কবিতা কবিতায় তুমি প্রজ্বালিত, শুধু আমার প্রয়াস থাকে উপেক্ষিত শামস্ রহমান
কবিতার প্রসঙ্গ এলেই ফেটে পড় উচ্ছ্বাসে। ভাবনার মহাকাশে তখন তোমার শুধুই জানা-অজানা অসংখ্য কবিদের এলোমেলো আনাগোনা। কোন্ কবিকে রেখে কোন্ কবির কথা বলবে শেষে? কোন্ কবিতা পড়ে শোনাবে বিদগ্ধ শ্রোতার উদ্দেশে? তাতে ব্যকুল হয়ে উঠো তুমি। বলো –
‘গুণের ঐ কবিতা!
জানো, আমার ভীষণ প্রিয় –
‘স্বাধীনতা’ শব্দটি যেন জমিন-জনমের জীবন্ত ইতিহাস’।
‘আর রুদ্রের সেই কবিতা!
অনাড়ম্বর আবরণে সে এক অনবদ্ধ পদ্য –
‘শ্মশান’ যেন শুধুই শূন্যতায় পূর্ণ;
যেখানে নারীর ‘শূন্যতা ঘিরে দীর্ঘশ্বাসে’
প্রেমিক কেবলই ‘বেদনার ঘ্রাণে’ ভাসে’।
‘মনে পরে হেলাল হাফিজের সেই ছোট্ট কবিতাটি?
সনেট না হয়েও সনেটের ছন্দে গড়া,
আর ব্যর্থতার ভারে বিষাদে ভরা -
‘ইচ্ছে ছিলো’র নিগূঢ় নির্যাস
যেন প্রাণের গহিনে শুধু তাকেই পাওয়ার প্রয়াস!
অথচ পার্থিব সব পায়, কেবল তাকেই হারায়’।
তোমার কথার ফাঁকে ফাঁকে উৎকণ্ঠায় কাটে আমার সময়- এই বুঝি আমার কবিতার প্রসঙ্গ টানবে এবার! অতঃপর বুঝি কবিতায় হবে মোর পরিচয়। না! কবিদের প্রতি গভীর আকুতি তোমার প্রাণে জাগায় ভিন্ন অনুভূতি। উজ্জ্বল তারকা হয়ে তখন তোমার আকাশে ভাসে কবি সব্যসাচী। বলো – ‘দেখো, কি প্রাঞ্জল ভাষা! ভাব-ভঙ্গি আর রচনাশৈলীর
অভিনব যাত্রায় কাব্য যেন পায় এক নতুন মাত্রা! তাইতো রূপকথার ‘নূরুলদীন’ সময়ের ছায়াপথ মারিয়ে কালের চক্র পেড়িয়ে ত্যাগ আর উৎসর্গের মননে উত্তীর্ণ হয় মার্চের মহানায়কের সারা জীবনে’। গত কুড়ি বছরের জীবনে, কারণে-অকারণে রচেছি অন্তত কুড়িটি কবিতা। মাটি-জল, শ্রাবণের ঢল, কৃষকের ফসল – সবই আছে তাতে; সমাজ-সংসার, ব্যক্তি-সমষ্টি, রমণী ধরণী
স্থান করে নিয়েছে আমার অজান্তে। নজরুল থেকে ধার করে বিদ্রোহীর ধ্বনিতে উৎপাদনের সংজ্ঞা বদলাতে দিয়েছি ডাক, ব্যর্থ প্রেমের নির্বাক ব্যজন করেছি যোগ যেখানে পেয়েছি সুযোগ। সুকান্তের শব্দাবলী ধার করে দিয়েছি শ্রেণী দ্বন্দ্বের অকাট্য বিশ্লেষণ, লাল তুলিতে এঁকেছি সমাজ-সংসারের কাঙ্ক্ষিত আচরণ। জীবনানন্দ থেকে অকাতরে কুড়িয়েছি ভালবাসার হাজারো উপমা; রঙে-রসে রাঙিয়েছি প্রেমের প্রতিমা কবিতার পরতে পরতে।
ঝুমুর, এসবই তোমার জন্য পূজার অর্ঘ জেন। তুমি একটি বার পড়ে দ্যাখ আমার একটি কবিতা আজিকে; পেলেও পেতে পার তাতে নিজেকে।।
মেলবোর্ন, ১৫ আগস্ট থেকে ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
শামস্ রহমান, মেলবোর্ন
|