bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












‘ফুলের মূল্য’
আবু এন. এম. ওয়াহিদ


জন্মের পর জীবনের ঠিক কোন মুহূর্তে প্রথম ফুল দেখেছিলাম, কখন ফুল দেখে হেসেছিলাম, কখন ফুলকে ফুল বলে চিনেছিলাম, তার কিছুই মনে নেই। বুদ্ধি হওয়ার পর আমাদের ঘরের সামনে ফুলের বাগান করতে দেখেছি আমার ছোট চাচাকে। তাঁর সাথে আমিও বাগানের ঘাস বাছতাম, ফুলগাছের গোড়ায় পানি দিতাম, বাগিচার পরিচর্যা করতাম। কোনো ফুলের গাঢ় উজ্জ্বল বর্ণ আমাকে অবাক করে দিত! অন্যগুলোর মিশ্রিত সুবাস নিঃশ্বাসে নিঃশ্বাসে বুকে টেনে নিতাম, খুশবুতে মাতোয়ারা হয়ে যেতাম! এভাবে কখন যে ফুলকে ভালোবেসে আপন করে নিয়েছিলাম, তার দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। খালি যে ফুলই আমার ভালো লাগত তাই নয়, ফুলবাগানের সব অতিথিরাও ছিল সমানভাবে আমার মায়া-মমতার পাত্র। এখানে অতিথি বলতে আমি বোঝাচ্ছি - পোকামাকড়, মৌমাছি, প্রজাপতি, ফড়িং, পাখি ইত্যাদিকে। আমরা যেমন ফুলের সুবাস ও সৌন্দর্যে বিভোর হই, আল্লাহর মখলুক কীট-পতঙ্গরাও হয়।

এই সেই ফুল, যা আমার জীবনে বারবার এসেছে, ঘুরেফিরে এসেছে, বিভিন্ন পরিবেশ ও পরিপ্রেক্ষিতে এসেছে। কখনো দূর থেকে আমাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছে, কখনো কাছে এসে হৃদয়-মনে দোলা দিয়েছে, বোধশক্তিকে জাগ্রত করেছে, অনুভূতিতে নাড়া দিয়েছে। আবার কখনো আমি নিজেই ফুল নিয়ে খেলেছি, মাখামাখি করেছি, ভুল করে ফুল ছিঁড়েছি, ফুল দিয়ে মালা গেঁথেছি, গলায় পরেছি, আবার ফেলেও দিয়েছি, তবু কারো কণ্ঠে তুলে দেইনি, অথবা দেওয়ার মতো কাউকে খুঁজে পাইনি। এ ব্যাপারে যা খুশি তাই ভাবতে পারেন। দীর্ঘ জীবনে ফুলের সাথে আমার আত্মীয়তা, অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি একেকবার একেক রকম হয়েছে। তাদের কোনো একটার সঙ্গে আরেকটার মিল পাওয়া যায় না। আজ বয়সের শেষ-বেলা এসে আমি সেসবের একটা খতিয়ান নেওয়ার চেষ্টা করছি। দেখছি, তাদের মাঝে কোনো অর্থবহ যোগসূত্র বের করা যায় কি না। যদি যায় তো ভালো, না গেলেও অসুবিধা নেই। জীবনে অনেক কিছু করতে গিয়েই তো ব্যর্থ হয়েছি - এ আর গোপন করে লাভ কি?

ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর প্রথম অভিজ্ঞতা হয়েছে পাঠশালায় থাকতে। যেদিন পুজোর ছুটি হতো সেদিন দেয়াল-বিহীন, দুয়ার-ভাঙ্গা, হেলে-পড়া ইসকুলঘর খুব যত্ন করে ফুল দিয়ে সাজাতাম। মাস্টার-বাবু আসার আগেই এ কাজটা করতে হতো, আর তাই ওই দিন ইসকুলে যেতে হতো সকাল সকাল। এখন নিজেকে যখন প্রশ্ন করি, ছুটির দিন ফুল দিয়ে কেন ইসকুল সাজাতাম, তার কোনো উত্তর পাই না। এমন কাজ আপনারা কেউ করেছেন কিনা তাও জানি না। ইসকুল সাজাতে বড় বড় লাল ও হলুদ জবাফুল আনতাম বাড়ি বাড়ি ঘুরে, বনবাদাড় ভেঙ্গে গ্রামের নমশূদ্র পাড়া থেকে। ফুল তুলতে তাঁরা বাধা দিতেন না, কিন্তু আমরা যমের মতো ভয় পেতাম তাঁদের ঘেউ ঘেউ করা কুকুরগুলোকে। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে তো কুকুর বেঁধে রাখার রেয়াজ ছিল না সে সময়ে, কে জানে, হয়তো বা আজো নেই! এখানে একটা কথা না বলে পারছি না। মারমুখো পাগল মানুষকে পায়ে শিকল পরিয়ে রাখতে দেখেছি, কিন্তু মানুষ-কামড়ানো কোনো কুকুরকে গলায় দড়ি দিয়েও কখনো বাঁধতে দেখিনি।

বাড়ির ঠিক সামনে মরা ধামাই গাঙের তীরে ছিল তিন জাতের বড় বড় তিনটা ফুলের গাছ। এদের একেকটা আমার জীবনকে একেকভাবে আবেগাপ্লুত করত। প্রথমটা কদম। কদম ফুল মানেই বর্ষার আগমনী বার্তা। গাছে যখন ফুল ফুটতো ঠিক তখনই ধামাই গাঙও ফুটতো - অর্থাৎ নদীর পানিতে স্রোত বইত এবং নাও চলাচল শুরু হতো। ওই কদম গাছের গোড়ায়ই বাঁধা থাকতো আমাদের নৌকোগুলো। গাছ বেয়ে উঠতে পারতাম না, তাই নাওয়ের লগি দিয়ে কদম ফুল পাড়তাম। একটা ফুল হাতে তুলে ঘ্রাণ নিতে অনেকগুলো তাজা সবুজ পাতাকে ছিন্নভিন্ন করতে হত, বিষয়টা এখন যেভাবে বুঝি, তখন সেভাবে মাথায় আসত না। কদম ফুলের সাদা সাদা লম্বা লম্বা চিকন কাঁটার মাথায় ফুলের রেণু থাকতো, সেগুলো হাতে, গায়ে ও মুখে মাখতাম। হলুদ ফুলদল ছিঁড়ে জমা করতাম, দোকান দিতাম, কেনাবেচা খেলা খেলতাম। সেমাই দানার মতন সাদা সাদা পাপড়িকে বানাতাম চিনি আর হলুদগুলো হতো গুড়। চিনি চড়া দামে বিক্রি হতো, আর গুড় সস্তায়। তার মানে তখন বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু হয়ে গেছে, কেননা চিনি আর গুড়ের দামের তফাৎটা বুঝে গেছি। দোকানের খদ্দের ছিল ছোট ভাই এবং ঘরের কাজের ছেলেটা, মাঝে মাঝে প্রতিবেশী সমবয়সী দুই ভাই জলিল-খালিকও এ-খেলায় এসে যোগ দিতো। মূর্তাপাতা ছিল আমাদের মুদ্রা - কেনা-বেচার মাধ্যম।

কদম গাছের পাশেই ছিল একটা বড় সোনালু ফুলের গাছ। বছরের ঠিক কোন সময় সোনালু ফুল ফুটতো তা এখন মনে নেই, কিন্তু যখন ফুল ফুটতো তখন কড়া হলুদ রঙে গাঙের পাড় রঙিন হয়ে উঠতো। স্কুল থেকে আসার সময় দূর থেকে দেখলে মনে হতো সোনালু ফুলের গা থেকে বিচ্ছুরিত হলুদ আলোর আভায় গোটা বাড়ি যেন ঝলমল করছে। সোনালু ফুলের পাতলা নরম পাপড়িগুলো মাটিতে পড়ে হলুদবর্ণে গাছতলা একেবারে একাকার হয়ে যেত! গাঙের ধারে পুকুরপাড়ের ওই জায়গাটা খুব ভালো ছিল না। ময়লা-নোংরা ছিল, গরু-ছাগল ঘাস খেত, মল-মূত্রও ত্যাগ করত। এমন ময়লা জায়গায় সোনালু ফুলের পূত-পবিত্র রঙিন পাপড়িগুলো পড়ে থাকতে দেখে আমার ভীষণ কষ্ট হতো! ভাবতাম, ওই নোংরা মাটিতে পরিষ্কার বিছানার চাদর বিছিয়ে সোনালু ফুলের জন্য জায়গা করে দিলে কেমন হয়!

উত্তর দিকে একটু দূরে ছিল বড় ও উঁচু এক শিমুল গাছ। বসন্তের শুরুতে যখন ওই গাছে ফুল ফুটতো আর তার ডালে ডালে পাখির মেলা বসত, তখন সেখানে জন্ম নিত এক উৎসবমুখর পরিবেশের। শিমুল গাছের তলায় গেলে আমার ভীষণ ভালো লাগত, গাছতলা থেকে ঘরে ফিরে আসতে ইচ্ছে করত না। মনে হতো যেন বিয়ে বাড়ির আনন্দের ফোয়ারা বয়ে যাচ্ছে শিমুল-তলায়। গাছের নিচে হাঁটতে গেলে পা ফেলার জায়গা পাওয়া যেত না, মাটিতে বড় বড় শিমুল ফুল ঝরে পড়ে থাকত। কোনোটা তাজা - সদ্য গাছ থেকে পড়া, কোনোটা বাসি, কোনোটার লাল রঙ বিবর্ণ হয়ে বিশ্রী বদসুরত হয়ে গেছে, কোনোটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে রূপ-লাবণ্য একেবারেই হারিয়ে ফেলেছে। মাথার ওপরে গাছে চলত পাখি-উৎসব। বিভিন্ন জাতের হাজারো পাখি, ওড়া-উড়ি করত, ওই বসে, তো ওই উড়ে, উত্তেজনা আর অস্থিরতায় তারা কেবল লাফাত, আনন্দ আর কলতানে মুখরিত করে রাখত গাছতলা। এ যেন তাদের উপচেপড়া আনন্দ, বিরামহীন এক মজার খেলা! যেন পাখির আনন্দ-রসের জন্যই কেবল শিমুল গাছের ডালে ডালে লাল লাল ফুল ফোটা। এমন আনন্দঘন পরিবেশে পাখির দেহ থেকে নির্গত বস্তুটা মাটিতে না পড়ে যে মাথায় পড়তে পারে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো খেয়ালই থাকত না। শিমুল ফুল যেভাবে পাখিকে আকর্ষণ করে অন্য ফুল কেন এভাবে করতে পারে না, এ প্রশ্নের উত্তর আমি আজো পাইনি।

একটু বড় হওয়ার পর এক সময় আমি নানার বাড়ি চলে গেলাম এবং সেখানে ছিলাম বেশ কয়েক বছর। নানার বসত বাড়িটা খুব বড় না হলেও অন্দরমহল ও বাহির এ দু’ অংশে ভাগ করা ছিল। বাইরে ছিল একটা দহলিজ ঘর, সামনে বিশাল খোলা আঙিনা। এক সময় ওই ঘরের সাথে লাগোয়া একটা সুন্দর সাজানো ফুলের বাগানও ছিল। ফেন্সি বাঁশের বেড়া দিয়ে বাগানটাকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়েছিল। মাঝখান দিয়ে ছিল ঘরে ঢোকার তিন-চার ফুট চওড়া রাস্তা। বাগানে ছোটবড় অনেক জাতের ফুলের গাছ ছিল। তারমধ্যে দু’টোর কথা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। একটা সর্বজয়া ফুল (সিলেটে এটাকে ‘কলাফুল’ বলে), আরেকটা স্থলপদ্ম। কলাফুল এ-দিক ও-দিক দেখলেও স্থলপদ্মের দেখা দেশবিদেশের কোথাও আর মেলেনি। এ ধরনের গাছ দশ-পনেরো ফুট উঁচু হতো এবং বড় বড় ফুল ধরত, ফুলের রঙ ছিল হালকা গোলাপি।

দহলিজ ঘর আর পুকুরের মাঝখানে ছিল এক সবজি বাগান, তার উত্তর দিকে ছিল প্রতিবেশীদের ঘন মূর্তাবন । বর্ষাকালে মূর্তাবনে যখন ছোট ছোট সাদা সাদা ফুল ফুটতো তখন সেটাকে মনে হতো যেন আরেকটা ফুলবাগিচা। কিছুদিন পর ফুল ঝরে পড়ে মূর্তাগাছে যখন গোটা ধরত তখন মনে হতো, ওটা ফলের বাগান। বহুযুগ পর গ্রীসের ‘ভোলস’ শহরে এক আঙুর বাগান দেখে আমার মনে পড়েছিল নানাবাড়ির মূর্তাবনের কথা। তার পাশের জাম-জাম্বুরা গাছের তলা দিয়ে উত্তর-দক্ষিণ বরাবর ছিল, এবং এখনো আছে, গ্রামবাসীর চলার পথ। সে পথ লম্বভাবে গিয়ে মিশেছে পূব-পশ্চিম বরাবর একটা বড় রাস্তার সঙ্গে, যে রাস্তা ধরে পশ্চিম দিকে ছিল মসজিদে যাওয়ার পথ, এবং আরো সামনে গেলে পড়ত বাজার ও তার সাথে কুশিয়ারা নদীর পাড়। ওই রাস্তার দক্ষিণ দিকে ছিল একটা হিজল গাছ।

গাছটার বয়স হলেও আকার আকৃতিতে বেশ ছোট্টই ছিল, কিন্তু তাতে কি? এর রূপ-মাধুর্যের কোনো কমতি ছিল না। হিজল গাছে যখন ফুল ফুটতো তখন তার বাহারি রঙ এবং মনমাতানো খুশবুতে গাছতলা ম ম করত। মৌমাছিদের ওড়া-উড়ি আর গুঞ্জনে সেখানে এক মায়াময় নির্মল আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হতো। খাওয়ার সময় ডাকাডাকি করলেও আমরা ওই হিজলতলা থেকে সহজে আসতে চাইতাম না। ঝরেপড়া হিজল ফুল কুড়িয়ে আনতাম, সেখানেও কেনা-বেচা খেলা খেলতাম, মালা বানাতাম, গলায় পরতাম, ফুলের রেণু গায়ে মাখতাম। এখানেই শেষ নয়, সেই হিজল গাছের সাথে রয়েছে আমার আরো অনেক মধুর মধুর স্মৃতি। ডালের সাথে দুই গাছা দড়ি ঝুলিয়ে, রান্নাঘর থেকে বসার পিঁড়ি এনে, দড়ির ওপর বিছিয়ে



দোলনা বানিয়ে দোল খেতাম। ওই দোল খাওয়ার আনন্দ-উচ্ছ্বাস লিখে বোঝাবার মত ভাষা আমার জানা নেই! গাছটা আমার কত প্রিয়, কত আপন ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না! তার ডালে ডালে পাতায় পাতায় লেখা ছিল আমার শৈশবের মধুময় সব স্মৃতি কথা! আজ গাছটা হয়তো আর বেঁচে নেই, কেউ তাকে ছেঁটে, কেটে, টুকরো টুকরো করে শুকিয়ে চুলায় পুড়িয়ে বাতাসে উড়িয়ে দিয়েছে। এই বয়সে বিদেশ বিভূঁই-য়ে বসে নানার বাড়ির হিজল গাছের কথা যখন ভাবি, তখন ইচ্ছে হয় ফিরে যাই সেই ছোটবেলায়, ছুটে যাই বাদেপাশা, ইচ্ছে হয় গাছটাকে বুকে জড়িয়ে ধরি, তাকে আদর করি, চুমো খাই, আমার আনন্দাশ্রু দিয়ে গাছটাকে ধুইয়ে দিই!

কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে, অর্থাৎ যে বয়সে মানুষের জীবনে ফুল এবং প্রেম একসাথে ফুটে, সে বয়সে আমার জীবনে এর কোনোটাই আসেনি। নিরস জীবনটা কেটেছে একেবারে নিস্তব্ধ ভাবে, নিঃশব্দে। নিজে না দিলেও ফুল দেওয়া-নেওয়া দেখেছি। কাউকে এমনও দেখেছি, নরম সুবাসিত ফুলের বিনিময়ে পেয়েছে শক্ত ও ধারালো কাঁটা, কঠিন পাথর; কাঁটা আর পাথরের আঘাতে আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে, চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়েছে হৃদয়-মন, আউলা-ঝাউলা হয়ে গেছে তার গোটা জীবন। কেউ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, কেউ পারেনি!

লেখাটা প্রায় শেষ করে এনেছি। এখন প্রশ্ন করার সময় হয়েছে, লিখলাম ফুল নিয়ে, কিন্তু শিরোনাম ‘ফুলের মূল্য’। কেন এমন? এ প্রশ্নের উত্তরে আমি যা বলতে পারি তা হলো - লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবার আগেই আমি শিরোনামটা ঠিক করে ফেলেছিলাম। কারণ একই শিরোনামে আমি পঞ্চাশ বছর আগে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল, আমার হৃদয় ছুঁয়েছিল। ইদানীং বেশ ক’দিন থেকে ওই গল্পটার কথা আমার বারবার মনে পড়ছিল। পুরো গল্পের মাত্র একটা ছোট্ট বাক্য বা বাক্যাংশই আমার স্মরণে ছিল, আর তা হলো ‘আমাদের দেশে ফুল.......পয়সা দিয়া কিনিতে হয় না’। বোধ করি, দিন এখন পুরোই বদলে গেছে! এখন ফুল বলেন আর ফুলের মারা বলেন - কিছুই বিনে পয়সায় মিলে না। এ কথাটাই গত ক’দিন ধরে বারবার আমার কানে বাজছিলো, আমি আবেগাপ্লুত হচ্ছিলাম, তাই ভাবছিলাম এ নিয়ে কিছু একটা লিখা যায় কিনা। লিখতেও শুরু করলাম, কিন্তু শুরু করে দেখলাম ‘ফুলের মূল্য’ বিষয়ে একটা নিবন্ধ লেখার মতো যথেষ্ট পরিমাণ তত্ত্ব, তথ্য, কিংবা মাল-মসলা আমার মওজুদে নেই। তাই প্রসঙ্গটা পাশ কাটিয়ে লিখতে লাগলাম ফুল নিয়ে এবং ঠিক করলাম, আমার সহৃদয় পাঠকদের কাছে এ গরমিলের জন্য একসময় করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে নেব। আশা করি আপনারা নিজগুণে আমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।

পুনশ্চ: অর্থশাস্ত্রের ছাত্র হিসেবে এটুকু জানি, জগতে তাবৎ জিনিসের মূল্য নির্ধারিত হয় সংশ্লিষ্ট বাজারে - চাহিদা ও সরবরাহের বিপরীতমুখী শক্তির সমন্বয়ে, কিন্তু এ কথা শেখার অনেক অনেক আগে প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের গল্পটা পড়ে জেনেছিলাম যে, ‘ফুলের মূল্য’ বাজারে ঠিক হয় না, এবং মূল্য নির্ধারণে তার চাহিদা-সরবরাহের শক্তিও ষোল আনা অপ্রাসঙ্গিক, বরং ‘ফুলের মূল্য’ ধার্য হয় মানুষের হৃদয়ে লালিত ভালোবাসা ও আবেগানুভূতির তীব্রতার আপেক্ষিকতায়।

(লেখাটা পরিবর্তন ও পরিমার্জন করে দিয়েছে বন্ধু মাহবুব চৌধুরী। তার কাছে আমার অশেষ ঋণ।)


ন্যাশভিল, টেনেসি
জুলাই ২০, ২০১৬




লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com







Share on Facebook               Home Page             Published on: 23-Mar-2023

Coming Events:

Blacktown Lakemba Mascot







Blacktown Lakemba Mascot