হতে পারে। নামে মানুষের ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও গুণাবলীতে এদিক-সেদিক হয় কিনা জানি না, তবে এটা জানি, আদম সন্তানের নাম যা ইচ্ছে তা রাখা যায় না। এটা মোটামুটি সর্বজনস্বীকৃত যে, ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, শিশুসন্তানের জন্মের সাথে সাথে, মা-বাবার ওপর তার প্রথম দাবি - তার জন্য একটি সুন্দর অর্থপূর্ণ নাম ঠিক করা।
অনেক পিতা-মাতা আপন সন্তানের প্রতি এই সামান্য দায়িত্বটুকুও সঠিকভাবে পালন করতে পারেন না। উনিশ শ’ আশি দশকের শেষ অথবা নব্বই-এর গোড়ার দিকে আমেরিকার ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের ‘আরবানা-শ্যাম্পেইন’ শহরে আমার পরিচয় হয়েছিল এক সুশিক্ষিত তরুণ বাংলাদেশি দম্পতির সাথে। তাঁদের ৫/৬ বছরের একটি মেয়ে ছিল। একদিন এক সামাজিক জমায়েতে আমি মায়ের কাছে মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করেছিলাম। তিনি অত্যন্ত কাতর স্বরে অনুনয় বিনয় করে বললেন, ‘ভাই, আর বলবেন না, অর্থটা ভালো নয়’। আমি বললাম, কেন, কী হয়েছে? তিনি কাঁদো কাঁদো স্বরে উত্তর দিলেন, ‘আমার মেয়ের নাম ‘অরি’, আপনারা জানেন, ‘অরি’ মানে শত্রু!’ সেদিন ওই মা-বাবার অনুতাপ ও আফসোস দেখে আমার খুব খারাপ লেগেছিল, তথাপি এ রকম একটি স্পর্শকাতর ও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি আর নাক গলাতে যাইনি। এত দিনে নিশ্চয়ই ‘অরি’ আর ‘অরি’ নেই, একটি সুন্দর নতুন নামের অধিকারিণী হয়ে গেছে। ‘অরি’-র মা-বাবাও আর ‘ওয়ারি’ করছেন না, স্বস্তিতে আছেন। অভিভাবকরা তার নামের ব্যাপারে অসাবধানতা বশত যে ভুল করেছিলেন, ‘অরি’ মা হলে তার সন্তানের প্রতি নিশ্চয়ই ওই ভুলটি করবে না।
কেউ কেউ আবার অজ্ঞতা, অর্বাচীনতা ও বুদ্ধিবিবেচনার অভাবেও উল্টোপাল্টা নাম রাখেন। উদাহরণ দিতে গিয়ে এবার ষাটের দশকে ফিরে যেতে হচ্ছে। আমাদের ‘বড়লেখা’ বাজারের একমাত্র মুচি ‘শ্রী গোবিন্দ’ অথবা তাঁর বড় ছেলে ‘রাজুয়া’ যখন তাঁদের বাড়ির সামনের বেড়া বিহীন ছনের দু’চালা দোকানঘরে মটির ধুলোয় বস্তা বিছিয়ে বসে জুতো সেলাই করতেন তখন দেখতাম তাঁদের আশেপাশে ‘রাজুয়া’-র ছোট ছোট দুই বোন ঘুর ঘুর করত - তাদের এক জনের নাম ছিল ‘পাইয়া’ আরেক জনের নাম ‘দেড়িয়া’। এমনও শুনেছি, মা-বাবা দুই সন্তানের নাম রেখেছেন যথাক্রমে - ‘এক কড়া’ ও ‘দুই কড়া’। মাহবুবের কাছে শোনা, তাদের প্রতিবেশী দুই ভাই ছিলেন - এক জন হলেন ‘মড়া’ অন্য জন ‘গড়া’। ‘মড়া’র দুই ছেলে - ‘নেউলা’ ও ‘টলা’। একই জায়গায় আরেক উদ্ভট নামধারীর নাম ছিল - ‘ভিঙ্গুল’ (শুদ্ধ বাংলায় যাকে বলে ‘ভীমরুল)। মাহবুবের সাথে সম্প্রতি ইংল্যান্ডে পরিচয় হয়েছে এক বাংলাদেশি পরিবারের। তাঁদের চার ছেলে - ‘ফাহিম’, ‘রাহিম’, ‘করিম’ ও ‘রাজিম’। ‘রাজিম’ শব্দের অর্থ ‘অভিশপ্ত’, ‘বিতাড়িত’। এই শব্দটি শয়তান বা ইবলিসের বিশেষণ হিসেবে বিশেষভাবে সুপরিচিত। বলুন তো, এ সব নামের কি কোনো মানে হয়! যে সব অভিভাবক আপন ছেলেমেয়ের জন্য এ জাতীয় নাম বাছাই করেন তাঁদের জন্য করুণা বর্ষণ করা ছাড়া আর কি কিছু করার আছে? তবে তাঁদেরকে আমি দোষারোপও করি না। অশিক্ষা, কুশিক্ষা ও অসচেতনতার কারণে মানব জীবনের সূক্ষ্ম অনুভূতির স্পর্শকাতরতায় তাঁরা একেবারেই গাফেল। তাঁদের ধারণা, একজন মানুষকে আরেক জন মানুষ থেকে আলাদাভাবে সনাক্ত করার জন্য ‘আদা’, ‘গদা’ জাতীয় একটা নাম হলেই তো হলো, এ নিয়ে এত ভাবনাচিন্তার দরকার কী। নামের যে একটি সুন্দর অর্থ এবং নাম যে শ্রুতিমধুর হওয়া জরুরি, এ সব বিবেচনা তাঁদের মাঝে একেবারেই কাজ করে না।
যাঁদের মাথায় খেলে, তাঁরা আবার অন্যভাবে নাম নিয়ে জট পাকান। কেউ হয়তো বা তাঁর সন্তানের নামকরণের জন্য কোনো এক হুজুরের কাছে গেলেন - হুজুর কিতাব-কোরআন দেখে একটি সহি নাম রেখে দিলেন - মনে করুন, ‘সানাহ্উল্লাহ্’। ভদ্রলোক ‘সানাহ্’-র মানে না বুঝে ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় নামটি বদলে ফেললেন - ‘সোনাউল্লাহ্’ - যার কোনো অর্থই হয় না। ইমাম সাহেব হয়ত আরও কারো নাম রেখে দিলেন, ‘আব্দুস সোবহান’ - মা-বাপ সংক্ষেপ করার জন্য প্রথম অংশ বাদ দিয়ে রাখলেন - ‘সোবহান’। তারপর এটাও আবার আরও সরল ও বিকৃত হতে হতে হয়ে গেল ‘সোবান’ - ‘সুফান’ - কিংবা ‘তুফান’। এভাবে অঘটন যখন ঘটতে শুরু করে তখন বোঝা যায় না। যখন সমস্যা ও তার জটিলতা স্পষ্ট হয়ে সবার চোখে ধরা দেয়, তখন বড্ড দেরি হয়ে যায়, তেমন কিছু আর করার থাকে না। প্রতিদিন নামের কারণে আক্ষেপ করে করে আচানক নামধারীদের বাকি জীবন পার করতে হয়! যিনি অনুভব করেন তাঁর জন্য এ যন্ত্রণা, যার এ বোধশক্তিই নেই তাঁর জন্য শুধু ‘তাইরে নাইরে না!’
নামের ব্যাপারে কোনো কোনো সময় আরেকটি বিবেচনা বিশেষভাবে কাজ করে থাকে। আমাদের গ্রামের পাশের গ্রামে এক অন্ধ বৃদ্ধা মহিলা থাকতেন। তিনি ভিক্ষে করতেন তাঁর ছেলের হাত ধরে ধরে। ছেলের নাম ছিল ‘রহমত’ এবং গোটা অঞ্চলে ওই ভিখারিনী ‘রহমত-এর মা’ নামেই পরিচিত ছিলেন। ‘রহমত’-এর নানা-নানী তাঁর মায়ের জন্য আদৌ কোনো নাম রেখেছিলেন কিনা সেটা ‘রহমত’- জানতেন কি না সে কথা অজানা, কিন্তু এলাকার অন্য কেউও জানতেন না। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হামেশা ‘রহমত’ ও তাঁর মায়ের সাথে আমাদের দেখা হত। ওই সময় যদি দৈনন্দিন জীবনের বিচিত্র অনুষঙ্গ সম্বন্ধে আমার আজকের মত দৃষ্টিভঙ্গি ও স্পর্শকাতরতা থাকত তাহলে অবশ্যই আমি একদিন না একদিন ‘রহমত’-এর মায়ের কাছে জানতে চাইতাম, তাঁর নাম কী। বেশ কয়েক বছর আগে এই কিসিমের আরেকটি নাম শুনেছি ঢাকার এক টিভি টক শোতে। নামহীন মানুষের উদাহরণ দিতে গিয়ে এক বড় সরকারি কর্মকর্তা বলেছিলেন, ভোটার লিস্টে এক ভদ্রমহিলার নাম উঠেছে, ‘অ্যারোপ্লেনের মা’।
এখানে ‘রহমত’-এর মায়ের মত ‘অ্যারোপ্লেনের মা’কে নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই, তবে আমি একটি গোলকধাঁধায় পড়েছি ‘অ্যারোপ্লেন’-কে নিয়ে। আমার প্রশ্ন, ‘অ্যারোপ্লেন’ ছেলে না মেয়ে? অবশ্য আজকাল অনেক উচ্চশিক্ষিত ও সম্ভ্রান্ত পরিবারে ছেলেমেয়েদের এমন সব নাম নাম রাখা হয় যে, স্রেফ নাম থেকে বোঝা যায় না, ব্যক্তিটি নারী না পুরুষ - যেমন শামীম, শাহীন, নাসিম, শাওন, রাঙা, কাজল, মাখন, ইত্যাদি। এ নিয়ে একটি মজার গল্প আছে - আসলে গল্প নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা। এই সত্য ঘটনার বয়ান আমার ভাষায় শুনতে চাইলে এ রকম শোনাবে: এই জাতীয় নামধারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তুখোড় ছাত্রী একবার লাইব্রেরির ফ্রন্ট ডেস্কে গিয়ে কর্মরত ক্লার্কের সামনে দাঁড়িয়ে বলছে, ‘আমার বইটা নিতে এসেছি’। কর্মচারী ওই সময় মাথা টেবিলের দিকে নিচু করে কোনো কাজে ব্যস্ত ছিলেন। মাথা না তুলেই তিনি বললেন, নাম কী? মেয়েটি বলল, ‘শামীম চৌধুরী’। দায়িত্ব রত কর্মচারীর নতুন প্রশ্ন, ‘ছেলে না মেয়ে?’ ‘কণ্ঠ শুনে কি মনে হয়?’ মেয়েটির বুদ্ধিদীপ্ত তির্যক উত্তর। ‘বুঝতে তো পারছি না’, বললেন লাইব্রেরির কর্মচারী। ‘মুখ তুলে চেয়ে দেখুন’, শেষ সওয়ালের শেষ জওয়াব দিল শামীম। (মেয়েটির আসল নাম এই তালিকাতেই আছে, তবে আমি ইচ্ছে করে অন্য একটি নাম ব্যবহার করেছি।)
শামীমের ‘মুখ তুলে চাওয়ার’ কথাটি নিতান্তই রুক্ষ ও শুষ্ক, এখানে আবেগ অনুভূতি কিংবা মায়ামমতার লেশ মাত্র নেই, অথচ এরকমই আরেকটি কথোপকথন আমি শুনেছি, যা কিনা হৃদয়ের গভীর আবেগ ও উচ্ছ্বাস নিয়ে উৎসারিত! শুনবেন সে কাহিনী? এটিও কল্পকাহিনী নয়, বাস্তবে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা। কয়েক বছর আগের কথা। একদিন কলকাতার ‘তারা’ টিভিতে জনপ্রিয় সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘আজ সকালের আমন্ত্রণে’ দেখছি। ওই দিন ওই অনুষ্ঠানের সঞ্চালিকা ছিলেন মল্লিকা মজুমদার ( প্রখ্যাত সাহিত্য সমালোচক মোহিতলাল মজুমদারের নাতনী) এবং যন্ত্রশিল্পী হিসেবে কিবোর্ডে ছিলেন ‘রানা’ ও তবলায় ‘প্রসেঞ্জিৎ’। এঁদের মাঝে ‘রানা’ অত্যন্ত বিনয়ী এবং লাজুক প্রকৃতির লোক। সেদিনকার নিমন্ত্রণে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে কে এসেছিলেন সে কথা আজ আমার মনে নেই। অনুষ্ঠানের শুরুতে অথবা মাঝখানে কোনো এক সময় রানা দা’র প্রশংসা হচ্ছে - তিনি নিজের এত তারিফ শুনে লজ্জায় গুটিসুটি মেরে মুখ নিচু করে হাত কচলাচ্ছেন। রানা দা’র এই লাজুক লাজুক ভাব দেখে, মল্লিকা তাঁর হৃদয়ের সমস্ত শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও আন্তরিকতা নিংড়িয়ে বলে উঠলেন, ‘রানা দা’, এত শরম কিসের, মুখ তুলে চাও না একবার!’ অকৃত্রিম মমতা মাখা ছোট্ট ওই বাক্যটি মল্লিকার বিগলিত কণ্ঠে এমনভাবে উচ্চারিত হলো যে, আমার গা কাঁটা দিয়ে উঠল! বোঝা গেল, তাঁদের মাঝে রক্তের সম্পর্ক নেই, আত্মীয়তার বন্ধন নেই, অথচ তাঁরা এক জন আরেক জনকে কত আপন, কত কাছের মানুষ মনে করেন! তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্কের এই অভাবনীয় অভিব্যক্তিতে আমি অভিভূত ও বিস্মিত না হয়ে পারিনি!
গ্রাম বাংলায় ‘ঝাড়’–, ‘তাড়ু’, ‘খড়ম’, ‘ভূত’, ‘পেত্নী’ এ জাতীয় উদ্ভট নামকরণের পেছনেও একটি মারাত্মক কুসংস্কার কাজ করে থাকে। কোনো মা-বাবা যদি কোনো অজ্ঞাত কারণে শিশু বয়সে অথবা কোনো নির্দিষ্ট বয়সে পর পর তাঁদের সন্তান হারাতে থাকেন, তাহলে এই কুসংস্কার ধন্বন্তরির মত কাজ করে, তবে এই ‘ধন্বন্তরি’, রোগ সারায় না, বরং এটাই রোগের সকল আধার। ভুক্তভুগি মা-বাবারা তখন মনে করেন, সন্তানের নাম যদি অর্থহীন ও অতি অপমানজনক কিছু রাখা হয় তাহলে যমের নজর পড়বে না, শিশুটি মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাবে। এ সব নিতান্তই অন্ধকারাচ্ছন্ন কুসংস্কার ছাড়া আর কিছু নয়। আজ মনে পড়ে, ‘রহমত’-এর গ্রামে আরো দু’জন মানুষ ছিলেন, এক জন ছিলেন বোবা, তাঁর নাম কী ছিল জানি না, সবাই তাকে ‘আবরা’ বলে ডাকতেন। তাঁর মা এক সময় নিয়মিত আমাদের বাড়িতে কাজ করতেন। তাঁকে সবাই ডাকতেন ‘আবরা’-র মা। এখন আফসোস হয়, কেন ‘আবরা’-র মাকে একদিন জিজ্ঞেস করলাম না, তিনি ‘আবরা’-কে কী নামে ডাকেন, আর তাঁর নিজের নামই বা কী। একই গ্রামে বয়স্ক আরেক জন মানুষ ছিলেন, তাঁর নাম ছিল ‘খদই’। ‘খদই’ কানে খাটো ছিলেন, তাই তাঁকে ডাকা হত, ‘খদই কালুয়া’। এভাবে গ্রামের লোকজন খোঁড়াকে ‘লেংড়া’ এবং অন্ধকে ‘কানা’ বলে হরদম ডেকে যাচ্ছেন। কেউ এর প্রতিবাদও করছেন না, কেউ কাউকে এ ভুলও ভাঙ্গিয়ে দিচ্ছেন না। অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অব্যাহত ভাবে সবাই এই গর্হিত কাজটি করে যাচ্ছেন। আমার ধারণা, একবিংশ শতাব্দীর বাংলাদেশে, নাম নিয়ে এ সব কুকাম ও কুসংস্কারের অবসান ঘটেছে।
নামের সাথে সামাজিক মর্যাদারও একটি যোগসূত্র আছে বৈকি। ধরুন, একজন মানুষ সমাজের নিচু তালার ‘কিরান’ অথবা ‘মাইমাল’ সম্প্রদায়ে জন্মেছেন। ‘শ্রী গোবিন্দ’-এর মত তাঁর বাবা তাঁর নাম রেখেছেন, ‘মুণ্ডু মিঞা’। ‘মুণ্ডু মিঞা’ লেখা পড়া শিখে আপন যোগ্যতায় সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। এখন তিনি তাঁর বাপ-দাদার দেওয়া অর্থহীন বিদঘুটে নাম বদলিয়ে একটি রুচিশীল সুন্দর নাম রাখতে চান। মনে করুন, ‘মুণ্ডু মিঞা’ এখন ‘মাহমুদ হাসান’-এ রূপান্তরিত হলেন। এ বিষয়টিকে সমাজ ও সভ্যতা কীভাবে নেয়? আমার অভিজ্ঞতা, ভালোভাবে নেয় না। ‘মুণ্ডু মিঞা’-র প্রতিবেশী, বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনরা এ নিয়ে তাঁর সাথে ঠাট্টা-মশকরা, বিদ্রূপ ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্যসহ তাঁর মুণ্ডু পাত করে গাঁ ভাসিয়ে দেবে। বলাবলি করবে - ‘‘মুণ্ডু’-র কাণ্ড দেখেছ, সে এখন ‘মুই কী হনুরে!’ তাঁর সাহস কত, বাপ-মার দেওয়া নাম সে বদলে ফেলেছে!’ ঠোঁট কাটা কেউ থাকলে মুখের ওপর বলে দেবে, ‘তুই অমুকের ছেলে, অমুকের নাতী, তোর নাম তো এ রকমই হওয়ার কথা। তুই কি নাম বদলিয়ে জাতে উঠতে চাস’? ইত্যাদি, ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে সিলেটি দেবনাগরী হরফে লেখা ‘কড়িনামা’ পুঁথিতে আছে:
‘...আগে লাগে উল্লা-টুল্লা পাছে লাগে উদ্দিন আগের মাম্মদ পাছে যায় কপাল বাড়ে যেদিন’।
বাংলাদেশের মুসলমান সমাজে প্রচলিত নামকরণের বিভিন্ন তরিকা ও উদাহরণ দেওয়া যায় মোটামুটি এভাবে: ১. সম্পূর্ণ আরবি - আব্দুর রহমান, নাজমুন্নাহার; ২. সম্পূর্ণ ফার্সি - জাবেদ জাহাঙ্গীর, শবনম মুস্তারী; ৩. আরবি-ফার্সি মিশ্রিত - শামীম হাসান, আসমা গুলনাহার; ৪. সম্পূর্ণ বাংলা - স্বপ্নিল সজীব; তারা কুসুম; ৫. আরবি-বাংলা মিশ্রিত - কবির বকুল, শান্তা ইসলাম; ৬. ফার্সি-বাংলা মিশ্রিত - তনয় আফসার, আলেয়া সুন্দরী; ৭. ইংরেজি-বাংলা - সৌরভ মিল্টন, নন্দিতা জেসমিন; ৮. ইংরেজি-আরবি - জুয়েল হাবিব, বিউটি সুলতানা। ৯. অর্থহীন নাম - রৈয়া, তৈয়া, মনফই; ১০. অপমানসূচক - ঝাড়ু, ঝাটা, খড়ম, ইত্যাদি...
পরের অংশ
|