bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


খ. ম. ফারুখ শ্রদ্ধাঞ্জলি
ড. স্বপন পাল


আগের অংশ (দ্বিতীয় অংশ)

বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল ফিরে আসলো সমাবর্তন মণ্ডপে। কোনরকম পূর্বপরিকল্পনা বা প্রশ্ন ছাড়াই একটি মহাসভা শুরু হয়ে গেল। ক্লান্ত শ্রান্ত জনতা সবাই উপস্থিত। সবাই জানতে চায় কি হতে যাচ্ছে এর পর; কি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের; সবার পদত্যাগের কারণে জরুরী কার্যক্রম যেমন পশু-পাখীর খামার, সব্জী বাগান, বিদ্যুৎ, চিকিৎসা-কেন্দ্র, যানবাহন এসব চলবে কেমন করে? পর দিন ক্লাসরুমের তালা খুলবে কে; গবেষণাধীন ল্যাবরেটরির কাজ কি করে হবে; হোস্টেলে মেসে খাবার সরবরাহ হবে কি না? এসব প্রশ্ন এক এক করে অনেকের মনেই উঁকি মারছিল। আর উপাচার্য মহোদয় অনেকটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মঞ্চে বসে সভার পৌরহিত্ব করছেন। একদিকে অব্যাহতি অপরদিকে দায়িত্ববোধ। একদিকে সরকারের কাছে জবাবদিহিতা অপরদিকে ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীর দাবী। এমনই একটি সময়ে তিনি আমাদের মত ক’জন ছাত্রনেতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রেখেছিলেন!

চলছে জনসভা। একের পর এক বক্তৃতা দিয়ে যেতে বলা হলো আর এদিকে তৈরি হতে থাকল এই অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার রূপরেখা। তৈরি হল সার্বজনীন কমিটি। শুধুমাত্র এই কমিটির নির্দেশে চলবে বিশ্ববিদ্যালয়। এর প্রধান হলেন উপাচার্য আর সদস্য হলেন ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রতিনিধি। সতেরটি নির্দেশ জারী করা হল। মূল উদ্দেশ্য হল কোনভাবেই যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জান মাল এবং জরুরী কার্যকলাপ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা প্রশাসনিক আদেশ বলে কোনকিছুই থাকলনা। অর্থাৎ পুরোটাই একটা অভূতপূর্ব, অপরিচিত পরিস্থিতি।

আন্দোলন বেশ দ্রুত পরিবর্তনশীল অবস্থার মধ্যদিয়ে আগাতে থাকল। ইতিমধ্যেই আমাদেরকে ময়মনসিংহ সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ কমান্ডার সেনানিবাসে আপোষ সভার খবর পাঠিয়েছে। আমরা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শুধু তিন দফা দাবী ঘোষণা করলাম। এগুলো হলো সামরিক শাসন প্রত্যাহার; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারী নির্যাতনের তদন্ত ও বিচার এবং সার্বিক বর্বরোচিত হামলার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে এরশাদকে নিজে; অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলায়তন এভাবেই চলতে থাকবে। জনসভায় সমবেত সবাই এসব ঘোষণাবলী কোন প্রশ্ন ছাড়াই সমর্থন করলো। সিদ্ধান্ত হলো পরদিনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট চলবে এবং মিছিল মিটিং চলতে থাকবে।

সম্পূর্ণ পরিস্থিতি কেন্দ্রীয় সম্মিলিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কম্যান্ড, তথা ফারুখ ভাই কে জানানোর উদ্দেশ্যে এক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের বাসায় যাই ট্রাংক-কল করতে। সেখানে ভয়েস অব অ্যামেরিকার রাত ১০.৩০ মিনিটের এর সংবাদে পুরো ঘটনাবলীর সত্য বিবরণ শুনে বেশ অবাক হয়েছিলাম। ফারুখ ভাইকে অনেক রাতে ফোনে পেয়েছিলাম। ফারুখ ভাই অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পুরো ঘটনাপ্রবাহ শুনে আন্তরিক অভিনন্দন জানালেন। আন্দোলনের সর্বপ্রথম কর্মসূচীর সাফল্যের পুরোটাই আমাদেরকে দিয়ে বললেন পরদিনের কর্মসূচী যেন ঠিক থাকে। পরদিন তিনি কয়েক জন নেতৃবৃন্দ সাথে নিয়ে চলে এলেন ময়মনসিংহ।

চলতে থাকল ধর্মঘট। এরই সাথে সাথে সামরিক কর্তৃপক্ষের নরম গরম হুমকি আবার পাশাপাশি আপোষের লোভ। আমরা অনড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলায়তন এ’ভাবেই চলতে থাকল। তৃতীয় দিনের জন্য চলছে ধর্মঘট, তবে তা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সীমাবদ্ধ থাকল; ট্রেন লাইন মুক্ত। এদিকে আমাদের দাবি এক কেন্দ্রে ঘনীভূত হতে থাকল; আর তা হল এরশাদ ছাড়া আর কেউ এই বর্বরোচিত ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইলে আমরা তা মেনে নেবো না। একই মত দিলেন ময়মনসিংহ শহরের নেতৃবৃন্দ, যাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রের সাথীর মত আমাদের পাশে ছিলেন সবসময়।

যতই সময় গড়াতে থাকল ততই বিভিন্ন রকমের টানাপোড়ন ও জটিলতা এসে যেতে পারে এমন আগাম সাবধান-বাণী দিলেন ফারুখভাই। তিনি এ ও বললেন, যদি এরশাদ পুরোপুরিভাবে ক্ষমা না চান তবে আমরা যেন সেভাবে মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। কেউ কেউ এই পরামর্শকে আপোষকামীতা বলে আখ্যায়িত করলো। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে যাঁদের পরামর্শকে আমরা মূল্য দিতাম তাঁরাও একই কথা বললেন। এমন বিচক্ষণতা এই বয়সের একজন ছাত্রনেতা কিভাবে ধারণ করতেন ভাবলে অবাক হই। ফারুখ ভাই জানতেন যে একটি সুদীর্ঘ আন্দোলনের এই সূচনালগ্নে দ্রুত, তাৎপর্যপূর্ণ এবং সম্মানসূচক বিজয় খুব প্রয়োজন। হোক তা ছোট বিজয়। আমার বিশ্বাস এই পূর্ব মানসিক প্রস্তুতি না থাকলে হয়তো আমাদের আন্দোলন বিপথে ধাবিত হতো। আমরা একটা হতাশাজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যেতাম।

পরদিন এরশাদ ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট এসে প্রথম মিটিং করলেন সেনা কর্মকর্তাদের সাথে এবং সেখান থেকে ফোন করে প্রথমে উপাচার্য ও পরে ছাত্র নেতাদের কাছে প্রোক্টর ও ছাত্রদের হয়রানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করলেন কিন্তু ‘ক্ষমা’ ঠিক চাননি। আমরা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী সম্মত হলাম এবং তারপরই আন্দোলনের অবসান ঘটলো পঞ্চম দিনের মাথায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাভাবিক জীবন ফিরে এলো।

এরশাদের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের সূচনালগ্নে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহাসিক অবদান পরবর্তীতে ধাপে ধাপে এরশাদের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্রের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। কোন প্রাণহাণী ছাড়াই এমন একটি কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষা সম্মিলিতভাবে উৎরাতে পেরে ভাল বোধ করেছি। তবে সেই সময়ে ফারুখ ভাই যদি পেছন থেকে শক্তি-সাহস ও বুদ্ধি-পরামর্শ না দিতেন এবং আমদের হাত ধরে না রাখতেন তাহলে এমন একটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া অসম্ভব ছিল।

ফারুখ ভাই দীর্ঘদিন তৎকালীন ছাত্র রাজনীতিতে একজন অতি জনপ্রিয় ব্যক্তি ও আপোষহীন নেতা হিসেবে সর্বজন বিদিত ছিলেন। সেই থেকে তিনি আমার রাজনৈতিক জীবনোধ্যায়ের হিরো হয়ে রইলেন। তাঁর মৃত্যু বার্ষিকীর এই লগ্নে তাঁকে আবারও জানাই লাল সালাম।



আগের অংশ


[লেখক গত ২০ বছর যাবত অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। পেশায় একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী ও সরকারী কর্মচারী এবং সমাজকর্মী ]





Share on Facebook               Home Page             Published on: 26-Jun-2015

Coming Events:



Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far