bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













শূন্যতা ও পূর্ণতা পরিক্রমার ভাবনায়...
কাজী সুলতানা শিমি



হৈ চৈ কমে এসেছে অনেকটা। হাসপাতাল হলেও দিনে বেশ গমগমই থাকে। রাত তখন সাড়ে এগারোটা। বেডটা ঠিক নার্স স্টেশন বরাবর। ঘড়িটা ওখানেই। ডেস্কে এই মুহূর্তে তিনজন নার্স। কম্পিউটারে কি যেন টাইপ করছে সারাক্ষণ। যতবার পর্দা টেনে দিতে বলি আরও বেশী সরিয়ে দিচ্ছে। কারণ ঠিক বুঝতে পারছিনা। কিছুক্ষণ চোখ বুজি, কিছুক্ষণ খুলে রাখি। নার্সদের মধ্যে আবার একজনের সারা গায়ে উল্কি আঁকা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। ছেলেরা নার্স হলে একটু কেমন যেন লাগে। হাত ও গলার যতখানি দেখা যাচ্ছে সবখানেই রঙ্গিন উল্কি। কানে একটা ছোট রিং ও আছে। দেখতে দেখতে হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। ক্ষীণ কণ্ঠে ডাকতে চেষ্টা করলাম। তোমরা কেউ কি একটু আসবে, আমার যেন কেমন লাগছে! উল্কি আঁকা নার্সটা ছুটে এসে হাতে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, কি হয়েছে! কি হয়েছে! এর বেশী কিছুই শুনতে পেলাম না। চোখে এক ঝাঁক নীল তারা আর বুকে শ্বাসরুদ্ধ ব্যথার তীব্রতা নিয়ে সম্ভবত অচেতন হয়ে গিয়েছিলাম।

কতক্ষণ এভাবে ছিলাম ঠিক জানিনা। তখন সম্ভবত মধ্যরাত। চোখ খুলতে দেখে উল্কি আঁকা ছেলেটা এগিয়ে এলো। বেডের ডানদিকে এসে উপুড় হয়ে বলল, তুমি কোথায় তা কি ঠাওর করতে পারছ? আজ কি বার? কথাগুলো শুনতে পাচ্ছি কিন্তু ঠিক মনে করতে পারছিনা আজ কি বার কিংবা কোথায় আছি। একটা ট্যাবলেট দিয়ে বলল, জিহ্বার নীচে রেখে চুপচাপ শুয়ে থাকো। শুয়ে থাকা ছাড়া অবশ্য কিচ্ছু করারও নেই। দুই ব্যাগ ইন্ট্রাভেনাস আয়রন ড্রিপ দেয়া শেষে এখন স্যালাইন পর্ব চলছে। তারপর দুই ব্যাগ ব্লাড। দুই হাতও সটান করে রাখতে হচ্ছে। কব্জি বাঁকা করলেই সুঁই এর খোঁচা লাগছে। মোবাইলটা পাশেই কিন্তু তুলে দেখার উপায় নেই। চোখ বন্ধ করে আছি। মুদিত চোখে কেন যেন ভেসে উঠলো ডেভিড গুডল এর চেহারা। বেশ কিছুদিন ধরে তাকে নিয়ে একটা লেখা লিখবো লিখবো করছিলাম - হয়তো তাই। ডেভিড গুডল একজন উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ছিলেন। পার্থে থাকতেন। গতবছর মে মাসে ১০৪ বছর বয়েসে স্বেচ্ছামৃত্যু বরণ করেছেন তিনি। আনন্দ-চিত্তে চলে যেতে যেতে শুনেছেন নিজের পছন্দের গান। পছন্দের খাবার ফিস এন্ড চিপস খেতে খেতে বলেছিলেন, “আমার জীবন আমার সিদ্ধান্ত”।

ড. গুডল এর ভাবনা এখন আর মাথা থেকে যাচ্ছেনা। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত এই অস্ট্রেলিয়ান বরেণ্য উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ৪ বার পিএইচডি করেছেন। প্রথমবার পিএইচডি করার সময় সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে তার প্রফেসার তাকে যেতে বারণ করেন। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, একজন সৈনিকের চেয়ে এই পৃথিবীতে একজন পরিবেশ-বিদ এর প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশী।

১০৪ বছর বয়সে তাকে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসরে যেতে বাধ্য করায় তিনি অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মনে বলেন, বিষয়টা নিয়ে নতুন করে ভাবনার সময় এসেছে। বয়স যদি কাজ থেকে অব্যাহতি নেয়ার শর্ত হয় এবং সম্পূর্ণ সুস্থ থেকেও কাজ করার অধিকার না থাকে তাহলে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আর কোন মানে নেই। স্বেচ্ছামৃত্যুর জন্য তাকে যেতে হয়েছিলো সুইজারল্যান্ড। ইউরোপ ও কানাডা সহ অন্যান্য দেশে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ হলেও সুইজারল্যান্ড-ই একমাত্র দেশ যেখানে বিদেশী নাগরিকদের জন্যও এই অধিকার উন্মুক্ত। ১৯৪০ সাল থেকে সুইজারল্যান্ডে স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ। সে দেশের আইনে স্বেচ্ছামৃত্যু কোন অপরাধ নয়।

চার ছেলেমেয়ে বারোজন নাতি-নাতনি আর পেশাগত সাফল্য নিয়ে একটা পরিপূর্ণ জীবন উপভোগ করে গেছেন ড. গুডল। তবে স্বেচ্ছা-মৃত্যুকালীন সময়ে ড. গুডল দুঃখ করে বলেন, সুইজারল্যান্ড দেশটি অত্যন্ত সুন্দর। এ দেশ থেকে বিদায় নেয়ার ইচ্ছে ছিলোনা। অতিশীঘ্র অস্ট্রেলিয়ায় স্বেচ্ছামৃত্যু বৈধ করা উচিৎ। Euthanasia প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে তাকে দেয়া লিথ্যাল ইনজেকশন প্রথমবার কাজ না করায় তিনি ঘুম থেকে জেগে উঠে বলেন, কি ব্যাপার এতো দেরী হচ্ছে কেন! প্রথম প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলেও দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় তিনি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত হয়ে যান। প্রগাঢ় ঘুম থেকে তারপর আর ফেরেননি। মৃত্যুর আগে তাকে চারটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। তার নাম কি? জন্মদিন কবে? এই ক্লিনিকে কেন এসেছো এবং তুমি কি জানো বোতাম টেপার পর তোমার কি হবে? তিনি সজ্ঞানে ও নির্দ্ধিধায় প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন। ১০৪ বছর বেঁচে থাকার পর স্বজন-পরিজনদের কাছ থেকে প্রস্তুতি নিয়ে সানন্দে পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়ার আয়োজন করেছিলেন তিনি নিজেই।

প্রায় প্রায়ই স্বেচ্ছামৃত্যু বোধটা আমাকে খুব নাড়া দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচীতে ছিল বলে হয়তো বিষয়টা একটু বেশীই ভাবায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, স্বেচ্ছামৃত্যু’র অধিকারটা আসলে খারাপ কিছু নয়। দেশের প্রচলিত আইনের অধীনে এবং বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় হয় বলে এটাকে ঠিক আত্মহত্যা ও বলা যায়না। লুকিয়ে চুরিয়ে, বহুকষ্ট পেয়ে, পরিবারের সম্মানহানি করে, নিজে অপাংক্তেয় হয়ে চলে যাবার চেয়ে বরং হৃষ্ট চিত্তে চলে যাওয়াটা অনেক সম্মানের ও আনন্দের। উপরি সুবিধা হল পরিজনরা এতে প্রস্তুত থাকছে। ব্যক্তিও তার সব ইচ্ছাপূরণ করে গুছিয়ে নিতে পারছেন বিদায়ের আগে। ব্যাপারটা অনেকটা প্লেটোর ছায়ার জগত থেকে কায়ার জগতে যাওয়ার মতো।

নিঃসঙ্গ নির্জন এই রাতে শূন্য ও পূর্ণের হিসেব করতে করতে কিছুটা মোহাচ্ছন্ন হয়ে পরেছিলাম সম্ভবত। স্যালাইন পর্ব শেষ। এবার দুই ব্যাগ ব্লাড। নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা, আলট্রা-সাউন্ড, ইসিজি, এন্ড্রর্সকপি আর একটু পরপর ব্লাড-টেস্ট তো চলছেই। জটিলতা হয়তো কিছুটা আছে। এরমধ্যে কয়েকবার নার্সদের ডিউটি বদল হয়েছে। কর্তব্যরত কতজন কতবার যে দেখে গেলো ঠিকমতো মনেও করতে পারছিনা। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা বলে রাখি - ড. গুডল এর বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে গিয়ে জানতে পারলাম স্বেচ্ছামৃত্যু’র জন্য শেষ সময়েও দশ হাজার ডলার খরচ করতে হবে। এরমধ্যে নয় হাজার ক্লিনিকের ফী আর এক হাজার হোটেল ও খাবার খরচ। প্লেন ভাড়ার ব্যাপারটা তো আলাদা থাকছেই। পাশাপাশি Euthanasia বিষয়ক কোন সুইস অর্গানাইজেশনের নিয়মিত সদস্য হতে হবে। এমনি এমনি হুট করে সিদ্ধান্ত নিলে তারা তা কার্যকর করবে না। অর্থাৎ থাকতে হবে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। শূন্য ও পূর্ণের রহস্যময় এই পরিক্রমার ভাবনা নিয়েই ঘুমাতে চেষ্টা করছিলাম।



কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 30-Jan-2019

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far