bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন


শুধু ভাষা চর্চাই নয়
শুদ্ধ ভাষা চর্চা হোক একুশের অঙ্গীকার

কাজী সুলতানা শিমি


প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমাদের শুরু হয় ভাষা নিয়ে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করা দোষের কিছু নয় বরঞ্চ আনন্দের। কিন্তু শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাস এলেই ভাষার প্রতি এই অতি আগ্রহ কিছুটা বিস্মিত করে। শুধু প্রবাসী বলে কথা নয়, দেশের মানুষই বা কতোটা শুদ্ধ ভাষা চর্চার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে সেটা সত্যিই খতিয়ে দেখা দরকার। সাধারণ বা গতানুগতিক আড্ডায় ভাষা চর্চা বা ভাষার ব্যাবহারের কথা বলছিনা। বলছি বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় কিংবা প্রতিবেদন উপস্থাপনায় বক্তারা যে ভাষার ব্যাবহার বা উচ্চারণ করেন তার কথা। বিকৃত উচ্চারণ ও ভাষার অশুদ্ধতার কারণে দর্শক ও শ্রোতারা প্রকৃত বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানার ও শোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং বিরক্ত হয় তা নিয়ে বক্তার কোন ভ্রূক্ষেপ নেই। দর্শক ও শ্রোতা কেন বক্তৃতার প্রতি তিক্ত অনুভূতি প্রকাশ করছে এ নিয়ে আদৌ কোন মাথাব্যথা নেই। বক্তৃতা একটি সৃজনশীল নান্দনিক শিল্প। শ্রুতিমধুর ও সাবলীল উচ্চারণ এবং আত্ম-প্রত্যয়ী ভঙ্গিমার মাধ্যমে প্রকাশ করা হলে তা হতে পারে অনেক বেশি আকর্ষণীয় ও প্রাণবন্ত। এজন্য প্রয়োজন শুদ্ধ ভাষা চর্চায় উদ্যোগী হওয়া।

আমাদের দেশে পাবলিক স্পিকিং বা জন সমক্ষে কথা বলার জন্য কোন কোর্স বা ট্রেনিং দেয়া হয়না। মঞ্চে জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে কিছু আবেগপূর্ণ কথা বললেই মনে করা হয় বেশ ভালো বক্তৃতা দেয়া হয়ে গেলো। আসলে কি তাই! আমি যখন দেশ থেকে প্রথম নিউজিল্যান্ডে যাই সেখানকার কর্ম সংস্থান সার্ভিস বা ওয়ার্ক এন্ড ইনকাম” অফিস থেকে প্রথমেই সবাইকে যে কাজটি করতে বলেছিল তা ছিল পাবলিক স্পিকিং বা জন-সমক্ষে কথা বলার ও বায়োডাটা লিখার দক্ষতা অর্জনের ট্রেনিং নেয়া। এখন মনে হয় প্রত্যেকের তাই করা দরকার। জন সমক্ষে কথা বলার মতো উপযুক্ত দক্ষতা ছাড়া এ ধরণের কাজ করে উপস্থিত সবাইকে অহেতুক বিরক্ত করা কতখানি যুক্তিযুক্ত বিষয়টি ভেবে দেখা দরকার। এতে বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া তো দুরের কথা বরঞ্চ আগত অতিথিদের সময় নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই নয়।

বক্তৃতা মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। সামাজিক ভাবে আমরা বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকি, আমাদের মিশতে ও উঠাবসা করতে হয় বিভিন্ন মানুষের সাথে, এই আদান প্রদানের সময় আমাদের বিভিন্ন সময়ে জন সমক্ষে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কথা বলতে হয়। তাছাড়া ব্যক্তিত্বের বিকাশ, নিজের চিন্তাধারার সম্প্রসারণ, স্বীয় আদর্শ, চেতনা ও আবেগ প্রকাশ করার জন্য বক্তৃতার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যারা বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বা এখনো দিচ্ছেন তাদের বক্তৃতা শুনেই মানুষ উজ্জীবিত হয়েছে, জীবন বিলিয়ে দিয়েছে বা এখনো দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। দেশ জাতি ও মানবতার বৃহৎ কল্যাণে আত্মনিয়োগ, সুন্দর, স্বপ্নময় ও কাঙ্ক্ষিত সমাজ গঠন করার লক্ষ্যেই নিজেকে সুবক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা দরকার। আর এর জন্য সবচে আগে প্রয়োজন শুদ্ধ ভাষা চর্চার উদ্যোগ। আমাদের অন্তর্গত আগ্রহ থেকে তা করা দরকার।

যারা শিল্পসাহিত্য, আবৃত্তি, সঙ্গীত, অভিনয়, রাজনীতি এমন কি শিক্ষকতা বা প্রশিক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের প্রায়ই মঞ্চে উঠতে হয়। জন সমক্ষে দাঁড়াতে হয়। মাইক্রোফোনে কথা বলতে হয়। এই কথা বলা বা উপস্থাপনা যদি দর্শক-শ্রোতাকে আকৃষ্ট বা মুগ্ধ করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। কিন্তু তাদের বিকৃত উচ্চারণ ও ভাষার অশুদ্ধতার কারণে কিংবা ব্যক্তিত্বের অসতর্কতায় যদি দর্শক-শ্রোতা বিরক্ত বোধ করেন তাহলে সকল প্রস্তুতি ও উদ্যোগ পণ্ড হয়ে যায়। তখন পুরো বিষয়টা হয়ে পরে সমালোচনার। যারা আয়োজক তাদের পড়তে হয় বিব্রতকর অবস্থায়। তাই বক্তৃতা ও উপস্থাপনার ক্ষেত্রে পূর্বপ্রস্তুতি নেয়া ও শুদ্ধ ভাষা উচ্চারণ করা খুবই প্রয়োজন।

বক্তৃতার গ্রহণযোগ্যতার জন্য বক্তার ভাষার উৎকর্ষতা ও সঠিক ব্যাবহার অনেক দরকারি একটা বিষয়। দেশী হোক বিদেশী হোক শব্দ উচ্চারণে মনোযোগ দেয়া দরকার। বক্তৃতায় বোধকরি আঞ্চলিকতা বাদ দিয়ে শুদ্ধ-ভাষী হওয়ার চেষ্টা করা উচিৎ। চিন্তামুক্ত চেহারায় পরিষ্কারভাবে শব্দচয়ন দর্শক ও শ্রোতাদের অনেক বেশী আকর্ষিত করে। ভাষাগত দীনতা পুরো বক্তব্যকে অস্পষ্ট করে ফেলে। নিজের কণ্ঠের প্রাণবন্ত উচ্চারণ ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে বক্তৃতার বিষয়ের গুরুত্ব সঠিক ভাবে অনুধাবন করা যায়না। তাই বক্তৃতা দেয়া ও প্রতিবেদন উপস্থাপনার ক্ষেত্রে দৃঢ় মানসিকতা ও আত্মবিশ্বাসী হওয়া ভীষণ জরুরি।

শ্রোতার মনোযোগ ও বক্তৃতার বিষয়ের উপর জোরালো সমর্থন নির্ভর করে বক্তার শুদ্ধ উচ্চারণ ও সাবলীল বাচন ভঙ্গীর উপর। অনমনীয় নয়, সোজা ও স্বাভাবিক ভাবে দাড়িয়ে সুন্দর ভঙ্গীতে শব্দ উচ্চারণ ও ভাষার যথাযথ ব্যাবহারের উপর পুরো অনুষ্ঠানটির গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে। সামঞ্জস্যপূর্ণ অঙ্গভঙ্গি দিয়েও অনেক সময় পুরো বিষয়টিকে আকর্ষণীয় করে তোলা যায়। কার্যকর মাত্রায় শব্দের সংখ্যার ব্যাবহার ও দর্শক-শ্রোতাদের দিকে চোখে চোখে তাকিয়ে কথা বললে বক্তব্য হয় অনেক আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য। উচ্চস্বর ও উত্তেজনা পরিহার করে প্রাণোচ্ছল ও উষ্ণ কণ্ঠে কথা বলেও নিজের বক্তব্য সুন্দর ভাবে প্রকাশ করা যায়।

বিভিন্ন সভা সমিতিতে প্রায়ই দেখা যায় বক্তারা এসব বিষয়ের উপর একেবারেই গুরুত্ব দেন না। এতে অনেক শ্রম ও সময়ের বিনিময়ে যে সভা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয় তার যথাযথ উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়না। আমার মনে হয় বক্তৃতা বা কিছু উপস্থাপনে এ ব্যাপারগুলোর অনুশীলন খুব জরুরি। কেবল মঞ্চে দাড়িয়ে কিছু একটা বলতে পারাটাই আত্মতৃপ্তি হওয়া উচিত নয়। তার আগে শুদ্ধ উচ্চারণ ও ভাষার সঠিক ব্যাবহার চর্চা করা দরকার। তাই ফেব্রুয়ারি হোক শুদ্ধ উচ্চারণ ও ভাষা চর্চার উৎসব। শুধু সভা সমিতি, সেমিনার, অনুষ্ঠান করেই শেষ নয় বাংলা ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে হৃদয়য়ের গভীরে, মননে ও চিন্তায় তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। বিশুদ্ধ উচ্চারণ ও চমৎকার বাচন ভঙ্গী একটি ভাষার প্রাণ। এর উপর ভাষার গ্রহণযোগ্যতাও অনেকাংশে নির্ভর করে। ঘরোয়া আলাপন ও আড্ডায় না হোক অন্তত পেশাগত ও বাহ্যিক পরিবেশে শুদ্ধ ভাষা চর্চা হোক একুশের অঙ্গীকার।



কাজী সুলতানা শিমি, সিডনী




Share on Facebook               Home Page             Published on: 3-Mar-2016

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far