bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













কি শেখাচ্ছি আমরা আমাদের সন্তানকে?
সুতপা বড়ুয়া



সেই যে আমাদের মা বাবাদের শেখানো হয়েছিল ‘লেখাপড়া করে যে, গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে’, তার থেকে আমরা নিজেরাও বোধয় খুব একটা বের হতে পারিনি বরং আমরা নিজেরাও অনেকেই কিন্তু অজান্তেই আমাদের সন্তানদের মন মানসিকতা পঙ্গু করে দিচ্ছি, তাকে শুধু বস্তুবাদী (materialistic) চশমা পড়িয়ে।

আমাদের আগের প্রজন্মের অনেকেই যৌথ পরিবারে মানুষ হওয়ার ফলে এমন এক ভাবে মানুষ হয়েছেন, যেটা স্বভাবতই আমরা বা আমাদের সন্তানেরা হই নি বা হবে না, তবে আমার আজকের এই লেখা কোনোভাবেই যৌথ বা অণু পরিবার এর পক্ষে/বিপক্ষে নয়। আমি শুধু বলতে চাচ্ছি এই ‘আমি, আমার, আমরা, আমাদের’ এর চক্করে পড়ে আমরা কি শিশুদের মধ্যে স্বার্থপরতা, অহংবোধ এবং আত্ম-প্রেম এর বীজ রোপণ করে দিচ্ছি? ভালো স্কুল, ভালো লেখাপড়ার জন্য মরণপণ ছুটতে ছুটতে ওদের নির্দোষ, সরল মনগুলোকে, ওদের শৈশবকেই কি আমরা ধ্বংস করে দিচ্ছি?

একটা শিশুর মনে যে সব মানবিক গুণাবলী থাকা দরকার, সেগুলো না শিখিয়ে আমরা আসলে কি শেখাচ্ছি তাদের? আমরা কি ওদের এটা শেখাতে পারছি যে শুধু নিজে এগিয়ে যাওয়ার চাইতে অন্য সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটা অনেক বেশি জরুরী? আমাদের জীবনে অন্যদের যেমন অনেক অবদান আছে/থাকবে, তেমনি আমাদেরও অন্যদের জন্য অনেক কিছু করার আছে। এই *সহযোগিতার শিক্ষা আমরা ক'জনেই বা আমাদের ছেলে মেয়েদের শেখাচ্ছি!
ওদের শেখানো দরকার *উদারতা, *সহমর্মিতা, *সহানুভূতি, *সময়ের মূল্য, *স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং *স্ব-মূল্যায়নের মত জিনিসগুলো।

অন্যেরা যেখানে সমস্যা দেখে সেখানে *সম্ভাবনা দেখার কৌশলটা তাদের না শিখিয়ে আমরা কি আসলে তাদের এক-চোখা করে ফেলছি? অথবা আগ বাড়িয়ে তার গায়ে যাতে কোন আঁচ না লাগে, তাই নিজেরাই সেটা সমাধান করে দিয়ে তাকে entitled বা অথর্ব/ পরমুখাপেক্ষী করে তুলছি? সন্তান কোনো ভুল বা অন্যায় করলে তার দায়িত্ব নিতে স্বীকার করে, সেই ভুল থেকে সঠিক শিক্ষাটুকু নিতে আমরা কজনে শেখাই?

আর দুটো জিনিষ বলব, সেগুলো হচ্ছে কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ সেই শিক্ষাটা ওদের আমাদেরই দিতে হবে আর চট করে বিরক্ত (পড়ুন bored ) না হয়ে কিভাবে সময়ের সঠিক ব্যবহার করে (টাইম ম্যানেজমেন্ট) ছেলে মেয়েরা পড়াশোনার বাইরেও বয়েস অনুপাতে সমাজসেবামূলক কাজ বা নিদেনপক্ষে নিজের কাজ নিজে করার প্রেরণা পাবে সেটা শেখানো বিশেষ জরুরী।

অবশ্য এ কথা বলাই বাহুল্য যে ছেলে মেয়েদের এসব শেখাতে হলে আমাদেরও তা জানা থাকতে হবে। তাই লেখাপড়া শেখা এবং ‘শিক্ষিত’ হওয়ার মধ্যে যেমন বিস্তর ফারাক, তেমনি সব মা বাবাও কিন্তু একই রকম নয়। বিন্দুমাত্র পুঁথিগত শিক্ষা না পেয়েও অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের মানবিক গুণসম্পন্ন পরিপূর্ণ মানুষ করে যেমন গড়ে তুলতে দেখা গেছে, তেমনি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত অনেক মা বাবাও কিন্তু সেটা তাদের ছেলে মেয়েদের শেখাতে না পারার নজিরও ভুরি ভুরি রয়েছে।

আজ ভাবতে অবাক লাগে যে আমরা নিজেরা যেখানে দু তিনটের বেশি তোলা পোশাক না থাকলেও হীনমন্যতায় ভুগিনি, ঘরের তৈরি টিফিন খেয়েই স্কুল কলেজ পার করেছি, নিজে কিছু না বুঝলে অনায়াসে ক্লাসের সেরা ছাত্র/ছাত্রীর কাছ থেকে বুঝে নিয়েছি, সেই আমরাই আমাদের ছেলে মেয়েদের শেখাই কারো সঙ্গে টিফিন ভাগাভাগি করে না খেতে বা উপযাচক হয়ে কারো উপকার না করতে, কারণ সবাইকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে না পারলে তো ‘সেরা’ হওয়া যাবে না! এমন সেরা হয়ে কি লাভ বলতে পারেন যেখানে ‘ব্র্যান্ডেড’ পোশাক আশাক না পড়তে পারলে, বা লেটেস্ট স্মার্টফোন নিয়ে না ঘুরতে পারলে আরেকজনকে এমনই হেয় বা তুচ্ছ করা হয় যে সে আর নিজের জীবনটাকেই বইতে পারে না। এসবই ঘটে চলেছে আমাদের চারপাশে, কিন্তু আমরা কানে দিয়েছি তুলো আর চোখে পড়েছি ঠুলি।

আমরাই কি বেতনের সাথে সঙ্গতিহীন খরচ করে অনৈতিকতাকে জায়েজ করছি না? এটা যদিও মোটামুটি সবাই জানে যে সন্তান ছোট থাকতেই যা দেখে, যা শেখে, সেটাই সে ধারণ করে, অথচ সবাইকে পেছনে ফেলে সবচে বেশি বেতনের চাকরিটা পাওয়ার জন্য, বাড়ি, গাড়ি আর সৌখিনতার পেছনে দৌড়ানের জন্য ইন্ধনটা কিন্তু আমরাই যোগাচ্ছি।
শেখানো উচিত সহবত, বিনয়, অথচ শেখাচ্ছি, ‘I am the best!’

সহমর্মিতা শিখলে সবাকে মাড়িয়ে এগোবে কি করে, অতএব তার বদলে শিখুক প্রতিযোগিতা। উদারতা? যেখানে ঘরে বাইরে শেখানো হচ্ছে একমাত্র আমার পথই সর্বশ্রেষ্ঠ, সেই পথে যারা চলে না তারা অভিশপ্ত, সেখানে উদারতার জায়গা কই? বাইরের চেহারা নিয়ে নিজেরাই যদি পেরেশান হয়, তাহলে চেহারাটা যে কত অকিঞ্চিৎকর একটা বিষয়, সেটা কি ওরা কখনো শিখবে আদৌ?

এভাবে বস্তুবাদী, ভোগবাদী করে যাদের আমরা গড়ে তুলছি, তারাই একদিন যখন আমাদের অদরকারি মনে করে ফেলে দিয়ে ‘এগিয়ে’ যাবে, সেদিন আমরা দোষ দেব কাকে?


অক্টোবর ২০১৯





সুতপা বড়ুয়া, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 26-Sep-2020

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far