bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













আমার ছেলেবেলার ঈদ আনন্দ!
আবু এন এম ওয়াহিদ



বাংলাদেশেরই কোনো এক অজ-পাড়া গাঁয়ে আমার জন্ম, তাই আমাদের ছোটবেলার ঈদ আনন্দও হত গ্রামবাংলার সেই সময়কার আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে। ইমানদারদের জন্য অসীম রহমত ও ফজিলতের মাস - রোজার মাস! এ মাস শেষ হলেই বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ঘরে ঘরে ঈদ আসে খুশির বার্তা নিয়ে, বয়ে নিয়ে আসে আনন্দের সওগাত! পরিবারপরিজন, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব মিলে সবাই দু’এক দিনের জন্য হলেও নির্মল আনন্দে মেতে ওঠেন। আজকাল বাংলাদেশের নারীপুরুষ, ছেলে-বুড়ো ও শিশুরা কিভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেন তা সঠিক জানি না, তবে আমাদের কালে আমরা কিভাবে ঈদের খুশিতে ফেটে পড়তাম তা আজও মনে হলে সুখ পাই, পাই অনাবিল আনন্দ। স্মৃতির পাতা থেকে আমাদের ছোটবেলাকার ঈদের কিছু কথা, কিছু ভাবনা, কিছু অনুভূতি ও উপলব্ধি এই নিবন্ধের মাধ্যমে পাঠক পাঠিকাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।

শেষ রোজার দিন সবার সাথে জামাতে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতাম। নামাজের পরে মসজিদ থেকে বেরিয়েই পশ্চিম আকাশের দিকে তাকিয়ে অধীর আগ্রহে খুঁজতে থাকতাম ঈদের এক ফালি বাঁকা চাঁদ। এক চিলতে চিকন চাঁদ - এই দেখি এই নেই! নজরে পড়ত, আবার মুহূর্তে যেন মিলিয়ে যেত। ফের খুঁজে পেলে আঙুল ঘুরিয়ে চিৎকার করে অন্যদেরকে দেখাতাম। কেউ দেখতে পেত, কেউ না। খুশিতে নাচতে নাচতে এক দৌড়ে চলে আসতাম বাড়িতে। ঘরে এসে মাকে বলতাম, জান মা, আজ সবার আগে আমিই চাঁদ দেখেছি। কাল ঈদ। মা হেসে হেসে বলতেন, ‘তাই নাকি? তুই যে চাঁদ দেখেছিস তার সাক্ষী রেখেছিস কাউকে? আর চাঁদ দেখে থাকলে কাল থেকে নয়, খুশির ঈদ এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে’। রমজান মাসের শেষ তারিখ চাঁদ দেখার সাথে সাথেই যে ঈদ শুরু হয়ে যায় এবং শাবান মাসের শেষ দিন সন্ধ্যার আকাশে চাঁদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যে রোজার মাসের সূচনা হয় সেটা বুঝেছি অনেক পরে, বড় হয়ে। সৃষ্টির শুরুতে অন্ধকারের গভীরেই আলোর জন্ম, আর তাই আরবি ক্যালেন্ডারে স্বাভাবিকভাবে দিনের আগে রাত আসে।

আমাদের ঈদের প্রস্তুতি ঈদের আগেই শুরু হয়ে যেত। আমার যতদূর মনে পড়ে, এ তোড়জোড় আরম্ভ হত রোজার শেষ দিকে হাতে মেন্দি পরা দিয়ে। আমরা যখন গ্রামের বাড়িতে বড় হচ্ছি, তখন আমাদের কোনো বোন বা চাচাত বোনও ছিল না। তারা যখন দুনিয়ার আলো দেখেছে তখন আমরা পড়া-লেখার উদ্দেশ্যে বাড়িছাড়া। মেন্দি জিনিসটি সাজগোজের বিষয় এবং একটি মেয়েলি ব্যাপার। স্বভাবতই এতে তাদেরই উৎসাহ বেশি থাকার কথা। মাঝে মাঝে ওই সময় যখন বড়-ফুফু নাইয়র আসতেন তখন ফুফাতো বোনদের নিয়ে মেন্দি উৎসব খুব জমত। ফুফু এবং কাজের মেয়েলোকরা আদর করে, যত্ন করে আমাদের হাতে মেন্দি পরিয়ে দিতেন। আমি একটু অধৈর্য ছিলাম, কতক্ষণ পরপর আঙ্গুল দিয়ে মেন্দি পাতার পেস্ট সরিয়ে দেখতাম হাত লাল হচ্ছে কিনা। এতে আমার হাতের মেন্দি লেপটে-চেপটে যেত। মেন্দির লাল কারুকার্য পরিষ্কার হয়ে হাতে ফুটে উঠত না, তাই হাত ধোয়ার পরে অন্যদের সাথে যখন মিলিয়ে দেখতাম তখন মন খারাপ লাগত। আমাদের বাড়িতে মেন্দি লাগানো যে শুধু মেয়েদের বা ছোটদের ব্যাপার ছিল তাই নয়। আব্বা ও চাচাদেরকেও দেখতাম বাঁ হাতের ছোট আঙ্গুলের মাথায় এবং ওই হাতের তালুতে পূর্ণচন্দ্র আকারে মেন্দি পরতেন। আমাদের দুই হাতের তালুতে বেশ ডিটেইল্ড কারুকাজ সহ মেন্দি লাগানো হত। মাঝে মধ্যে আমরা দুই হাতের তালুতে চ্যাপ্টা করে মেন্দির পেস্ট লাগিয়ে দিতাম। সে কাজ আমরা নিজেরাই করতে পারতাম, এবং একে বলতাম জোড়-মেন্দি।

যাই হোক, ফিরে আসি ঈদের দিনের কথায়। সন্ধ্যায় ঈদের চাঁদ দেখার সাথে সাথে রান্নাঘরে নানা জাতের পিঠা ও মিঠাই বানানো শুরু হয়ে যেত। আমরা ঘুমাবার আগেই কিছু খেয়ে নিতাম। তারপর বিছানায় যেতাম ঠিকই, কিন্তু ঈদের খুশিতে আর উত্তেজনায় চোখে ঘুম আসতে চাইত না। ফজরের আযানের আগেই উঠে যেতাম। একান্নবর্তী পরিবার, আমরা সমবয়সী ভাইরা, পাশের বাড়ি, এবং গ্রামের অন্যান্য ছেলেদের সাথে গোসল করতে বাড়ির সামনে পুকুরে চলে যেতাম এবং ‘নূর নবী মক্কার পানি ঈদের গোসল করলাম আমি,’ এই দোয়া জপ করতে করতে ভালো করে গোসল সেরে জামাকাপড় পরে নিতাম। কাপড়গুলো আগেই ধুয়ে, শুকিয়ে, ভাঁজ করে বালিশের নিচে রাখতাম অন্তত তিন-চার দিন। তখন বাড়িতে লোহার ইস্ত্রি এসেছি কিনা সঠিক মনে নেই, আসলেও ওটা ছুঁয়া আমাদের এখতিয়ারের বাইরেই ছিল। পরিষ্কার জামাকাপড় পরে যখন ঘরে ফিরে আসতাম তখনো চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। এখানে একটি কথা বলে রাখি, ঈদের দিন নতুন জামা-কাপড় পরার কথা জানতাম, তবে আমাদের ভাগ্যে তা জুটত না! কদাচিৎ নতুন কাপড় পেলেও এমন ঈদের কথা আমার স্পষ্ট মনে পড়ছে না, কিন্তু এতে মোটেও খারাপ লাগত না, কারণ বলতে গেলে বাড়ির এবং গ্রামের সব ছেলেমেয়েদের অবস্থাই ছিল তথৈবচ। ঈদ গোসলের এই অভিনব দোয়াটি কে শিখিয়েছিল, তাও মনে নেই। এর মানে কি? এটা আদৌ কোনো সহি দোয়া কিনা? ইত্যাদি প্রশ্ন তখন কোনো দিন কারো মনে জাগেনি, তবে এটা যে একটা পবিত্র দোয়া এ ব্যাপারে আমাদের কারোরই বিশ্বাসে কোনো ঘাটতি ছিল না। আজ একা একা যখন সেই সব ঘটনা এবং স্মৃতিতর্পণ করি তখন মনে মনে হাসি। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত সবাই জটলা বেঁধে বিছানায় বসে গল্পগুজব করতাম, হাসিঠাট্টায় মেতে উঠাতাম।

পূব আকাশে আলো ফোটার সাথে সাথে আমরা ছেলেরা সব দল বেঁধে বাড়ির মুরব্বিদের যে যেখানে পেতাম পায়ে ধরে (কদমবুচি) সালাম করতাম। বাবা, চাচা, মা, চাচীদের পর সব শেষে যেতাম দাদীর ঘরে। দাদী বসে থাকতেন পিঠা ও মিষ্টি দ্রব্যের ভাণ্ড হাতে নিয়ে। সালাম করার পর দাদী আদর করে সবার হাতে তুলে দিতেন মিষ্টি জাতীয় খাবার। খেতে খেতে নেচে নেচে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়তাম। তারপর একে একে গ্রামের এঘর-ওঘর সব বাড়ি ঘুরে বেড়াতাম। মুরব্বিদের পায়ে ধরে সালাম করতাম আর বখরা পেতাম বিভিন্ন জাতের ঘরে বানানো পিঠা। দু’ এক ঘর খাওয়ার পরেই পেট ভরে যেত। শেষের দিকে সাধলেও আর খাবার হাতে নিতাম না। সালাম করে খুশি মনেই খালি হাতে চলে আসতাম। খেতে খেতে ক্রমান্বয়ে আমাদের কাছে মিষ্টি/পিঠার প্রান্তিক উপযোগিতা কমতে কমতে যে শূন্যের নিচে চলে আসত, সেটা বুঝেছি বড় হয়ে অনেক পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থশাস্ত্রের তত্ত্বকথা পড়তে গিয়ে, তবে কদাচিৎ কেউ একটা দুটো সিকি আধুলি হাতে তুলে দিলে মনে হত যেন সাত রাজার ধন পেয়ে গেছি!

গ্রাম ঘোরা হলে বাড়িতে ফিরে আসতাম। এসে দেখতাম বাড়ির সামনে কাছারি ঘরের উঠানে লাইন ধরে ফকির-মিসকিনরা দাঁড়িয়ে আছে ফেতরা নেয়ার জন্য। মিসকিনরা একে একে এগিয়ে আসছে, আর আব্বা বারান্দায় একটি পুরনো কাঠের চেয়ারে বসে কাউকে সিকি, কাউকে আধুলি, আবার কারো হাতে টাকার নোট গুঁজে দিচ্ছেন। ফকির মিসকিনরা চলে গেলে আমি আব্বার আশে পাশে ঘুর ঘুর করতাম। ভাবতাম, একটা সিকি আধুলি তো আমাকেও দিতে পারে, কিন্তু দেয় না কেন? বাবা যে ফেতরার পয়সা আমাকে দিতে পারেন না, সেটা তখন জানলে তাঁর ওপর আমার এমন রাগ-অভিমান হত না।

তারপর সবার সাথে নামাজের জন্য ঈদগাহে যেতাম। নামাজ শেষে ঈদগাহের আশেপাশে দেখতে পেতাম সাদা টুপি মাথায় শুধু মানুষ আর মানুষ - ছুটছে এলোপাথাড়ি। তার মাঝে দুটো চিত্র স্পষ্ট আমার নজরে পড়ত। কুরবানির ঈদ হলে এক দল লোক দেখতে পেতাম ঘোরাঘুরি করছে। তাদের গায়ে ময়লা নোংরা ছেঁড়া কাপড়, মাথায় গামছা বাঁধা, এক হাতে বাঁশের লাঠি (কাঁধে করে চামড়া বয়ে নেওয়ার জন্য) আরেক হাতে ছালায় ছুরি-ছোরা ইত্যাদি। আর প্রায় সব ঈদেই থাকত আরেক দল, তারা ফেরিওয়ালা। বেলুন, হাওয়ার মিঠাই, বাঁশের বাঁশি, লেবেনচুষ, ইত্যাদি বিক্রি করত। নিজের পকেটে পয়সা থাকলে কিছু কিনতাম, না থাকলে মন খারাপ করে বাড়ি চলে আসতাম। পয়সার জন্য মানুষের ভিড়ে আব্বাকে খোঁজার বুদ্ধি থাকলেও সাহসটি ছিল না। ওই দুই দলের লোকদের ঈদের ময়দানে তখন একেবারেই বেমানান লাগলেও, অনেক পরে এসে বুঝেছি, তারাও ঈদ আনন্দের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রসুল ধর্মীয় অনুশাসনের সাথে তিজারতকে একীভূত করে দিয়ে ইসলামকে আরো বাস্তবসম্মত ও জীবন-ঘনিষ্ঠ করে গড়ে তুলেছেন!

রোজার ঈদ হলে নামাজের পরে বাড়িতে বকরি জবাই হত আর কোরবানির ঈদ হলে সাথে একটা গরুও থাকত। বাড়ির বাইরের ঘরের সামনে এক দিকে চলত গোশত কাটাকাটি। আরেক দিকে চলত ঈদগাহ কমিটির বিশাল মিটিং। আমাদের ঈদগাহের মালিকানা ও ব্যবস্থাপনা ছিল আশপাশের পাঁচ গ্রামের পাঁচ পঞ্চায়েতের যৌথ মোয়া-মেলাত। আব্বা ছিলেন এর মুতাওয়াল্লী। তাই মিটিং বসত আমাদেরই বাড়িতে। উপস্থিত থাকতেন পাঁচ গ্রামের সব মাতবররা। নামাজের পরে ঈদগাহে যে চাঁদা তোলা হত, তা আমাদের বাড়ির মিটিঙে গোনাগুনি হত। গোনার পর পুরো টাকাই ঈদগাহের ইমাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট ইমামের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হত। আমি কতক্ষণ গোশত কাটাকাটি দেখতাম, আবার কতক্ষণ মিটিং শুনতাম, ফলে কোনো কাজই ঠিকমত হত না। ইমামদের টাকাটা ফিফটি/ফিফটি অনুপাতে ভাগ হত, না অন্য রকম তা বুঝতে পারিনি, আব্বাকে কোনোদিন জিজ্ঞেসও করিনি। ঈদের মিটিংটি বড় বলে পিঠা সন্দেশ খাওয়ানো সম্ভব হত না, কিন্তু পান-সুপারি আর গুড়গুড়ি হুঁকোর এস্তেমাল চলত বেহিসাব। জানতে বড় ইচ্ছে করে হুঁকো, তামাক, আর পান-সুপারির চল কি এখনো গ্রাম-দেশে আছে?

রান্নাবান্নার জন্য স্বাভাবিকভাবেই দুপুরের খাবারে দেরি হত। তবে মজা করে ইচ্ছেমত পেট ভরে গোশত দিয়ে খাওয়াটা আমি খুবই উপভোগ করতাম। এমন উপাদেয় ও পর্যাপ্ত খাবার বছরে মাত্র দু’বারই আমাদের কপালে জুটত। বিকেল বেলা পাশের গ্রামে ফুফুর বাড়ি বেড়াতে যাওয়া ছিল ঈদ উদযাপনেরই একটি অংশ। ফুফুর বাড়ি গেলে পেতাম সেমাই এবং মাঝে মাঝে আখনি পোলাও (বিরিয়ানির সিলেটি সংস্করণ)। হৈ-হুল্লোড় করে সন্ধ্যায় ফিরে আসতাম ঘরে। আমাদের বাড়িতে কোরবানির ঈদের দু’টো বিশেষত্ব ছিল। প্রথমটি হল, যাঁদের নামে পশু কোরবানি করা হত, তাঁরা কোরবানির গোশত রান্না হওয়ার আগে অন্য কিছু খেতেন না। এ রকম নিয়ম ইসলামে আছে কিনা তা আমার জানা নেই। আমাদের বাড়িতে কে কখন এই রীতি চালু করেছিল তারও হদিস আমি জানি না। দ্বিতীয়টি হল, আমার দাদী গরম করে করে কোরবানির গোশত প্রায় এক মাস ধরে সংরক্ষণ করে রাখতে পারতেন। সে যুগে রেফ্রিজারেশনের কথা তো গ্রাম দেশে কল্পনারও বাইরে ছিল। দাদী আরেকটি কাজ করতেন। ওই গোশত দিয়ে একেক দিন একেক পরিবার করে আমাদের গ্রামের সবাইকে দুপুর বেলা ভাত খাওয়াতেন এবং এ জিয়াফত সিরিজ চলত প্রায় তিন/চার সপ্তাহ ধরে।

কি রোজা, কি কোরবানির ঈদ, এশার নামাজের পর আমাদের বাড়িতে শুরু হত ওই দিনের সব শেষ ও আসল উৎসব। গ্রামের সবাই যার যার ঘরে ঈদের যা রান্না হত তার একটি বড় অংশ নিয়ে আসত আমাদের কাছারি ঘরের সামনের উঠানে। কেউ নিয়ে আসত পোলাও গরু গোশত, কেউ আনত খিচুড়ি, কেউবা নিয়ে আসত সাদা ভাত আর তার সাথে খাসি অথবা মুরগির গোশতের তরকারি। ছোটবড়, ছেলেমেয়ে, জোয়ান-বুড়ো সবার মিলন-মেলা বসত আমাদের বাড়ির আঙিনায়। ছোট ছোট হারিকেন জ্বালিয়ে আলো-আঁধারির মাঝে আমরা সবাই একসাথে ভাগ-যোগ করে খাবারগুলো খেতাম। কোনো কোনো সময় অন্ধকারের মধ্যে খাবার পাতে যে পোকা-মাকড় পড়ত না তাও নয়। আর পড়লেই বা কি? এত কিছু দেখে ও বেছে খাওয়ার কি সময় ছিল আমাদের? খাওয়া শেষ হলে পুকুরে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে আসতাম। আজকাল দেশে বিদেশে নামি দামি হোটেল, মোটেল, ও কমিউনিটি সেন্টারে কত সৌখিন পার্টি হয়, খাওয়াদাওয়া হয়, কিন্তু ছোটবেলাকার সেই আনন্দ কোথাও খুঁজে পাই না।

সারা দিন হৈচৈ করার পর ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। তবু শুতে যেতে চাইতাম না। মনে হত ঘুমাতে গেলেই তো আনন্দ হাতছাড়া হয়ে যাবে। অবশেষে আব্বার বকাবকিতে বিছানায় যেতে হত। অবসন্ন শরীর নিয়ে বিছানায় শুলেই ঘুমিয়ে পড়তাম। ক্লান্তিতে আরামের লম্বা ঘুম ঘুমাতাম। মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে আগামী ঈদের স্বপ্ন দেখতাম। সকালে ঘুম থেকে উঠলে দিন গুনতে শুরু করতাম কবে আসবে আবার ঈদ! খুশির ঈদ! প্রবাস জীবনে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে আজও ঈদ করি। আজও আনন্দ পাই। আজও দিন গুনি আবার কবে আসবে রোজা, কবে আসবে ঈদ, খুশির ঈদ! তবে সেদিনের সাথে আজকের একটা পার্থক্য আছে। আজকের প্রত্যাশার সাথে একটা জিনিস নিশ্চিত জানি, জীবনে যত ঈদই আসুক, ছোটবেলার সেই ঈদ আর আসবে না। সেই অনন্দও আর ফিরে পাব না। শৈশবের সাথে চির দিনের মত হারিয়েছি তার আনন্দ উচ্ছ্বাস। ফিরে পাব না সেই সময়, ফিরে পাব না সেই ঈদ, ফিরে পাব না সেই হাসি-খুশি আর কোলাহল! বলতে পারেন, কেন এমন অনুভূতি হয়? আমার ধারণা, আনন্দ অনুভবের বেলা মানুষ বড়ই কৃপণ। নতুন প্রাপ্তি যতই হোক না কেন, পুরনোগুলোকে ভুলতে পারে না, ছাড়তে পারে না।

বাংলাদেশের পরিস্থিতি এখন যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে মনে হয়, যেদিন ছেলেবেলার মধুর মধুর স্মৃতিকথা বিসর্জন দিতে হবে, সেদিন বুঝি আর বেশি দূরে নয়! কেন বলছি শুনুন। আমার এক পাঠক বন্ধু এ লেখার আগের ভার্সন পড়ে আমাকে যা লিখেছেন তার সারসংক্ষেপ হল এ রকম, ‘জনাব, আপনি যে বাংলাদেশে বড় হয়েছেন, সে বাংলাদেশ আর আজকের বাংলাদেশ এক নয়। এখন বাংলাদেশের মানুষ আর গরিব নয়। এখানে এখন অনেক অনেক লোক আছেন যারা প্রতিদিনই ঈদ করে থাকেন’। আপনাদের মত আমিও জানি এখন দেশে অনেক মানুষ আছেন যারা, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে ঈদ করতে চান না। তাঁরা ঈদ এলে বউ ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে যান কক্সবাজার, কুয়াকাটা, আর যারা আরো ধনী তারা যান ব্যাংকক, সিঙ্গাপুর, কুয়ালা লামপুর; এমন কি ইউরোপ-আমেরিকাতেও গিয়ে তাঁরা ঈদ করে থাকেন। সবশেষে আপনাদের কাছে আমার একটি প্রশ্ন, যেদিন বাংলাদেশের সব মানুষ সব দিনই ঈদ করবে, সেদিন কি আমার ছেলেবেলার সেই ঈদ, সেই স্মৃতি, সেই আনন্দ থাকবে, নাকি উন্নয়নের হাওয়ায় হারিয়ে যাবে? কথাগুলো লিখতে গিয়ে বুঝতে পারছি আবেগে আঁখি দু’টো ভিজে আসছে!



লেখক: অর্থনীতির অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ;
Email: wahid2569@gmail.com






Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-Jul-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far