অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলুমনাই এসোসিয়েশনের পিকনিক ও ঈদ পুনর্মিলণী অনুষ্ঠিত
কাজী সুলতানা শিমিঃ গত ৩১শে জুলাই রবিবার ২০১৬ সিডনির মাউন্ট আনান-এ ঢাকা ইউনিভার্সিটি Alumni এসোসিয়েশন অস্ট্রেলিয়ার পিকনিক ও ঈদ পুনর্মিলণী অনুষ্ঠিত হয়। উল্লেখ্য যে, "নানা রঙের দিনগুলি" - এই স্মৃতিচারণ থেকে উদ্যোগী হয়ে ২০১০ সাল থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটির কর্মোদ্যোগী প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা সিডনিতে Dhaka University Alumni Association Australia (DUAAA) সংগঠনটি গড়ে তোলে।
রোববার সকাল থেকেই মাউন্ট আনান-এর সবুজ প্রান্তরের পিকনিক ছাউনিটি মুখরিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের মনোরম আলাপচারিতায়। মাউন্ট আনান-এর সুবিন্যস্ত বনানীর পার্কে দুর থেকেই দেখা যাচ্ছিলো লাল-সবুজ পাতাকার অবারিত হাতছানি। DUAAA-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আবদুল্লাহ সংগঠনের অন্যান্য সবাইকে নিয়ে সকাল থেকে আগত সকল সদস্যদের অভ্যর্থনা জানান। মেঘলা আকাশ থাকা সত্ত্বেও প্রকৃতির এই মিলন মেলার আহবানকে উপেক্ষা করতে পারেনি কেউ। বিপুল উৎসাহ নিয়ে মেঘের ঘনঘটা সরিয়ে অনেকেই জড়ো হয় মাউন্ট আনান-এর সবুজ বনবীথিকায়। সংগঠনের অন্যতম সদস্য খায়রুল চৌধুরী, আনিস মজুমদার, কামরুল ইসলাম ও কামরুল মান্নান আকাশ ছিলেন পিকনিক আয়োজনে সদা তৎপর।
সকালের নাস্তা দিয়ে শুরু হয় সারাদিনের কর্মসূচি। এরপর সেলিমা বেগমের প্রাঞ্জল উপস্থাপনায় শুরু হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বিস্কুট দৌড়, মার্বেল দৌড় ও তিন’পা দৌড় প্রতিযোগিতা। প্রবাসে বেড়ে উঠা প্রজন্ম এ খেলায় অতি উৎসাহে অংশ গ্রহণ করে। ছেলেরা খেলে ক্রিকেট আর মেয়েদের জন্য ছিল পিলো পাসিং খেলা। কলা ভবন, অপরাজেয় বাংলা, মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হল, টিএসসি, ডাকসু- স্বপ্নের জায়গা গুলোর স্মৃতিরোমন্থনে সেদিন খুজেফিরে হারিয়ে যাওয়া নিজস্ব ঠিকানা। মানস মন্দিরে জমিয়ে রাখা অতুলনীয় সেইসব সোনালী দিনের কথা বলতে যেয়ে জেগে উঠে স্মৃতির অগুনতি পদচারনা, নিরন্তর স্বপ্নবোনা- সবাই মেতে উঠে এক অনির্বচনীয় অনুভবে। স্মৃতি চারণের পাশাপাশি চলতে থাকে মধ্যাহ্ন ভোজ পর্ব। সবাই ফিরে যায় সহপাঠী ও অন্যদের সাথে আড্ডা আর হাসিঠাট্টার মিলন মেলায়। জীবনের বহু পথ পাড়ি দিয়ে সেদিন যেন আবারও একটি দিনের জন্যে হারিয়ে যায় প্রিয় শিক্ষাঙ্গনে ফেলে আসা দিনগুলোতে।
DUAAA-এর সংগঠকদের আহবানে মেলবোর্ন থেকে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট নাট্য শিল্পী ডলি যহুর। সবার সাথে তিনিও উপভোগ করেন দিনটি। বিকেলের চা-পর্ব শেষে ছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। নাফিসা চৌধুরী মিনি’র পরিচালনায় খেলায় বিজয়ীদের পুরস্কার বিতরণ করেন মোস্তফা আবদুল্লাহ ও ডলি যহুর। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গানের দরিয়া’য় পরিবেশিত হয় স্থানীয় ব্যান্ড এইট নোট-এর গান। সঙ্গীত শিল্পী এহসান আহমেদ-এর স্মৃতিচারণ ও নস্টালজিক করে তোলা গানের সুরে সবাই হারিয়ে যায় পুরানো সেই স্মৃতির বন্ধনে। মাসুদ মিথুন তার মোহনীয় কণ্ঠে মুগ্ধ করে রাখেন আগত সবাইকে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এই পিকনিক ও পুনর্মিলণী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতিবারের মতো এবারো উৎযাপন হয় এক বর্ণাঢ্য মিলন মেলা।
শিক্ষাজীবনের স্মৃতিচারণ পর্বে প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আনন্দ ও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। সেদিন শত ব্যস্ততার মাঝেও সিডনী’র বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হৃদয়ের টানে ছুটে আসেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। দিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের জন্য ছিল এক অনন্য অসাধারণ দিন। ফেলে আসা তারুণ্যের উচ্ছল ঝলমলে ক্যাম্পাস জীবনের সেই দিনগুলোতে তারা ফিরে যায় ভালোলাগা, ভালোবাসার নস্টালজিক আবেগে। পরিশেষে DUAAA-এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আবদুল্লাহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে এই মিলন মেলার পরিসমাপ্তি টানেন।
কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি |