bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













অনুশোচনা
সিরাজ আহমেদ



এখন থেকে প্রায় ২৫ বছর আগের একটি ঘটনার অবতারণা করছি, তখন আমি ঢাকার বাহিরে কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলাম। আমার একজন পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক কোন এক উন্নত দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে এসে ডিপার্টমেন্টে যোগদান করেছেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তাঁর শিক্ষা ও গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন স্বনামধন্য শিক্ষক হিসাবে স্থান করে নিয়েছেন। আমি তখন তাঁর ছাত্র এবং সহকর্মী। স্যার তার জীবনের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট কিনে ভাবীকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। উনাদের দুই সন্তান তখন বিদেশে থাকে। স্যার ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে একটি সিঙ্গেল একমোডেশনে থেকে ঢাকায় যাওয়া আসা করতেন। স্যার হঠাৎ একদিন আমার চেম্বারে এসে বললেন “আমার আজকে ঢাকা যাওয়া দরকার, তো তুমি কি আমাকে ১০ হাজার টাকা দিতে পারবে?” আমি বললাম, এখন ক্যাশ টাকা নেই, আমি একটি চেক দেই, পিয়নকে দিয়ে ব্যাংক থেকে উঠিয়ে নিবেন স্যার। স্যার বললেন, ঠিক আছে। স্যারকে তৎক্ষণাৎ চেকটি দিয়ে দিলাম। স্যার চেকটি নিয়ে সাথে সাথে উনার পকেট থেকে একটি চেক বের করে দিয়ে বললেন, এখন মাসের শেষ, ১/২ তারিখে ব্যাংকে আমার বেতন জমা হবে, তুমি চেকটি ভাঙ্গিয়ে নিও। কিছু বুঝে উঠার আগেই স্যার দ্রুত চলে গেলেন। মনে হলো, চেকটি নেওয়া তো ভাল হয়নি। মানুষের আপদে বিপদে টাকার দরকার হতে পারে, আমি একি করলাম। নিজেকে একটু অপরাধী মনে হলো।

এই ঘটনার ৫ বছর পর আমি চাকুরী থেকে মেয়াদের আগেই অবসর নিয়ে বিদেশে চলে এসেছি। এখন বয়স ৬৮ ছুঁই ছুঁই, অবসর জীবনে আছি। করোনার জন্য সারাদিন ঘরে বসে টিভি দেখে ফেসবুকে বিভিন্ন পোস্ট পড়ে ও ছবিটবি দেখে সময় কাটাই। মাঝে মধ্যে সোফায় হেলান দিয়ে উপর দিকে চোখ বন্ধ করে শৈশব কৈশোর ও যৌবনের নানা স্মৃতি রোমন্থন করি। অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতির বেড়াজালে মস্তিষ্ক আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কোন সময় মনে পড়ে যায় ফেলে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকুরী জীবনের কথা। মনে পড়ে গেল স্যারের চেক নেওয়ার সেই ঘটনাটি। বিবেকের তাড়নায় ও দংশনে এবং গভীর অনুশোচনায় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। স্যারের চেকটা তো না ও নিতে পারতাম তখন। স্যারের চেকটা না নিয়ে আমার বলা উচিত ছিল, স্যার চেকটা নিয়ে যান, ঢাকা থেকে এসে পরে দিয়েন। কোন তাড়াহুড়া তো নেই। স্মৃতিময় ভাবনাগুলো মস্তিষ্কের গভীর কোষগুলোতে দানা বাঁধতে লাগলো।

অবাক হয়ে আরো ভাবতে লাগলাম, যে দেশের একজন সিনিয়র শিক্ষকের মাসের শেষে ব্যাংক ব্যালেন্স শূন্য থাকে (স্যারকে খাটো করার জন্য নয় বরং তাঁর সততাকে তুলে ধরার জন্য) সেই দেশেরই হাজার হাজার লোকের অবৈধ উপার্জনের কোটি কোটি টাকা সুইস ব্যাংকে জমা পড়ে থাকে। তাদের কি কোন অনুশোচনা নেই, তাদের কি কোন বিবেকের দংশন নেই, নেই কি কোন বিবেকের তাড়না!

যে সকল দুর্নীতিবাজ নেতাদের বাসা থেকে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকার বান্ডিল বের হয়, ব্যাংকের যে সকল কর্মকর্তারা কোটি কোটি টাকা লোপাট করে বিদেশে পাড়ি জমায়, যে হসপিটালের দুর্নীতিবাজ মালিক মিথ্যা করোনা পজিটিভ বা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দিয়ে অসহায় গরীব মানুষের টাকা খায়, মৃত লাশকে অযথা আইসিইউতে রেখে অসহায় স্বজনদের বিলের বোঝা বাড়ায়, বেদরকারি সিজারিয়ানের নামে মহিলার পেট কেটে সজনের কাছে আরো তিরিশ হাজার টাকার বায়না ধরে সেলাইয়ের অপেক্ষায় বসে থাকে, তাদের মনে কি কোন অনুতাপ অনুশোচনার উদয় হয় না? বিবেক কি কোন সময় তাদেরকে মোটেও দংশন করে না?




ড. সিরাজ আহমেদ, লন্ডন থেকে







Share on Facebook               Home Page             Published on: 5-Aug-2020

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far