bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













“সংস্কৃতি চর্চা” এবং বাঙালি আড্ডা
কাজী সুলতানা শিমি


‘বন্ধু, কি খবর বল’ - এই মন, স্পৃহা, আড্ডা, সংস্কৃতি সব কি আমরা হারিয়ে ফেলতে বসেছি! এবার মনে হল বাঙালি আড্ডা নিয়ে কিছু একটা লিখলে কেমন হয়। বাংলা-সিডনি এর লেখালেখি শিরোনামে মুস্তফা অবদুল্লাহ'র লেখা "আড্ডা'র গুনকীর্তন" লেখাটা পড়ে আমার আড্ডা বিষয়ে, একটা কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো। জীবনের নানা মুখী কর্ম ব্যস্ততায় নিজের জন্য, ছেলে-মেয়ের জন্য কিংবা বন্ধুদের জন্য একটু খানি সময় বের করার সময় হয়না যে তা কিন্তু নয়, কিন্তু সেই কষ্ট করে বের করা সময়ে ও আমরা জড়িয়ে ফেলি নানা রকম সংগঠন, জন-কল্যাণ কিংবা পেশাদার কিছু করার কাজে। শুধু আড্ডা দেয়া কে আজ আমরা কোনো গুরুত্ব পূর্ণ কিছু মনে করিনা। মনে করি- ধুর, আড্ডা দিয়ে সময় নষ্ট করার মতো সময় কোথায়!

জন্মগত ভাবে মানুষ মাত্রই কিছু না কিছু প্রতিভার অধিকারী, প্রতিভার বিকাশ হয় প্রাণবন্ত আড্ডা থেকে। খ্যাতনামা অনেক সাহিত্য রচনার প্রেরণা হয়েছে সাদাসিধে ঘরোয়া আড্ডা। বলা যায় ঘরোয়া আড্ডা সংস্কৃতি-চর্চার সূতিকাগার। সংগঠন বা প্রাতিষ্ঠানিক মোড়কের বাইরে ঘরোয়া আলোচনায় একটা অর্থবহ আড্ডার উদ্দেশে যদি সপ্তাহ শেষে কোথাও বসা যায় তাতে কিন্তু অনেক কিছু শেয়ার করার থাকে। বাচ্চারা কিংবা আমরা, বড়রাও, নতুন কিছু জানতে বা শিখতে পারি। খালি মুখে বা পেটে ক্ষুধা নিয়ে আড্ডা জমেনা তাই সবাই একটা করে রান্না করা খাবার যদি সাথে নিয়ে আসি তাহলে খাবার চিন্তাও আর থাকেনা কেবল জমিয়ে আড্ডা মারা। এক্ষেত্রে এদেশের ওয়ান-ডিশ বা শেয়ার-লাঞ্চ এর ধারণাটা কিন্তু একেবারে খারাপ না, জমিয়ে আড্ডা মারার জন্য। আড্ডা দিতে হলে আড্ডার জন্যেই বসতে হবে, ভুড়ি-ভোজনের সাথে মিলিয়ে বা গুলিয়ে ফেলা যাবেনা।

আড্ডা বাঙালী মননের একটা অনিবার্য-চাহিদা, বলা যায় আকুতি ও তৃষ্ণা। আজ আমরা নিরন্তর বাস্তব জীবনে, আড্ডা দেয়ার জন্য যেটুকু সময় খুঁজে বের করি তা শুধু জমা রাখি সপ্তান্তে জন্মদিন কিংবা বিয়ে'র দাওয়াত এর জন্য। আসলে সেটাকে বলা যায় ভুড়ি-ভোজন, বলা যায় না সত্যিকারের আড্ডা। বিয়ে বা জন্মদিন কে আড্ডা বলা যায়না এজন্য যে আয়োজনটা ব্যক্তি কেন্দ্রিক বা উপলক্ষ-ভিত্তিক। আড্ডা মানে শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি–চর্চার কিংবা যে কোনো ঘটনার তুমুল আলোচনা - সমালোচনা। এক কথায় বলা যায় ঘরোয়া শিল্পচর্চা।

গত কয়েক মাস যাবত মানসিক-স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ে গবেষণা করার জন্য কিছু আন্তর্জাতিক পাবলিকেশন ঘাটাঘাটি করে যা বুঝা গেলো, তার সারকথা হল আড্ডা সুস্থ মানসিক বিকাশে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যাবতীয় হতাশা ও দুঃচিন্তা দূর করার জন্য আড্ডার ভূমিকা অসামান্য। অথচ আজকের তরুণ-তরুণীরা জানেনা সত্যিকারের আড্ডা কি। আড্ডা হবে সার্বজনীন ও উন্মুক্ত, হতে পারে শিল্পসাহিত্য, গল্প-কবিতা কিংবা সমসাময়িক ঘটে যাওয়া কোন ঘটনা নিয়ে তুমুল বিতর্ক। মনে পরে ছোটবেলার এলেবেলে হাসিকান্না, সুখ-দুখ, রাগ-বিরাগ আর মনোমালিন্যর সেই শর্তহীন দিন গুলো, আমাদের বাচ্চারা যা থেকে বঞ্চিত। ওরা জানেনা আনন্দ অভিমান, জানেনা বিষাদ মধুর সম্পর্ক কাকে বলে শুধু জানে কম্পিউটার, আইপ্যাড আর ভিডিও গেম। আসলে আমাদেরও কিছু দায় আছে তাদের কাছে। আমরা কতোখানি সময় ওদেরকে দিই; এই মানবিক সম্পর্ক জানার জন্য, বোঝার জন্য। আমরা শুধু জানি ওদের পড়াশুনা করতে হবে, ভাল রেজাল্ট করতে হবে আর তখন ওরাও আমাদের ফাঁকি দেয়ার জন্য খোঁজে নানা পরিকল্পনা। আসলে আমাদের নিজেদের ও বাচ্চাদের সাথে একটা বন্ধন তৈরি করার জন্য প্রয়োজন তাদের জন্য একটু সময় বের করার, প্রয়োজন নানামুখী বিনোদনের আয়োজন করা যা কিনা তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য জরুরী। আজকালকার দুই প্রজন্মর মধ্যে দূরত্ব যোজন যোজন, এই দূরত্ব ঘোচাবার দায় আমাদেরই কারণ আমরাই এজন্য দায়ী বয়োজ্যেষ্ঠ হিসাবে। আর আড্ডা হতে পারে একটা উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

প্রসঙ্গতঃ সেদিন ২৫ এপ্রিল কেলিভিলে আসাদ ভাই আর জেবা আপার বাসায় একটা জম্পেশ আড্ডা হয়ে গেলো, সাথে বর্ষ বরণ ১৪২২। সবাই একটা করে বাংলা-ডিশ নিয়ে আসায় খাবার আয়োজন সহজ হয়ে গেল, দ্বিধা-হীন আড্ডা হোল অনেকটা সময়। বাচ্চারা ও বড়রা যে যা পেরেছে গান, কবিতা, গল্প-কথায় অনেক আনন্দের একটা ঘরোয়া আড্ডা হয়ে গেল সাথে কিছুটা সংস্কৃতিচর্চা ও। এভাবে ঘরোয়া সংস্কৃতিচর্চা কিন্তু পরবর্তীতে মঞ্চে দাঁড়ানোর মতো পারদর্শী করার সাহস ও সুযোগ তৈরি করে। সত্যি বলতে কি জন্মদিন বা বিয়ের আয়োজন ছাড়াও এ ধরণের ঘরোয়া আড্ডায় বাচ্চারা অনেক কিছু জানে, শিখে ও উপলব্ধি করতে পারে। আমাদের অনেকেরই জনসমক্ষে সাবলীল ভাবে কথা বলার মতো মানসিকতা বা

সাহসিকতা নেই, যা কিন্তু এদেশের কর্ম ও বাস্তব জীবনের জন্য একটা প্রয়োজনীয় দক্ষতা। ঘরোয়া আয়োজন গুলো সে জড়তা কাটাতে অনেকটা সাহায্য করে। এমনিতে শুধু জন্মদিন বা বিয়ে ছাড়াও যে পারস্পরিক দেখাশুনা হতে পারে ঘরোয়া আড্ডা আসলে সেজন্য ও দরকার।

এই কর্পোরেট ভুবনে আবেগের কোন মূল্য নেই আজ; শুধু অর্থ, যশ আর প্রতিপত্তির পিছে লাগামহীন ভাবে ছুটছে সবাই। আবেগ শূন্য এই পারস্পরিক সম্পর্ক নূতন করে কি ঘরোয়া আড্ডায় আমরা আবার কিছুটা ফিরে পেতে পারি না! “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই...... কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালী বিকেল গুলো সেই”, না, ইচ্ছে করলেই কিন্তু আমরা সেই পুরানো আড্ডা, সেই পুরানো সংস্কৃতি নূতন করে প্রবর্তিত করতে পারি নূতনদের কাছে, ওয়ান-ডিশ বা শেয়ার-লাঞ্চ করে; একটু ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন পরিবেশে; কারো বাড়িতে, খোলা-প্রান্তরে কিংবা সমুদ্র-পাড়ে। সব কিছুই যে সংগঠন-ভিত্তিক, বাণিজ্যিক বা পেশাধারী হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই; এসবের বাইরেও কিছু নিঃস্বার্থ বন্ধুত্ব, নিজস্ব এলোমেলো আলাপন, কিছু একান্ত ঘরোয়া আয়োজন থাকনা আমাদের চিন্তা, মননে ও মানসিকতায়।




কাজী সুলতানা শিমি, সিডনি - দার্শনিক ও গবেষক







Share on Facebook               Home Page             Published on: 15-May-2015

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far