bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



সড়কে নিরাপত্তা
অধ্যাপক শামস্‌ রহমান



আমি ঢাকায় ছিলাম গত সপ্তাহে। তখন নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন চলছিল। আমার একাশি বছরের মাকে নিয়ে গিয়েছিলাম উত্তরায় ক্রিসেন্ট হাসপাতালে। ফেরার পথে ভর দুপুরে জসিমউদ্দিন রোডের মাথায় আটকা পরি প্রায় আড়াই ঘণ্টা জন্য। সম্প্রতি বাসের চাপায় যে দুজন শিক্ষার্থী মারা গেছে তাদের বাবা মায়ের সন্তানহারার যে বেদনা তার তুলনায় আমার বৃদ্ধা অসুস্থ মায়ের রাস্তায় অপেক্ষার কষ্ট তেমন কিছুই নয়। সন্ধ্যায় এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীর সাথে দেখা। বললেন – সিপমেন্ট জনিত কারণে তার ব্যবসার ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। সমাজে এভাবে আরও অনেকেই আরও অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে হতেও পারে। তবে, ভবিষ্যতের সড়ক নিরাপত্তার কথা ভেবে সাময়িকের জন্য এটুকু কষ্ট স্বীকার করে নিতেই হবে।

যে কোন সিস্টেমের মত সড়ক পরিবহণও একটা সিস্টেম। সাধারণত একটা সিস্টেম পরিচালিত এবং প্রভাবিত হয় কিছু সংখ্যক ‘এক্টর’ দ্বারা। তেমনিভাবে সড়ক পরিবহণ সিস্টেমও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পরিচালিত ও প্রভাবিত হয় অসংখ্য ‘এক্টর’ দ্বারা। যেমন, রাস্তা-ঘাটের হাল, যানবাহনের ফিটনেস; রাস্তায় যানবাহনের মোড (যেমন, অযান্ত্রিক ও যান্ত্রিক - রিক্সা, ঠেলাগাড়ি, মোটর গাড়ী, ট্রাক, বাস ইত্যাদি); যানবাহনের চালক ও মালিক; শ্রমিক ইউনিয়ন; ট্রাফিক পুলিস ডিপার্টমেন্ট; সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়; সর্বোপরি পথচারী এবং যানবাহনের আরোহী। এসব বা এরা সকলে প্রত্যক্ষ ‘এক্টর’। এগুলোর বাইরে আরও ‘এক্টর’ আছে যা বা যারা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে আমাদের সড়ক পরিবহণ সিস্টেম। নিঃসন্দেহে এটা একটি জটিল সিস্টেম।

সিস্টেম যখন সঠিকভাবে কাজ করতে অপারগ, তখন সিস্টেমের সবাই (সব ‘এক্টর’)সবাইকে দোষারোপ করে। যেমন দেখা যায় চালককে বেপরোয়া ভাবে চালাতে, তেমনি দেখা যায় আরোহীদের তাগাদা দিতে গাড়ি দ্রুত চালাতে। কেউ যখন টয়োটায় চেপে চলে, তার কাছে মনে হয় –

- রিক্সা চলে অনিয়মে, যত্রতত্র।
- ঠিক রাস্তার মোড়ের মুখে দাঁড়িয়ে থাকে যানবাহন, সৃষ্টি করে প্রতিবন্ধকতা।
- পথচারী সড়ক পাড় হয় সড়কের যেখানে সেখানে, অনিয়মতান্ত্রিক ভাবে।
- পথচারী বিপদ জেনেও দ্রুতগামী গাড়ীর সামনে হাত তুলে রাস্তা পাড় হয়, তবুও ব্যবহার করে না পাশের ওভারব্রিজ।
- অযথা বাস চলে দ্রুত বেগে।
- বাস অনির্ধারিত স্থানে এবং রাস্তার মাঝখানে থামে এবং আরোহী তুলে।
- ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশ অপারগ।

আবার সেই একই ব্যক্তি যখন রিক্সার আরোহী, তখন তার কাছে কি মনে হয়? সে দেখে –

- ‘যান্ত্রিক গাড়িগুলো ভয়ানক। চলে বেপরোয়া।
- পথচারী ফুটপাত রেখে অযথাই রাস্তায় হাটে।
- বাস-ট্রাক চলে বেপরোয়া, দিগ্বিদিক ছাড়া।
- অকারণেই রিকশাচালককে ট্রাফিক পুলিশ হয়রানি করে।

একই ভাবে সেই ব্যক্তি যখন পায়ে হাটে, তখন তার কাছে মনে হয় –

- রকমারি হকার দোকানের ভিড়ে ফুটপাত হাটার অচল;
- রাস্তার ধার দিয়ে পার্কিং করা যানবাহন ও রিক্সার ভিড়। না যায় হাটা ফুটপাতে, না যায় রাস্তার ধার ঘেঁসে।
- পথচারীদের রাস্তা পারাপারের অপর্যাপ্ত সুযোগ।

সেই একই ব্যক্তি যদি হয় ট্রাফিক পুলিশ, তার কাছে কি মনে হয়? সে দেখে –

- প্রায় সব চালকই অদক্ষ, অপ্রশিক্ষিত অথবা অর্ধ-প্রশিক্ষিত, সে রিক্সারই হোক আর গাড়ীরই হোক।
- কোনভাবে লাইসেন্স পেয়ে রাস্তায় নামে চালক বেশে।
- অনিয়মের কারণে ধরলেই বলে – সুবিধা নিচ্ছি।
- কথায় কথায় শ্রমিক ইউনিয়নের ভয় দেখায়।

সেই ব্যক্তি যদি হয় বাস-ট্রাকের চালক, সে কিভাবে দেখে? সে দেখে –

- রাস্তার হাল সেই সাথে অব্যবস্থাপনা-জনিত কারণে বিলম্ব হওয়া।
- ট্রিপের সংখ্যা কমে যাওয়া।
- গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্বের কারণে যাত্রীদের অস্থিরতা।
- মালিকের চাপ।
- চাপের মুখে ‘প্রায়-ফিট’ গাড়ী নিয়ে রাস্তায় নামা।
- অনির্ধারিত জায়গায় পথচারীর রাস্তা পারাপার।
- ট্রাফিক পুলিশের হয়রানি।
- যত্রতত্র রিক্সা, স্কুটারের ছুটাছুটি।

এভাবেই চলে ব্লেম-গেম। এর জন্য কে দায়ী? এক কথায় সিস্টেম। আর আমরা যেহেতু সবাই এই সিস্টেমেরই অংশ, তাই আমরা প্রত্যেকেই দায়ী। তবে এটা সত্য, এই সিস্টেমে সবাই যেহেতু সমান প্রভাবশালী নয়, তাই দায়িত্বও সমান নয়। যাদের প্রভাব বেশী, তাদের একাউন্টেবিলিটি বেশী, সেই সাথে তাদের সড়কের নিরাপত্তায় দায়িত্বও বেশী। নিঃসন্দেহে বলা যায় সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাপনার আশু উন্নয়ন অপরিহার্য।

এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার। আমাদের সড়ক পরিবহণ সিস্টেমের এক্টরদের মাঝে মাত্র দুটি বিষয় জড় পদার্থ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। এক, রাস্তার হাল। দুই, যানবাহন। বাকি সবাই মনুষ্যজাতিসম্বন্ধীয়। শুধু দক্ষ চালক, ট্রাফিক পুলিশ বা নাগরিক হওয়াই যথেষ্ট নয়, আমাদের প্রত্যেকের সচেতন নাগরিক হয়ে গড়ে উঠতে হবে। কাজটি সহজ নয়। তবে, আজই হোক তার শুরু।

দেশটা আমাদের। দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বও আমাদের । ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নয়টি দাবী মেনে নিয়ে তা সম্পাদন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার প্রধান। শিক্ষার্থীদের এবার ঘরে ফেরার সময়।

আমি তারুণ্যে বিশ্বাসী। কারণ বিন্দুমাত্র খাদ থাকে না তারুণ্যের বিশ্বাসে। বলা বাহুল্য, আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বে। সম্প্রতি শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চও জেগে উঠে তরুণ ছাত্র সমাজের নেতৃত্বে। যুদ্ধাপরাধী ও মানবতা বিরোধীদের সঠিক বিচারের দাবীতে সৃষ্ট হয় এ মঞ্চ, যার সব শ্লোগানের শেষ শ্লোগান – জয় বাংলা। আজকের নিরাপদ সড়কের দাবীর নেতৃত্বেও ছাত্র সমাজ। তাদেরও একটি প্রধান শ্লোগান - মুজিব কোটে মুজিবকেই মানায়, চামচাকে না’। ‘জয় বাংলা’ আর ‘মুজিব’ আমাদের জাতীয় অরিয়েন্টেশনের অংশ, তাতে আমাদের প্রজন্ম বিশ্বাসী। দলমত নির্বিশেষে সমগ্র জাতি যত তাড়াতাড়ি জাতীয় অরিয়েন্টেশন তথা ’৭১ এর মূলধারায় বিশ্বাসী হয়ে উঠবে, জাতীয় সমস্যা সমাধানের পথ আরও সহজ থেকে সহজতর হবে।


অধ্যাপক শামস্‌ রহমান, মেমবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Aug-2018

Coming Events: