bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



সহনশীলতায় নৈতিক শিক্ষা’র গুরুত্ব
কাজী সুলতানা শিমি



ক্যানবেরার হাই কমিশন অফিসে মান্যবর রাষ্ট্রদূতের উদ্যোগে একবার একটি মত-বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছিলো। মত-বিনিময় সভাটির আলোচনার বিষয় বস্তু ছিলো- “সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলা: আমাদের করণীয় ও প্রবাসী ভাবনা”। সভায় বক্তারা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। কেউ বা জঙ্গি কি বা কারা, ধর্ম ও তার অপব্যাখ্যার কুফল, নানা অরাজকতার ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িকতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশদ আলোচনা করেন। কিন্তু মূল বিষয়বস্তু ছিল আমরা কি করতে পারি বা এ বিষয়ে প্রবাসীদের ভাবনা কি। এ বিষয়টিতে নৈতিক শিক্ষা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তা তেমন একটা আলোচনায় আসেনি।

প্রাচ্য ও পাশ্চাত্ত্য বিশ্বে বড়ো হয়ে উঠা মানুষের আচরণের মধ্যে একটি বিষয়ে বড়ো ধরণের পার্থক্য আছে। প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের কথাই বলি। এই সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠা মানসিকতায় আবেগ বেশী, বলা চলে প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশী। কিন্তু পাশ্চাত্ত্য বিশ্বে আবেগের চেয়ে সহনশীলতা ও নীতি-বোধ বেশী। আবেগ থাকা অবশ্যই দরকার কিন্তু নীতি বিবর্জিত হয়ে নয়। এসব দেশে দেখা যায় কোন ব্যাপারে একই বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও পরস্পর পরস্পরের শত্রু হয়ে উঠেনা। যে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও প্রতিযোগিতা হয় মার্জিত ও শুদ্ধ-ধারায়। সরকারী দল বা বিরোধী দল একে অপরের সমালোচনা করে পরিশীলিত ভাষায় বা সংযত শব্দ ব্যাবহার করে। এসব আচরণে অভ্যস্ত হতে প্রয়োজন সহনশীলতা ও নৈতিক শিক্ষার চর্চা।

নীতি-বোধ ও সহনশীলতা মানবিক গুণাবলীর একটি জরুরী দিক। বলা প্রাসঙ্গিক যে, ধর্ম-শিক্ষা ও নৈতিক-শিক্ষা এক বিষয় নয়। ধর্ম-শিক্ষা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে অপার্থিব বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে। নৈতিক-শিক্ষা নীতি ও মানবতার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে। এ প্রসঙ্গে মাদার তেরেসার একটি উক্তি খুব যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে- “তুমি যদি দৃশ্যমান মানুষকেই ভালবাসতে না পারো, তাহলে অদৃশ্যমান ঈশ্বরকে কি করে ভালবাসবে?”। আসলে মানুষ ও মানবতার জন্য নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। উচ্চশিক্ষায় দর্শনের অন্তর্গত 'নীতিবিদ্যা' নামক একটি কোর্স পড়ানো হয়ে থাকে। একাডেমিক পড়াশোনা দর্শন ও নীতিবিদ্যা হওয়ায় তার গুরুত্বটা উপলব্ধি করছি। কেবলমাত্র উচ্চশিক্ষা ছাড়াও আমার মনে হয় নীতিবিদ্যা পড়ানো দরকার প্রাইমারী স্কুল থেকেই এবং তা বাধ্যতামূলক করা উচিৎ প্রতিটি শিক্ষা-কার্যক্রমে। তাতে করে মানুষ নৈতিক শিক্ষা ও সহনশীলতায় অভ্যস্ত হতে পারবে ছোটবেলা থেকেই। নানা কারণে মানুষ আজ বিভ্রান্ত। কেননা মানবতা-বোধ তৈরি হতে পারে এমন কিছু শিক্ষা ও চর্চা থেকে মানুষ আজ বিচ্ছিন্ন। গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও সহনশীলতা সৃষ্টিতে নৈতিক-শিক্ষা অত্যাবশ্যকীয়।

মানুষে মানুষে সুন্দর সম্পর্ক ও পারষ্পরিক সহযোগিতাই মূলত মানবতা। মানবতার প্রয়োজনেই গঠিত হয় সমাজ ও রাষ্ট্র। মানুষ ও মানবতার জন্যই বলা চলে সভ্যতার যতো আয়োজন। বর্তমানে বিশ্ব পরিস্থিতিতে মানব সম্পর্কের যে সঙ্কট চলছে, বিবাদ-সংঘাতের যে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা যে সঠিক জ্ঞানের অনুপস্থিতির কারণে ঘটছে তা কিন্তু নয়। তার মুল কারণ যে মানবতা বোধের অভাব তাতে কোন সন্দেহ নেই। আর মানবতা বোধের যে অবক্ষয় তার কারণ সঠিক জীবনদর্শনের অভাব। সে কারণেই মানুষের জীবন আজ নানা ক্ষেত্রে হয়ে উঠেছে নীতি হীন ও মূল্য-বোধহীন।

আমাদের দেশের বর্তমান স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা কার্যক্রমে নৈতিক-শিক্ষার কোনো পাঠ নেই। কিন্তু ধর্মীয় শিক্ষার পাঠ আছে। যদিও সব ধর্মের মূল শিক্ষা কল্যাণকর। তারপরও নৈতিক শিক্ষা আর ধর্মশিক্ষাকে এক করে ফেলা ঠিক নয়। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষা কার্যক্রমের এমনকি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে কোথাও আজ নৈতিক শিক্ষার কোনো সুযোগ নেই। তবে সম্প্রতি পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো করে ব্যবসায় নীতিবিদ্যাসহ প্রায়োগিক নীতিবিদ্যার কিছু দিক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়েছে। এ উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো। তবে নীতিশিক্ষার এ পাঠ শিশু-কিশোর পর্যায়ে পেলে সেই শিক্ষা আরো বেশি কার্যকর হবে বলে মনে হয়।

গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস মনে করতেন: 'জ্ঞানই পুণ্য'। সত্যিকার অর্থে সঠিক জ্ঞান অর্জন মানুষে মানুষে মমতা বাড়ায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই কিন্তু আবার অনেক ক্ষেত্রে করে তুলছে সঙ্কটাপন্ন। তাই সহজ জীবনের পাশাপাশি একটি নৈতিক জীবন ও অত্যাবশ্যক। আর নৈতিক জীবন যে কেবল ধর্মীয় অনুশাসনেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়। মানুষের জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করার ক্ষেত্রে নৈতিক-দর্শন চর্চার ও প্রয়োজন। সার্বজনীন নৈতিক দর্শন কোন বিশেষ ধর্মের আওতাভুক্ত নয়। মানবতা চর্চায় এর বিকল্প নেই। সঠিক নীতিশিক্ষাই পারে প্রযুক্তি সমূহের অগ্রগতিকে মানবিক প্রয়োজনে যথার্থভাবে কাজে লাগানোর নীতি নির্ধারণ করতে।

সভ্যতার নানা বিবর্তন ও অগ্রগতি সত্ত্বেও মানুষ আসলে সুখে নেই। প্রযুক্তির অভাবনীয় উৎকর্ষতার পরও মানব সমাজে ঘটছে নানা অবাঞ্ছিত ঘটনা। অভূতপূর্ব সব সুবিধা থাকা স্বতেও মানুষ কাঙ্ক্ষিত শান্তি লাভ করতে পারছে না। এর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী নৈতিক অবক্ষয়। সহনশীলতা ও আত্মসমালোচনা’র মানসিকতার অভাব। নীতি ও নৈতিকতার সঠিক অনুশীলন না থাকায় মানুষ হয়ে পরছে দুর্নীতিগ্রস্ত। সঠিক নীতিমালা ও নীতি-বোধ না থাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের প্রতিও মানুষ আস্থা হারিয়ে ফেলছে। মানুষ নীতি হীন হলে কোনো আইন-কানুন-ই তাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেনা। রাষ্ট্রীয় নিয়ম-নীতি থাকলেও যে মানুষগুলো তা পরিচালনা করেন তাদের যদি নীতি-নৈতিকতার অভাব থাকে তাহলে সেসব প্রতিষ্ঠান দ্বারা মানুষ ভালো কোনো কিছু আশা করতে পারে না। তাই চরিত্র গঠন বা চারিত্রিক উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া উচিত সর্বাগ্রে। এ ক্ষেত্রে নীতিবিদ্যা ও নৈতিক শিক্ষা অত্যাবশ্যক।

আজকের এই অস্থির জীবন আর চাওয়া পাওয়ার পিছনে ছুটে চলা কিংবা মানুষ প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা বোধের অভাব সম্ভবত মানবতা বোধের অভাব থেকেই। ছোটকাল থেকেই মানুষের নৈতিক জীবন গড়ে ওঠে। বলা চলে ছোট বেলার শিক্ষা ও অভ্যাসই মানুষের সমগ্র জীবনে প্রভাব ফেলে। এ জন্য শিশুদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে নৈতিক শিক্ষার বিশেষ পাঠ থাকা জরুরি। শিশুরা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয় তাদের শিক্ষকদের দ্বারা এবং পাঠ্যপুস্তক দ্বারা। পাঠ্য বইয়ে লিখিত বিষয়কে তারা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং শিক্ষকের নির্দেশনাকে তারা পিতামাতার নির্দেশনার চেয়েও বেশি অনুসরণ-যোগ্য বলে মনে করে। তাই নৈতিক শিক্ষাকে স্বতন্ত্র বিষয় হিসেবে আবশ্যিক করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বলা চলে শিক্ষার প্রতিটা ধাপে এটা করা দরকার। এতে সব শিক্ষার্থীকে সর্বজনীন কিছু চারিত্রিক শিক্ষা দেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কেবল প্রযুক্তি ও উন্নত জীবনই মানবতা বোধ তৈরি করতে পারেনা। এ বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় হয়েছে।



কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 15-Mar-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far