bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













নার্সিংহোম বা বৃদ্ধাশ্রমের প্রাসঙ্গিকতা
কাজী সুলতানা শিমি



প্রচলিত ধারণার বাইরে যাওয়া বা সীমানা ডিঙ্গানো খুব সহজ ব্যাপার নয়। আজকাল প্রায়ই পত্র পত্রিকাসহ নানা মাধ্যমে বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে বিভিন্ন ধরণের লেখালেখি চোখে পড়ে। সেখানে নার্সিংহোম বা বৃদ্ধাশ্রম ধারনাটা আমাদের মাঝে এমন ভয়ংকর, নেতিবাচক এমনকি আতঙ্কজনক ভাবে উপস্থাপন করা হয় যে এর প্রতি একটা বিরূপ ধারণা জন্মাচ্ছে দিন দিন। কিন্তু পরিস্থিতি ও সমাজ পরিবর্তনের সাথে সাথে বৃদ্ধাশ্রম সম্পর্কেও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার সময় হয়েছে এখন। প্রচলিত ধারণায় অকৃতজ্ঞ সন্তানেরা তাদের বাবা মাকে অসহায় বৃদ্ধ বয়েসে দেখাশোনা ও যত্ন এড়াতে নামমাত্র কিছু টাকা পয়সা দিয়ে দায় চুকিয়ে এক আশ্রমে রেখে আসেন। শুনে মনে হয় মর্মান্তিক ও জেলখানা জাতীয় কোন একটা জায়গায় রেখে যাওয়া। এরপর তারা আর কোনদিন সেখানে আসেনা কিংবা এলেও নামমাত্র ভাবে দায়িত্ব ঘুচাতে আসে। সেখানে বাবা মায়েরা অসহায় একাকীত্ব নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনতে গুনতে একসময় পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মোটামুটি এ ধরণের একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই।

বাস্তবে ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও তা নয়। বৃদ্ধাশ্রম নিয়ে অত্যন্ত চমৎকার কিছু বাস্তব অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। প্রথম যখন দেশ ছেড়ে নিউজিল্যান্ড যাই, সেখানকার বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে ধারণা পুরপুরি পাল্টে যায়। এ লেখায় তার সবিস্তারে যাচ্ছিনা। কোন একদিন লিখবো আশা রইলো। বৃদ্ধাশ্রমকে আমি নতুনকরে দেখতে শিখি, নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে একবার এক লাইব্রেরীতে আমার ৮০বছরের প্রবীণ একজন মানুষের সাথে পরিচয় হবার পর থেকে। যিনি বৃদ্ধাশ্রমে থাকতেন। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব, তারপর একদিন তার নিবাসে যাওয়া শুরু হয়। প্রায় বিকেলেই সেখানে যাওয়া আসা হতো আমার। সুন্দর গুছানো, পরিপাটি ও রীতিমতো ছবির মতো একটা পরিবেশ। সাধারণ বর্ণনার একেবারে বিপরীত। সেখানে প্রায় সমবয়সী মানুষজন নিজেরা নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করছে। ছেলে মেয়ে নাতি নাতনী থাকা স্বত্বেও বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে পছন্দ করেন তারা। কেননা তাদের মতে এতে এক ধরণের স্বাধীনতা আছে বলে তারা মনে করতেন। এতে অন্য কাউকে বিরক্ত কিংবা কারো সময় নষ্ট করে তার কাছে নতজানু হয়ে থাকার প্রয়োজন পড়েনা।

বাস্তবিক ভাবেই দেখা যায়, বয়স আশি কিংবা নব্বই হয়ে গেলে তাদের ছেলেমেয়েদেরও বেশ বয়েস হয়ে পড়ে। তখন তাদের নিজেদেরও যত্ন দরকার। তাই তারা তাদের বাবা মায়েদের তেমন করে দেখাশোনা কিংবা যত্ন নিতে পারেন না। এ নিয়ে তারা এক ধরণের আত্মগ্লানি বোধ করেন। তার উপর সংসারের প্রাত্যহিক দায়-দায়িত্ব তো থাকেই। প্রতি পদে পদে প্রতিযোগিতামূলক এই সময়ে মানসিক চাপও সীমাহীন। এই অহিনকুল অবস্থায় কোন প্রফেশনাল নার্সিং হোমে থাকলে বাবা মায়েরা বরং তুলনামুলক ভাবে বেশী যত্নে থাকেন।

নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই হোক কিংবা প্রয়োজনে একবার বৃদ্ধাশ্রমে থাকার পর দেখা যায় তারা নিজেরাই আর ছেলেমেয়ের কাছে অতিরিক্ত চাপ হয়ে থাকতে চান না। এই অস্ট্রেলিয়াতেও আমার অতি কাছের কিছু নিকট আত্মীয়ের স্বীকারোক্তি এবং নার্সিং হোমে যেয়েও আমার এ অভিজ্ঞতা হয়েছে। দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয়েছে। দেখেছি সমবয়সী মানুষ পরস্পর নিজেরা তাদের নিজেদের কথা, অভিজ্ঞতা ও সুখদুঃখ যেভাবে শেয়ার করে আনন্দ পান, অসম বয়সীদের সাথে ততোটা পান না। বিশেষ করে আমাদের কালচারের বাবা মায়েরা যে মতাদর্শ লালন করেন তা থেকে সন্তানের মতাদর্শ অনেক পার্থক্য থাকে। অনেক সময় তাদের চিন্তা ভাবনায় থাকে যোজন ফারাক ও বৈপরীত্য। তার চেয়ে সমবয়সীদের সাথে তারা সময় কাটাতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। ব্যাপারটা অনেকটা গ্যাব্রিয়েল মার্কজের ‘Old people with old people are not so old’. বৃদ্ধ বা প্রবীণ বয়েসে তারা যে স্মৃতিচারণ করেন সেটাতে তারা তাদের সমবয়সীদের সাথে যতোটা না আনন্দ পাবেন নাতী নাতনীরা সেটা সেভাবে অনুভব করবেনা। ব্যাপারটা অনেকটা সিনিয়র ক্লাব, গেট-টুগেদার কিংবা নৈমিত্তিক আড্ডা’র মতো করে কাটানো। যেখানে কথা বলার মতো সব সময়ই কাউকে না কাউকে পাওয়া যাবে। এই যান্ত্রিক জীবনে ছেলেমেয়েরা যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে থাকে তাতে তাদের নিজেদেরই তো সময় দেয়ার মতো আলাদা সময় থাকেনা। তাই ভালো নার্সিং হোমে থেকে প্রতিটা মুহূর্ত আরও ভালোভাবে কাটানো যায় নতুন নতুন মানুষের সংস্পর্শে এসে। নতুন নতুন অভিজ্ঞতা শেয়ার করার সুযোগ থেকে। পাশাপাশি শুধু নাতী-নাতনীদের কেয়ার টেকার হিসেবে না থেকে তারা অনেক সময় নিজেদের আনন্দ ও সৃজনশীলতায় সময় কাটানোটাই বেশী উপভোগ করেন। সর্বোপরি, মানুষ মানুষের জন্য এই সার্বজনীনতার একটা বোধ অনুভূত হয় সেখানকার পরিবেশ থেকে।

এ প্রসঙ্গে আরব কবি কাহলিল জিব্রানের লেখা থেকে একটু উদ্ধৃতি দিতে চাই - তিনি বলেছিলেন, “তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়। নিজের জন্য, জীবনের জন্য যে ব্যাকুলতা তারই সন্তান তারা। তারা তোমাদের মাধ্যমে আসে কিন্তু তোমাদের কাছ থেকে নয়। আর তারা তোমাদের সাথে থাকলেও তোমরা তাদের মালিক নও। তোমরা তাদেরকে তোমাদের ভালোবাসা দিতে পারো কিন্তু তোমাদের চিন্তা-ভাবনা নয়। কারণ, তাদের নিজেদের চিন্তা-ভাবনা আছে। তাদের দেহকে তোমরা ধারণ করতে পারো কিন্তু তাদের আত্মাকে নয়। কারণ তাদের আত্মা বাস করে আগামীকালের প্রান্তে সেখানে তোমরা যেতে পারবেনা। তোমাদের স্বপ্নেও নয়। তাদের মতো তোমরা হবার চেষ্টা করতে পারো। কিন্তু তাদেরকে তোমাদের মতো বানাবার চেষ্টা তোমরা করোনা”। বস্তুত: আমরা সন্তানের জন্ম দিই পরিবারের প্রয়োজনে, প্রকৃতির প্রয়োজনে। তাদের কাছে কোনধরনের প্রত্যাশা না করাটাই বরং মঙ্গল ও মহত্বের। তাদের জন্মদান, লালন-পালন ও পরিচর্যার বিনিময়ে যদি তাদের কাছে প্রত্যাশাটাই হয় মুখ্য, তাহলে সেটা আর অকৃত্রিম ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থাকেনা। ছোটবেলায় লালন-পালন করেছি বলেই শেষ-বেলায় তার প্রতিদান চাইবো এটা একধরণের বিনিময়। স্বত্ব ও অধিকার ছেড়ে দিয়ে মাঝে মাঝে দেখা হওয়া বা যোগাযোগ থাকাটাই বরং উভয়পক্ষের জন্যই হয় অনেক যত্নের ও মর্যাদার।

মানুষ একা থাকতে পছন্দ করেনা। সঙ্গ আর আড্ডায় চারপাশ মুখর থাকুক এটা সবারই চাওয়া। সমবয়সীদের মধ্যেই এই মুখরতা গতিশীল ও প্রাসঙ্গিক হয় অনেক বেশী। এই কর্পোরেট জীবনে ব্যস্ত সময়ে কথা বলা বা সময় দেয়ার মতো সময় কারো নেই। কেউ চাইলেও সেটা আর তেমন করে সম্ভবও হয়ে উঠছেনা। এমনকি ছেলেমেয়েরা চাইলেও পারিপার্শ্বিকতার কারণে অনেকক্ষেত্রেই তা হয়ে উঠেনা। যৌথ পরিবার ছেড়ে একক পরিবার গঠন করার পর এটা এখন একটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি। নিজের জীবনে দুর্বিষহ একাকীত্ব ভর করার আগেই বাস্তবমুখী পরিকল্পনায় দূরদর্শী হওয়া দরকার। তাই আবেগের চেয়ে বিবেককে অনুসরণ করাই বরং বিচক্ষণতার পরিচয়। সে কারণে মন ও চেতনায় ইতিবাচক প্রস্তুতি নিয়ে বৃদ্ধাশ্রমকে স্বাগতঃ জানানোই প্রাসঙ্গিক এখন।




কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 20-Sep-2019

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far