bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













‘ফিরতি পথের গল্প’
আবু এন. এম. ওয়াহিদ


চিয়াংমাইয়ের ফুটপাথে অযত্নে বেড়ে ওঠা সুগন্ধময় মল্লিকাবন!


আজকের এ গল্পটি আমার, কিন্তু শিরোনামটি আরেক জনের কাছ থেকে ধার করা। ধার করারও একটি সুন্দর পটভূমি আছে। সত্যি বলতে কি, আমি এই গল্প লিখতে চাইনি, কারণ আমার বিশ্বাস, এ গল্পে এমন কোনো চমক নেই, যা কিনা আমার সৌখিন পাঠকদের কৌতূহল জাগাতে ও মনোযোগ ধরে রাখতে পারে। তারপরও কথা থাকে, আমার চাওয়া না-চাওয়াইতো আর সব নয়, আর এ কথা কে না জানে, জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছুর ওপর সবসময় সবার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণও থাকে না। এরই ধারাবাহিকতায় কাকতালীয় ভাবে ছোট্ট আরেকটি ঘটনাও ঘটে গেল। ‘ইউ টিউব’-এ কারসার ঘোরাতে ঘোরাতে দৈবপাকে জানতে পারলাম, ‘ফিরতি পথের গল্প’ নামে সঙ্গীত শিল্পী সামিনা চৌধুরীর একটি অ্যালবাম বাজারে বেরিয়েছে অথবা বেরোবে বেরোবে করছে। তাৎক্ষণিক ভাবে নামটি আমার এত ভালো লেগে গেল যে, শুধু এই শিরোনামটি ব্যবহার করার জন্য সম্প্রতি চিয়াংমাই থেকে ফেরার পথে কী কী দেখলাম, এ নিয়ে একটি নতুন লেখা লিখব বলে এরাদা করে ফেললাম। এখন ভালো লাগুক আর না লাগুক, আমার এ গল্প আপনাদের শুনতে হবে। এ আমার দাবি নয়; সবিনয় আবদার।

নাম দিয়েছি, ‘ফিরতি পথের গল্প’, তাই বলে কি তার আগের কথা কিছু বলতে পারব না? পারব বৈকি, লেখক হিসেবে আমার একটি স্বাধীনতাতো আছেই। এ ধরনের আত্মজীবনীমূলক ভ্রমণ কাহিনী লেখাতে একজন লেখক কী পরিমাণ নমনীয়তা এস্তেমাল করতে পারেন তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায় রবীন্দ্রনাথের কথায়। তিনি তাঁর আত্মজীবনীতে লিখেছেন, কোনো লেখকের এ জাতীয় লেখা ইতিহাস নয়, নিছক তথ্য-উপাত্তের উপস্থাপনাতো নয়ই। ঘটন-অঘটনের নিরস-নিরেট বর্ণনাও নয়। লেখক যখন এমন লেখা লিখতে বসেন তখন তাঁর দেখা, জানা ও শোনা এবং তাঁর জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার ঐতিহাসিক পরম্পরা মানেন না, মানতে চান না, মানতে বাধ্যও নন। তিনি অহরহ পরের ঘটনা আগে নিয়ে আসেন, আগেরটা লিখেন পরে - তাঁর ইচ্ছামত, তাঁর সুবিধা মত। ছোট ঘটনাকে তিনি বড় করে দেখান, বিস্তারিত বর্ণনা দেন, গভীরে গিয়ে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন, আবার অনেক বড় বিষয়কে তিনি মামুলি করে ফেলেন। ছোট-বড় অনেক কিছুকে তিনি সাবধানে এড়িয়েও যেতে পরেন। এসব ব্যাপারে লেখক তাঁর পূর্ণ স্বাধীনতা উপভোগ করে থাকেন। ঘটনা ঘটে প্রকৃতির নিয়মে, তার আপন গতিতে। লেখক সেগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরেন তাঁর নিজস্ব তরিকাতে, তাঁর মতন করে। এখানে সত্য-মিথ্যার খুঁটিনাটি অনুসন্ধান বাতুলতা মাত্র। লেখকের এই স্বাধীনতার জন্যই তাঁর এমন লেখা গবেষণা প্রসূত সন্ধানপুস্তক (Reference Book) না হয়ে হতে পারে একটি সার্থক সাহিত্য!
জানি, আমার ‘ফিরতি পথের গল্প’ সাহিত্য হবে না, তার ধারে কাছেও যাবে না, আবার এও জানি, সাহিত্যগুণ-মান আমার আজকের গল্প লিখায় কোনো প্রকার বাধাও তৈরি করবে না। এবার গল্পটি শুরু করতে চাই - একটু পেছন থেকে।

যেদিন চিয়াংমাই গিয়ে পৌঁছলাম সেদিন শহরে তেমন ঘোরাঘুরির সুযোগ পাইনি। রোজার মাস ছিল, পরদিন সকালবেলা খাওয়াদাওয়ার ঝামেলা নেই, তাই রোদের তাপ বাড়ার আগেই হোটেলের আশপাশ পাড়া বেড়াতে বেরিয়ে পড়লাম। চারদিকে ব্যবসাবাণিজ্য দোকানপাটের ছড়াছড়ি। সামনের সড়ক বরাবর ডানদিকে হাঁটতে থাকলাম। দেখলাম, কেউ দোকান খুলেছেন, কেউ খুলছেন, কারো দুয়ার বন্ধ, কেউ ফুটপাথেই পশরা সাজিয়ে বসেছেন, কেউ খুঁটি পুঁতছেন, দড়াদড়ি বাঁধছেন, কাঠের বড় বড় বাক্স খুলে মাল-সামান বের করছেন। দুই ব্লক যাওয়ার পর চৌরাস্তার ছোট্ট এক মোড়ে ফুলের সুবাস পেয়ে দাঁড়ালাম, কোনদিক থেকে খুশবু এসে নাকে লাগছে তা ঠাহর করতে একটু সময় নিলেও, দু’কদম ডানদিকে এগিয়ে যেতেই সুগন্ধের উৎস খুঁজে পেয়ে গেলাম। আহা! এই বুঝি সেই মল্লিকাবন! যা দেখে রবি ঠাকুর লিখে গেছেন তাঁর অমর গানখানি,
‘আমার মল্লিকা বনে
যখন প্রথম ধরেছে কলি আমার মল্লিকা বনে
তোমার লাগিয়া তখনি বন্ধু বেঁধেছিনু অঞ্জলি
আমার মল্লিকা বনে......’

ভাবজগৎ থেকে যখন মাটির ধরায় ফিরে এলাম তখন বুঝলাম, রবীন্দ্রনাথ তো কোনোদিন থাইল্যান্ড যানইনি। এ আমার উদভ্রান্ত মনের বিচ্ছিন্ন এলোমেলো চিন্তা ছাড়া আর কিছু নয়! তীব্র সুগন্ধময় মল্লিকা বনের পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম। কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে দেখলাম, কী করে ছোট ছোট গাছপালা ও আগাছার ওপর অযত্নে অবহেলায় এমন তাজা সাদা সাদা ফুল ফুটে জায়গাটাকে সুগন্ধময় করে তুলেছে! কাছে গেলাম, শ্বাসে শ্বাসে আচ্ছাসে মল্লিকা ফুলের সুঘ্রাণ টেনে নিলাম। দেখলাম, প্রজাপতি নেই, তবে অলিদের আনাগোনা আছে। ছবি তুললাম। আরও দেখলাম, পথের ধারের এই ছোট্ট এক খণ্ড বাগিচা আমাকে যেভাবে অভিভূত করেছে স্থানীয় পথচারীদের দৃষ্টিকে সেভাবে আকর্ষণ করতে পারছে না। কেন, এ প্রশ্নের বিস্তারিত কোনো উত্তর দেবার কি প্রয়োজন আছে? মানুষ প্রতি দিন যা দেখে, শুঁকে অভ্যস্ত, একটা সময় পর নতুন করে তা আর তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারে না। এ যেন, ‘ঘরকা মুরগী ডাল বরাবর!’

মূল সড়কে ফিরে এসে আবার হাঁটতে থাকলাম। এক ব্লক যাওয়ার পর এবার বিপরীতধর্মী আরেকটি বিষয় আমার নজর কাড়ল। আনুমানিক ৩ ফিট গভীর ও ২০ ফিট চওড়া একটি খোলা পাকা নর্দমা। ঘন ময়লা নোংরা পানি টেনে নিয়ে চলেছে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে। কোথা থেকে আসছে আর কোথায় গিয়ে খালের শেষ, বোঝার কোনো উপায় নেই। পানিতে ভেসে যাচ্ছে চাকা চাকা সবুজ শেওলাসহ আরও নানা জাতের ময়লা-আবর্জনা। পানির রঙ গাড়ির ইঞ্জিনের পোড়া তেলের মতন। পচা পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ রকম নর্দমার ময়লা পানির গন্ধ আমি শুঁকেছি মালয়েশিয়ায়, বাংলাদেশে, আরো অনেক দেশে। তৃতীয় বিশ্বের দেশে দেশে পরিবেশের এমন বেহাল দশা অপ্রত্যাশিত হলেও বিরল নয়। আধুনিক জমানায় বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির যুগে চতুর্দিকে উন্নয়নের স্রোতধারা বয়ে যাচ্ছে এবং সাথে সাথে শিল্প-বর্জ্যে পরিবেশও এভাবে ধ্বংস হচ্ছে। আজকালকার দুনিয়ায় এ এক নির্মম বাস্তবতা, অথচ আমরা এ ব্যাপারে একেবারেই গাফেল! যখন হুস ফিরবে তখন দেখব, বড্ড দেরি হয়ে গেছে, প্রকৃতির মহা সর্বনাশ করে নিজেদের জন্য মহা বিপর্যয় ডেকে এনেছি - আমরা, নিজেরা!

খাল পেরিয়ে ওই দিকে আর বেশি দূর যাইনি। এবার উল্টো দিকে হেঁটে, হোটেলকে পেছনে রেখে বড় আরেক চৌরাস্তার মোড়ে এসে এক দণ্ড জিরিয়ে নিলাম এবং দেখলাম, এক কোণে ফ্রেঞ্চ হোটেল ‘ল্য মেরিডিয়ান’, এক কোণে ‘বার্গার কিং’, তৃতীয় কোণে ‘ম্যাকডোনাল্ডস্’ এবং অপর একটি কোণে ‘স্টার বাক্স কফি হাউস’। বুঝলাম, দুনিয়াব্যাপী ব্যবসাবাণিজ্যের বিশ্বায়ন কিভাবে হয়েছে - চিয়াংমাইয়ের মত একটি শহরও এর ঢেউ থেকে রেহাই পায়নি। এবার বাঁদিকে রাস্তার ফুটপাথ ধরে চলতে চলতে - ব্যস্ত রাজপথে অবাক হয়ে ঘুঘুর গুব্ গুব্ ডাক শুনে থমকে দাঁড়ালাম। উপর দিকে চেয়ে দেখি, এক দোকানের চালায় ঘুঘু বাসা বেঁধেছে। মনে হলো, মা-পাখিটি নীড়ের পাশে বসে তার ছানাদের জন্য ঘুমপাড়ানি গান গাইছে, তারই সাথী পাখিটি একটু দূরে বিদ্যুতের খুঁটিতে বসে আরামে রোদ পোহাচ্ছে। ছোটবেলা গ্রামের বাড়িতে খড়ের চালে চড়ুইকে বাসা বাঁধতে দেখেছি, বড় হওয়ার পর শহরে কবুতরের উপদ্রব দেখেছি, ঘুঘুর বাসা খুঁজেছি শেওড়া গাছে ও ধান ক্ষেতের আ’লে সিমের ঝোপঝাড়ে, তারা যে এভাবে নগরের কোলাহলেও নীড় বাঁধে, ডিম পাড়ে, বংশ বিস্তার করে, তা দেখলাম এই প্রথম চিয়াংমাইয়ে!

আরেকটু সামনে এগুতেই দেখলাম, মধ্যবয়সী এক থাই মহিলা ফুটপাথে খাবার দোকান পেতেছেন। তিনি রান্নাবান্নায় ব্যস্ত। অ্যালুমিনিয়ামের ছাঁচে ফেলে ভাপা পিঠার মতন এক ধরনের পিঠা বানাচ্ছেন। আমি যখন ছবি তুলতে চাইলাম, তিনি হাতের কাজ ফেলে পোজ দিলেন। বড় খাঞ্চায় সাজানো সোনালী রঙের পিঠাগুলো দেখতে খুবই উপাদেয় মনে হচ্ছিল, আমাকে একটি খাওয়ার জন্য দোকানি নারী খুব সাধাসাধি করলেন, রোজার জন্য খাওয়ার সুযোগ ছিল না, তদুপরি মাছির ওড়া-উড়ি আর ভনভনানির জন্য কিনে রুমে আনতেও ইচ্ছে হলো না। বুঝলাম, প্রত্যাখ্যাত হয়ে তিনি একটু মন খারাপ করলেন। আরেকটি বিষয় লক্ষ করলাম, ফুটপাথের নিচে রাস্তায় এক প্লাস্টিকের বোলে কবুতর চাল-গম জাতীয় কিছু খুটে খুটে খাচ্ছে। এর মাঝে ম্যানহোল থেকে বেরিয়ে এসে এক ইঁদুরও কবুতরের সাথে খাওয়ায় শরিক হয়ে গেল। এ ছবিটির ভিডিও আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম, অনেক ‘লাইক’ পড়েছে। এক বন্ধু মন্তব্য করেছেন, ‘থাইল্যান্ড একটি নোংরা দেশ’। তবে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমি এর চেয়েও অনেক নোংরা দেশ দেখেছি, এমন কি আমার নিজ দেশের রাজধানী শহর ঢাকাকেও কোনোক্রমেই চিয়াংমাইয়ের চেয়ে পরিষ্কার বলতে পারি না। আমার এমন অভিজ্ঞতা আছে, বর্ষাকালে একাধারে যখন দু’-তিন দিন বৃষ্টি হয়, তখন ঢাকার খোলা নর্দমা থেকে পচা দুর্গন্ধ দোতালায় চলে আসে। ওই গন্ধের তীব্রতা প্রশমনের জন্য ঘরে ঘরে ধুপ জ্বালাতে হয়।

চিয়াংমাই সিটি সেন্টারের ফুটপাথে চলতে ফিরতে তিন ধরনের ব্যবসার বিশেষ আধিক্য নজরে পড়েছে। যেদিকেই হাঁটি না কেন, দেখলাম, প্রায় প্রতিটি ব্লকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ‘কারেন্সি এক্সচেঞ্জ বুথ’, ‘এটিএম মেশিন’ এবং ‘ম্যাসাজ পার্লার’। থাইল্যান্ডের অন্য শহরের কথা বলতে পারব না তবে, ব্যাংককের রাজপথেও এই একই বৈশিষ্ট্য বিরাজমান। বলাই বাহুল্য, এগুলো গড়ে উঠেছে বিশেষ করে ভিনদেশী পর্যটকদের জন্য এবং তাঁরাই এসবের প্রাণ-ভোমরা। পর্যটকরা দেশের অর্থনীতিতে নিঃসন্দেহে একটি উল্লেখযোগ্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন, কিন্তু পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক শৃঙ্খলা ও নীতি-নৈতিকতা বোধের ওপর সফররত বিদেশীদের অভিঘাত যে নেতিবাচক তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার আশা ও প্রত্যাশা, দেশের পর্যটন শিল্পের প্রচার ও প্রসারে এ বিষয়টির প্রতি যেন বিশেষ নজর দেওয়া হয়।

এ তো গেল এক সকালের কথা। পাঁচদিন পর যেদিন চলে আসব সেদিন আর রোজা রাখিনি। সকালে হোটেল ক্যাফেটেরিয়াতে নাস্তা খেতে গিয়ে প্রথম নজরে পড়ল, নামটি। তাঁরা ‘ক্যাফে’-টির নাম রেখেছেন, ‘লেটেস্ট রেসিপি’। এমন আধুনিক এবং বিরল নাম যে কারো কাছেই ভালো লাগার কথা। খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে আমার যে একটি অতিরিক্ত আগ্রহ আছে তাতো আপনারা ভালো করেই জানেন। তাই খাবার ঘরে ঢুকেই এদিক ওদিক ঘুরে দেখলাম, নতুন বা বলার মতো অভিনব কিছু চোখে পড়ল না। সবশেষে এসে পরিবেশন সংক্রান্ত একটি বিষয়ের কথা না বলে পারছি না। চিয়াংমাইয়ের ‘ল্য মেরিডিয়ানের’ মতন পাঁচ তারকা হোটেলে বাঁশ ও কলাপাতার ব্যবহার দেখে বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছি! দেখলাম, ক্যাফেটেরিয়ার এক পাশে কাঁচা বাঁশ দিয়ে একটি শেল্ফ বানানো হয়েছে এবং সেই শেল্ফের মাঝের তাকে খোপ খোপ করে এক ধরনের ট্রে তৈরি করা হয়েছে। ট্রে-র ওপর তরতাজা ঘন সবুজ কলাপাতা বিছিয়ে তার ওপর কাটা আনারস, তরমুজ, পেয়ারা, ড্রাগন ফল, ইত্যাদি সার্ভ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ‘ব্যাংকক এয়ারওয়েজ’-এর চিয়াংমাই-ব্যাংকক রুটে এক ঘণ্টার ফ্লাইটে রীতিমত ‘হট মিল’ দেওয়া হয়। আমি গরম খাবার ট্রে খুলে দেখি, আঠালো সাদা ভাতের রোল তাজা কলাপাতা দিয়ে প্যাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে। খেতে খেতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠা - ‘চোংগা পোড়া’র কথা মনে পড়ে গেল। পার হয়ে গেছে কয়েক যুগ, ‘চোংগা পোড়া’ খাইনি। বিদেশ-বিভূঁইয়ে ‘দুধের স্বাদ ঘোলে মেটালাম’ এবং ক্ষণিকের জন্য হলেও নস্টালজিক হয়ে পড়লাম!

তার আগে হোটেল থেকে যখন এয়ারপোর্ট যাচ্ছিলাম তখন রাস্তার পাশ ধরে সমান্তরাল খাল দেখে ট্যাক্সি ড্রাইভারকে বলেছিলাম, এই খাল কবে, কেন খনন করা হয়েছে? ড্রাইভার এই সুযোগে আমাকে চিয়াংমাইয়ের প্রাচীন ইতিহাসের কথা শোনালেন। তিনি বললেন, সাড়ে সাত শ’ বছর আগে চিয়াংমাই ছিল একটি ছোট্ট শান্তিপূর্ণ বর্ধিষ্ণু বৌদ্ধ রাজ্য, কিন্তু বার্মার পার্শ্ববর্তী রাজার অত্যাচারে তাঁদের আদি পুরুষরা শান্তিতে বসবাস করতে পারতেন না। কিছুদিন পর পর বর্গীদের মতন হামলা করে হানাদাররা তাঁদের দেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে যেত। অবশেষে চিয়াংমাইয়ের রাজা এই অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য রাজধানীর চারদিকে আয়তক্ষেত্রের আকারে প্রায় ২০ ফুট চওড়া এবং ১০ ফুট গভীর একটি খাল খনন করে এর পানিতে হিংস্র প্রজাতির কুমীর ছেড়ে দিয়েছিলেন। আজকের এই দিনে, আমার বিবেচনায়, এতে সেই সময়ে চিয়াংমাইবাসীগণ কতটা নিরাপদ হতে পেরেছিলেন সেকথা বড় নয়, বড় হলো মানুষ যতই সভ্য-ভব্য দাবী করুক না কেন, জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়টি তখন যেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিল আজও তেমনি অটুট আছে। চেয়ে দেখুন সাম্প্রতিককালের ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ার দিকে।

‘ফিরতি পথের গল্প’, যেমন আচমকা লিখতে শুরু করেছিলাম, তেমনি আচমকাই শেষ করতে হচ্ছে, কারণ ফেরার পথে, ব্যাংকক ও ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে যথাক্রমে ‘থাই’ ও ‘টার্কিশ’ এয়ারলাইন্সের লাউঞ্জে মজাদার খাওয়াদাওয়া ছাড়া আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করার মতন নতুন কোনো অভিজ্ঞতা হাসিল করতে পারিনি।





লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com








Share on Facebook               Home Page             Published on: 7-Oct-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far