bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...

প্রবাসে বর্ষবরণ
রতন লাল কুণ্ডু


গত ১৯ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল টেম্পী পার্ক এ প্রবাসী বাঙ্গালীদের প্রাণের মেলা- বৈশাখী মেলা। প্রতি বছরের মত আট থেকে দশ হাজার লোকের সমাগম হয়েছিল এ মেলায়। বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনী আয়োজিত প্রশান্ত পাড়ের প্রবাসী বাঙ্গালীদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিগত ২০০৭ সাল থেকে অদ্যাবধি অত্যন্ত সফলভাবে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ মেলাটি সার্থক হওয়ার মূল কারণগুলো হল - এ মেলাটি সিডনীর অদূরে বাঙ্গালী বসতির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। দ্বিতীয়ত এ মেলাটিতে বাস-ট্রেন সহ সব পাবলিক ট্রান্সপোর্টের সুবিধা রয়েছে। আছে বিশাল ফ্রি পার্কিং এর সুবিধা। গেল বছরগুলোর পার্কিং এর অসুবিধা বিবেচনা করে এবারে আরও পার্কিং স্পট ভাড়া করা হয়েছিল। স্বল্পমূল্যে সেখানে আনলিমিটেড পার্কিং এর সুব্যবস্থা ছিল। চতুর্থত এই মেলার প্রবেশের জন্য কোন টিকেট বা অর্থের প্রয়োজন হয়না। এই মেলায় প্রবাসী বাঙ্গালীর চাহিদার কথা বিবেচনা করে রকমারি খাবার, শাড়ী, গহনা, বই, সিডি ও অন্যান্য স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। এই মেলার বিশেষ আকর্ষণ হল দেশজ উপকরণে এবং বঙ্গালী সংস্কৃতি বিকাশে মধ্য-দুপুর থেকে মধ্যরাত অবধি সু গ্রন্থিত ও সুপরিচালিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বৈষয়িক বৃত্তিতে আবদ্ধ নয় বলে এই মেলা বাঙ্গালীর প্রাণের মেলায় পরিণত হয়েছে ও সর্বজনীন রূপ পেয়েছে।

মেলা বাঙ্গালী সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। চিরায়ত বাঙ্গলী সংস্কৃতির মূল সুর হচ্ছে মিলন। এই মিলন মেলায় মানুষ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ভুলে সবাই একাকার হয়ে যায়। বাঙ্গালী জাতির রয়েছে এক গৌরবময় সাহিত্য ও সংস্কৃতির ইতিহাস। হাজার হাজার বছর ধরে গাঙ্গেয় এই অববাহিকার মানুষগুলো একটি জাতির জন্ম দিয়েছে তার নাম বাঙ্গালী জাতি। এ পৃথিবীতে ভৌগোলিক ভিত্তিতে দেশের নামের সাথে অনুসর্গ যোগ হয়ে জাতি পরিচিতি লাভ করে যেমন ইংল্যান্ড থেকে ইংলিশ, স্পেন থেকে স্প্যানিশ, আমেরিকা থেকে আমেরিকান, ইন্ডিয়া থেকে ইন্ডিয়ান জাতি। বিশ্বে বাংলাদেশই প্রথম দেশ এবং বাঙ্গালী জাতিই প্রথম জাতি যা কিনা মাতৃভাষা বাংলা থেকে উ™ভুত ও উদ্ভাসিত হয়েছে। এ নিয়ে আমরা গর্ব করতেই পারি।

এই মেলায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি এবোট, স্যাডো পার্লামেন্টরী সেক্রেটারি ফর ফরেন এফেয়ার্স ম্যাট থিসেল ওয়েইট এম.পি, টনি বার্ক এম.পি, লরি ফার্গুসন এম.পি ও মন্যবর হাই কমিশনার লে.জে মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (অব.) মেলার সাফল্য কামনা করে ও প্রবাসী বাঙ্গালীদের শুভকামনার বাণী প্রেরণ করেছেন। খারাপ আবহাওয়ার কারণে মেলার তারিখ ১২ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে অনেক উচ্চপদস্থ অতিথি পূর্ব সংশ্লিষ্টতার কারণে উপস্থিত হতে পারেননি। আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ সিডনীর সভাপতি, বর্ষীয়ান জননেতা গামা আব্দুল কাদির এবং সঞ্চালন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি জনাব সিরাজুল হক। মেলার উদ্দেশ্য, আদর্শ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়ে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন মেলার আহ্বায়ক জনাব গাউসুল আলম শাহজাদা। একে একে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ম্যারিকভিল কাউন্সিল এর সম্মানিত কাউন্সিলর মার্ক এডেলার, কাউন্সিলর ডেভিড লেয়ারী, লরি ফারগুসেন এম.পি, মান্যবর হাইকমিশনার লে.জে. মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী (অব:), ড. রতন কুণ্ডু, সিরাজুল হক এবং সংগঠনের সভাপতি ও মেলা সমন্বয়কারী জনাব গামা আব্দুল কাদির। তাদের সবার বক্তব্যেই প্রবাসী বাঙ্গালীদের সুখ, সমৃদ্ধি ও উত্তরোত্তর উন্নতি কামনা করেন। ধন্যবাদ জানান আয়োজকদের যারা অস্ট্রেলিয়ার মাল্টিকালচারালিজম কনসেপ্টকে লালন করে নিজস্ব সংস্কৃতি দিয়ে তাকে ধনী করেছে।
মেলার সাংস্কৃতিক পর্ব ও আলোচনা অনুষ্ঠান প্রতিবছরের মত এবারেও গ্রন্থনা ও পরিচালনা করেছেন ড. রতন কুণ্ডু। উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন কবি শাফিন রাশেদ, শ্যমলী, অর্পিতা ও রতন কুণ্ডু। মনোরম লেক পরিবেষ্টিত ছায়া সুনিবিড় পরিবেশে বেলা ২.৩০ মিনিটে শুরু হয় বৈশাখী আহ্বানী সংগীত “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” অংশগ্রহণে ছিলেন সিডনীর প্রথিতযশা শিল্পী রীতা করিম, নিলুফা ইয়াসমিন, অজন্তা মৈত্র, অরুণ মৈত্র, কাইয়ুম পারভেজ, রুহুল ও অন্যান্য সহ-শিল্পীবৃন্দ। শিল্পীরা পরপর তিনটি কোরাস পরিবেশন করেন। এর পরপরই শুরু হয় সিডনীর কবি, লেখক ও আবৃত্তিকারদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান “কবিতাতো কৈশোরের স্মৃতি”। সঞ্চালনা করেন কবি শাফিন রাশেদ। অংশগ্রহণে ছিলেন ঔপন্যাসিক রতন কুণ্ডু, কাইয়ুম পারভেজ, কবিতা পারভেজ, লরেন্স ব্যারেল, শাখাওয়াত নয়ন, আশীষ বাবলু, আল নোমান শামীম ও সিরাজুল হক। আলোচনা অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন গামা আব্দুল কাদির। স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সেই বিখ্যাত চরম পত্রের লেখক এম. আর আকতার মুকুলের জীবনাবসানের পর তার জীবনী নিয়ে প্রকাশিত গ্রন্থের রচয়িতা ড. কাউয়ুম পারভেজ এর বই এর উপর একটি কথিকা পাঠ করেন আশীষ বাবলু। এ ছাড়া অন্যান্য বক্তারা তাদের প্রকাশিত বইয়ের উপর আলোচনা করেন ও কবিতা আবৃত্তি করেন।

এর পরপরই শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পর্যায়ক্রমে সংগীত পরিবেশন করেন শিশু শিল্পী মোনতাহার মুন, অজন্তা মৈত্র, অরুণ মৈত্র, নিউক্যাসেল থেকে আগত শিল্পী ফাবিহা। এর পর “আমাদের“ গান নিয়ে আসেন সিডনীর উঠতি ব্যান্ড এর লেমন, আশিক, সুজন ও অন্যান্য কুশীলববৃন্দ। “সলো কান্ট্রি সং“ এ ইভানা ও মিঠু এর চমৎকার পরিবেশনা দর্শক শ্রোতাদের আপ্লুত করে। বরাবরের মত ঐকতান এর নিজস্ব পরিবেশনা “গানে গানে বাংলাদেশ” ছিল অনবদ্য ও উপভোগ্য। আনিসুর রহমান ও সহ শিল্পীদের উপস্থাপনায় সুললিত ছন্দে গানের সুরমালায় সবাই বিমোহিত হয়ে যায়। এর পর নামাজের বিরতির পর শুরু হয় সিডনীর প্রতিষ্ঠিত শিল্পী কোকিল কণ্ঠী গায়িকা অমিয়া মতিন, রীতা করিম, নিলুফা ইয়াসমিন ও রুহুল এর অনবদ্য পরিবেশনা। কাঙ্ক্ষিত কৃষ্টি ব্যান্ড এর পরিবেশনা সবাইকে মাতোয়ারা করে তোলে। উল্লেখ্য কৃষ্টি ব্যান্ড বরাবরের মত এবারেও মেলার স্টেজ, লাইট ও মিউজিক নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ছিল। সঞ্জয় ও তার টিম সবার সংগীত পিপাসা অনেকটাই পূরণ করতে সক্ষম হয়েছিল। বরাবরের মত এবারেও তবলা ও অন্যান্য য›ত্র সংগীতে ছিলেন জন্মেজয় রায়, শাজাহান বৈতালিক ও মিঠু।

এর পর শুরু হয় বহুল কাঙ্ক্ষিত ও প্রতীক্ষিত ধ্রুপদী ও লোকজ নৃত্য অনুষ্ঠান। একে একে নৃত্য পরিবেশন করেন ঋতুপর্ণা, অর্পিতা সোম, সুমাইয়া ফাহমিদা ইমা এবং তারপর অর্পিতা সোম এর নাচের স্কুলের পরিবেশনা দর্শক ¯শ্রোতাদের উদ্বেলিত করে। প্রতিবছরের মত এবারেও আতিক হেলাল ও মিতা হেলাল এর সংগীত সন্ধ্যা অনেক উপভোগ্য ছিল। সময়ের স্বল্পতার কারণে এ সংগীত দম্পতি মনের মত করে সবাইকে গান শোনাতে না পারার জন্য আহত হয়েছেন। মেলার বিশেষ আকর্ষণ জিজি ট্রিপ ব্যান্ড এর বেল্লাল ও তার দল চমৎকার সংগীত পরিবেশন করেছে। দর্শকরা অভিমত ব্যক্ত করেছে যে পরর্বতী বছর ডিজি ট্রিপ, স্বপ্ন ও মাত্রা ও অন্যান্য জনপ্রিয় সংগীত শিল্পীদের গান যথাসময়ে উপস্থাপনার জন্য। দর্শক শ্রোতারা সব ব্যান্ড সংগীত, একক গান, নাচ ও দলীয় পরিবেশনার পরে নির্ধারণ করার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। মেলার শেষে আহ্বায়ক গাউসুল আলম শাহাজাদা স্পন্সর, বিজ্ঞাপন দাতা, স্টল মালিক, সিডনীর সকল মিডিয়া, মেলায় আগত সবাইকে ও মেলার শুভানুধ্যায়ীদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি আগামী বছর ১১ই এপ্রিল আবার সবাইকে টেম্পী মেলায় আসার আমন্ত্রন জানান। একটি চমৎকার সংগীত সন্ধ্যার রেশটুকু সাথে নিয়ে মধ্যরাত পার করে দর্শক শ্রোতারা যে যার ঘরে ফিরে যান।





Share on Facebook               Home Page             Published on: 4-May-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far