bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



এক অফুরন্ত তারুণ্যের গল্প
কাজী সুলতানা শিমি



রিনি দেয়ালে একটি ছবি দেখছিল। অসম্ভব সুদর্শন এক তরুণের। এমন সময় শুনল, রিনি ওভেনে হানি-চিকেনটা পুড়ে গেলো নাকি, একটু দেখত। সম্বিত ফিরে পেয়ে সে ওভেনের দিকে গেল। রিনি একটা রিটায়ারমেন্ট ভিলেজের রুমে বসে। ডিনারের জন্য অপেক্ষা। যার রুমে সে বসে আছে সে হচ্ছে ডেভিড। পচাত্তুর ঊর্ধ্ব একজন মানুষ। আজ কয়েক বছর হোল সে নিউলিনের একটা রিটায়ারমেন্ট ভিলেজে থাকছে। রিনির সাথে তার পরিচয় নিউলিনের লাইব্রেরীতে। রিনি কম্পিউটার সাইন্স পড়ছে অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে। সদ্য বিবাহিত তরুণী। বাংলাদেশ থেকে কেবল মাত্র নিউজিল্যান্ড এসেছে। তার বর ও একসাথে আবারো পড়াশুনা করছে। যদিও তার একাডেমীক পড়াশোনা কম্পিউটার সাইন্স না তারপর ও তার বরের পরামর্শে আবার পড়া। বিকেলটা সে লাইব্রেরীতে কাটায়।

এক বিকেলে তেমনি রিনি নিউলিনের লাইব্রেরীতে। কম্পিউটার সাইন্স আর জাভা প্রোগ্রামিং দেখতে দেখতে ক্লান্ত। মনটা হাল্কা করার জন্য একটা কবিতার বই খুঁজছিল সে। এমনি সময় ডেভিড উকি মেরে বলল, তুমি কার কবিতা খুঁজছ? রিনি বলল, ঠিক নিদিষ্ট কারো না। যে কোন কবিতা প্রকৃতি কিংবা রোমান্স যে কোন একটা কিছু হলেই হোল। এরপর সে বলল- আমি ডেভিড, তুমি? রিনি তার পরিচয় দিয়ে বলল, তুমি কি জান বাংলাদেশ কোথায়? আমি বাংলাদেশের মেয়ে রিনি। ডেভিড রিনিকে অনুকরণ করে বলল ও আচ্ছা, বাংলাদেশ কোথায় তা জানি তবে বাংলাদেশের মেয়েরা যে রোমান্টিক তা জানিনা! রিনি উৎসুক দৃষ্টিতে তাকাল ডেভিডের দিকে। পচাত্তুর ঊর্ধ্ব বয়সে প্রথম পরিচয়ে এভাবে কেউ কথা বলে তা তার জানা ছিলনা। আবারো অবাক করে তাকে বলল, তুমি কি জান তোমার শাণিত দৃষ্টি কতটা মোহনীয়? বিস্ময়ের সীমা ছিলনা রিনির। বলল, তুমি আসলে কি বলতে চাও? চল কফি শপে বসে তারপর বলি, লাইব্রেরীতে তো কথা বলা বারণ। ও আচ্ছা তাইতো, বলে দুজনে গিয়ে বসল লাইব্রেরীর বাইরের কফিশপে। সেই থেকে পরিচয়, চেনাজানা তারপর আসা যাওয়া। জীবনের গল্প বিনিময়।

আজো এসেছে সেই গল্প বিনিময় আর কথকতার সমাপ্তি টানতে। কথা আর গল্প কি কখনও শেষ হয়। জীবন সায়াহ্নে এসেও ডেভিডের এত তারুণ্য কি করে থাকে তা রিনির অজানা। সেই অজানাকে জানতেই তার এত আগ্রহ। রিনির বর নিষাদ ও মাঝে মাঝে যোগ দেয়। কিন্তু নিষাদ রিনির মতো এত সাবলীল নয়। সে স্বল্পভাষী আর কিছুটা লাজুকও। নিজ গণ্ডীর বাইরে সে সহজ হতে পারেনা। রিনির বেলায় ঠিক উল্টো, পরিচিত গণ্ডীতে সে হিসেবী নূতন পরিচয়েই তার যতো প্রগলভতা। নিষাদ এই স্বভাব জানে, আর অবাক হয় বয়সের এই দূরত্ব ও ওদের এত সখ্যতা! কি জানি মানুষের রসায়ন বুঝা বড় দুষ্কর। এভাবেই চলে সেই পারস্পরিক হৃদ্যতা।

তরুণ বয়সে ডেভিড ছিল নিউজিল্যান্ড আর্মিতে। চাকরীর প্রয়োজনে যেতে হয় যুদ্ধে। যুদ্ধে যাবার সময় প্রথম প্রেম মেরী ছিল অনাগত সন্তানের অপেক্ষায়। কোল জুড়ে আসে মার্ক। যেন স্বর্গ সুখের বার্তা। মার্ক কে ঘিরেই তার অবসন্ন সময় হয়ে উঠে অপার্থিব আনন্দের। দিন গুনে ডেভিডের। অপেক্ষার প্রহর হয় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। প্রতীক্ষা আর সোনালী স্বপ্ন বুনে মেরী। ডেভিডের ফিরে আসার কোন লক্ষণ নেই। একসময় হতাশ মেরী প্রেমে পরে অন্য এক যুবকের। মার্ক কে নিয়ে ঘর বাধে নতুন ভালবাসার সাথে। এরপরই ফিরে আসে ডেভিড। এ কেমন নিয়তি। পরাজিত সৈনিকের মত জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত সে। ভাগ্যের সমীকরণ মেলাবে কার সাধ্য। মেনে না নিয়ে উপায় কি। চোখের সামনে মেরীর সাজানো সংসার, নিজ সত্তার বিসর্জন। ভালবাসার মানুষকে অন্যর প্রেয়সী হিসেবে দেখার চেয়ে না ফেরাই ভাল ছিল। বাস্পরুদ্ধ অস্পৃশ্য অনুভব। দীর্ঘশ্বাস বুকে নিয়ে জীবনের বৈতরণী পার হওয়ার যন্ত্রণা সে শুধু ভুক্তভুগি বুঝে। এ মর্মবেদনা অব্যক্ত।

বহতা নদীর মতো দিন যায়, রাত আসে। চলার পথে কাউকে সাথী দরকার। সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি আর ভালবাসার সাথী নয়, প্রয়োজন মেটাবার প্রয়োজনে। তেমনি কেউ একজন আসে ডেভিডের জীবনে। তাকে ভালবাসতে পারেনি কখনও। কি করে সম্ভব। হৃদয় কি কখনও ছেড়া যায়, যে ইচ্ছে করলেই রুটির মত ছিঁড়ে ছিঁড়ে বিলিয়ে দেবে! হৃদয়ের ক্ষত আর পোড়া দাগ নিয়েই কাটিয়ে দিল সারাটা জীবন। রিনিকে দেখে আবার সেই পুরনো কষ্টটা নূতন করে জেগে উঠেছে। এতকাল পর রিনির মাঝে পেয়েছে হারানো তারুণ্য। এত আলোড়ন কোথায় ছিল এতদিন! অকপটে এলোমেলো হাজারো কথার শিহরণ সুর তোলে ছিঁড়ে যাওয়া পুরনো গীটারে। বেচে থাকাটা বড় আনন্দের। ইস জীবনের শেষ দিন গুলো যে এমন পরিপূর্ণ হবে ভাবেনি ডেভিড।

যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার পর ডেভিড স্কুলে ডেপুটি প্রিন্সিপাল হিসেবে চাকরী শুরু করে। সেই সুবাদে ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকায় তার বহুল পরিচিতি। সুতরাং একটা ব্যক্তিত্ব আর দূরত্ব নিয়েই থাকে সে। কিন্তু রিনি সামনে এলে সেটা ধরে রাখতে পারেনা যেন উচ্ছল এক আবেগী কিশোর। এতো চঞ্চলতা! এক নিমিষে তুলোর মত উড়িয়ে দেয় বয়সের সাজানো মুখোশ। আসলে কীসেরই বা এত মুখোশ, সামাজিকতার! এ তো শুধু দীর্ঘদিনের দীর্ঘশ্বাস ঘুচাবার প্রয়াস। শুধু কথা আর সান্নিধ্য যে মানুষকে এতোটা পূর্ণ করে তা ডেভিডের জানা হতোনা রিনির সাথে কথা না হলে। এ যেন মনের গহীনে জমে থাকা বহু দিনের পুঞ্জিভূত কষ্টের নিঃশর্ত নিঃসরণ। অপূর্ব আলোর বিচ্ছুরণ আজ ডেভিডের সমস্ত অভিব্যক্তিতে। রিনিকে কল্পনা করে নিজ তারুণ্যর বিমূর্ত বিকল্প রূপে। এ যেন হাজারো পঙক্তি-মালায় গাথা এক নীরব পদ্য।

মার্ক ছিল ডেভিডের নিজের ছেলে। সে চলে যায় ইংল্যান্ডে, তাছাড়া ডেভিডের সাথে মার্কের কোন বন্ধন ছিলনা। পরের সংসারে সে আর কোন সন্তান নেয়নি। মেরীকে না পাওয়ার পর তার আর ইচ্ছে করেনি। এই সংসারে পালক ছেলেমেয়েরা তাকে মাঝে মাঝে দেখতে আসতো। কিন্তু খুব একটা না, তাই বিষণ্ণ বিকেল ছিল ডেভিডের নিত্য দিনের সঙ্গী। রিনির সান্নিধ্য তার কাছে এক অনবদ্য পাওয়া। সময় আর বাইরের অবয়ব যেন কোন বাধা নয়। আসলে বুড়িয়ে যাওয়া মানেই ফুরিয়ে যাওয়া নয়। মনটা তো সেই দুরন্ত আর চিরসবুজ, যেন আগেরই মতো সবকিছু।

অনেক বিকেল কাটে দুজনের বিচিত্র অনুভবে। রিনি ভাবে এত কষ্ট পুষেও কি করে পারে একটা মানুষ এত প্রাণবন্ত হতে। রিনি মনস্তত্ত্বতে ডেভিডের ব্যক্তিত্বের বিশ্লেষণ খোঁজে। সে বরাবরই মানুষ কে ভাবে একেকটা রহস্যময় আধার রূপে। যার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ নেই। অন্যদের উৎসুক দৃষ্টি উপেক্ষা করে ওরা কাটায় অনেক বিকেল। রিনির কাছে, মানুষ মানে একই পৃথিবীর বাসিন্দা-সম গোত্রীয় প্রজাতি- এরপর সে মানব। বয়েস আর পুরুষের সংজ্ঞায় সে বন্ধুত্ব বিচার করেনা। তার সাহচর্যে কেউ আনন্দিত, এটাই তার পাওয়া। অস্পর্শ বাঁধনে ও মানুষ মানুষকে অনেক কিছু দিতে পারে, রিনি আর ডেভিডের অসম বন্ধুত্ব সেই নির্মল ভালোলাগার এক অনিন্দ্য বন্ধন। নিষাদ মাঝে মাঝে ডেভিডকে সহ নানা পরিকল্পনা করে। ডেভিডের শূন্যতা তাকেও ব্যথিত করে।

এরপর একদিন, হাওয়া বদল বা এক ঘেয়ে জীবনে স্বস্তি আনতে দুরে কোথাও বেড়াতে যাবার প্ল্যান করে ডেভিড। অস্ট্রেলিয়ায় যাবে কিছু দিনের জন্য, অতি মায়া কাটানোর একটা অজুহাত কিনা কে জানে। হবে হয়তো। অসম বন্ধুত্ব ও যে এত প্রাণময় হতে পারে তা তার ধারনায় ছিলনা। রিনি ও নিষাদ তাকে অকল্যান্ড এয়ারপোর্টে সি-অফ করতে আসে। ওকে কেমন বিমর্ষ দেখাচ্ছে। স্মিতহাস্যে যদিও গল্প করছে কিন্তু তার চোখ দুটো ছলছল। ভারাক্রান্ত মনে সে নিষাদকে বলল, মনে হচ্ছে এ জীবনে তোমাদের সাথে আর দেখা হবেনা। অনেক চমৎকার সময় কেটেছে তোমাদের আন্তরিক সাহচর্যে, ভালো থেকো আজীবন। ও হ্যাঁ আরেকটা কথা, রিনি এ জীবনে তোমার হলেও-পরের জন্মে ও কিন্তু আমার, ইয়ংম্যান। বলেই হাসতে হাসতে হ্যান্ডশেক এর জন্য হাত বাড়াল নিষাদের দিকে। নিষাদও বলল, পরের জন্মে কেন এখনি নিয়ে যাও না সাথে। সেখানেই শেষ দেখা।

এর কিছুদিন পর হঠাৎ করেই এক ব্যক্তিগত কারণে রিনি ও নিষাদকে অস্ট্রেলিয়ায় আসতে হোল। ফিরে যাবে ভেবেছিল, পরে যাওয়া হয়নি আর। ডেভিডের অনুমান সত্যি, আর দেখা হয়নি তার সাথে। রিনির কাছে ডেভিডের প্রচ্ছায়া এক তারুণ্যর প্রতীক। এক উচ্ছল তরুণ অফুরন্ত প্রাণ। অবাক হয় তার দেশে বয়সীরা কেন এমন হয়না। পঞ্চাশের পরই যেন ফুরিয়ে যায়, স্তিমিত হয় সব উৎফুল্লতা- প্রস্তুতি চলে অন্য ভুবনের। দৃশ্যত: জীবন তো একটাই, ভারসাম্য উপভোগে কি এমন ক্ষতি তাতে। ভাবে কোন একদিন ডেভিডকে নিয়ে একটা উপন্যাস লিখলে কেমন হয়!




কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি






Share on Facebook               Home Page             Published on: 30-Jun-2015

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far