bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



পকেট মানি
ড. সফিকুল হাসান মিন্টু



ছোট মেয়েটা সপ্তাহ তিনেক ধরে খুব অস্থির। অস্ট্রেলিয়ান ট্যাক্সেশন অফিসে নতুন কাজ শুরু করেছে। এখন ট্রেনিং প্রোগ্রাম চলছে। একদিকে অফিস, অন্য দিকে ইউনিভার্সিটির পড়াশুনা, সব মিলিয়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা।

গতকাল প্রথম বেতন পেয়ে বাড়ি ফেরার পর থেকেই ঘ্যানর ঘ্যানর করছে। রেস্টুরেন্টে আমাদের খাওয়াবে। কবে, কখন, কোথায় তার সাথে যেতে চাই? আমি উত্তরে বলি, মা, তুমি তো বাংলাদেশী কালচার মেনে চলো নি। তোমার উচিত ছিলো, আজ আমাদের জন্যে কিছু মিষ্টি কিনে আনা। তারপর নিজ হাতে খাইয়ে দেয়া।

মেয়েরা যখন হাই স্কুলে ভর্তি হয়ে একা একা দূরের স্কুলে আসা যাওয়া শুরু করে, তখন থেকেই একটা রুটিন অভ্যাস গড়ে তুলেছিলাম। সপ্তাহের শুরুর দিনটিতে বা তার আগের রাতে ওদের হাতে অল্প স্বল্প কিছু ডলার ধরিয়ে দেয়া।

স্কুলের লাঞ্চ বক্সে শুকনো খাবার, স্ন্যাকস, ফল মূল, ড্রিঙ্কস যখন যা ঘরে থাকে, তা সাথে করে ওরা নিয়েই যায়। তারপরেও যদি দরকার হয় তাই এই পকেট মানি। আসতে যেতে পথে যদি অন্য কিছু খেতে ইচ্ছা করে বা টুক টাক কিছু কিনতে ইচ্ছে করে, তাই।

সর্বোপরি আমার ভেতরে ভেতরে ছিলো এক সুপ্ত ইচ্ছা। ওরা পয়সা কড়ি চিনবে, হিসাব নিকাষ করবে, দিন দুনিয়ার হাল চাল নিজে থেকেই রপ্ত করা শুরু করবে। হয়েছিলোও তাই! ওরা যতো না নিয়মিত ওই টাকা নিজেদের কাজে খরচ করেছে, তার থেকে বেশি আগ্রহ ছিলো ওই টাকা থেকে জমানো এবং সময়ে সময়ে সেটা দিয়ে ভালো কিছু একটা করা।

তারপর দেখা গেছে, প্রতি মা দিবস, বাবা দিবস, জন্ম দিবস এই সব শুভক্ষণে ওরা কিছু না কিছু একটা কিনে আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। এমনকি দেশে যখন হলিডে করতে গিয়েছি তখন দেখেছি, ওরা ওখানেও ওদের প্রিয়জনকে কিছু কিনে দিচ্ছে, গরিব দেখে অল্প স্বল্প দান খয়রাত করছে। সব ওই পকেট মানি থেকে জমানো টাকা দিয়েই।

এই পকেট মানির পরিমাণ নির্ধারণে ছিলো আমার এক ধরনের নিজস্ব নিয়ম কানুন। নীচের ক্লাস থেকে যতো উপরে উঠতে থাকবে ততো ওটা বাড়বে আস্তে আস্তে। তাই বড় জনের ভাগ্যে জুটবে একটু বেশি, ছোট জনের কম। একটা সময়ে এসে দেখা যায়, বড় জন ক্লাস নাইন এ যা পেয়েছিলো, ছোট জন ক্লাস নাইনে এসে তার তুলনায় বেশি পাচ্ছে। এই নিয়ে বড় জনের কমপ্লেইন। আমাকে তো ওই ক্লাসে ওই পরিমাণ দেয়া হয়নি? কেন?

উত্তর আমার আগে থেকেই তৈরি। আমার তিন বছর আগের ও বর্তমান আয় ব্যয় পরিস্থিতি কি এক নাকি? আমার নিজস্ব বিচার বিবেচনার কিছু পরিবর্তন তো আমি আনতেই পারি, নাকি? আর তাছাড়া তোমার নিজের পরিমাণটা তো সব সময় বড় হিসাবে বড়ই থাকছে।

বাবা ও কন্যাদের ওই লেন দেনের সময়টা নিয়েও আছে কিছু মজার কাহিনী। কোনো সময় দেখা গেছে, ওরা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে অথবা কোন কারণে রুমের দরজা লক করা। আমি নিচের ফাঁক ফোকর দিয়ে নির্ধারিত টাকাটা ভেতরে ঢুকিয়ে দিয়েছি! উদ্দেশ্য, ঘুম থেকে জেগে দরজা খোলার সময় ওদেরকে একটু চমকে দেয়া! আবার কোন দিন নিঃশব্দে ওদের রুমে ঢুকে টেবিলের কোন একটা জায়গায় পকেট মানিটা রেখে ফিরে আসা! তারপর, ছোট ক্লাসের সময়গুলোতে খুচরা পয়সার মিষ্টি লেন দেন তো ছিলোই। অথবা আগের সপ্তাহে বেশি দিয়েছি তাই এই সপ্তায় কম দিলেই হয়।

পড়াশুনার পাশাপাশি বড় কন্যার চাকরির শুরু বছর তিনেক আগে থেকেই। তাই একটা সময় পরে ও জানায়, বাবা, তুমি আমাকে কেন আর পকেট মানি দিচ্ছো? আমার লাগবে না। আমি বলি, আমার দেয়া আমি দেই তারপর তুমি ওই দিয়ে যা খুশি করো। কিন্তু সময়ের প্রবাহে আমার সেই দেয়াও বন্ধ হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। এখন আমার একমাত্র ভয়, কবে ছোট জন আমাকে বলবে, বাবা, আমাকে আর পকেট মানি দেয়ার দরকার নেই। আজ হোক কাল হোক, সেই সময় খুব কাছে, সেতো দেখতেই পাচ্ছি।

আজ এই সময়টাতে দাঁড়িয়ে কেন যে বার বার আমার চোখ পেছনে ফিরে যাচ্ছে! কতো টানা পোড়ন ও হিসাব নিকাশের চুল ছেড়া বিশ্লেষণে গিয়েছে দীর্ঘ সময়। সংসারে এই আছে তো এই নেই। পাওয়া না পাওয়ার কতো আনন্দ বেদনা। একটা সময় গেছে, যখন ক্যাব্রামাটা থেকে থান কাপড় কিনে এনে মেয়েদের জামা কাপড় বানানো হয়েছে নিয়মিত! এমনকি ওই কাপড় দিয়ে আমার উনি শাড়ি বানিয়েও পড়েছে। কারণ বাজারে তখন সুলভ মূল্যে বা আমাদের সামর্থ্যের মধ্যে তেমন কিছু নেই। নতুবা অপেক্ষা, দীর্ঘ তিন চার বছর পর পর কখন আবার দেশ যেয়ে সস্তায় কিনে আনার সুযোগ আসবে।

সেই সব সময় পেরিয়ে গেছে অনেক বছর আগেই। তারপর বউ মেয়েরাও একসময় নিজেদের পছন্দমত নিজের পোশাক নিজের টাকা দিয়ে বা সংসারের টাকা দিয়ে কেনা শুরু করে! এখন এই বিষয়ে আমার কোন ভূমিকাই নেই!

আজ সব থেকে বেশি মনে পড়ছে, আমার বাবার কথা! উনার চলে যাওয়ার আগের বছরগুলোর কথা! দেশ থেকে হলিডে কাটিয়ে ফিরে আসার সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই উনি অন্যরকম ব্যস্ত হয়ে পড়তেন! খুবই খুটি নাটি, সাধারণের মাঝেও অসাধারণ কিছু কিনে এনে বলতেন, এই জিনিসটা কিন্তু সম্পূর্ণ আমার পেনশনের টাকায় কেনা! তোমাদের দেয়া টাকা এখানে নেই। বাবার ওই কথার মূল্য তখন ঠিকমত বুঝতে না পারলেও এখন এর মর্মার্থ যে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি! অর্থ বিত্তের পেছনে আমাদের সবার কতো না ছুটে চলা! কিন্তু এই অর্থ বিত্তই কি কখনো কখনো আমাদেরকে ধাঁ ধাঁর মধ্যে ফেলে দেয়?



ড. সফিকুল হাসান মিন্টু, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 16-Oct-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far