bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












মায়ের কাছে মেয়ের চিঠি


মা,

অনেকদিন থেকেই ভাবছি তোমাকে একটা চিঠি লিখব কিন্ত এই ই-মেইল আর ফোনে সবসময় কথা হয় বলে কিছুতেই আর লেখা হয়ে ওঠে না। আজ ড্রয়ার গোছাতে গোছাতে বাবার নাম লেখা একটা খাম পেলাম আমাদের চাটগার বাড়ির ঠিকানা লেখা যেটা কোনো কারনে আর পোস্ট করা হয় নি --- আর কখনো হবেও না।

বাবা নেই তবু দিন, মাস, বছর ঘুরছে,কিন্তু সময় থাকতে সংকোচ করে কত কথা বলা হয় নি বলে খুব মন খারাপ হয়, তাই আর সময় নষ্ট না করে লিখতে বসে গেলাম। যদিও তোমাকেই লিখছি, কিন্তু এর প্রতি লাইন এই বাবাও রয়েছে।

মনে পড়ছে একেক বয়সে তোমার আর বাবার সঙ্গে আমার দিন গুলোর কথা। কখনো বাবাই ছিল আমার বন্ধু আর বকাবকি করতে বলে তোমার চাইতে বাবাকে আরও বেশি ভালো লাগত। তারপর যখন নিজের ছেলে মেয়ে জন্মালো, বুঝতে পারলাম মা কি! তখন কিন্তু তোমার সঙ্গে সম্পর্ক টা বদলে গেছে এবং তোমার পক্ষ হয়ে বাবার সঙ্গে কত ঝগড়াও করেছি। কত খুটিনাটি ব্যাপার নিয়ে হয়ত অনেক বড় কথাও বলে ফেলেছি তোমাদের। কষ্ট দিয়েছি অনেক সময় কিন্তু তারপরেও জানি সব অপরাধ ক্ষমা করে বিপদে, প্রয়োজনে, ভরসা দেবার জন্য তোমরা আছ। এভাবে ভেবে ভেবে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম যে এর মধ্যে থেকে একজন যে 'নেই' হয়ে যেতে পারে, কল্পনাও করি নি। অথচ কয়েকবারই তো বাবার স্ট্রোক, বাই -পাস, এরকম বড় বড় ব্যাপার হয়েছে; সেই যে একবার বাবা সব আত্মীয় স্বজনকে ই-মেইল করে অনেকটা বিদায়ই নিয়ে ফেলেছিল, তখনও কিন্তু একবারের জন্যও মনে হয় নি বাবার কিছু হবে। সত্যি বলতে কি, বাবার শরীরটা যে ভিতরে ভিতরে কতটা খারাপ হয়ে পরেছিল সেটা বাবাও কখনো বুঝতে দেয় নি আর নিজেদের ব্যস্ততার মাঝে সেটা নিয়ে বিশেষ করে ভাবারও সময় পাই নি। তাই বাবার চলে যাওয়াটা বড় unexpected ছিল। আমি যদিও অনেকের মত প্রচন্ড রকম কান্না কাটি করি নি, কিন্তু তার একটা কারণ ছিল আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না বাবাকে আর কখনো দেখব না। বাবা আর নেই! এখনো যখনি ভাবি আর কখনো বাবার সঙ্গে কোনো কথা share করতে পারব না, বাংলাদেশ/কলকাতা বেড়াতে গেলে সকালে উঠে ব্রেকফাস্ট এর টেবলএ বাবাকে খুটুর খাটুর করতে দেখব না, তখনি চোখ জ্বালা করে গলাটা টনটন করে ওঠে আর দুই চোখ ভিজে যায়।

প্রতিদিনের কত কিছুতেই যে বাবা মিশে আছে।। সকালে মর্নিং ওয়াক এ বের হয়ে স্কুল ইউনিফর্ম পরা অস্ট্রেলিয়ান ছ্লেপেলেদের দেখলেই মনে পরে ছোটবেলায় লন্ডন এ ছোট ছোট ব্রিটিশ বাচ্চা দেখলেই বাবা বলত-- 'ওই দেখো, লাল দাদা!', কামিনী ফুলের বা হাসনু হেনার ঝোপ দেখলে মনে পরে চাটগার বাড়ির টানা বারান্দায় বাবা কত রকমের সুগন্ধি ফুলের গাছ লাগিয়েছিল ওখানে বসে ফুলের গন্ধ পাবে বলে।

গ্যারাজ সেল এ গিয়ে রান্নাঘরের কাজে লাগে এমন যন্ত্রপাতি দেখলেই নাড়াচারা করতে ভালো লাগে আর ভাবি, এরকম নতুন কিছু দেখলেই বাবা সেটা গড়িয়াহাট থেকে কিনে আনত। আমার ক্যাকটাস আর পাতাবাহারগুলোতে রোজ জল দিতে দিতে ভাবি এটাও আমি বাবার থেকেই পেয়েছি। গায়ের লাল লাল তিল, নাকের ডগার সুপুরি, বড় কপাল, এরকম আরও আরো কত কিছুই রোজকার দিনগুলোতে বাবাকে মনে করিয়ে দেয় সারাক্ষণ। রসুন ছোলার সময় মনে পরে শাওনকে বাবার জোর করে রসুন খাওয়াবার চেষ্টা, কারী পাতা দেওয়া কোনকিছু বা ইডলি, দোসা, অথবা বালিগঞ্জ ফাড়ির 'ধাবা' বা লর্ডস এর মোড় এর 'হাভেলি' দেখলে কি বাবার কথা মনে না পরে উপায় আছে? এই লিস্ট বিশাল বড়। জীবনের প্রতিটা কোনাতেই কোথায় বাবা নেই।

ঠিক তেমনি ভাবেই সবকিছুর সঙ্গে তুমিও জড়িয়ে আছ মা। হয়ত ব্যস্ততার জন্য মুখ ফুটে তোমাকে বলার সুযোগ করে নিতে পারিনি আমরা এতদিন, কিন্তু তুমি তো জানো আমি বা টুম্পা তোমাকে কতটা ভালবাসি, জানো না? মুগ ডালে আদা কুচি আর জিরে ফোড়ন দিতে তুমিই শিখিয়েছ, ছানার ডালনা মানেই তুমি; গুছিয়ে চিঠি লিখতেও তোমার থেকেই শেখা। বাংলা পরীক্ষায় কক্ষনো বাগধারা পড়তে হয় নি কারণ তোমার মুখে সবসময় শুনে শুনেই আমাদের বিস্তর জানা ছিল। ছোট বেলায় যখন ভালো করে উপলব্ধি করার ঠিকমত বয়স হয় নি, তখন থেকেই তোমার মুখে শোনা সঞ্চয়িতার গল্প-কবিতা গুলো শুনতে শুনতে আবৃত্তির দিকে ঝোঁক গেছে, হয়ত শাওনএর আবৃত্তির অংকুরোদগমও সেখান থেকেই। তোমার সঙ্গে মহিলা পরিষদ এর মিটিং মিছিলে যেতে যেতেই হয়ত সোসাইটি এন্ড কালচার পিয়ার প্রিয় সাবজেক্ট। পিয়ার গানের গলাও তো তোমারি থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া। যখনি কোথাও ''শাওন আসিল ফিরে', 'মধুর আমার মায়ের হাসি', 'আমি অকৃতি অধম', 'ঝড়ের কাছে রেখে গেলাম আমার ঠিকানা।।' এই গান গুলো শুনব, তোমার কথা কি না ভেবে পারব?

দেখতে দেখতে অনেক গুলো বছর পার হয়ে গেল, তোমাদের সঙ্গে কাটানো সময়ের প্রায় দ্বিগুন সময় ধরে তোমাদের সঙ্গে থাকি না, কিন্তু সেটা শুধুই শারীরিক বা ভৌগলিক দুরত্ব। মনের মনিকোঠায় তোমরা সবসময় আমার সঙ্গে সঙ্গেই আছ আর সবসময় থাকবে।

আরও অনেক কিছু মনে পড়ছে, কিন্তু সব লিখে শেষ করা যাবে না। শুধু এইটুকু বলব, আমরা তো জন্মান্তর বাদে বি:স্বাস করি, আর নির্বাণও কিছু এই জীবনেই পাচ্ছি না। আর শুনেছি প্রিয় জনেরা নাকি জন্মে জন্মে কাছাকাছি থাকে, তাই আগামী জন্মেও আবার সব প্রিয়জনদের মাঝে আমরাও মিলে মিশে থাকব।

তবে এখনো এই জীবনের বাকি দিনগুলো সবাই হেসে খেলে, ভালোবেসে, একে অন্যকে কষ্ট না দিয়ে সুন্দর করে বেঁচে থাকতে যদি পারি, আর কি চাই?

ভালো থেক মা। কথা তো সবসময়ই হচ্ছে, কিন্তু না বলা কথা গুলো তুমিও শুনতে পাও, আমিও পাই।

পিকলু

(সুতপা বড়ুয়া)




Share on Facebook               Home Page             Published on: 3-Feb-2010

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot