bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



বার্লিন থেকে বাংলাদেশ
আবু এন এম ওয়াহিদ



বার্লিনের টিগেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে হোটেলে যাচ্ছি। এয়ারপোর্ট এলাকা ছাড়িয়েই ট্যাক্সি ড্রাইভার যে রাস্তায় মোড় নিলো সেটা বড়ই সুন্দর! সোজা রাস্তার ডান দিকে সমান্তরাল বরাবর চলে গেছে নদী, বাঁ দিকে বিশাল ঘন বন। নদীতে বুনোহাঁস নির্ভয়ে সাঁতার কাটছে, আনন্দে জলকেলি খেলছে। আইনের শাসন কড়া বলে এখানে পাখি শিকারিরা বন্দুক নিয়ে পাখির কাছে তো দূরের কথা, দৃষ্টিসীমার মাঝেও আসতে পারে না। শীতকাল, তাই বনের করুণ সুর কান পাতলে শোনা যায়। কিছু কিছু চিরসবুজ গাছ ছাড়া, গাছে গাছে পাতা নেই, যাও বা আছে মরা পাতা। একটু বাতাস লাগলেই ঝরে ঝরে পড়ে যাচ্ছে। ঝরা পাতা, পাতা-বিহীন গাছ, আর ডাল থেকে ডালে অস্থির কাঠবিড়ালির লাফালাফিরও যে একটা রূপ আছে, তা জীবনে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলাম! সব মিলে কী অপূর্ব বার্লিনের এই খণ্ড-চিত্র!

ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানলাম, আমি যাকে নদী বলছি সেটা আসলে নদী নয়, একটি কৃত্রিম খাল, আর যাকে বন বলছি সেটা সিটি পার্ক। আমি বিদেশের মাটিতে যখন যেখানে যাই, আমার প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাথে মনে মনে একটা তুলনা করে নেই। এবারও সে কাজে ভুল হলো না। ভাবলাম, বার্লিন-বাসী কী ভাগ্যবান! শহরের ভেতরে এতো বড় সবুজের সমারোহ! কী সুন্দর জলাধার, পরিষ্কার পানি! এমন পার্ক যদি ঢাকায়ও একটা থাকতো, ঢাকার খালগুলোতে যদি স্বাভাবিক পানির প্রবাহ থাকতো, কতই না ভালো হতো!

এ সব না থাকলেও ঢাকাবাসীর নসিবকে খারাপই বা বলি কী করে? এতো বড় শহর, চারদিক নদীবেষ্টিত হয়েই তো আছে। শহরে এবং তার আশেপাশে রয়েছে - বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু। ধলেশ্বরীও তো খুব দূরে নয়। বার্লিন যেখানে খাল খনন করে নদীর অভাব ঘোচাচ্ছে, নগরের শোভা বর্ধন করছে, সেখানে ঢাকার মানুষ খাল-নালা সব ভরাট করে রাস্তা বানাচ্ছে, ইটের ওপর ইট গেঁথে দালান তুলছে। দখল ও দূষণের দ্বারা নদীগুলোকে গলা টিপে টিপে মেরেই চলেছে। মহা আহাম্মক না হলে কি মানুষ কখনো এমন আত্মঘাতী কাজ করতে পারে? আফসোস, এ বোধোদয় আমাদের মানুষ, সমাজ ও রাষ্ট্রের কবে হবে?

হোটেলে গিয়ে দেখি জায়গাটা একটু নীরব নিরিবিলি আবাসিক এলাকা। চারদিকে বড় বড় গাছ। দোকানপাট ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে চলে না। দিন-দুপুরে ফুটপাথে মানুষ চলাচল নেই বললেই চলে, রাস্তায় গাড়িও কম। আছে শুধু বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং। ফ্রন্ট ডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম, আমার একটু দোকানে যাওয়া দরকার, কাছে-ধারে কি কিছু আছে? কিভাবে যাবো? আমাকে বলে দিলো, ‘ডান দিকে যাও, আধ-মাইল হাঁটলে পরে পাবে’। আমি তাই করলাম।

আধ-মাইল যাওয়ার পর হাতের ডান দিকে পেলাম লাল ইটের বিশাল এবং অতি পুরনো এক ছ’তলা বিল্ডিং। এতো বড় বিল্ডিং আমি খুব কমই দেখেছি। বিল্ডিংটি কিসের জানতে খুব আগ্রহ হলো। কাছে গিয়ে দেখলাম, সামনের দেয়ালে মাটি থেকে মাত্র তিন-চার ফুট উঁচুতে লেখার মাঝে একটা পরিচিত শব্দ - Seimens. তার সাথেই একটা সাবওয়ে স্টেশন। এর ঠিক পরেই চার লেনের চওড়া ব্যস্ত রাস্তা। রাস্তার ওপারে দেখলাম Seimens-এর একই রকম আরেকটি বিল্ডিং। তারপর একটি গ্রোসারি দোকানের খোঁজে বড় রাস্তা ধরে বাঁ দিকে হাঁটতে থাকলাম। দু’পা ফেলতেই দেখি ওপার থেকে এক যুবক ব্যস্ত রাস্তা পার হয়ে আমার দিকে দ্রুত ছুটে আসছে। ফুটপাথে উঠেই সালাম করে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।

আমি ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম, একটু ভয়ও পেলাম! কী করে সে বুঝলো যে আমি মুসলমান! এতো মানুষ বাদ দিয়ে কেন আমাকেই বা নিশানা করলো। আমি ইংরেজিতে কথা বলি, সে তার ভাষা বলে, কোন ভাষা তাও জানি না। তার কথা আমি বুঝি না, না আমার কথা সে বুঝে। তার মুখের শুধু একটা শব্দই আমার কাছে অর্থবহ মনে হলো - ‘পোল্যান্ড’, অর্থাৎ সে পোল্যান্ড থেকে এসেছে। মানুষের মুখের ভাষা আল্লাহর অসাধারণ সৃষ্টি, অপূর্ব নেয়ামত, কিন্তু তিনি মানুষের মাথায় যে মগজ দিয়েছেন সেটা ভাষার চেয়েও শক্তিশালী! এবার নতুন করে অনুধাবন করলাম, বাকশক্তি যেখানে অচল, মানুষের বুদ্ধি সেখানেও সচল। লোকটি তার পেট, মুখ এবং হাত ব্যবহার করে আকারে ইঙ্গিতে আমাকে বুঝিয়ে দিলো যে, তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ঘরে উপোষ করছে, সে সাহায্য চায়। আমি পকেট থেকে এক ইউরো বের করে তার হাতে তুলে দিয়ে সামনে হাঁটতে থাকলাম। রাস্তার ওপারে দেখতে পেলাম Seimens-এর আরেকটা বড় বিল্ডিং, কিন্তু এটা নতুন। আরো দুই ব্লক সামনে গিয়ে দেখি এক সাবওয়ে স্টেশন - নাম Seimensdahmm. অনুমান করলাম, আমি Seimens - এর জগতে প্রবেশ করেছি। স্টেশন-এর কাছেই এক দোকানে কাজ সেরে হোটেলে ফিরে এলাম।

ফ্রন্ট ডেস্কে জানতে চাইলাম, তোমাদের চারদিকে Seimens -এর এতো স্থাপনা! ব্যাপার কী? আমাকে বললো, ‘তুমি যে জায়গায় আছো, এটার নামই Seimens City. Seimens -এর প্রতিষ্ঠাতা এখানেই থাকতেন। কোম্পানির দু’টো হেড অফিস - একটি এখানে আরেকটি মিউনিখে। দিনটি ছিলো শনিবার ২০১৬ সালের ১৬ই ডিসেম্বর। লবিতে বসেই কম্পিউটারে লগইন করে পড়তে লাগলাম Seimens-এর কথা। দেখলাম ঠিক দু’শ বছর আগে অর্থাৎ ১৮১৬ সালের ১৩ই ডিসেম্বর Seimens কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা মালিক Werner von Seimens - এর জন্ম হয়। ১৮৪৮ সালে তিনি এখান থেকেই শুরু করেন তাঁর এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। আজ এটি পৃথিবীর সবচেয়ে মর্যাদাশালী কোম্পানিদের অন্যতম। উইকিপিডিয়া থেকে নতুন যে কথা শিখলাম সেটা হলো, Seimens শব্দটির উচ্চারণ ‘সিমেন্স’ নয়, জার্মান ভাষায় এর সঠিক উচ্চারণ ‘জিমেন্স’।

পরদিন রোববার সকালে আমার বার্লিন দেখতে যাওয়ার কথা। ফ্রন্ট ডেস্ক থেকে সব বুঝে নিলাম, কোথায় যাবো, কিভাবে যাবো এবং সেখান থেকে কেমন করে ট্যুর বাসে উঠবো। সকাল বেলা দেখলাম আবহাওয়া ভালো নয়, ঠাণ্ডাও খুব বেশি। ভালো করে গরম কাপড়চোপড় পরে হাতব্যাগে পানি, কিছু শুকনো খাবার ও ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথম Seimens বিল্ডিং-এর নিকটে সাবওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখি মানুষজন নাই বললেই চলে, কারণ শীতের সকাল, তাও আবার রোববার। আমি জার্মান ভাষা জানি না। মেশিন থেকে টিকেট কিনতে হবে। নির্দেশনা সব জার্মান ভাষায়, তাই এক বৃদ্ধার সহায়তায় টিকেট কিনে সাবওয়েতে উঠলাম।

এর মধ্যে যে বিষয়টি আমাকে অবাক করলো সেটা হলো, সাবওয়ে স্টেশনে ওঠা-নামার ব্যাপারে কার টিকেট আছে আর কার নেই, সেটা দেখভালের জন্য কোনো মানুষও নেই, কোনো যান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ-ব্যবস্থাও নেই! পরে জানতে পারলাম যে, বার্লিন-বাসীর নাগরিক জ্ঞান এবং নৈতিক মূল্যবোধ এতোটাই উঁচুমানের যে তারা সাধারণত টিকেটের ব্যাপারে ফাঁকি দেয় না, তবে কদাচিৎ যে এর ব্যত্যয় হয় না, তাও নয়, আর তাই মাঝে মাঝে পরিদর্শকরা ট্রেনে টিকেট চেক করে। বিনে টিকেটে কাউকে ধরতে পারলে ওয়ার্নিং দেয়, জরিমানা করে। এটা সত্যি অবাক হওয়ার মতন অভিজ্ঞতা, কারণ এমন উন্মুক্ত ব্যবস্থা আমি টোকিওতে দেখিনি, লন্ডনে দেখিনি, প্যারিসে দেখিনি, রোমে দেখিনি, নিউ ইয়র্কে দেখিনি, ওয়াশিংটন ডিসিতেও দেখিনি! অনেক দিন আগের টরেন্টো ও মন্ট্রিয়োলের অভিজ্ঞতার কথা ভুলে গেছি, তবে শুনেছি সিডনির সাবওয়ে ব্যবস্থা নাকি বার্লিনের মতোই।

আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন থেকে নেমে উপরে যখন রাস্তায় উঠে এলাম তখন বুঝতে পারলাম হোটেলের ফ্রন্ট ডেস্ক আমাকে ভুল নির্দেশনা দিয়েছে। ট্যুর বাস ধরার জন্য আমি সঠিক জায়গায় আসিনি। জায়গাটা প্রধানত আবাসিক। রাস্তার দু’ধারে সব বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং, নিচ তলায় দোকানপাট, কিন্তু রোববারের শীতের সকাল বলে ব্যবসা-বাণিজ্য সব বন্ধ। লোক চলাচল নেই, একা মানুষ, পকেটে পাঁচ-ছয় শ’ ডলার আছে বলে একটু একটু ভয়ও হচ্ছে! কী করবো, কোথায় যাবো, কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। দিশেহারা হয়ে কিছুদূর হাঁটার পর দেখলাম এক হেয়ার ড্রেসারের দোকান খোলা, কিন্তু দোকানের দরজায় এক বিরাট কুকুর দাঁড়িয়ে আছে, তাই ওদিকে না গিয়ে আরো হাঁটতে থাকলাম। ডান দিকে বাঁক নিয়ে আরেকটা দোকান খোলা পেলাম, কিন্তু সেটাও চুল কাটার দোকান।

জায়গাটা আরো নির্জন, তাই ফিরে এলাম সেই কুকুর-ওয়ালা দোকানে। এসে দেখলাম কুকুর ভেতরে একটা সুন্দর পরিষ্কার বিছানায় শুয়ে আরামের ঘুম ঘুমোচ্ছে। বাহ, কী ভাগ্যবান বার্লিনের কুকুর! জগতের সকল কুকুর যদি এভাবে নরম বিছানায় ঘুমোতে পারতো, তবে এখানে একটি কথা আছে! বাংলাদেশে অনেকে কুকুর পোষে বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য। ছোটবেলা আমাদের গ্রামের বাড়িতেও একটি কুকুর ছিলো, রাতে চোর এলে ঘেউ ঘেউ করে বাড়িসুদ্ধ লোকজনের ঘুম ভাঙাতো। এ ভাবে আরামে ঘুমালে কি কুকুর রাতে চোর তাড়াতে পারবে?

চুল কাটা মানুষের আদি ব্যবসা সমূহের অন্যতম, সবাই যখন ঘরে ঘুমোচ্ছে তখন বার্লিনের সব নাপিত জমজমাট ব্যবসা করছে। দোকানি সেই কুকুর নিয়ে এসে দোকানদারি করছে, যে কুকুর মানুষের কাছে ঐতিহাসিকভাবে সবার আগে পোষ মেনেছিলো। এ সব তাত্ত্বিক ভাবনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ভেতরে ঢুকে ক্যাশিয়ারের কাছে আমার সমস্যার কথা বললাম, সে আমার কথা বুঝলো। ট্যুর বাস কোম্পানিতে ফোন করে জেনে নিলো, তাদের বাসে উঠতে হলে আমাকে কোথায় যেতে হবে, কিভাবে যেতে হবে, কিন্তু সমস্যা হলো তার ইংরেজি-জ্ঞান এমন নয় যে আমাকে বলে বোঝাতে পারে। এ জন্য সে নিয়ে এলো চাদর গায়ে দেওয়া, আধা চুল-কাটা হয়েছে এমন এক কাস্টমারকে। কাস্টমার মহিলা অত্যন্ত যত্নের সাথে আমাকে বলে দিলো কোথায় এবং কিভাবে যেতে হবে। একটি হাসিমাখা ধন্যবাদ দিয়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এলাম। হিসেব করে দেখলাম এখন আমাকে উল্টোদিকে বেশ কিছুদূর হেঁটে গিয়ে বাস নিয়ে যেতে হবে আরেক জায়গায়। পকেটে হাত দিয়ে দেখি টিকেটের জন্য আমার কাছে প্রয়োজনীয় ভাংতি পয়সা নেই।

বাস স্টপে এসে দেখলাম এ দিকে অনেক লোকসমাগম। নির্জন এলাকায় মানুষকেই ভয় পাচ্ছিলাম। আর এখানে এসে মানুষ দেখেই ডর-ভয় সব চলে গেলো। মানুষ মানুষের ক্ষতি করে, ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়, আবার এই মানুষই মানুষকে অভয় দেয়, সাহায্য করে! প্রথম কিসিম থেকে দ্বিতীয় কিসিমের মানুষ বেশি আছে বলেই হয়তো বা দুনিয়াটা এখনো টিকে আছে, নয় তো কবেই ধ্বংস হয়ে যেতো! বাস স্টপের সাথেই এক দোকানে ঢুকলাম টাকা ভাঙাবার জন্য। লাইনে দাঁড়িয়ে ক্যাশিয়ারের কাছে খুচরো চাইতে না চাইতে আমার ঠিক পেছনের লোকটি স্বপ্রণোদিত হয়ে আমার হাতে পাঁচ ইউরোর ধাতব মুদ্রা তুলে দিলো। তাকে একটি উষ্ণ ধন্যবাদসহ নোটখানা দিয়ে বেরিয়ে এলাম। জার্মানরা যে এতো ভালো মানুষ, তা তো জানতাম না! হবে না কেন? একটা জাতির মধ্যে যদি অন্তর্নিহিত কোনো মৌলিক গুণাগুণ না থাকে তা হলে তারা এতো বড় হতে পারে না, এতো উপরে ওঠতে পারে না! সবাই যখন সিরিয়ান শরণার্থীদের তাড়াতে পারলে বাঁচে, তখন জার্মানির অ্যাঙ্গেলা মার্কেল কী সাহসিকতা ও মহানুভবতার পরিচয়টাই না দিলেন! নোবেল কমিটি এই মহীয়সী মানুষটিকে স্বীকৃতি না দিলে কী হবে, তিনি দুনিয়ার তাবৎ মানব-দরদী মানুষের হৃদয়ে নোবেলের মেডেল হয়ে আলো ছড়াবেন যুগ যুগ ধরে!

বাংলাদেশ ষোলো কোটি মানুষের একটি জাতিরাষ্ট্র। এখানে গত ৪৫ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে অনেক উন্নতি হয়েছে, আগামীতে আরো হবে। এখন ভেবে দেখতে হবে এই আত্মপ্রত্যয়ী ও পরিশ্রমী জাতির ভেতরে আর কী কী মানবিক ও নৈতিক গুণ আছে যা কিনা অদূর ভবিষ্যতে তাকে বিশ্ব-সভায় একটি উঁচু ও সম্মানিত স্থানে বসতে সাহায্য করবে। ওই গুণগুলোকে সনাক্ত করে একটি ব্যাপক-ভিত্তিক সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের হৃদয়-মনে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর ওই গুণগুলোকে সর্বদা শান দিতে হবে। তাহলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে পৃথিবীর কোনো শক্তিই ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।

এত সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ দেখলাম বাস এসে সামনে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য যাত্রীর সাথে আমিও বাসে উঠে আমার গন্তব্যে গিয়ে নামলাম। তারপর কয়েক কদম হেঁটে এক বিশাল পুরনো চার্চের পাশে গিয়ে টিকেট কেটে ট্যুর বাসে উঠে বসলাম। বার্লিনের চোখ ঝলসানো বড় বড় দালান কোঠা, চওড়া চওড়া সোজা রাস্তা, পর্যটকদের ভিড়, ফুটপাথে মানুষজনের কর্মচাঞ্চল্য, ইত্যাদি দেখে দেখে চোখ দু’টো ক্লান্ত হয়ে আসছে। হেডফোনে ধারা বর্ণনা শুনছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কোন রাস্তায় কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, কোন কোন দালান পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, কোনগুলো যুদ্ধের আগের বিল্ডিং, কোনগুলো পরের তৈরি, হিটলার কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে জার্মান নাগরিকত্বের শপথ নিয়েছিলো, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

বার্লিন দেখতে গিয়ে আরেকটি বিষয় আমার বোধোদয় হলো। জ্ঞানের যতো শাখা-প্রশাখা আছে তার মাঝে ব্যাপ্তিতে ও গভীরতায় ইতিহাস সবচেয়ে ব্যাপক, বিস্তৃত, সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। আজ যা ভাষা, আজ যা অর্থনীতি, আজ যা রাজনীতি, আজ যা বিজ্ঞান, আজ যা প্রযুক্তি, আজ যা কূটনীতি, আজ যা রণনীতি, আজ যা সমাজ বিজ্ঞান, কালের আবর্তে সব কিছুই বিলীন হয়ে যায় ইতিহাসের গর্ভে, সব কিছু গলিত মথিত হয়ে, হয়ে যায় ইতিহাসে! সময়ের সাথে সাথে ইতিহাস ধারণ করে ফেলে অন্য সব জ্ঞানকে। তাই ইতিহাসকে বলা যায় সকল জ্ঞানের উদার ও যত্নশীল ধারক ও সংরক্ষক। এখানে আরেকটা কথা বলে রাখি, পুরনো দিনের তথ্য-উপাত্তের সমাহারই ইতিহাস নয়, সত্যের অনুসন্ধানও ইতিহাস নয়, অতীত দিনের ঘটনাবলীর বর্ণনাও ইতিহাস নয়। ইতিহাস হলো বর্তমান থেকে অতীতকে দেখা, বোঝা ও ব্যাখ্যা করা। যেহেতু বর্তমান বদলায়, তাই ইতিহাসও বদলায়।


(ডিসেম্বর, ২০১৬)
The Author is an Economics Professor and an Academic Journal Editor in the U.S. Email: wahid2569@gmail.com





Share on Facebook               Home Page             Published on: 21-Apr-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far