করোনা কালে আত্মনির্ভরতা শেখ শাহীদুল ইসলাম
করোনার কারণে সেই মার্চ মাস থেকে ঢাকায় আমরা প্রায় সবাই গৃহবন্দী। কাজকর্ম নেই তাই ঘরে বসে দেশ-বিদেশের পত্র-পত্রিকা আর ওয়েবসাইটগুলোতে চোখ বুলাই। দেখে ভালো লাগে যে আপনারা যারা বিদেশে আছেন তারা নানাভাবে দেশের মানুষদের সাহায্য করার জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন। এগুলি নিঃসন্দেহে খুব ভালো উদ্যোগ। আপনারা বিদেশে থেকেও যে দেশের কথা ভুলে যাননি সেটা ভাবতে ভালো লাগে। কিন্তু ইংরেজিতে একটা কথা আছে “Self help is the best help”. তার মানে শুধু বিদেশ থেকে সাহায্য আসবে এই আশায় বসে না থেকে আমাদের নিজেদেরও কিছু করতে হবে। করোনার কারণে যারা নানা অসুবিধায় আছেন তাদের সহায়তার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যেমন উপজেলা পর্যায়ে দরিদ্রদের মধ্যে চাল বিতরণ এবং ঈদের আগে আড়াই হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের সকলেরই কিছু কিছু উদ্যোগ নেয়া উচিত।
কোন কাজের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে সেটাকে বিতরণ করা বেশ জটিল কাজ। কাজটা যত মহতীই হোক না কেন এসব নিয়ে পরে নানা রকম প্রশ্ন উঠে থাকে। তাই এই জটিলতায় না গিয়ে খুব সহজেই মানুষকে সাহায্য করা যায়।
এ সময় ঢাকা সহ দেশের অন্যান্য শহরে যে সমস্ত মেয়েরা ঘরে কাজ করত গৃহকর্মী হিসেবে তারা কাজ হারিয়েছে। এদের কাজ হারানোর কারণ মূলত দু’টি। প্রথমত এরা বস্তি এলাকায় বাস করে যেখানে করোনা সংক্রমণের ভয় বেশি। দ্বিতীয়ত: এরা একাধিক বাড়িতে কাজ করে তাতেও সংক্রমণের ভয় বেড়ে যায়। কাজ হারিয়ে এই মানুষগুলি এখন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে! কিন্তু আমরা যদি সামর্থ্য অনুযায়ী এদের মাসিক বেতনের টাকা টা সময়মতো দিয়ে দেই তাহলে এরা ছেলেমেয়ে নিয়ে দুটো খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। এই পয়সা দিয়ে এরা যে সমস্ত দোকানপাট থেকে চাল ডাল কিনবে তাদেরও কিছু উপার্জন হবে। এই সামান্য কাজটির মাধ্যমে কোনরকম সাংগঠনিক জটিলতা ছাড়াই যারা অসুবিধায় আছে আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।
আরেকটা কাজ করা যেতে পারে সেটা হলো এসব গরীব মানুষেরা শহরের আনাচে-কানাচে যেখানে ছোটখাটো ঘর ভাড়া করে থাকে তাদের ঘর ভাড়া মওকুফ করা বা কমিয়ে দেওয়া।
আমার জানামতে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য শহরের বিনামূল্যে বা মাত্র ১ টাকায় খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। আমাদের সবার উচিত এই সব প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা করা।
আমরা অনেকেই সহায়তা করার কথা ভাবি কিন্তু নানা কারণে সেটা হয়ে ওঠেনা। অনেক সময় আমরা ঠিক বুঝতে পারি না যে সাহায্যটা কিভাবে করতে হবে। এক্ষেত্রে আমি দুই একটা কথা বলতে পারি - যে সমস্ত সংগঠন দরিদ্রদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে তাদের নাম ঠিকানা জোগাড় করুন সংবাদপত্র বা ফেসবুক থেকে। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আজকাল এদের সাথে যোগাযোগ করাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তাদের কি ধরনের সহায়তা প্রয়োজন সেটা জানতে চান। আপনার অনুদান বা যাকাতের টাকা আপনি এদেরকে দিতে পারেন।
আরেকটা বিষয় হল কোরবানি। সামনে কোরবানির ঈদ। এবারের কোরবানিটা যদি আপনি শহরে না দিয়ে আপনার গ্রামের বাড়িতে দেন তাহলে গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা উপকৃত হবে, ঘনবসতি পূর্ণ শহরগুলিতেও সংক্রমণের ভয় কমবে।
প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একটা বড় কিছু করা আমাদের অনেকের পক্ষে সম্ভব না তাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ যদি এই ছোট ছোট কাজগুলো করি তাহলেও সামষ্টিক ভাবে একটা বিশাল পরিবর্তন সূচীত হবে বলে আমার বিশ্বাস। “Self help is the best help”.
শেখ শাহীদুল ইসলাম, ঢাকা, বাংলাদেশ
|