bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













লেখালেখির অনুভূতি!
আবু এন. এম. ওয়াহিদ



যখন তখন লিখতে ইচ্ছে করে না, তাই লেখাও হয় না। এ রকম অনেক বার হয়েছে, সপ্তাহের পর সপ্তাহ, মাসের পর মাস চলে গেছে, অলস বসে আছি তো আছিই। মাথা থেকে লেখার মতন একটি বাক্যও বের হয় না। এ যেন চৈত্র মাসে বৃষ্টি বিহনে কৃষকের হাহাকার! আবার কোনো সময় হঠাৎ একটি সুন্দর টপিক পেয়ে গেলে বসন্তের দখিন হাওয়া আপন মনে দোল দিয়ে যায়। আপনা আপনি নিজের মাঝে লেখার একটা জোর তাগিদ তৈরি হয়। তখন ইচ্ছা-অনিচ্ছা কোনো ব্যাপারই থাকে না। আপন গতিতে ‘গোপন’ কথা হৃদয়ের গহিন কোণ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে উথলে উঠে। কেউ বলতেই পারেন, এখানে আবার গোপনীয়তার কি আছে, আছে বৈকি, লেখার আগে লেখকের সব কথাই তো গোপন থাকে! তাই নয় কি। এ সব গোপন কথা সবার আগে কে শুনতে পায়, কে জানতে পায়। যে সবচেয়ে আপন, সবচেয়ে বিশ্বস্ত - সে-ই তো। এবার দেখুন লেখকের আপন মানুষ কে বা কারা। তিনি তাঁর মনের কথা, দশের কথা, দেশের কথা, লিখে ও এঁকে পৌঁছে দেন পাঠকদের দুয়ারে দুয়ারে, কারণ পাঠকই লেখকের সবচেয়ে প্রিয়, সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। পাঠক ছাড়া লেখক বাঁচেন না। আর তাই, পাঠকের ‘লেখক-বন্দনা’-র চাইতে, লেখকের ‘পাঠক-বন্দনা’ আমার কাছে অধিক প্রত্যাশিত, যদিও বাস্তবে তা ঘটে না। তারও হয়তো বা একটি কারণ দেখানো যেতে পারে। কারণটি হলো, লেখক একজন, আর পাঠক হাজার জন। এ যুক্তি বড়জোর একটি খোঁড়া যুক্তি, আমি মানতে নারাজ।

এখন আসি আঁকার কথায়, ওই যে বললাম, লেখক লিখে ও এঁকে পাঠকের সামনে নিজেকে তুলে ধরেন, আপন মহিমায় আত্মপ্রকাশ করেন। আবারও কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন, লেখক তো চিত্রশিল্পী নন, তিনি আঁকেন কিভাবে? চিত্রশিল্পী নানান জাতের রঙ-তুলি দিয়ে ছুঁয়ে না ছুঁয়ে আলোছায়া মাখা ছবি আঁকেন; পক্ষান্তরে লেখক কেবলই ছোট ছোট গাঢ় কালো হরফ দিয়ে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে আরেক কিসিম ছবি আঁকেন, যে ছবি রঙিন নয়, সাদা পটভূমিতে কালো কালো আঁচড়। তবে সব লেখকের আঁকা ছবি স্পষ্ট হয় না, পাঠকের চোখের সামনে ভাসে না, পাঠকরা বুঝতে পারেন না। অনেক লেখক অক্ষর দিয়ে ছবি আঁকতেও জানেন না। যারা জানেন না, তাঁরা কাঁচা লেখক, আনাড়ি লেখক, আমি তাঁদেরই একজন। পাকা লেখকের বেলা কি হয় জানি না, তবে আমার মত লেখকের অভিজ্ঞতা বলে, লেখা শুরু করাটা একটা কঠিন কাজ বটে, কিন্তু একবার কলম চালু হয়ে গেলে, সফল অথবা বিফল, কাঁচা অথবা পাকা, লেখকের লেখক-সত্তা লেখাটাকে একটা পরিণতিতে নিয়ে পৌঁছে দেয়। আবারও আমার কথা বলছি, কলম তো নয়, টুকটুক করে কম্পিউটার কি-বোর্ডে আঙ্গুল ঠুকে ঠুকে মনিটরের আলো ঝলমল পর্দায় লিখি। এ কথা কে না জানে, আজকাল কাগজ-কলম আর লেখার আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ নয়। সময় ও প্রযুক্তি লেখালেখির প্রক্রিয়াকে বদলে দিয়েছে বটে, কিন্তু এর অন্তর্নিহিত বৈশিষ্ট্যে কোনো হেরফের হয়নি। লেখকের লেখা মানসম্মত হতে হলে - পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করতে হয়, আবেগকে নাড়া দিতে হয়। তা না হলে লেখা শুধু লেখা হয়ে কাগজে শোভা পায় কিংবা বৈদ্যুতিক পর্দায় ভাসে, পাঠকের মনের গভীরে স্থান পায় না, পাঠককে ভাবায় না, হাসায় না, কাঁদায় না। এ-সব হলো সফল লেখার আবশ্যকীয় গুণাগুণ। সফল লেখা সময়ের প্রয়োজন মেটায়, পাঠকপ্রিয় হয়, তবে সফল হলেই একটি লেখা সার্থক হয়েছে, এ কথা বলা যায় না। সার্থক সেই লেখা, যেটা স্থায়িত্ব পায়, কালোত্তীর্ণ হয়। সার্থক লেখার জন্য আমজনপ্রিয়তা কোনো অপরিহার্য পূর্বশর্তও নয়। কলকাতার কোনো এক সাহিত্যিক এক বার বলেছিলেন, ‘সুখ আর আনন্দ যেমন এক নয়, লেখালেখির বেলা, সফলতা ও সার্থকতাও তেমনি আলাদা’।

লিখতে গেলে এসব গভীর তত্ত্বকথার বিপরীতে আমার মাঝে, মাঝে মাঝে আরেকটা মনস্তত্ত্বও কাজ করে। এমনও হয় যে, লেখার জন্য মনটা আনচান করছে, অথচ বিষয়বস্তু খুঁজে পাচ্ছি না, তাই লিখতে পারছি না। এ যেন গর্ভবতী মায়ের প্রসব যন্ত্রণা। একদিকে ব্যথায় ছটফট করছেন, আরেক দিকে ছোট্ট সোনামণির মুখ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে ও উত্তেজনায় মুখিয়ে আছেন, ক্ষণে ক্ষণে ক্ষণ গুনছেন। এমন অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে লিখতে আজ যখন চাচ্ছি, একটা কিছু তো লিখতেই হবে, কিন্তু কি লিখব জানি না, তাই লেখালেখি নিয়েই লিখছি। কেউ কেউ ভাবতে পারেন, এ আবার কেমন কথা, ‘লেখালেখি’ নিয়ে আবার কি লেখা হয়, এর বিষয়বস্তুই বা কি। আলবৎ হয় এবং এর বিষয়বস্তু আর কিছু না, লেখালেখির ভাবনা, চিন্তা, উপাদান, উপসর্গ, সমস্যা, সম্ভাবনা, সফলতা-ব্যর্থতা, সার্থকতা, লেখালেখির আনন্দ-বেদনা, ইত্যাদি, ইত্যাদি। এ জাতীয় লেখা আমি এ পর্যন্ত দু’টো লিখেছি। কেউ পড়তে চাইলে জানান দেবেন, আমি সঙ্গে সঙ্গে আপনার দুয়ারে পৌঁছে দেব। বর্তমান লেখা হবে এই কিসিমের আমার তৃতীয় লেখা যেটা আপনারা এই মুহূর্তে পড়ছেন।

এবার এ লেখার স্থান-কাল-পরিবেশের কথাটা একটু বলে নিই। আজ শুক্রবার, সপ্তাহের শেষ দিন। চারটে বাজতে না বাজতে পুরো অফিস প্রায় ফাঁকা। সবাই বাড়ি চলে গেছেন, তড়িঘড়ি হাতের কাজ সেরে আমিও ঘরমুখো হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছি। এমন সময় হঠাৎ ইচ্ছে হলো, দু’লাইন লিখি। ভাবলাম, অন্তত একটা ভূমিকা যদি সুন্দর করে দাঁড় করাতে পারি, তবে বাকিটা সপ্তাহ আন্তে বাসায় বসে শেষ করে ফেলব। যেই ভাবা সেই কাজ, সব ফেলে লিখতে বসে গেলাম। শিরোনাম দিলাম, ‘লেখকের অনুভূতি’। দু’তিন লাইন লেখার পর চিন্তা করলাম, নামটা কি ঠিক হলো। আমি লিখি, কিন্তু তাই বলে কি দাবি করতে পারি যে আমি এক জন লেখক বনে গেছি। লিখলেই তো লেখক হওয়া যায় না। লেখক হতে গেলে স্বীকৃতি দরকার। আমার তো স্বীকৃতি নেই, তাই লেখার নামটা পাল্টে দিলাম। স্বীকৃতি মানে কি, সরকারি পুরস্কার, পদ-পদবি, পদক, না, তা নয়। লেখক-পরিচিতির জন্য পাঠকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা দরকার, লেখকের লেখার প্রতি পাঠকের আগ্রহ থাকা চাই, চাহিদা থাকা চাই। স্বীকৃতি প্রসঙ্গে আমি অন্তত এক জন বাংলাদেশি লেখককে জানি - যিনি বহু বছর আগে আত্মমর্যাদার সাথে সরকারের স্বীকৃতি নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। তিনি বেঁচে আছেন, অব্যাহত ভাবে লিখে চলেছেন শুধু পাঠকের ভালোবাসা ও স্বীকৃতি নিয়ে। এই নিরহঙ্কার গুণী মানুষটির জীবনদর্শনের সাথে আমার মিলে না, তবু তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি নিছক তাঁর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের নিষ্কলুষতার কারণে। শ্রদ্ধেয় ওই ব্যক্তির বিপরীতে আরও অনেকের কথা জানি, যারা সরকারি স্বীকৃতির জন্য রীতিমত দেওয়ানা হয়ে তদবির করে বেড়ান। দাম দিয়ে - অর্থাৎ নিজের বিবেক বিক্রি করে পুরস্কার কিনেন, তবে সব স্বীকৃতি প্রাপ্তরা যে এরকম, সেকথা আমি বলি না।

বুঝতে পারছি, বিষয়বস্তু না থাকলে যা হয়, আমার আজ তাই হয়েছে। লেখাটা এলোমেলোভাবে এগোচ্ছে, ছাড়া ছাড়া হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কি, কোনোভাবেই তো গুছিয়ে আনতে পারছি না! এমন দোষে দুষ্ট লেখা আমার আরও আছে। এটাই প্রথম নয়, এটাই শেষও নয়, এ জাতীয় লেখা হয়তো বা আরও লিখব। ফিরে আসি, লেখালেখির অনুভূতি প্রসঙ্গে। আমি লিখছি মাত্র দশ বছর ধরে। শুরুতে অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা যেমন ছিল এখন অন্য রকম। লেখালেখির সাথে সাথে ক্রমান্বয়ে আমার বোধশক্তিতে নিরন্তর পরিবর্তন ঘটেই চলেছে। কতেক জানামতে, কতেক মনের অজান্তে। প্রথম প্রথম লিখতে খুব কষ্ট হত। লেখা একেবারেই জানতাম না, লিখতে পারতাম না, লেখা হতই না, এলোমেলো লেখা - কি কাটব, কি রাখব, তাও জানতাম না। এমন ছিল, যখন আমার লেখার কোনো মান ছিল না, তখন তো আমার লেখা কেউ পড়তও না, তাই আমার কোনো পাঠকও ছিল না। এ-সব স্বত্বেও ধৈর্য ধরে চেষ্টা করতে থাকলাম, লেখা চালিয়ে যেতে লাগলাম। এক সময় এসে দেখলাম, মানুষ জন আমার লেখা পড়তে শুরু করেছে, ধীরে ধীরে আমার পাঠক তৈরি হচ্ছে। কিভাবে বুঝলাম, বুঝলাম, তাদের প্রতিক্রিয়া দেখে।

এ পর্যায়ে লেখালেখির অনুভূতি বিচিত্র ও বহুমাত্রিক মাত্রা পেল! কেউ তারিফ করেন, কেউ সমালোচনা করেন, কেউ নিন্দা করেন, কেউ আবার গালাগালি করতেও কসুর করেন না! এমন জটিল, কঠিন ও অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এর আগে জীবনে কখনো পড়িনি! এমন অবস্থায় মাথা ঠিক রাখা কঠিন! আমি এমনিতেই অস্থিরমনা পাতলা চামড়ার মানুষ, আস্তে আস্তে ধীর-স্থিরভাবে ভাবতে লাগলাম, সাহস ও ধৈর্যের সাথে নিজের কাজে অটল রইলাম। বুঝলাম, সময়ের সাথে সাথে গায়ের চামড়া পুরু থেকে পুরু হতে লাগল। পাঠক-প্রতিক্রিয়াজনিত আনন্দ-বেদনাকে মিশিয়ে নিয়ে ‘গালাগালিকে গলাগলি’ (কথাটি কাজী নজরুল থেকে ধার করা) করেই পথ চলতে লাগলাম। আশা-নিরাশার দোলাচালের এই সংকটকালে ও সন্ধিক্ষণে আমার এক বিদগ্ধ বন্ধু - যার সাথে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার তীব্র প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও আড়াআড়ি ছিল, তার ইমেল পেলাম, - আমার একটি লেখা পড়ে লিখেছে, ‘.......you have acquired a literary skil.......’ যদি বলি এতে খুশি হইনি, তাহলে মিথ্যে বলা হবে, তবে ক্ষণিকের জন্য থমকে দাঁড়ালাম, ভাবলাম, এ কি স্তাবকতা, না, বন্ধুটি আমার তোষামোদ করার বান্দা নয়। যা বুঝেছে, অকপটে তাই বলেছে। তার এ কথায় নতুন করে সাহস পেলাম, উৎসাহ পেলাম। লেখা অব্যাহত গতিতে চলল। এভাবে আরও কয়েক বছর যাওয়ার পর দেখলাম, আমার লেখালেখি জীবনে একটি বাঁক বদল হয়েছে, আমার মাঝেই আমার এক উত্তরণ ঘটেছে! নির্দিষ্ট কোন মুহূর্তে সে কথা বলা মুশকিল। এখন আর লেখালেখিতে কষ্ট হয় না, বিরক্তি আসে না, এখন লিখতে গেলে আনন্দ পাই।

এ প্রসঙ্গে বাকি কথা বলার আগে আরেক জন লেখকের কথা না বললেই নয়। বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদকে একবার প্রশ্ন করা হয়েছিল, তিনি কি করে এত এত লিখেন, এতে কি তার কষ্ট হয় না, বিরক্তি আসে না, জবাবে হুমায়ূন আহমেদ যে কথা বলেছিলেন, সে বয়ান যদি আমার মুখে শুনেন, তা হলে এ রকম দাঁড়াবে। হাটবাজার, রান্নাবান্না বাদ দিলেও শুধু খাওয়াটাই একটা কঠিন কাজ। খাদ্যসামগ্রী মুখে পুরতে হয়, সাবধানে চিবাতে হয়, নিরাপদে গিলতে হয়। লোকমার সঙ্গে যদি ইলিশ কিংবা চিতল মাছের কাঁটা অথবা গরু-ছাগলের হাড্ডির ছোট্ট ভগ্নাংশ থাকে, তা হলে কাজটা নিঃসন্দেহে আরো জটিল ও কঠিন হয়ে যায়, কিন্তু তাই বলে কি খেতে কারো কষ্ট হয়, বিরক্তি আসে, খাওয়াদাওয়ায় কি কেউ কখনো অনীহা প্রকাশ করে, না, তা করে না। কারণ আল্লাহ্ আমাদের জিহ্বায় ‘টেস্ট বাড্’ দিয়েছেন, তাই যত কষ্টই হোক না কেন, খেতে আমাদের মজা লাগে, খাওয়ায় আমরা আনন্দ পাই এবং মনেপ্রাণে তা উপভোগ করি। একইভাবে লেখালেখি যেহেতু হুমায়ূন আহমেদের খুবই ভালো লাগার মতন একটি কাজ, তাই লিখতে তাঁর কোনো কষ্ট হত না, বিরক্তিও আসত না, বরং সৃষ্টির আনন্দে লেখাকে তিনি দারুণভাবে উপভোগ করতেন এবং আজীবন করে গেছেন!

কথাটা আমি প্রথম যখন শুনেছিলাম তখন এর মর্মার্থ কিছুই বুঝিনি। এখন বুঝি, অক্ষরে অক্ষরে অনুধাবন করি, বুঝি এর মানে কি। এখন লেখায় আনন্দ পাই, ভীষণ আনন্দ, যার কোনো তুলনা হয় না! এ আনন্দ সঠিকভাবে ভাষায় প্রকাশ করাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমি যখন লিখি, লিখতে বসি, নিজের লেখা নিজে পড়ি, পড়তে পড়তে কখনো হাসি, কখনো কাঁদি, কাটাকাটি করি, ছাঁটাছাঁটি করি, একটা একটা করে শব্দ বসাই, শব্দাবলী দিয় বাক্য বানাই, পছন্দ হলে আপন আনন্দে আপনি ভাসি। তার বিপরীতে অপাংক্তেয় শব্দ খুঁজে খুঁজে রেব করি, কসাই যেমন গোশত থেকে চর্বি কেটে কেটে ফেলে দেয় আমি সেগুলো নিষ্ঠুরভাবে নির্দ্বিধায় ছেঁটে ফেলে দিই। একটি সুন্দর কথা যখন যোগ করি তখন যেমন ভালো লাগে তেমনি আরাম পাই যখন একটি বেখাপ্পা শব্দ কিংবা বাক্য অথবা বাক্যাংশ লেখা থেকে বাদ দিয়ে দিই। যোগে যেমন আনন্দ, বিয়োগেও তাই! এমন আনন্দ অন্য কোথাও আছে কি না জানি না। লেখালেখির আনন্দ ব্যতিক্রমধর্মী, এ কথা বলাই বাহুল্য। যোগ-বিয়োগ অর্থাৎ লেখা আর কাটা-ছাঁটা - এ দুই নিয়েই তৈরি হয় একটি পূর্ণাঙ্গ লেখা। লিখতে লিখতে আনন্দ আহরণ করা, এ আমার লেখক-সত্তার এক অপূর্ব ও অভাবনীয় প্রাপ্তি! আমার জন্য এ এক মধুর ও তৃপ্তিদায়ক উত্তরণ! এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত বিষয়, সুখের বিষয়! এর মানে এই নয় যে আমি লেখক হয়ে গেছি। লেখক হয়েছি কিনা, সে বিচারের ভার পাঠকদের ওপর।

শুরুতে শুধু পাঠকদের জন্য লিখতাম, এখন আমি কেবল তাঁদের জন্যই লিখি না, নিজের জন্যও লিখি, লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি। লিখতে লিখতে আপন ভুবনে আপনি মজে থাকি, দু’হাতে আনন্দ আহরণ করি, একা একা উপভোগ করি, লিখতে বসলে সময় কিভাবে গড়িয়ে যায় টেরও পাই না। এখন আমার পাঠক না পড়লেও আমি লিখব। আমার জন্য, নিজের জন্য। তবে এ লেখা হবে ব্যক্তি হিসেবে, লেখক হিসেবে নয়। লেখক নাম নিতে হলে পাঠকের চাহিদা থাকতেই হবে। লেখালেখিতে আমার মাঝে যে উত্তরণ ঘটেছে, তেমনি আমি আমার জীবনে আরেকটি উত্তরণের আশায় আশায় দিন গুনছি। সেটি হবে জীবনের চূড়ান্ত উত্তরণ, আমার ব্যক্তিসত্তার, মনুষ্যসত্তার, চারিত্রিক দৃঢ়তার ও সর্বোপরি আমার বিশ্বাসের অঙ্গীকারের। এ নিয়ে পৃথক একটি লেখার সুযোগ আছে বৈকি। লিখতে পারব কিনা জানি না, আদৌ লিখব কিনা, সময় এলে ভেবে দেখব।





লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com








Share on Facebook               Home Page             Published on: 20-Jun-2020

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far