bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



প্রসঙ্গঃ প্রবাসী বাংলাদেশীদের
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বের প্রশ্ন

ড. শামস্‌ রহমান


স্বাধীনতার পূর্বে মুক্তি পেলেও বাংলাদেশের বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ছবি ‘জীবন থেকে নেওয়া’ দেখেছি স্বাধীনতা উত্তর। সংসারে উপার্জনের প্রধান উৎস আইনজীবী ভাই হওয়া সত্যেও, সমস্ত সম্পদের কর্তৃত্ব এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধুই বোনের। তাই টাকা-পয়সা, ধন-রত্ন ভর্তি সিন্দুকের চাবির গোছা শোভা পায় তারই কোমরে। উপার্জন আর অবদান একজনের, আর তার অন্যায্য ব্যবহারের অধিকার অন্যজনের – এ কেমন প্রথা? এটা যেমন অযৌক্তিক, তেমনি বাস্তবতার সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। কোন (দুর্বলতার) কারণে, কোন কালে এ প্রথা চালু হলেও, চলতে পারে না চিরদিন। যৌক্তিকতা ও বাস্তবতার নিরিখে এর অবসান অপরিহার্য। তাই ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝে শেষে প্রতিষ্ঠিত হয় সত্যের। ১৯৬৯ যা ছিল একটি সিনেমার গল্প; ১৯৭১ তা রূপ নেয় বাস্তবে। আর এভাবেই প্রতিষ্ঠিত হয় – ‘যার অবদান যতটুকু, তার সিদ্ধান্তের ভূমিকা ততটুকু’।

এ গেল রাষ্ট্রের কথা। ব্যক্তি জীবনে বিষয়টা উপলব্ধি করতে আমাকে দৌড়াতে হয় এডিবি (এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) হেড কোয়ার্টার ম্যানিলা পর্যন্ত। আমি তখন এ আই টিতে মাস্টার্স শেষ করেছি মাত্র। অনেকটা কাকতালীয় ভাবেই এডিবিতে চাকরীর একটা এড চোখে পড়ে সেই সময়। পদের শিরনাম Young Professional। আর পদের সংখ্যা দুটি। নিজের অভিজ্ঞতা আর যোগ্যতার সাথে বেশ মিল দেখে, দেরী না করে আবেদন করি। এবং তার কিছুদিনের মধ্যে ম্যানিলা বেড়াতে গেলে, আবেদনপত্রের পরিস্থিতি সম্পর্কে জানার জন্য একদিন হাজির হই এডিবি হেট কোয়ার্টার। সহজেই সাক্ষাতের সুযোগ পাই একজন ঊর্ধ্বতন অর্থনীতিকের সাথে। ভদ্রলোক যে একজন বাঙালি তা তাঁর নাম এবং ইংরেজিতে নামের বানান দেখে বুঝতে পারি। আমার সাক্ষাতের উদ্দেশ্যের কথা উত্থাপন করলে তিনি যা বলেন, সংক্ষেপে তা এমনঃ

‘জাপান এডিবিতে সবচেয়ে বেশী অর্থ যোগান দেয়, তাই সিদ্ধান্তে জাপানের অভিমত অপেক্ষাকৃত বেশী গুরুত্বপূর্ণ। দুটি পদের একটি অবশ্যই জাপানী কেউ পাবে। তবে, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি যোগ্যতা সম্পন্নও হবে। দ্বিতীয়টি, এশিয়ার যে কোন দেশ থেকে হতে পারে। তাই বেশী আশা না করাই ভাল। কষ্ট পেলেও মেনে নেই সেদিনের সেই বাস্তবতা – ‘যার যত বেশী অবদান, তার তত বড় ছে’।

বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি চালিকা শক্তির একটি রেমিটেন্স – মানে দেশে পাঠানো প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ। অনেকের মতে আধুনিক কালে পূর্ব বাংলা থেকে কাজের জন্য বিদেশে যাওয়া শুরু হয় ১৯৪২ সনে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে। তখন প্রবাসীদের কাজের জন্য এক ধরনের স্কিম চালু করে বিলাতী সরকার। চল্লিশ এবং পঞ্চাশ দশকে পূর্ব বাংলার অনেকেই এ সুযোগ নিয়েছে, বিশেষ করে সিলেট-বাসী (Ahmed, 2010)। সেদিনের যাওয়াটা প্রধানত জাহাজে চেপে বিলাতের বন্দর নগরগুলিতে যাওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবং তা হতো মূলত: ব্যক্তি উদ্যোগে। সঙ্গবদ্ধভাবে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার (বিভিন্ন শ্রেণীর শ্রমিক ও প্রফেশনাল) হিসেবে প্রবাস যাওয়ার যাত্রা শুরু মূলত: স্বাধীনতার পর। ১৯৭৬ সনে যাদের সংখ্যা ছিল আনুমানিক ছয় হাজার, আজ তা দাঁড়িয়েছে ৯০ লক্ষের (৯ মিলিয়ন) ঊর্ধ্বে (BMET, 2015), যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। এই সংখ্যক মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের আয়ের সাথে বাংলাদেশে বসবাসরত আরও অন্তত চার গুন মানুষ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত। তার মানে, বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী পারিবারিক ভাবে রেমিটেন্সের সাথে সম্পৃক্ত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকলেও, বেশী সংখ্যক বাংলাদেশী প্রবাসীরা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলিতেই কার্যরত।

এ গেল ‘রেমিটেন্স-জনসংখ্যা’ নির্ভরশীলতা সম্পর্কিত বিশ্লেষণ। এবার দেখা যাক বাংলাদেশের অর্থনীতির দিকটি।

আগেই বলেছি, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান দুটি চালিকা শক্তির একটি রেমিটেন্স, অন্যটি তৈরি পোশাক খাত। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী গত ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে তৈরি পোশাক খাত থেকে রপ্তানি আয় ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারের অধিক। সেই একই অর্থ বছরে রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। আপাত দৃষ্টিতে রেমিটেন্সের পরিমাণ তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের ৫৭ শতাংশ দেখালেও, রেমিটেন্সের মাধ্যমে ‘নেট’ বৈদেশিক আয় পোশাক খাত থেকে প্রায় তিন গুন বেশী। এ পরিসংখ্যানটা সকলের অনুধাবন করা বিশেষভাবে প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে বছরে যে বৈদেশিক সাহায্য আসে, তার ৭ গুন বেশী রেমিটেন্স আয় (RMMRU, 2014)।

বছর বছর রেমিটেন্স আসছে এবং উত্তর উত্তর তা পরিমাণে বাড়ছে। কিন্তু তাতে দেশের কোন কাজে লাগছে কি? মানে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে কি? এক কথায়, ‘রেমিটেন্স-উন্নয়ন’ লিংক কি তাৎপর্যপূর্ণ? এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ কিছু গবেষণা হয়েছে। আমি সম্প্রতি প্রকাশিত কয়েকটি গবেষণার উল্লেখ করছি এখানে। একাত্তরটি দেশের পরিসংখ্যান নিয়ে গবেষণার ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংকের গবেষকেরা মন্তব্য করেন: ‘….remittances significantly reduce the level, depth, and severity of poverty in the developing world’ (Adams Jr. p. 1645, 2005)। তারা আরও উল্লেখ করেন: ‘….. a 10% increase in the share of international migrants in a country’s population will lead to a 2.1% decline in the share of people living on less than $1 person per day’। যথাক্রমে, ২৪, ১০০ এবং ১৬১ টি দেশের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে একই ধরণের উপসংহার টেনেছে সম্প্রতি প্রকাশিত আরও কয়েকটি গবেষণা প্রবন্ধ (Giuliano and Ruiz-Arranz, 2009; Gupta et al., 2009; Catrinescu et al., 2009; Lartey, 2012)। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ‘রেমিটেন্সে-উন্নয়ন’ লিংক বোঝার উদ্দেশে পরিচালিত সম্প্রতি এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ (Siddique et al., 2012)।

বাংলাদেশে রেমিটেন্সের ভূমিকা শুধুই অর্থনৈতিক উন্নয়নেই সীমাবদ্ধ নয়; সামাজিক অঙ্গনেও এর প্রভাব লক্ষণীয়। BRAC (Bangladesh Rural Advancement Committee)’এর এক গবেষণায় দেখা গেছে – ‘Overseas migration of adult males has a significant positive association with women’s decision-making capacity and education of girls in the migrant families’ (Hadi, 2001, p. 53)।

উপরের আলোচনা থেকে এটা প্রতীয়মান, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নে রেমিটেন্সের ভূমিকা ব্যাপক। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যারা রেমিটেন্স পাঠায়, দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্তে তাদের কি কোন ভূমিকা আছে বা থাকার কথা? কিংবা, থাকা কি প্রয়োজন? বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমানে এ ব্যাপারে প্রবাসীদের কোন ভূমিকাই নেই। গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার দেশের সার্বিক উন্নতির জন্য স্কয়ারের বাইরে উন্নয়নের কৌশল খুঁজছে। সেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। আর সে কারণেই আমরা আশা করি সরকার মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির প্রতি নজর দেবে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে। মানে, সরকার মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার তথা বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভূমিকার আইনগত স্বীকৃতি দেবে। এই স্বীকৃতিতে বাংলাদেশের উন্নতি আরও ত্বরান্বিত করবে বলে আমার বিশ্বাস। স্বীকৃতি স্বরূপ প্রবাসীদের জন্য সরকারের তিনটি পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি:

১) মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের সম্মানের সাথে দেখা – প্রবাসী রেমিটেন্স আর্নারদের যাতায়াত মূলত বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর দিয়ে। ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসে তাদের সম্মানের সাথে স্বাগত জানানো উচিত। সব সময়, অথবা নিয়োজিত সব কর্মকর্তাই যে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে মোটেই তা নয়। তবে, অভিজ্ঞতার আলোকে বলছি – মধ্যপ্রাচ্য থেকে যারা দেশে ফেরেন, আগত অন্য প্রবাসীদের তুলনায় তাদের বেশী হয়রানি পোহাতে হয়, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বলা বাহুল্য, বাংলাদেশের রেমিটেন্স আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে মধ্যপ্রাচ্যের গুটি কয়েকটি দেশ থেকে। তাই সম্মানের দাবীদার প্রধানত তারাই যারা মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসী।

২) অর্থ পাঠানো সহজোতর ও নিরাপদ করা – বর্তমান সরকার এ বিষয়ে কিছু উদ্যোগ নিয়েছে বটে, তবে তা যথেষ্ট নয়। উল্লেখ্য, হুন্ডি এবং ‘সঙ্গে নিয়ে’ আসা বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ নেহায়েত কম নয়। অনেক গবেষকের মতে এর পরিমাণ অফিশিয়াল রেমিটেন্সের প্রায় অর্ধেক। অফিশিয়াল পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠানো আরও সহজ এবং আকর্ষণীয় করলে অফিশিয়াল রেমিটেন্সের পরিমাণ তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয়ের কোন অংশে কম হবে না, বরঞ্চ বেশী হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী। বিশেষজ্ঞদের মতে, লেন-দেনের খরজ কমানো, দ্রুত টাকা পাঠানোর পদ্ধতি ও ব্যবস্থা স্থাপন এবং নিরাপদ ও নিশ্চয়তা প্রদানের মধ্য দিয়ে আস্থা বাড়াতে পারলেই অফিশিয়াল পদ্ধতিতে রেমিটেন্স পাঠানো আরও আকর্ষণীয় করা সম্ভব।

৩) সংসদে প্রতিনিধিত্ব প্রদান করা – আগেই উল্লেখ করেছি, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা ৯০ লক্ষের (৯ মিলিয়ন) অধিক যা বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। আর ভোটার সংখ্যার তুলনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা শতাংশের নিরিখে আরও বেশী। যেমন, দেশের জনসংখ্যা ১৬০ মিলিয়ন, আর ভোটার সংখ্যা ৯৭ মিলিয়ন (IDEA, 2015)। অন্য দিকে প্রবাসী তথা মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের বেশীর ভাগই সাবালক। সে হিসেবে প্রবাসী ভোটার সংখ্যা সমস্ত ভোটার সংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ। এই বিশাল সংখ্যক ভোটার যারা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অর্থের জোগান দিচ্ছে নিরলস ভাবে, অথচ দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডের সিদ্ধান্তে তাদের অভিমত কিংবা মতামত নেওয়ার কোন প্রকার প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতি চালু হয়নি আজ অব্ধি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য ভোটাধিকার এবং সেই সাথে সংসদে প্রতিনিধিত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে তা নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক।

প্রবাসীদের নিজ দেশের সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার বিষয়টি নতুন কোন ধারণা নয়। অনেক উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেই এ প্রথা প্রচলিত। যেমন, ইতালি, ফ্রান্স। সেই সাথে আফ্রিকার আলজেরিয়া, এঙ্গোলা, মোজাম্বিক, ল্যাটিন আমেরিকার কলম্বিয়া, পূর্ব ইউরোপের ক্রোয়েশিয়া, ম্যসেডোনিয়া এবং আরও বেশ কয়েকটি দেশ। ফ্রান্সের জাতীয় সংসদে মোট ৫৭৭ টি আসনের মধ্যে ১১ টি ফ্রান্সের প্রবাসীদের জন্য নির্ধারিত (Wikipedia, 2015)। অন্য দিকে প্রবাসী ইতালিদের জন্য ১২ টি আসন ইতালির জাতীয় সংসদে। পৃথিবীর প্রবাসী জনসংখ্যার ভিত্তিতে কন্সটিটিউয়েন্সি তৈরি করে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় প্রতিনিধি। তিউনিসিয়ার জাতীয় সংসদে মোট ২২৭ জন সদস্যের ১৮ জন প্রবাসী তিউনিসিয়ানদের প্রতিনিধিত্ব করে। আর, ম্যসেডোনিয়াতে তিনটি আসন প্রবাসীদের জন্য সংরক্ষিত ((Wikipedia, 2015a)।

পদ্ধতিগত দিক থেকে প্রথমে, প্রবাসী বাংলাদেশীদের জনসংখ্যার ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে নির্বাচনের কন্সটিটিউয়েন্সি তৈরি করা। বাংলাদেশের একটি সংসদ সদস্যের কন্সটিটিউয়েন্সি যে সংখ্যক ভোটার দ্বারা নির্ধারিত হয়, সেই একই সংখ্যক ভোটার দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে প্রবাসের নির্বাচনী কন্সটিটিউয়েন্সি। আগে উল্লেখ করেছি প্রবাসী ভোটার সংখ্যা বাংলাদেশের সমস্ত ভোটার সংখ্যার প্রায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ। সেই অনুপাতে বর্তমান বাংলাদেশের ৩০০ টি আসনের জাতীয় সংসদে প্রবাসীরা অন্তত ২৭ টি আসনের প্রতিনিধিত্বের দাবী করতে পারে।

এ প্রতিনিধিত্ব শুধুই প্রতিনিধিত্বের জন্য নয়। সংসদে প্রতিনিধিত্ব প্রদানের মাঝে প্রবাসে অবস্থিত বাংলাদেশের প্রায় ৯ দশমিক ১ শতাংশ ভোটার এবং রেমিটেন্স পাঠানো শ্রমশক্তির সাথে দেশের সরকার ও প্রশাসনের গড়ে উঠবে একটি পেশাদারিত্ব সম্পর্ক। তা থেকে বাংলাদেশের যে যে বিষয়ে সুবিধার সম্ভাবনা আছে তার কয়েকটি হলোঃ

১) প্রবাসে আজ অনেকেই বড় বড় প্রতিষ্ঠানের মালিক যারা দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। পেশাদারিত্ব সম্পর্ক গড়ে উঠার কারণে দেশে প্রবাসীদের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ার সম্ভাবনা অনেক। সেই সাথে বাংলাদেশী প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের সাথে বিদেশি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানের জয়েন্ট ইনভেস্টমেন্ট বাড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

২) কোন দেশে কি পেশা এবং কি ধরনের দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবীর প্রয়োজন তা নির্ধারণ করা সহজ হবে। তার প্রভাব পরবে দু দিকে:

এক) দেশে গড়ে উঠবে সঠিক দক্ষতা তৈরির প্রতিষ্ঠান। প্রসারিত হবে কর্মসংস্থান।

দুই) দক্ষ এবং অধিক কর্মজীবী রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে; আর সৃষ্টি হবে সমপরিমাণ সংখ্যক শ্রমের বিনিময়ে অধিক রেমিটেন্স আয়ের সম্ভাবনা। উদাহরণ স্বরূপ ভারত এবং ফিলিপিন্সের কথা বলা যেতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এত সব বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ সরকার শীঘ্রই এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি নজর দেবে কি? সরকার কি প্রবাসীদের ভূমিকার আইনগত স্বীকৃতি দেবে? নাকি, সেই হীরক রাজার দেশের মত ‘শ্রমিকরা আবার হীরকের কি বোঝে?’ এই মানসিকতার ধারায়, তারা শুধুই রেমিটেন্স পাঠিয়ে ক্ষান্ত? সরকার কি এডিবি’র বাস্তবতার আলোকে – ‘যার যত বেশী অবদান, তার তত বেশী ছে’, সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে? নাকি মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কারদের ‘জীবন থেকে নেওয়া’ সিনেমার মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে – ‘যার যতটুকু অবদান, তার সিদ্ধান্তের ভূমিকা ততটুকু’র জন্য দাবী জানাতে হবে? আমি মনে করি দাবী উঠার আগেই সরকার বাংলাদেশী মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার তথা বাংলাদেশী প্রবাসীদের ভূমিকার আইনগত স্বীকৃতি দেবে। আর সেটাই হবে নেতৃত্বের উৎকর্ষতার পরিচায়ক।



___________________________________________

Reference:

1. Adams Jr, R and Page, J (2009), "Do international migration and remittances reduce poverty in developing countries?", World Development, 33, 10, 1645-1669.

2. Ahmed, M S (2010), "Migrant workers remittance and economic growth: evidence from Bangladesh", ASA University Review, 4, 1, 1-13.

3. BMET (2015), Bureau of Manpower Employment and Training, Government of Bangladesh, http://www.bmet.org.bd (accessed 5 September).

4. Catrinescu, N, Leon-Ledesma, Piracha, M, and Quillin, B (2009), "Remittances, institutions, and economic development", World Development, 37, 1, 81-92.

5. Giuliano, R and Ruiz-Arranz, M (2009), "Remittances, financial development, and growth", Journal of Development Economics, 90, 144-152.

6. Gupta S, Pattillo, C A, Wagh, S (2009), "Effect of remittances on poverty and financial development in Sub-Saharan Africa", World development, 37, 1, 104-115.

7. Hadi, A (2001), "International migration and the change of women's position among the left-behind in rural Bangladesh", International Journal of Population Geography, 7, 53-61.

8. IDEA (2015), Voter turnout data for Bangladesh, http://www.idea.int/vt/countryview .cfm?id=20 (accessed 5 September, 2015).

9. Lartey, E K K (2013), "Remittances, investment and growth in sub-Saharan Africa", The Journal of International Trade & Economic Development, Vol. 22, No. 7, 1038-1058.

10. RMMRU (2014), Refugee and Migration Movements Research Unit , University of Dhaka, 2014.

11. Siddique, A, Selvanathan, E A and Selvanathan, S (2012), "Remittances and economic growth: empirical evidence from Bangladesh, India and Sri Lanka", The Journal of Development Studies, 48, 8, 1045-1062.

12. Wikipedia (2015), Constituencies for French residents overseas, http://en.wikipedia .org/wiki/constituencies_ for_residents_overseas.

13. Wikipedia (2015a), Overseas constituency, http://en.wikipedia.org/wiki/Overseas _constituency



• ড. শামস্‌ রহমান, মেলবোর্ন, অস্ট্রেলিয়া।
• ই-মেইলঃ shams.rahman@rmit.edu.au
• http://www.rmit.edu.au/contact/staff-contacts/academic-staff/r/rahman-professor-shams





Share on Facebook               Home Page             Published on: 17-Oct-2015

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot