bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia














বঙ্গবন্ধু ও শেকড়ের কথা
ড. শামস্ রহমান



‘আমি হিমালয় দেখিনি। কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি’
- ফিডেল ক্যাস্ট্র*


গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফের আঙ্গিনাটা আমার অতি পরিচিত। আমাদের একমাত্র সন্তানের জন্ম এই আঙ্গিনায় - লেকভিউ ক্লিনিকে। বিশ্বাস করতে অবাক লাগে, যে আঙ্গিনায় সন্তানের জন্ম, সেই একই আঙ্গিনায় হত্যার শিকার হলো দেশী বিদেশী এক কুড়ি নিরীহ প্রাণ। বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন ভাবে এই ধরণের কিছু নৃশংস হত্যাকাণ্ড পূর্বে ঘটলেও এত ব্যাপকভাবে এটাই প্রথম। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তারা নিজস্ব ইতিহাস ও কৃষ্টি বর্জিত, সাধারণ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন, উগ্র ধর্মীয় ও জঙ্গি মূল্যবোধে বিশ্বাসী এক দল যুবক। বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের দুটি শেকড়ের কথার উপর কয়েকটি কথা।

(এক) ধর্মনিরপেক্ষতা - বিয়িং ইন্ক্লুসিভ

‘রুটস্’** ছবিটি দেখেছেন নিশ্চয়ই? অ্যালেক্স হেলির লেখা। সত্তর দশকের শেষ ভাগে মুক্তি পাওয়া বহু খণ্ডে এক চলচ্চিত্র সিরিয়াল <<কিছুদিন আগে ছবিটি স্বল্প দৈর্ঘে পুনরায় তৈরি এবং প্রচারিত হয়েছে। আমি ছবিটা দেখেছি আশির দশকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের বাইসেন্টিনিয়ারী হলে>>। আধুনিক যুগে তথাকথিত সভ্য সমাজ (ঔপনিবেশিক আমেরিকা) বল প্রয়োগে এবং অমানবিক পন্থা অবলম্বনে স্বাধীনচেতা মুক্ত আফ্রিকাবাসীদের কিভাবে কৃতদাসে পরিণত করে তারই ঘটনা। শুরুটা এমন –

অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিম আফ্রিকার মান্ডিন্কা নামক এক উপজাতীয় যোদ্ধার সংসারে জন্ম হয় ফুটফুটে এক পুত্র সন্তানের। নাম দেয় কুন্টাকিন্টে। বাবা নবজাত সন্তানকে পাহাড়ের চুড়ায় নিয়ে দুহাতের তালুতে ঊর্ধ্ব আকাশে তুলে বলে – ‘আল্লাহুয়াকবর’(সৃষ্টিকর্তাই শ্রেষ্ঠ)। চায় সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। দৃশ্যটি আমার মনে দাগ কাটে এবং দীর্ঘদিন গেঁথে থাকে আমার স্মৃতিতে।

কুন্টাকিন্টের পিতার মত আমি আমার নবজাত পুত্র সন্তানকে পারিনি নিয়ে যেতে পাহাড়ের চুড়ায়। তবে লেকভিউ ক্লিনিকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে তাকে দুহাতের তালুতে নিয়ে মাথার উপর তুলে আমিও ‘আল্লাহুয়াকবর’ বলে চেয়েছি সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ। ভাবতে অবাক লাগে, যে আঙ্গিনায় আমার একমাত্র সন্তানকে আল্লাহুয়াকবর বলে বরণ করি, সেই একই আঙ্গিনায় জনগণ বিচ্ছিন্ন উগ্র ধর্মীয় ও জঙ্গি মূল্যবোধে বিশ্বাসী এক দল যুবক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে ‘আল্লাহুয়াকবর’ উচ্চারণে। আমাদের মূল্যবোধের অবক্ষয় কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।

যে ধর্ম উদার, মানবিক ও প্রগতিশীল বলে পরিক্ষিত, তার ধারনা দেওয়া হচ্ছে সংকীর্ণমনা, অমানবিক এবং জঙ্গি ভাবাপন্ন রূপে। যে মুসলমানদের স্বাগত জানিয়েছে দেশে দেশে যুগে যুগে, আজ তাদের নিষিদ্ধ বা বহিষ্কারের কথা হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডনাল্ড টাম্প, অস্ট্রেলিয়ার সিনেটর পলিন হ্যানসন, কিংবা অস্ট্রেলিয়ার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব সোনিয়া ক্রুগার একই সুরে কথা বলছে। বলছে – ‘মুসলমানরা ‘our way of life’এর প্রতি হুমকি’। মুসলমানরা এখন বিশ্ব নিরাপত্তার ঝুঁকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাত্র দু’সপ্তাহ আগে বিশ্ব নন্দিত বলিউড চিত্রতারকা শাহরুখ খানকেও ডিটেন করা হয় মার্কিন ইমিগ্রেশনে। এই জুলাই মাসে আমি গিয়েছিলাম তাইওয়ানে এক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে। আমাকেও প্রায় এক ঘন্টা ডিটেন করে তাইওয়ানের কাউশিয়ং বিমান বন্দরে। তাদের নানা প্রশ্ন – কেন, কোথা থেকে, কি জন্য? ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট উল্টে-পাল্টে দেখে বারবার। নাম, চেহারা আর পাসপোর্টের রঙের কোথায় যেন একটা গড়মিল! যাই হোক, শেষে সরি বলে ছেড়ে দেয়। এ সবই হচ্ছে নিরাপত্তার নামে। জনবিছিন্ন ক্ষুদ্র একটি শ্রেণীর উগ্র ধর্মীয় জঙ্গি তৎপরতা মুসলমান হিসেবে আমাকে অন্যের কাছে করছে হেয়, আমার ধর্মকে করছে প্রশ্ন বিদ্ধ, আর ঠেলে দিচ্ছে আমাদের উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে ধ্বংসের মুখে।

ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতির মাঝে যে মানুষের মুক্তি আসতে পারে না বঙ্গবন্ধু সেটা অনুধাবন করেছিলেন বহু পূর্বেই। ১৯৪৭’শে ধর্মের নামে ভারত বিভাগ হলেও, ১৯৫৪’তে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে তিনি উপলব্ধি করেন – বাঙালি ধর্মে গভীর বিশ্বাসী, ধর্মের রাজনীতিতে নয়। ‘জনগণকে ইসলাম ও মুসলমানের নামে স্লোগান দিয়ে ধোঁকা দেওয়া যায় না। ধর্ম প্রাণ বাঙালি মুসলমানরা তাদের ধর্মকে ভালবাসে; কিন্তু ধর্মের নামে ধোঁকা দিয়ে রাজনৈতিক কার্যসিদ্ধি করতে তারা দেবে না’ (পৃঃ ২৫৮, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, শেখ মুজিবর রহমান)। তিনি উনিশশো পঞ্চান্নতে প্রস্তাব করেন দলের নাম পরিবর্তনের – আওয়ামী ‘মুসলিম’ লীগ থেকে আওয়ামী লীগ। এটা শুধুই একটি শব্দ বর্জন নয়, এটা একটি সুদূর প্রসারী পদক্ষেপ। যার মাধ্যমে সমাজের সব ধর্মীয় জনগণকে স্বাগত জানানো। শুধু দলে নয়, স্বাগত জানানো দেশের সকল কর্মকাণ্ডে। এক কথায় ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভ’। এর আবেদন যেমন ছিল ‘ফিজিক্যাল’ অর্থে, তেমনি ছিল ‘সাইকোলজিক্যাল’ অর্থে। আবেদনের ব্যাপকতার অর্থে, ‘ফিজিক্যালের’ চেয়ে ‘সাইকোলজিক্যাল’ আবেদনই ছিল প্রধান। তাই ‘ফিজিক্যাল’ দূরত্বে আশে-পাশে না থেকেও, ‘সাইকোলজিক্যাল’ দূরত্বে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিল কোটি কোটি মানুষ। ১৯৭০ নির্বাচনের ফলাফল তারই প্রমাণ। সমগ্র জাতি যখন ধর্ম-বর্ণের একাত্মতায় এক কাতারে দাঁড়ায়, তখন বহু অসাধ্য সাধন করা সম্ভব। যার প্রমাণ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ। ‘বিয়িং ইন্ক্লসিভ’ বিশ্বাস থেকেই জন্ম বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি; স্বাধীনতার পর যা অন্তর্ভুক্ত হয় বাংলাদেশের সংবিধানের চার স্তম্ভের এক স্তম্ভে। আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যার মধ্যদিয়ে পুঃবহাল করা হয় ধর্ম ভিত্তিক রাজনীতি। আজকে উগ্র ধর্মীয় যে জঙ্গিপনা দেখছি তা মূলত: ১৯৭৫ পর বাংলাদেশে ভুল রাজনীতির ধারাবাহিকতারই ফসল। তাই আজ বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ ‘ফিজিক্যাল’ দূরত্বে পাশাপাশি থেকেও, ‘সাইকোলজিক্যাল’ দূরত্বের মাপে একজন অন্যজন থেকে বহু দূরে। যে সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছিল ১৯৭০’রে, তার জের জাতি এখনও বইছে ২০১৬’তে দাঁড়িয়ে। বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতির মাঝে ‘ফিজিক্যাল’ ও ‘সাইকোলজিক্যাল’ উভয় অর্থেই ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভ’ হওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর আছে কি?

দুই) বিয়িং ইন্ক্লুসিভ – ইতিহাস, সংস্কৃতির শূন্যতায় মাহাজীরে রূপান্তর

ফুটফুটে কুন্টাকিন্টে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠে আফ্রিকার মুক্ত পরিবেশে। যৌবনে পা দিতে না দিতেই একদিন সভ্য সমাজের (আমাদের সংজ্ঞায়) মানব-পাচার (human trafficker) ব্যবসায়ীদের দ্বারা আক্রান্ত, বন্দি এবং বন্দি অবস্থায় নৌপথে পাচার হয় আমেরিকা। এক কথায় হয় দেশান্তর। যে সমাজ অমানবিক ভাবে মানব-পাচারে (যখন তারা নিজ ভিটে মাটিতেই থাকতে চেয়েছে) রূপান্তরিত করেছে কৃতদাসে, আজকে সেই একই সমাজ মানবিক কারণে ভিটে মাটি ছেড়ে আসা মানুষকে অমানবিক ভাবে প্রতিহত করছে মানব-পাচার (human trafficking) ব্যবসায়ীদের অজুহাত দেখিয়ে। এটাও সত্য, উভয় ক্ষেত্র তারাই সিদ্ধান্ত নেয় কে আসবে আর না আসবে (‘We will decide who comes to this country’), হোক তা মানবিক কিংবা অমানবিক।

শত শত বছরের বাসস্থান ত্যাগে জনগোষ্ঠী রূপান্তরিত হয় ‘মাহাজিরে’। এটা ‘ফিজিক্যাল’ অর্থে। যেমন, কুন্টাকিন্টে দেশান্তরে রূপান্তরিত হয় ‘কৃতদাস মাহাজিরে’। বিদ্রোহ করেও রুখতে পারেনি এ রূপান্তর। তেমনি, ১৯৪৭ কোটি কোটি মানুষ শত শত বছরের পূর্ব পুরুষের ভিটে মাটি ফেলে ছুটে গেছে পুবে-পশ্চিমে – হয়েছে মাহাজির। তবে মাহাজিরে রূপান্তর শুধু ‘ফিজিক্যাল’ অর্থের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। এর পরের আঘাতটা আসে তার নামের উপর। কুন্টাকিন্টের মনিব তার নাম বদলে দেয় – কুন্টাকিন্টে থেকে ‘টবি’। মনের প্রচণ্ড দৃঢ়তা দিয়ে, জীবনকে বাজি রেখে প্রতিহত করে এ নতুন নামকরণের। পারেনি ঠেকাতে। তারপর কেড়ে নেয় তার ভাষা, মান্ডিন্কা যোদ্ধাদের মাতৃভাষা। এক কথায়, সেদিন তথাকথিত সভ্য সমাজ কেড়ে নেয় ‘their way of life’ (পশ্চিম আফ্রিকার উপজাতীয়দের)। এভাবেই কুন্টাকিন্টের নাম, ভাষা কেড়ে নিয়ে; পূর্ব পুরুষের ইতিহাস, কৃষ্টি থেকে বঞ্চিত করে, ‘সাইকোলজিক্যাল’ অর্থে রূপান্তর করে মাহাজিরে। যার ইতিহাস নেই, যে সংস্কৃতি শূন্য, তাকে শোষণ করা তো সহজ কাজ।

পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেই পূর্ব বাংলার জনগোষ্ঠীকে তাদের বর্ণমালা, ভাষা, এবং সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত করে, ‘সাইকোলজিক্যালি’ মাহাজির বানাতে উদ্যত হয়। ১৯৫১’এ অন্যান্য রাজনীতিকদের সাথে বঙ্গবন্ধুও প্রতিবাদ করে মাতৃভাষা রক্ষায়। তার ভূমিকা এখানেই শেষ নয়। মাতৃভূমির নামকরণের সাথে যে ইতিহাস, কৃষ্টি অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত তা তিনি উপলব্ধি করেন পূর্বেই। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের গণপরিষদের সদস্য। ২৫ শে অগাস্ট ১৯৫৫ করাচীতে পাকিস্তানের গণপরিষদে প্রদত্ত ভাষণে স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে বলেন: “Sir, you will see that they (পশ্চিম পাকিস্তান ও মুসলিম লীগের গণপরিষদের সদস্যরা) want to use the phrase ‘East Pakistan’ instead of ‘East Bengal’…. We demanded many times that you should use ‘Bengal’ instead of ‘Pakistan’. The word ‘Bengal’ has a history and tradition of its own….”। বলা বাহুল্য, পশ্চিম পাকিস্তানের কোন প্রদেশের নাম কিন্তু পরিবর্তিত হয়নি কখনো।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তানের পার্লিয়ামেন্টে এই বক্তব্যের প্রায় ষাট বছর পর পাকিস্তানের এক প্রখ্যাত কলামিস্ট লেখেন: “…. the renaming of ‘East Bengal’ as ‘East Pakistan’ is the most divisive event in the political history of Pakistan and the critical first milestone towards the division of Pakistan (Syed Anwar Mahmud, ১৭ ডিসেম্বর ২০১২, Remembering the breakup of Pakistan, The News International)। তদানীন্তন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙালিকে তাদের বাসভূমি থেকে ‘ফিজিক্যাল’ অর্থে বিতাড়িত করার চেষ্টা করেনি; তারা বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, ইতিহাস কেড়ে নিয়ে ‘সাইকোলজিক্যালি’ মাহাজিরে পরিণত করার প্রয়াস চালায়। যার ইতিহাস নেই, তার অতীত নেই। যার অতীত নেই, তার পূর্বপুরুষ নেই। নেই পূর্বপুরুষের গল্প বা রূপকথা – হোক তা পরাজিত কিংবা বীরত্বে গাথা। যে জাতি কৃষ্টিতে শূন্য, সে জাতি সৃষ্টিতে অপারগ আজন্ম। এ বিষয়গুলি ভালই বুঝেছিল তদানীন্তন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। তাই আঘাত আসে ইতিহাস ও কৃষ্টি মুছে দিতে। আজ সিরিয়ার হাজার হাজার বছরের নিদর্শন পালমিরার (Palmyra) জঙ্গিদের হাতে ধ্বংস বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা নয়, একটি জাতিকে ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করার অংশ মাত্র।

সেদিনের ঔপনিবেশিক আমেরিকার তথাকথিত সভ্যসমাজ কুন্টাকিন্টেকে দেশ ও ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করে; ধর্ম, নাম ও ভাষা কেড়ে নিয়ে; ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভের’ নামে ‘ফিজিক্যাল’ ও ‘সাইকোলজিক্যাল’ উভয় অর্থেই মাহাজিরে পরিণত করে। তদানীন্তন পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী বাঙালির বর্ণমালা আর মাতৃভাষা কেড়ে নিয়ে; মাতৃভূমির নামকরণ পরিবর্তনে ইতিহাস ও সংস্কৃতি থেকে বঞ্চিত করে, ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভের’ নামে ‘সাইকোলজিক্যালি মাহাজিরে’ পরিণত করার চেষ্টা চালায়। উভয় ক্ষেত্রেই উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন। আর তা হচ্ছে শোষণ। প্রথম ক্ষেত্রে ‘দাসত্ব’ শোষণ, আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ‘বাজার’ শোষণ। আর এই শোষণের ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য উভয় ক্ষেত্রেই পরিলক্ষিত হয় প্রভু-সুলভ আচরণ। যদিও প্রচার চালায় ‘প্রভু নয়, বন্ধু’*** বলে। আজ বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় জঙ্গিবাদ মানুষের জীবন আর ধর্মীয় বিশ্বাস কেড়ে নিয়ে ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভ’ হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।

মানুষ থেকে কেড়ে নিয়ে বা মানুষকে বঞ্চিত করে, আর যাই হোক, ‘ইন্ক্লুসিভের’ পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। আর জীবন কেড়ে নিলে কার জন্য ‘ইন্ক্লুসিভ’ হওয়া? বঙ্গবন্ধু ‘ইন্ক্লুসিভের’ ধারণা ধারণ করেন মানুষকে ভালবাসার মাঝে, যার শক্তি ও দুর্বলতা দুই ছিল মানুষকে ঘিরে****। যিনি ‘বিয়িং ইন্ক্লুসিভের’ ধারণা ধারণ করেন মানুষকে উদারভাবে দেওয়ার মাঝে - যার যার ধর্ম তার তার – উপাসনায়; আনন্দ-উৎসব সবার। নবজাত সন্তানকে আলিঙনে সৃষ্টিকর্তার শ্রেষ্ঠত্ব স্মরণ করে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ কামনার প্রকাশ হতে পারে যে কোন ভাষায়, যে কোন শাস্ত্রে। এটাই মানবতা। কেবল মাত্র উদারতা আর দেওয়ার মাঝে যে ‘ইন্ক্লুসিভের’ পরিবেশ সৃষ্টি হয়, সেখানেই দীর্ঘস্থায়ী হয় মানবতা।

_______________________________________________

* “I have not seen the Himalayas. But I have seen Sheikh Mujib. In personality and in courage, this man is the Himalayas. I have thus had the experience of witnessing the Himalayas”. - Fidel Castro, Source: Cuban leader Fidel Castro speaking about Mujib during the Non-Aligned Summit held in Algiers in 1973.

** Roots: The Saga of an American Family, Alex Healy, 1976

*** Friends, Not Masters, Mohammad Ayub Khan, Oxford University Press, Pakistan1967.

****“My greatest strength is the love for my people, my greatest weakness is that I love them too much”. - Sheikh Mujibur Rahman, Source: Interview with Sir David Frost on the BBC, 1972.



ড. শামস্ রহমান, মেলবোর্ন




Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Sep-2016

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot