ড. ললিত মোহন নাথ স্মরণে
তুষার রায়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষক, গবেষক, বিজ্ঞানী, নিবেদিত সমাজসেবী ও ১৯৮৩-৮৬ সময়কালে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. ললিত মোহন নাথ গত ২রা জুলাই ২০১৬, শনিবার সকালে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের মধ্যে আছেন তাঁর স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে।
ড. নাথ স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সব পর্যায়ে বিরল মেধার পরিচয় দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে প্রথম স্থান নিয়ে স্নাতক (সম্মান) শেষ করে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। এরপর তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের আণবিক শক্তি কমিশনে কিছুদিন কাজ করেন। স্কটল্যান্ডের বিশ্ববিখ্যাত এডিনবারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রফেসর নিকোলাস ক্রেমারের তত্ত্বাবধানে পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। পদার্থবিজ্ঞানে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রফেসর ক্রেমার যুক্তরাজ্যের আণবিক কর্মসূচী বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ইনি পাকিস্তানের বিজ্ঞানী পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী আব্দুস সালামেরও পিএইচডি-র গাইড ছিলেন। ড. নাথ বিশ্বের বহু প্রখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ফেলো হিসেবে অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে যুক্ত ছিলেন।
আশির দশকের শুরুতে বাংলাদেশের অস্থিতিশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ হলের প্রভোস্ট হিসেবে তাঁর বলিষ্ঠ, ন্যায়পরায়ণ, আপোষহীন ও সময়োপযোগী প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ও দূরদর্শিতা সেই সময়ের ছাত্ররা আজও অসীম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। বিশেষত: ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর এসেম্বলি ভবনের টিভি রুমের ছাদ ধ্বসে ৪০ জন ছাত্র নিহত হবার দুর্ঘটনা-পরবর্তী সময়ে তাঁর অক্লান্ত ও পেশাদারী উদ্যোগ এবং কার্যকরী সমন্বয়সাধন সমকালের ছাত্রদের কাছে এক আলোকিত বাতিঘরের মতো চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।
তিনি বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটিরও সভাপতি ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে গুণমুগ্ধ প্রতিটি মানুষ গভীর শোকে মুহ্যমান। দেশ হারালো তার এক কৃতী সন্তানকে। আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।
তুষার রায়, ক্যানবেরা |