সিডনীতে মঞ্চস্থ হলো জনপ্রিয় নাটক - কঞ্জুস কাজী সুলতানা শিমি
‘বাঙলা নাটকের শাশ্বত সুর ছড়িয়ে দাও বহুদূর’- এই শ্লোগানে গত শনিবার সিডনীতে মঞ্চায়ন করা হয় কঞ্জুস”। শনিবার সন্ধ্যায় ব্যাঙ্কসটাউনের ব্রায়ান ব্রাউন থিয়েটার ও ফাংশন সেন্টারে এ নাটক মঞ্চায়নের মধ্য দিয়ে ‘সখের থিয়েটার’ তাদের যাত্রা শুরু করলো। ফরাসী নাট্যকার মলিয়ের এর স্যাটায়ারধর্মী হাসির নাটক ‘দ্য মাইজার’ অবলম্বনে কঞ্জুস নাটকটি বাংলা অনুবাদ করেছেন তারিক আনাম খান। বাংলাদেশের মঞ্চ নাটকের ইতিহাসে ‘কঞ্জুস’ একমাত্র নাটক যা ৭০০তম মঞ্চায়নের মাইলফলক অতিক্রম করে গৌরবময় একটি রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।
এক সময়কার ঢাকা থিয়েটার কর্মী ও নাটকটির নির্দেশক শাহীন শাহনেওয়াজের নির্দেশনায় নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন মাসহুদা জামান ছবি, অরিজিত বড়ুয়া শাওন, মোহাম্মদ খান তুষার, ওয়াসিফ আহমেদ শুভ, শাহীন শাহনেওয়াজ, আফসানা রুচি, রনি জুবায়ের, তানিম মান্নান, শাহীন আক্তার স্বর্ণা, মেহবুব রানা হিল্লোল, শিরিন আক্তার ও সাদিয়া শাখাওয়াত।
কাহিনী সংক্ষেপঃ পুরানো ঢাকার ষাট বছরের এক হাড়কিপটে বুড়োর গল্প নিয়ে গড়ে উঠেছে এই নাটকের কাহিনী। এই কৃপণ লোকটার নাম হায়দার আলী। তার পুত্রের নাম কাযিম আর কন্যার লাইলী। লাইলী ভালবাসে তাদের খাস নোকর বদি মিয়াকে যার সাথে পরিচয় হয়েছিল এক সমুদ্রতীরে। শুধু প্রেমের কারণেই নিজের পরিচয় গোপন করে বদি মিয়া লাইলীদের বাড়ীতে চাকরের কাজ নেয়। অন্যদিকে পুত্র কাযিম প্রেমে পড়ে যায় পাশের মহল্লার মর্জিনার সঙ্গে। কিন্তু সমস্যা বাঁধে তখন যখন কঞ্জুস হায়দার আলী পুত্রের প্রেমিকাকে বিয়ে করার জন্য ঘটকালির দায়িত্ব দেয় গোলাপজানকে।
অপরদিকে নিজের পুত্রের বিয়ে ঠিক করে এক বিধবার সঙ্গে এবং যৌতুকের টাকা বাঁচানোর জন্য কন্যা লাইলীর জন্য পাত্র ঠিক করে তারই বন্ধু পঞ্চাশ বছর বয়সী আসলাম বেগের সঙ্গে । ঘটনা তুঙ্গে উঠে তখন,যখন কঞ্জুস হায়দার আলীর মাটির নীচে লুকিয়ে রাখা বিশ হাজার টাকা চাকর লাল মিয়া চুরি করে তারই পুত্র কাযিমের হাতে তুলে দেয়। আরেক চাকর কালা মিয়া চুরির অপরাধে ফাঁসিয়ে দিতে চায় খাস নোকর বদি মিয়াকে। হায়দার আলী টাকার শোকে পাগল হয়ে পুলিশের কাছে নালিশ জানায়। ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় আসলাম বেগ। পরিশেষে জানা যায় লাইলীর প্রেমিক বদি ও কাযিমের প্রেমিকা মর্জিনা প্রকৃতপক্ষে আসলাম বেগেরই সন্তান। একসময় কাযিম জানায় যে সে চুরি যাওয়া টাকার হদিস জানে। যদি হায়দার আলী মর্জিনার সাথে তার বিয়েতে রাজি হয় তাহলে সে সমস্ত টাকা ফিরিয়ে দেবে। হায়দার আলী সন্তানদের বিয়েতে কোন টাকা খরচ করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়, অবশেষে আসলাম বেগ বিয়েতে খরচের জন্য সমস্ত টাকাপয়সা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বদি- লাইলী এবং কাযিম–মর্জিনার বিয়ের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নাটকটির আনন্দময় পরিসমাপ্তি ঘটে।
উল্লেখ্য, প্রদর্শনী শেষে সিডনীর নাট্য-প্রেমীরা মনে করেন,প্রবাসী জীবনের শত প্রতিকূলতা অতিক্রম করে নাটকটির সফল মঞ্চায়ন একটি মাইলফলক। তারা ভবিষ্যতে সখের থিয়েটারের কাছে আরও নতুন নতুন প্রযোজনা দেখতে আশাবাদী।
কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|