bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



আড্ডা
আবু এন. এম. ওয়াহিদ



আড্ডা দিয়ে অবসর সময় কাটাতে বাঙালির জুড়ি নেই। কি দেশে, কি বিদেশে, ছোট, বড়, ও মাঝবয়সী নারী-পুরুষ সব বাঙালির মধ্যেই কমবেশি আড্ডা-প্রবণতা দেখা যায়। শুধু ‘দেখা যায়,’ বললে বরং একটু কমই বলা হয়; বলা উচিত, অতি মাত্রায় দেখা যায়। অবাঙালিদের মধ্যেও যে আড্ডা একেবারে নেই তা বলা যায় না, কারণ বাংলা ছাড়াও হিন্দি ভাষায় আড্ডা শব্দের প্রচলন আছে। হিন্দিতে আড্ডার প্রয়োগ হয় বিশেষ্য (নাউন) অর্থে। বাংলায় কিন্তু আড্ডা ক্রিয়া (ভার্ব) এবং বিশেষ্য (নাউন) দুই পদেই ব্যবহৃত হয়। আড্ডার সংজ্ঞায়ন একটু কঠিন বৈকি। ইংরেজি শব্দ ‘গসিপ’ দিয়ে আড্ডাকে ঠিক বোঝানো যায় না। ‘গসিপ’ প্রধানত একটি নেতিবাচক শব্দ। বাঙালির আড্ডার কিছু খারাপ দিক থাকলেও একে পুরোপুরি ‘গসিপ’ এর সমার্থক বলা যায় না।

আড্ডা সাধারণত: একটি নির্মল ও নির্ভেজাল আনন্দের বিষয়, তবে এর ব্যতিক্রমও আছে যা আলোচিত হয়েছে নিবন্ধের শেষাশেষি। আড্ডা দিয়ে শুধু সময়ই কাটানো হয় না, আড্ডা থেকে অনেক সময় অনেক কিছু জানা যায়, শেখাও যায়। সহজ কথায় আড্ডা বলতে আমরা বুঝে থাকি, খোশ-গল্প, কথা-বার্তা, গপ্প-সপ্প, ইত্যাদি। আড্ডা সরাসরি কারো বিরুদ্ধে হয় না এবং আপাত দৃষ্টিতে এতে কারো কোনো ক্ষতি হওয়ারও কথা নয়। জ্ঞান-বিজ্ঞানের কথা থেকে শুরু করে ভ্রমণ-গল্প, দুঃসাহসিক অভিযান, প্রেমকাহিনী, ধর্ম, রাজনীতি, সমসাময়িক প্রসঙ্গ, সমাজ, শিল্প-সাহিত্য এর যে কোনো কিছুই হতে পারে আড্ডার উপাদান। গুরুতর এবং হালকা বিষয় সবই আলোচিত হয় আড্ডার আসরে। কেউ কেউ আবার রাশভারী কথাকে হালকা ভাবে রসিয়ে রসিয়ে আকর্ষণীয় করে আড্ডায় উপস্থাপন করতে পারেন। এ প্রসঙ্গে উদাহরণ স্বরূপ কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর কথা না বললেই নয়। এমনও লোক আছেন যারা একাধারে একের পর এক কৌতুক এবং চুটকি বলে আড্ডাকে জমিয়ে রাখতে পারঙ্গম।

যদি কেউ প্রশ্ন করেন, ‘আড্ডা কোথায় হয়?’ উত্তরে বলতে পারি, কোথায় হয় না আড্ডা? আড্ডার জন্য কোনো নির্দিষ্ট স্থান-কাল দরকার পড়ে না। আড্ডা বসতে পারে যে কোনো জায়গায় - খোলা আকাশের নিচে, যেমন খেলার মাঠে, পুকুরঘাটে, নদীর ধারে, লেকের পাড়ে, কিংবা পার্কে, গাছের ছায়ায় বসার বেঞ্চে। আবার আড্ডা হতে পারে ঘরে, ছাদের নিচে চার দেয়ালের ভেতরে, অফিসের কমন রুমে বা খাওয়ার ঘরে, হোটেলের লবিতে, রেস্টুরেন্টে, চায়ের দোকানে, কফি-শপে। কফি-শপে আড্ডা বলতেই আমার কানে ভেসে আসছে মান্না দে’র বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সেই গান ও তার সুরের মূর্ছনা -‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই..।’

বাঙালির মধ্যে আড্ডা পছন্দ করে না এমন লোক খুব কমই আছে। সামাজিক, রাজনৈতিক, পেশাগত, এমন কি ধর্মীয় কারণেও এক জায়গায় জড় হলে আমরা কোনো এক ফাঁকে আড্ডা জমাতে চাই। সুযোগ পেলে আমরা আড্ডার আসর বসাবই বসাব। আর না পেলে অন্তত সাইড লাইনে ছোট করে হলেও একটু আড্ডা মারতে আমরা কসুর করি না। যে জমায়েতে একেবারেই আড্ডা হয় না, তাকে অনেকের কাছে নিতান্তই নিরস ও নিরামিষ মনে হয়। সামাজিক দাওয়াত পার্টিতে গল্প-সল্প না হলে আড্ডা বিলাসী মানুষের কাছে মনে হয় যেন পার্টিই হল না। ওই সব অনুষ্ঠানে সাধারণত তিনটি পর্ব থাকে - দেখাসাক্ষাৎ, খাওয়াদাওয়া, এবং গল্পগুজব ও আড্ডা। কারো কাছে দেখাসাক্ষাতটাই মুখ্য, কেউ আবার নিতান্তই ভোজন বিলাসী, তবে বেশিরভাগ বাঙালির কাছে এ তিন পর্বের মধ্যে শেষেরটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য।

নির্ভেজাল আড্ডার খাতিরে বাঙালি দশ-বিশ মাইল দূরে বন্ধুবান্ধব বা পরিচিত জনের বাড়িতে উৎসাহভরে হর হামেশাই যায়, এক কাপ চা/কফি খায়, রাজা-উজির মারা আড্ডা দেয়, গল্প করে, প্রাণ খুলে হাসে, উপভোগ করে এবং তারপর নিজ ঘরে ফিরে আসে। বিদেশ বিভূঁইয়ে যেখানে বাঙালি বসতির ঘনত্ব কম সেখানে বিশ, তিরিশ, পঞ্চাশ, এমন কি এক শ’ মাইল ড্রাইভ করতেও অনেক আড্ডা-প্রিয় বাঙালি আপত্তি করে না। আজকাল লং ডিস্ট্যান্স টেলিফোন কল অনেক সস্তা হয়ে গেছে, তাই ঘণ্টার পর ঘনটা ম্যারাথন আড্ডা টেলিফোনেই সেরে ফেলা যায়। কেউ কেউ একাধিক লাইনে অনেক বন্ধুর সঙ্গেও একত্রে আড্ডা জমায়। প্রযুক্তি প্রসারের সাথে সাথে এখন ‘ই-মেল’, ‘ফেস বুক’, এবং টুইটারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিসরে আড্ডার গণ্ডি হয়ে গেছে সীমাহীন। আড্ডা বাঙালির এক জাতীয় নেশা, রীতিমত অ্যাডিক্শন বলা চলে। আমি এখানে বাঙালি বলতে হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে দুই বঙ্গের সব মানুষকেই বোঝাচ্ছি। অন্য সব ক্ষেত্রে আর যাই হোক না কেন, আড্ডার ব্যাপারে আমরা দুই বঙ্গ একেবারে এক ও অভিন্ন।

ইদানীং কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের বদৌলতে বাঙালির আড্ডায় নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। আজকাল ইন্টারনেটে প্রচুর আড্ডা হচ্ছে। পাঠকরা জেনে অবাক হবেন, সেদিন ইন্টারনেট ব্রাউজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম বাঙালির আড্ডার অনেকগুলো ওয়েব সাইট। কারো উৎসাহ থাকলে ওইসব সাইটে গিয়ে যখন তখন আড্ডা জমাতে পারেন। আপনাদের সুবিধার জন্য আমি সাইটগুলোর একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তুলে ধরছি - ‘আমাদের আড্ডা’, ‘বাংলা আড্ডাঘর’, ‘বাংলা আড্ডা’, ‘বাংলা গল্প বাংলা আড্ডা’, ‘আড্ডাবাজের বাংলাব্লগ’, ‘দেশি আড্ডা’, ‘বেঙলি আড্ডা’, ‘বাংলা আড্ডা পেপেরোনিটি’, আরো কত কিছু। এছাড়া ইউটিউবে আছে ‘আড্ডা বাংলা ফ্রেন্ডস’ লিঙ্ক ইত্যাদি, ইত্যাদি।

আড্ডাপ্রিয় বাঙালির এ স্বভাব নিয়ে অনেক সময় অনেক কিছুই ভেবেছি, কিন্তু কখনো লেখার তাগিদ অনুভব করিনি। আজ আড্ডা বিষয়ে লিখতে বসেছি আমার ইংল্যান্ড প্রবাসী বন্ধু মাহবুবের কারণে। এ প্রসঙ্গে আরেকজনের কথা না বললেই নয়। সে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী আমার আরেক বন্ধু আনিস। আজকের নিবন্ধের সব শেষ কোটেশনটির কথা সেদিন আনিসই আমাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তাই এখানে আমি আমার এ লেখার ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে চাই আমার প্রিয় বন্ধুদ্বয়ের প্রতি। এ লেখার জন্য আমি মাহবুবের কাছে অন্তত দু’ভাবে ঋণী। প্রথমত, রচনার সূত্রটা আমি পেয়েছি তাঁর কাছ থেকে এবং দ্বিতীয়ত, এ রচনায় আমি কিছু তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করেছি যা মাহবুবের কাছ থেকেই ধার করা। প্রথমে আসি সূত্রের কথায়। সূত্রটা যেভাবে পেয়েছি সেটাও আড্ডারই ফসল। মাহবুব থাকে ইংল্যান্ডের সেফিল্ড শহরে, আর আমি থাকি আটলান্টিকের ওপর পারে মার্কিন মুল্লুকে - টেনেসি অঙ্গরাজ্যের রাজধানী ন্যাসভিলে। মাহবুবের সাথে প্রায়ই আমার টেলিফোনে আড্ডা হয় - লম্বা লম্বা আড্ডা। এ সব আড্ডায় এমন কোনো বিষয় নেই যা আলোচনায় উঠে আসে না। তাঁর সঙ্গে আড্ডা আমি শুধু উপভোগই করি না, সময় সময় মাহবুবের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জানতে ও শিখতে পারি। কথা প্রসঙ্গে সেদিন মাহবুব আমাকে সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ ছবিটি দেখতে বলল। তাঁর কথামত ইউটিউবে গিয়ে আমি যথারীতি ছবিটি দেখলাম।

পাঠকদের মাঝে যারা ‘আগন্তুক’ দেখেননি তাঁদের জন্য সংক্ষেপে বলছি। এ ছবিতে একটি দৃশ্য আছে যেখানে সিনেমার প্রধান চরিত্র মনমোহন মিত্র, ৩৫ বছর বিদেশে নিরুদ্দেশ থাকার পর হঠাৎ ‘আগন্তুক/অতিথি’ হয়ে এসে উঠেছেন কলকাতায় তাঁর ভাগ্নির বাসায়। সেখানেই আড্ডা জমেছে তাঁরই ভাগ্নি, ভাগ্নি জামাই, জামাইর এক বন্ধু, রঞ্জন রক্ষিত ও রক্ষিত বাবুর স্ত্রী, এবং মিত্র বাবুর মধ্যে। ওই আসরে গল্প গুজবের এক পর্যায়ে মি. রক্ষিত ‘আড্ডার’ প্রসঙ্গ তুলে মিত্র বাবুকে বললেন, ‘আপনি তো অনেক দিন ধরে বিদেশে ছিলেন, অন্য অনেক কিছুর সাথে নিশ্চয়ই আড্ডাও খুব মিস করেছেন?’ রক্ষিত বাবু আগ বাড়িয়ে আরো কিছু কথা বলে ফেললেন। তিনি দাবি করলেন, ‘আড্ডা বাঙালির একচেটিয়া ব্যাপার এবং বাঙালিই আড্ডার আবিষ্কারক।’ মিত্র মশায় অত্যন্ত জ্ঞানী মানুষ। তিনি একথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালেন এবং বিনয়ের সাথে বললেন, ‘আমি আপনার বক্তব্য খণ্ডন করতে চাই। বাঙালি আড্ডার উদ্ভাবক নয়। অনেক আগে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে অনেক উন্নত মানের আড্ডা হতো গ্রিসের রাজধানী অ্যাথেন্সে। সেখানে আড্ডার আখড়া ছিল জিমনেশিয়ামে। সে যুগে অ্যাথেন্স-বাসী একই জায়গায় শরীর ও মনের ব্যায়াম করতো। ওই সব আড্ডায় আসর জমাতেন সক্রেটিস, প্ল্যাটো, অ্যালচিবায়ডেসের মত গুণীজন। তাঁদের আড্ডা থেকে সৃষ্টি হত অনেক উন্নত মানের শিল্প-সাহিত্য ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের তত্ত্বকথা।’

‘আগন্তুক’ সিনেমায়, সত্যজিৎ রায় তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরলেন আড্ডার ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত। আর এখান থেকে আমি পেলাম আড্ডা সম্পর্কে আজকের লেখার সূত্র। সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ সিনেমার ওই দৃশ্য যে জ্ঞানের জগতে আড্ডা বিষয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য দলিল হয়ে আছে তা আমি ঘুণাক্ষরেও জানতাম না। যখন ঠিক করলাম আড্ডা নিয়ে ঢাকার বাংলা কাগজের জন্য একটি কলাম লিখব তখন ইন্টারনেট ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে উইকিপিডিয়াতে পেলাম সত্যজিৎ রায়ের ‘আগন্তুক’ ছবির সূত্র। বুঝলাম সত্যজিৎ রায় শুধু সিনেমা জগতেরই একজন অপরিহার্য বিশাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন না, তিনি জ্ঞানের জগতে রেখে গেছেন তাঁর একটি শক্ত ও প্রতিষ্ঠিত অবস্থান।

প্রাচ্যের কথা বলতে পারব না, তবে পাশ্চাত্য জগতে অর্থাৎ ইউরোপ এবং আমেরিকার লোকজন বাঙালির মতন আড্ডা দেয় না এবং তার প্রশ্নই উঠে না। এ দেশে জন্ম নিয়ে বড় হওয়া আমার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে আমাকে সেদিন বলল, ‘আব্বু, আমেরিকার লোকজন বাঙালির মত আড্ডা দেয় না, দিতে চায়ও না, কারণ তারা কথাবার্তার ব্যাপারে আসলে খুবই ফর্মাল, কনজারভেটিভ, এবং বলতে গেলে অতিরিক্ত সাবধান। অপরিচিত অথবা অল্প পরিচিত লোকজনের সাথে দেখা হলে তারা ‘সফট টক’ করে। ‘হার্ড টকে’ যায় না’। ‘সফট টক’ বলতে বোঝায় সেসব আলাপ আলোচনা যাতে তর্ক-বিতর্কের অবকাশ থাকে না। পক্ষান্তরে ‘হার্ড টক’ অবধারিতভাবে বিতর্কের জন্ম দেয়।’ আমার মেয়ে আরো বলল, ‘এ দেশের লোক নতুন কারো সাথে অন্য কিছু ছাড়া, ‘সফট টক’ - মানে খেলাধুলা, দিনের আবহাওয়া, ইত্যাদি নিয়ে কথা বলতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এতে কথাও হল, আবার তিক্ততা সৃষ্টিরও কোনো ঝুঁকি থাকল না।’

একই প্রসঙ্গে বন্ধু মাহবুবের কাছে পেলাম আরো কিছু তথ্য-উপাত্ত। তার মতে, ‘ইউরোপ আমেরিকার লোকজন কারোরই ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করে না। তারা ধর্মবিশ্বাস ও তার চর্চা, এবং রাজনৈতিক মতামত বা মতাদর্শ ইত্যাদি ইস্যুকেও মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত বিষয় মনে করে। এ ছাড়া মানুষের বিয়ে-সাদী, ছেলেমেয়ে, পেশা - বিশেষ করে বেতন, আর্থিক অবস্থা, গাড়ি-বাড়ি কিনলে তার দাম ইত্যাদি কখনোই জানতে চায় না’। এই তালিকায় মাহবুব যোগ করল আরো কিছু বিষয়। ‘পশ্চিমারা মৃত্যু, কাপড়চোপড়, সাজগোজ, বেশ-ভূষা, ইত্যাদি নিয়েও কথা বলে না। অনেক সময় অনেক নারী-পুরুষ গায়ে ট্যাটু করে, অদ্ভুত রকমের জামাকাপড় পরে এতে করে কেউ কিছুই বলতে চায় না। কোনো কোনো পুরুষ হাতে বালা, কানে দুল, গলায় মালা পরে। অনেকে মাথায় মেয়েদের মত লম্বা চুল গজায়, রাবার ব্যান্ড দিয়ে বেঁধে রাখে। এগুলোও সব তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ সব নিয়ে কোনো পরিবেশেই কোনো কথা চলে না। জাতীয় বা স্থানীয় নির্বাচনে কে কাকে ভোট দিল এটাও আলোচনার বাইরে। মোট কথা এত বিষয় আলোচনার তালিকা থেকে খারিজ হয়ে যাওয়ার কারণে বাঙালির সাথে তাল মিলিয়ে তাদের আড্ডা দেওয়ার মত পর্যাপ্ত পরিমাণ রসালো উপাদান অবশিষ্ট থাকে না, তাই তাদের আড্ডাও ওইভাবে জমে না, জমার কথাও নয়। আর সে কারণেই হয়তো তারা বাঙালির মত এত আড্ডা-প্রবণ নয়।’

বাঙালির আড্ডা সব সময় যে নির্ভেজাল এবং নির্মল থাকে তেমনটি কিন্তু নয়। আড্ডা দিতে গিয়ে এবং অড্ডায় রঙ-তামাশা করতে গিয়ে বাঙালি অহরহ ঝামেলার মধ্যেও পড়ে। অনেক সময় কৌতুক করতে গিয়ে অনেক আড্ডাবাজ নিজের অজান্তেই বন্ধুবান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজনদের মনকষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ান এবং এতে করে দীর্ঘ দিনের গভীর সম্পর্ক স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ ছাড়া বিশেষ করে ধর্ম এবং রাজনীতি বিষয়ে আড্ডা দিতে গিয়ে অনেককে অহরহ বিড়ম্বনার মধ্যেও পড়তে দেখা যায়। এ রকম অবস্থায় উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়, কথা কাটাকাটি, ঝগড়া-ফ্যাসাদ, এমন কি গালাগালি, হাতাহাতি, মারামারিও হতে পারে। সেজন্য আড্ডার যেমন ভাল দিক আছে তেমনি আছে আড্ডার খারাপ দিকও।

অবশেষে আবারো বলছি, আড্ডার আসরে কথা বলতে এবং কথা শুনতে অনেকেরই ভাল লাগে, কারণ আড্ডায় থাকে উত্তেজনা, এবং এর মাঝে ব্যথা-বেদনা, ও স্ট্রেস-টেনশন ভুলে কিছুক্ষণের জন্য হাসিঠাট্টার মাধ্যমে মজে থাকা সম্ভব। তাই তো আড্ডায় মাদকতার স্বাদ পাওয়া যায়, শরীরে না হলেও আড্ডা মানুষের মনে নেশা ধরায়, তবে এখানে একটি কথা মনে রাখা প্রয়োজন, আড্ডা কিন্তু একেবারেই ঝুঁকি-মুক্ত নয়। আড্ডায় বিভোর হয়ে পড়লে যে কোনো দুর্বল মুহূর্তে একটি বেফাঁস কথা আড্ডাবাজের মুখ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। আর তেমনটি ঘটলে রাইফেল থেকে শট হওয়া বুলেটের মত মুখের কথা ফিরিয়ে আনা যায় না। ক্ষতি যা হওয়ার তা মুহূর্তেই হয়ে যায়। তাই আড্ডাপ্রিয় বাঙালিদের বলছি, আড্ডা ছাড়া থাকতে না পারলে আড্ডা এস্তেমাল করুন,

তবে বুঝেশুঝে করুন, ধীরে করুন, জিহ্বার ওপর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ রাখুন, কথা
বলুন - সাবধানে, খুব সাবধানে। আর, ‘ভাল কিছু বলার না থাকলে নীরব থাকুন।’ উপদেশটি আমার নয়, পাঠকগণ নিশ্চয়ই জানেন এ মূল্যবান কথাটি কার।



লেখক: আবু এন. এম. ওয়াহিদ; অধ্যাপক - টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি;
এডিটর - জার্নাল অফ ডেভোলাপিং এরিয়াজ; Email: wahid2569@gmail.com





Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Jan-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far