শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে লাঞ্ছনার প্রতিবাদ: সিডনি অপেরা হাউজ
শ্যামলকান্তি কান ধরেনি কান ধরেছে বাংলাদেশ!
প্রিয় সিডনিবাসী,
আমি একজন শিক্ষকের সন্তান। আমার বাবা একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। আমি বিশ্বাস করি, এই সিডনি শহরে আমার মতো এমন শত শত বাঙালি আছেন; যাদের কেউ কেউ অস্ট্রেলিয়াতে শিক্ষকতা করছেন, অথবা জীবনে কোনো এক সময় শিক্ষকতা করেছেন কিংবা আমার মতো কোনো একজন শিক্ষকের সন্তান অথবা শিক্ষক পরিবারের সদস্য/সদস্যা। যারা শিক্ষক নন কিংবা শিক্ষক পরিবারের কেউ নন;তাতে কি? আমরা সবাই জীবনের একটি বিরাট সময় ছাত্র ছিলাম কিংবা এখনো অনেকে ছাত্র আছেন।আমরা এখনো দেশে গেলে পথে-ঘাটে-হাটে-বাজারে কিংবা যেখানেই আমাদের শিক্ষকদের সাথে দেখা হয়; নতমস্তকে শিক্ষকদের পা ছুঁয়ে সালাম করি; শিক্ষককে আমরা পিতৃতুল্য জ্ঞান করে বড় হয়েছি।সুতরাং এটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না যে, শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্তকে তাঁর স্কুলে গিয়ে উক্ত এলাকার এমপি সেলিম ওসমান নিজ হাতে চড়-থাপ্পড় মেরেছেন এবং প্রকাশ্যে তাঁর ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে তাঁকে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন; এই ঘটনায় আমরা সবাই যারপরনাই কষ্ট পেয়েছি, অপমানিত বোধ করেছি। শ্যামল কান্তি আসলে কে? তিনি একজন শিক্ষক; আমার/আপনার বাবার মতো কিংবা ভাইয়ের মতো একজন শিক্ষক, একজন নিরীহ মানুষ। শ্যামলকান্তি একটি প্রতীক; এমন হাজারো শ্যামলকান্তির খবর মিডিয়ায় আসে না; অতীতে কিংবা এখনো প্রতিদিন এমন কত কত শ্যামলকান্তি ক্ষমতার কাছে,ক্ষমতার দম্ভের কাছে পরাজিত হচ্ছেন; তারা মুখ ফুটে বলতে পারছেন না; তারা অসহায়; তারা ঘরের কোনে বসে নীরবে একাকী কিংবা পরিবার পরিজনকে ধরে কাঁদছেন। লজ্জায় অপমানে ঘরের বাইরে পর্যন্ত যেতে পারছেন না।আসুন যার যার অবস্থান থেকে প্রতিবাদ করি; যে যেখানে আছি, সেখান থেকে প্রতিবাদ করি; কোনো ধরনের দলীয় রাজনীতি নয়,বিবেকের দংশনে প্রতিবাদ করি; ন্যায় বোধের তাগিদে প্রতিবাদ করি। শিক্ষকের সন্তান হওয়ার কারণেই হোক আর একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবেই হোক, আর নীরব থাকতে পারছি না। আমি জানি, আপনার বুকের ভিতরটাও আমার মতোই ক্ষোভে-ঘৃণায়-লজ্জায়-কষ্টে-অপমানে ছটফট করছে। তাই বিবেকের এতটুকু দায় শোধ করার জন্য হলেও আসুন প্রতিবাদ করি। দল মত নির্বিশেষে আপনাদের সকলের উপস্থিতি আশা করছি। ২১ মে,শনিবার, বিকেল ৪:০০ টায় আমরা অপেরা হাউসের সামনে কান ধরে দাঁড়াবো। শ্যামল কান্তি ভক্ত স্যারের অপমানে আমরাও অপমানিত। আসুন তাঁর প্রতি সহমর্মিতা-সমবেদনা জ্ঞাপন করি,একাত্মতা প্রকাশ করি। উল্লেখ্য,লাঞ্ছিত শিক্ষক শ্যামলকান্তি ভক্ত ধর্ম নিয়ে কোনো ধরনের মন্তব্য করেন নাই;মিথ্যা অভিযোগ তুলে তাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমাদের অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীরা হাইকোর্টের রুল জারি এবং শিক্ষামন্ত্রীর পদক্ষেপের কথা জানিয়েছেন;অবশ্যই আমরা তার জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে ঐ কুখ্যাত সেলিম ওসমানের (জাতীয় পার্টির এমপি) জন্য তা যথেষ্ট নয়;তার বিচারের দাবিতে অবশ্যই প্রতিবাদ চলবে। কারণ শ্যামলকান্তি কান ধরেনি, কান ধরেছে বাংলাদেশ।
আহবানে: ড. শাখাওয়াৎ নয়ন (কলামিস্ট, কথাসাহিত্যিক, একাডেমিক)
|