bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













আমার প্রথম চাকরিজীবনের বৈচিত্র্যময় অস্থিরতা - ৫
আবু এন. এম. ওয়াহিদ



একবার দক্ষিণ কোরিয়া থেকে এলেন এক ভদ্রলোক। তাঁর নাম ছিল, মি. মুন। আমরা মজা করে তাঁকে ‘চান মিঞা’ বলে ডাকতাম। তিনি ঢাকায় কোনো এক হোটেলে থাকতেন এবং নিয়মিত আমাদের অফিসে আসা-যাওয়া করতেন। মি. মুন ‘ভিইআরসি’-র সাথে তাঁর এনজিও-র একটি এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম সই করতে এসেছিলেন। শুনেছিলাম, আমাদের বড়কর্তার সাথে তাঁর কথাবার্তাও নাকি এগিয়েছিল অনেক দূর। প্রকৃতপক্ষে এই ‘দূর’-টা যে কত দূর ছিল, তা আজো আমার কাছে রহস্য হয়েই রইলো! দুই সংগঠনের মাঝে দর কষাকষির এক পর্যায়ে, অফিসের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, হায়দার ভাই আমাকে ডেকে বললেন, ‘ওয়াহিদ, আপনার জন্য সাউথ কোরিয়া যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে’। বাহ! আমি তো আহ্লাদে আটখানা! এ হবে আমার জীবনের প্রথম বিদেশ সফর, মনে মনে স্বপ্ন দেখছি আর ভাবছি, যেদিন প্রোজেক্ট ম্যানেজার ‘জ্যাক ফল’ আমাকে ডেকে সুসংবাদটি দেবেন, সেই দিনই দর্জির দোকানে গিয়ে সার্ট-প্যান্টের মাপ দিয়ে আসব, জুতাও কিনতে হবে একজোড়া। এ জন্য কত টাকা আলাদা করে রাখব তারও একটা খসড়া হিসেব করে রেখেছি। দিন গেলো, সপ্তাহ গেলো, দেখতে দেখতে অতিথি মহোদয় স্বদেশে ফিরে গেলেন, তবু আমি কারো কাছ থেকে কোনো ইশারা-ইঙ্গিত পেলাম না। আরো কয়েকদিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করলাম, মি. মুন যাওয়ার পর যদি কোরিয়া থেকে কোনো খবর আসে, এই আশায়। না, কোনো খবরই এলো না, কিছুই হলো না, কী থেকে কী হয়ে গেলো তাও বুঝলাম না! অবশেষে আশায় আশায় একদিন নিরাশই হলাম, বুঝলাম ‘জ্যাক ফল’ আমার জন্য ‘মাকাল ফল’ ছাড়া আর কিছুই নয়!

আমি সবুর করলাম এবং সবুরে মেওয়াও ফললো। কোরিয়া থেকে না-আসা একটি সুসংবাদের বদলে লাইন ধরে একাধিক এলো! দর্জির দোকানে না গিয়েও নতুন জামাকাপড় পেয়ে গেলাম। কীভাবে এসব হলো, এবার শুনুন সে কাহিনী। একদিন সকালবেলা কাজে যাব, মীর মোশাররফ হোসেন হলের সামনে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য সময় গুনছি। দেখতে দেখতে ভেঁপু বাজিয়ে, ধুলো উড়িয়ে, ‘চলাচল পরিবহন’ এসে থামলো আমার সামনে, আমি উঠে বসার জন্য বাসের গা ঘেঁষে ঘেঁসে পেছনের দরজার দিকে এগোচ্ছি এমন সময় সামনের দিক থেকে শুনতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবুল হোসেন চৌধুরীর কণ্ঠস্বর। তিনি বাসের ভেতর থেকে জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বলছেন, ‘ওয়াহিদ, তুমি কালকে অবশ্যই আমার সাথে অফিসে এসে দেখা করবে, জরুরি কাজ আছে’। আমি কিছু বুঝতে পারিনি, আঁচও করতে পারিনি। পরদিন গেলাম স্যারের অফিসে এবং জানতে পারলাম, অস্থায়ী ভিত্তিতে ছ’মাসের জন্য অর্থনীতি বিভাগে লেকচারার হিসেবে আমার অ্যাপোয়েন্টমেন্ট হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে এই অ্যাপোয়েন্টমেন্ট আরো এক দফা বাড়ানো হয়। আগেই বলেছি, এই চাকরির জন্য আমি দরখাস্ত করিনি, তদবিরও করিনি। বিভাগীয় প্রধান কায়সার হোসেন স্যার আপনা থেকেই আমার এই নিয়োগের কাগজপত্র প্রক্রিয়াজাত করেছেন, তবে আমি কিছুই জানতাম না।

নতুন চাকরির পয়গাম নিয়ে আমি সোজা ছুটে গেলাম ভিইআরসি অফিসে। সহকর্মী এবং অন্যদের কাছে এটি একটি মামুলি ‘খবর’ না ‘সুখবর’ হিসেবে বিবেচিত হবে তা আমি জানতাম না, তবে সবাই আমাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানালেন। আমার বস ‘ভিইআরসি’-র চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার পরামর্শ দিলেন, আমি তাই করলাম। ওই দিন অথবা পরদিনই আমার আবেদন গৃহীত হলো। ক’মাস আগেও যে বিভাগে আমি ছাত্র ছিলাম সেখানে আবার ফিরে গেলাম শিক্ষক হিসেবে। তিন-চার দিনের মধ্যেই ‘ভিইআরসিতে’ আবার আমার ডাক পড়ল। প্রাক্তন সহকর্মীরা আমাকে একটি অনানুষ্ঠানিক বিদায় সংবর্ধনা দিলেন - সাথে নতুন জামাকাপড় ও কলমসহ বেশ কিছু উপহার সামগ্রী। একসাথে এতো উপহার আমি আমার জীবনে আর কোনো দিন কারো কাছ থেকে পাইনি! জাহাঙ্গীরনগরে ইতিমধ্যে আমি ছাত্রছাত্রীদের ক্লাস নিতে শুরু করেছি। এ যে ভিন্নধর্মী এক নতুন অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা যা কোনো দিন ভুলেও ভুলব না! বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার পর প্রথম প্রথম অন্তরে বেশ উত্তেজনা ও আত্মতৃপ্তি অনুভব করতাম! আবার এ-ও বুঝতাম, মনের মধ্যে এক অজানা ও অবর্ণনীয় অস্থিরতা নীরবে কাজ করে চলেছে! এই অস্থিরতার কাছে নতুন চাকরির মোহ পরাভব মানতে বেশি সময় নিল না। শুরু হলো আমারই মনের সাথে আমার জাগতিক বোঝাপড়ার পালা। বিয়ে করে সংসার করব, নাকি মা-বাবা ভাইবোনদের টানবো, নাকি আপন ভাগ্য গড়তে বিদেশ যাব। আপনারা শুনে অবাক হবেন, হয়তো আঁতকে উঠবেন, দীর্ঘ ৪০ বছরেও সেই বোঝাপড়ায়, হয় আমি সফল ইতি টানতে পারিনি, অথবা যা পেরেছি তা ভুল করে করেছি!

সে যাই হোক, আমার প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আমি পড়ালাম মাত্র ১ বছর। এই এক বছরে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী এমন কি কারো কারো স্ত্রী - অর্থাৎ ভাবীদের কাছ থেকে আমি দু’ধরনের তদবির পেতে লাগলাম। প্রথম তদবির ছিল স্বল্পস্থায়ী এবং আমার জন্য একটু বিব্রতকর। দ্বিতীয়টি আসতে শুরু করেছে আরেকটু পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার থিতাবস্থার পর এবং এটা জারি ছিল বলতে গেলে শেষ দিন পর্যন্ত। এই উদ্যোগে আমি ভীষণভাবে পুলকিত হতাম! প্রথম দিকে বিব্রতকর যে অনুরোধ আমার কাছে আসতো তা হলো, ভিইআরসি-তে আমার ছেড়ে আসা চাকরিটা পাইয়ে দেওয়ার তদবির। দ্বিতীয়টিতে কোনো রাখঢাক ছিল না, সোজাসাপ্টা বিয়ের প্রস্তাব - শুনেই মনটা আনন্দে নেচে উঠতো! ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রেম-ভালোবাসার উষ্ণ বাতাসের ঢেউ হৃদয়ের পরতে পরতে গিয়ে লাগতো! সঙ্গে সঙ্গে সংসারজীবনের অঙ্ক মেলাবার অজুহাতে নানান জাতের হিসেবনিকেশ করতাম, কিন্তু ঘর বাঁধার জন্য অগ্রসর হওয়ার মতন সাহস পেতাম না। আমার সহপাঠী বন্ধুরা বলত, ‘এত হিসেব করলে তোর বিয়েই হবে না’। অল্প সময়ে যতগুলো বিয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলাম তা গুনে শেষ করার মতন নয়। এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের কথা যদি বলি তা হলে সবার আগে বলতে হয়, - আপন ছাত্রী ও শিক্ষকের মেয়ে, উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তার কন্যা, দু’-দু’-জন মন্ত্রী-তনয়ার কথা। এর চেয়ে বেশি বলে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। এবার বুঝুন, ১৯৭০ এর দশকে বিয়ের বাজারে একজন তরুণ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের কতখানি মূল্য ও মর্যাদা ছিল!

পরের বছর, অর্থাৎ ১৯৭৯ সালের জুলাইয়ের শেষ অথবা আগস্টের শুরুতে শুরু হলো আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাঁক-বদলের প্রস্তুতি। উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ যাওয়ার জন্য পর পর চারটি সুযোগ যথাক্রমে ভারত, ফিলিপাইনস, অষ্ট্রেলিয়া এবং কানাডা থেকে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে আমার রাঙা (লাল ইটের দালানে থাকতাম) ঘরের ভাঙ্গা দরজায় এসে কড়া নাড়তে লাগলো। ঘটনাগুলো এতো দ্রুত ঘটছিল যে, আমার কাছে স্বপ্নের মতই লাগছিল! প্রথম তিনটি অফারই ই ছিল স্কলারশিপ, শেষেরটি টিচিং অ্যাসিস্টেন্টশিপ এবং এটিই আমি বেছে নিলাম। বিয়ের ব্যাপারে আমার বন্ধুদের কথাই ঠিক হলো। দরজায় কড়া নাড়ার আওয়াজ শুনে আমি যেন গভীর ঘুম থেকে জেগে উঠলাম, আমার স্বপ্ন ভাঙ্গলো, জীবনের ‘অঙ্ক কষা’ ছেড়ে দিলাম, ঝটফট আমার বিয়েও হয়ে গেলো। আমার এই হিসেবনিকেশটা কী, কিভাবে কার সাথে জীবনের জুটি বাঁধলাম এবং তার আগে আরো কত নাটক, কত সিনেমা হলো, এ নিয়ে লম্বা আরেকটি লেখা তৈরি করার ইচ্ছে আছে। তার আগে ভিইআরসি-র অভিজ্ঞতা নিয়ে আমার আরো অনেক কথা বাকি রয়ে গেছে। ফিরে আসি, সেসব গল্পে।

১৯৭৮-এর এপ্রিল-মে মাসের দিকে একদিন আমরা পুরো ট্রেনিং টিম গেলাম সাভার থেকে ২/৩ কি.মি. পশ্চিমের গ্রাম - ‘ফুটনগর’-এ (অথবা ‘ফুটনানগরে’)। সাভার বাজার পার হয়ে খোলা মাঠ পেরিয়ে গিয়ে আটকা পড়লাম এক নদীর পাড়ে (সম্ভবত, বংশী নদী)। বসা তো দূরে থাক, দাঁড়াবারও জায়গা নেই - খেয়া নেই, ঘাটও নেই, তরু নেই, ছায়াও নেই। হাঁকাহাঁকি ডাকাডাকি করে কেমনে কেমনে একখানা নৌকো যোগাড় করা হলো। পিচ্ছিল, শেওলাপড়া, ভেজা নৌকো, অনেক দিন পানিতে ডুবানোই ছিল। ঢং-তামাশাসহ লগি-বৈঠা বেয়ে হৈহৈ রৈরৈ করে সবাই মিলে নদী পার হলাম। তারপর শুরু হলো সোজা পশ্চিম দিকে হাঁটা, এমন হাঁটা জনমে আর কোনোদিন হাঁটিনি। মাথার ওপর কড়া রোদ - পায়ের নিচে চৌচির হয়ে ফেটে যাওয়া মাঠ। ফাটল এত চওড়া, বেকায়দায় পাড়া পড়লে পা শুধু মচকাবে না, নলার হাড্ডিটিও ভেঙ্গে যেতে পারে! হাঁটতে হাঁটতে কে যেন বলে উঠলেন, ‘এই, সাবধানে পা ফেল, মাঠের ফাটলে সাপ থাকতে পারে’। আরেকজন বললেন, ‘সাপের জন্য এই ফাটল অনেক বড়, এখানে বরং নেউলের বাসা পাওয়া যেতে পারে, আর যেখানে নেউল থাকে সেখানে ওঝার কোনো কাজ থাকে না, সুতরাং নির্ভয়ে চলো’। বর্ষাকালে ওই জায়গায় হাওরের মতো থৈ থৈ করা পানি ঢেউ খেলতে দেখেছি। দু’মাস পরে যেখানে নাও চড়ে, পাল উড়িয়ে, হাওয়া খেয়ে খেয়ে যেতে পারতাম, সেখানে আজ অসময়ে কষ্ট করে হাঁটছি! অবশেষে হাঁটতে হাঁটতে নাম না জানা এক কৃষকের বাড়ির সামনে নিম গাছের ঘন শীতল ছায়ায় বসে জিরুতে লাগলাম।

আমাদের ও আমাদের সাথে করে বয়ে নেওয়া প্রশিক্ষণ-সামগ্রী দেখে কৌতূহলী মানুষজন আস্তে আস্তে গাছতলায় এসে জড় হতে লাগলেন। দেখতে দেখতে ছেলেমেয়ে, জোয়ান-বুড়ো অনেক মানুষ আমাদের ঘিরে ফেললেন। ততক্ষণে আমরা আমাদের পশরা সাজিয়ে বসেছি। একে একে শুরু হলো বানর-নাচের মতন ‘পড়া পড়া’ খেলা। ‘গ্রুপ ড্রয়িং’, ‘ফ্ল্যানেলগ্রাফ’, ‘প্ল্যানিং কিট’, ‘ফটো প্যারেড’, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমরা ছবি আঁকলাম, দেখালাম, বোঝালাম, পড়া পড়ালাম, আমাদের কথা আমরা বলে গেলাম আমাদের মতন করে, গ্রামবাসী বুঝলেন কিনা, কিছুই বুঝলাম না! গাছতলা থেকে আস্তানা গুটিয়ে নিয়ে সদলবলে এক বাড়ি থেকে যখন আরেক বাড়ির দিকে রওয়ানা দিলাম, তখন আমরাই বনে গেলাম ‘হ্যামিলনের বংশীবাদক’। আমাদের পিছে পিছে স্রোতের মতো ছুটলো গ্রামের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা - নিম গাছের সরু পাতার মতন চিকন চিকন খালি পা, প্রায় সবার শরীরের উপরিভাগ উদাম, কেউ নেংটা, কারো পরনে ছেঁড়া গামছা, কারো মুখ দিয়ে লালা ঝরছে, কারো নাক দিয়ে গলে গলে ছুটছে ঘন তরল সাদা পানির প্রবাহ! আমাদের প্রতি অবুঝ শিশুদের সবুজ মনের এমন গভীর টান দেখে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা দল বেঁধে, কাতারবন্দি হয়ে ডুগডুগি বাজানো বানরওয়ালার পিছে পিছে ঘুরতাম, হেঁটে হেঁটে গ্রামের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় চলে যেতাম, কোনো হুঁশই থাকত না, নাওয়া-খাওয়ার জন্য বাড়িতে ডাকাডাকি করে মিলত না কাউকে, সেদিনের মতো নিখোঁজের খাতায় লেখা হয়ে যেত নাম। গ্রাম বাংলার এ এক সর্বজনীন চিরায়ত চিত্র!

আমাদের গ্রামীণ-জীবনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য আছে - যাকে বলে অতিথিপরায়ণতা। বাংলাদেশের যে গ্রামই হোক, আর লোকজন যত গরিবই হোন না কেন, তাঁদের মনটা কিন্তু ছোট নয়। মেহমানদের প্রতি তাঁদের যত্ন ও আপ্যায়ন অতুলনীয়, তাঁদের মমতা ও আন্তরিকতা কোনো মূল্য দিয়েই মাপা যায় না, পরিশোধ করা যায় না। প্রসঙ্গক্রমে এখানে একটি মজার ঘটনা উল্লেখ না করে পারছি না। ‘ভিইআরসি’-তে চাকরি কালীন সময়েই অফিসের এক বড় ভাইয়ের কাছে শুনেছি, সেই সময়ে ‘স্বনির্ভর বাংলাদেশ’ আন্দোলনের পুরোধা-ব্যক্তি, মাহবুব আলম চাষী একবার কোনো এক অজপাড়া গাঁয়ে এক বিধবা মহিলার কুঁড়েঘরে একবেলার আতিথেয়তা গ্রহণ করেছিলেন। স্বভাবতই, ওই দিন চাষী সাহেব একা ছিলেন না। তাঁর সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন সঙ্গী-সাথী ছিলেন, সেই বিবেচনায়, খেয়েদেয়ে চলে আসার সময়, প্রধান অতিথি ধন্যবাদসহ আপ্যায়নকারিনীর হাতে কিছু নগদ টাকা তুলে দিতে গেলে মহিলা সবিনয়ে অর্থ ফিরিয়ে দিয়ে বলেছিলেন, ‘আপনি তো আমার খাবার ও মেহনতের দাম দিলেন, ‘মেহমানদারী’-র দাম কিভাবে দেবেন’?

ওই একই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায়, আমরা ১০/১২ জন মানুষও সেদিন দুপুরবেলা ‘ফুটনগর’ থেকে না খেয়ে আসতে পারিনি। একজন সচ্ছল কৃষকের বাড়িতে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন হলো, দুঃখিত, সহৃদয় ভদ্রলোকের নামটি ভুলে গেছি। বিকেল ৪টা সাড়ে ৪টার দিকে, হাত-মুখ ধুয়ে আমরা ভেতর বাড়িতে উঠোন মাড়িয়ে গিয়ে উঠলাম মূল ঘরের মূল কামরায়। তিনদিকে মাচানের ওপর শুকনো পাট আর পাট - গাঁট বেঁধে, থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, বর্ষা এলে ভালো দামে বিক্রি হবে বলে। পাটের মাঝখানে বড় এক চৌকিতে আমরা গোল হয়ে বসলাম। জনে জনে সামনে চিনামাটির প্লেট দেওয়া হলো, তারপর চিলিমচিতে বদনার পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পালা, সব শেষে সুস্বাদু গরম গরম খাবার এলো এবং পরিবেশিত হলো। খুব মজা করে তৃপ্তির সাথে খেলাম - আলু দিয়ে মুরগীর ঝোল, সাথে ডালতো ছিলই। স্বাদে-গন্ধে ‘জেবি দা’র ডালের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়! খাবার মেন্যুতে শাকসবজি আরো দু’এক পদ থাকলে থাকতেও পারে, আমার মনে নেই। সেদিন খাবার যেমন উপাদেয় ছিল তেমনি গরমও ছিল মনে রাখার মতন। টিনের চালা থেকে সূর্যের খরতাপ আরও উত্তপ্ত হয়ে গায়ে এসে লাগছিল। খেতে গিয়ে টের পেয়েছি, কপালের ফুঁটি ফুঁটি ঘাম কপোল গড়িয়ে পড়ছে, দু’এক ফোঁটা যে খাবার পাতে পড়েনি তাই বা বলি কি করে! আমরা চলে আসার সময় আমন্ত্রয়িতাকে ধন্যবাদ দিয়েছি, তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি, কিন্তু চাষী সাহেবের মতন খাবারের দাম দেওয়ার কসরত করিনি। (চলবে)




লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ Email: awahid2569@gmail.com








Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Jul-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far