bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



ছোটবেলার স্মৃতি (২য় পর্ব)
সুতপা বড়ুয়া



< আগের পর্ব পরের পর্ব >


আমার আজকের এই 'আমি' হয়ে ওঠার পেছনে আমার পারিপার্শ্বিক, আমার বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজন এবং সবার ওপর আমার মা বাবার অবদান তো অবশ্যই আছে, সেটা খুব ভালো করে বুঝি যখন আমার নিজেরই কোনো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্লেষণ করি। এমনটা কেন করলাম/ভাবলাম? তখন পিছন ফিরে দেখি, অনেক দিন আগে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা হয়ত মনের অজান্তেই বিরাট একটা ছাপ ফেলে গেছে, যেটা সেসময় বুঝতে পারিনি।

বিলেত থেকে ফিরে বাবা যখন দার্জিলিং এর Gumti Tea Estate এ Manager হিসেবে যোগদান করলেন, প্রথমে চেষ্টা করলেন ওখানকার নামকরা St Paul's School এ আমায় ভর্তি করতে। ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম কিনা মনে নেই, কিন্তু পরে জেনেছি ভর্তির জন্য 'Donation' চাওয়ায় বাবা রাগ করে আমায় ভর্তি করান নি, অথচ বাবারই plantation এর মাড়ওয়ারি cashier এর মাথায় চুপচুপে করে তেল দেওয়া ছেলেটা ঠিকই ভর্তি হয়ে গেছিল। সে যাহোক, স্কুল নেই বলে লেখাপড়াও নেই। দার্জিলিং এ আমার দিনগুলো পাহাড়ি ছাগল-ছানার মতই লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে কেটেছে। কিছুদিনের মধ্যেই আসাম এর আরেকটা চা বাগানে আরো ভালো চাকরি পেয়ে আমাদের নিয়ে বাবা সেখানে চলে এলেন।

এখানেও স্কুল এর অবস্থা তথৈবচ...এবার বাবা কলকাতার কাছেই চন্দন নগর এর বিখ্যাত St Joseph's এ ভর্তি করে দিলেন। হোস্টেলে থাকব আর লেখাপড়া শিখব, self sufficient হয়ে বেড়ে উঠবো, এটাই নিশ্চয়ই চেয়েছিলেন বাবা, কিন্তু অত অল্প বয়েসে মা বাবাকে ফেলে হোস্টেলে থাকাটা আমার ঠিক সয় নি। স্বাস্থ্য বেশ খারাপ হয়ে গেছিল এবং নির্দিষ্ট 'পেরেন্টস ডে' তে কলকাতা থেকে আমায় দেখতে গিয়ে আমার দিদিমা নাকি খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন। বাড়ি ফিরেই বেশ কড়া করেই আমার মাকে একটা চিঠি লিখে পাঠালেন। মা'র মুখে সে গল্প বার বার শুনেও আজো শুনতে ভালো লাগে.... দিদার চিঠির মর্মার্থ ছিল, 'বৃথাই তোমাকে (আমার মা'কে) লেখা পড়া শিখিয়ে graduate করেছি। একটা দুধের শিশু কে লেখাপড়ার জন্য দূরদেশে গিয়ে প্রাণ বিসর্জন দিতে হবে?' সেই চিঠি পড়ে কাঁদতে কাঁদতে মা বেয়ারা কে বলেছিলেন বাবা কে অফিস থেকে ডেকে নিয়ে আসতে। বেয়ারা বেচারা কি বুঝে কি বলেছিল কে জানে, বাবা নাকি গাড়িতে না উঠে দৌড়াতে দৌড়াতে বাংলো তে এসে মাকে জিজ্ঞেস করেন 'কি হয়েছে মেয়ের?' Bottom line : পুনর্মূষিকোভব: ঘরের মেয়ে গুটি গুটি পায়ে আবার ঘরে। No লেখাপড়া, nothing. মা অবশ্য home schooling করিয়েছেন, তবে তা যৎসামান্য। মা বাবা দুজনেই তখনকার দিনের Calcutta University র গ্র্যাজুয়েট, আর আমি কিনা লেখা পড়া না শিখে চা বাগানের জঙ্গলে বেশ 'জংলি' হয়ে বেড়ে উঠছি। আমার যে তাতে খুব খারাপ লাগছিল, তা নয়, তবে বিধি বাম। আমাকে শিক্ষিত করে তোলার এর পরের প্রচেষ্টা : কবিগুরুর 'শান্তিনিকেতন' .

আমার বয়েস তখন মেরে কেটে সাত হবে হয়ত। আসামের চা বাগান থেকে শান্তিনিকেতনে চিঠি লিখে, কবে Admission Test হবে, থাকার কি ব্যবস্থা হবে, সব ঠিক করে কলকাতার মামাবাড়িতে জানানো হলো যে এদিক থেকে আমাকে প্লেন এ তুলে দেওয়া হবে, ওদিক থেকে যেন কেউ আমাকে রিসিভ করে এবং টেস্ট এর আগের দিন ট্রেনে করে বোলপুর (শান্তিনিকেতন) নিয়ে যায়। মামার বাড়ি ছিল যৌথ পরিবার। দায়িত্ব পেয়েছিল আমার মা'র খুড়তুত ভাই, আমার অতি প্রিয় 'ফুল মামা'। আমার সেজ্দিদার নিজের হাতে বানানো অনেক গুলো ঝিনুকের সাদা বোতাম গেঁথে গেঁথে তৈরি একটা ছোট্ট হ্যান্ডব্যাগ এর ভেতর আমার নাম, মামাবাড়ির ঠিকানা, বাবার নাম + চাবাগানের টেলিফোন নম্বর লিখে প্লেন এ তুলে দিলেন মা বাবা। প্লেনের Air Hostess, Captain দের জানানো হয়েছিল একা একা একটা ছোট্ট মেয়ে শিলচর থেকে কলকাতা যাচ্ছে আর আমার বয়েসটা খেয়াল করলে সেটা বেশ একটা unique ব্যাপার ছিল বলেই, সারাটা পথ আমি অনেক special treatment পেয়েছিলাম। হোস্টেসরা তো Lolly/Chocolate এর ওপরেই রেখেছিল এছাড়া তারা আমাকে ককপিট এর ভেতরেও নিয়ে যায় এবং আমার মুখে ইংলিশ শুনে পাইলট এতই ইম্প্রেস্ড হয়েছিলেন যে গুয়াহাটি (তখন বলতাম গৌহাটি) তে refuelling করার জন্য যে break journey হয়,তাতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে তারা লাঞ্চ ও করেছিলেন। এখনো সেসব স্মৃতি এতটুকু মলিন হয় নি।

আমি আরও ছোট থাকতেই বাবা নাকি শান্তিনিকেতন থেকে prostpectus আনিয়ে রেখেছিলেন, এবং সেই পুরনো prostpectus এর ওপর ভিত্তি করেই আমাকে পাঠালেন 'বিশ্বভারতী' র স্কুল সেকশন 'শ্রীনিকেতন'এ পরীক্ষা দেওয়ার জন্য। ইতিমধ্যে যে শ্রীনিকেতনে English Medium আগের মত সব ক্লাসে নেই, ততদিনে শুধুমাত্র IX & X এই সে সুযোগ আছে, সে খবর আর নেওয়া হয় নি। তাই আমি জীবনেও যে মাধ্যমে লেখাপড়া করিনি, সেই মাধ্যমে বেশ হাস্যকর একটা ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে, ভর্তি হতে না পেরে, ঘরে ফিরে এলাম। সত্যি বলতে কি, একটুও খারাপ লাগে নি, কারণ যাওয়ার আগে বাবা আমাকে শান্তিনিকেতন এর খোলা আকাশের নীচে,গাছের তলায়, সবুজ ঘাসে বসে, 'আমাদের শান্তিনিকেতন' গান গেয়ে গেয়ে ক্লাস করার যে mental picture টা এঁকে দিয়েছিলেন, ওখানে যাওয়ার পর রুক্ষ লাল মাটি, ধুলো আর ফ্যাকাসে ঘাসের রং দেখে আমি খুবই হতাশ হয়েছিলাম। বাবা নিজেও নাকি Agriculture নিয়ে লেখাপড়া করেছিলেন শান্তিনিকেতন এ চাকরি করবেন বলে। নিজে পারেন নি, আমাকে দিয়েও হলো না, তারো আরো অনেক বছর পরে, আমার ছোট বোনকে বিশ্বভারতী তে বাংলায় Honours, Masters করিয়ে বাবার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয়েছিল।

ক্রমশ:


সুতপা বড়ুয়া, সিডনী প্রবাসী ইংরেজী শিক্ষিকা (SWSI TAFE)
sutapa.barua@live.com



< আগের পর্ব পরের পর্ব >






Share on Facebook               Home Page             Published on: 10-Nov-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far