bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia













গ্রামীণ এম্বুলেন্স
সিরাজ আহমেদ



কবির ভাষায় -
“বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র
নানানভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র”

আমরা প্রতিনিয়তই প্রকৃতি, পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে শিক্ষা নিয়ে থাকি। মাঝে মাঝে বহু ঘটনাবলী দেখে বা শুনেও শিক্ষা নেই। দেখার যেমন শেষ নেই, শেখারও তেমন অন্ত নেই। কিছু কিছু দেখা আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে অফুরন্ত প্রেম প্রীতি ও ভালবাসা। স্পর্শ করে আবেগ ও অনুভূতিকে, বিকশিত করে হৃদয়ে লুকানো সুপ্ত প্রতিভাকে, এনে দেয় উপভোগের সামগ্রী - আনন্দ উল্লাস। আবার কিছু কিছু দেখা বা দৃশ্য খুবই মর্মস্পর্শী, করুন ও হৃদয় বিদারক। হৃদয়ে হানে প্রচণ্ড আঘাত, ক্ষতবিক্ষত করে মনকে, কমিয়ে আনে কর্মস্পৃহা, ভেঙ্গে দেয় মনোবল।

লন্ডনে আগে গাড়ী দিয়ে চলাফেরা করতাম বেশীর ভাগ সময়। এখন Senior Citizen হিসাবে free Bus pass পাওয়ায় গাড়ীটা বিক্রি করে দিয়ে বাসে চলাফেরা করি, একান্ত প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে মেয়ের গাড়ীটা চালাই। বাসে চড়লে মানসিক চাপ থাকে না মোটেই, আবার চলার পথে এদিক সেদিক তাকানোর বা কিছু না কিছু দেখার সুযোগ থাকে অনেক বেশী যেমন - কেউ বাসার সামনে সুন্দর করে লন তৈরি করে, কেউবা নানান ধরনের সুন্দর সুন্দর ফুলের টব ও টোপিয়ারি দিয়ে সামনের আঙ্গিনাকে সুশোভিত করে রাখে - ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।

মাস খানেক আগে অর্থাৎ লকডাউন শিথিল হতে শুরু করলে, একদিন গ্লাভস এবং মাস্ক পড়ে প্রায় চার মাইল দূরে অন্য একটি শপিং সেন্টারে যাওয়ার জন্য বাসে উঠে দোতলায় গিয়ে সবার পিছনে জানালার পাশে একটি সীট নিয়ে বসলাম। উঠার সময় বাসের নীচ তলায় দেখলাম ৪/৫ জন যাত্রী দূরে দূরে বসা, দোতলা একেবারে খালি, আমি ছাড়া আর কেউ নেই। বাস চলতে শুরু করলে ৪/৫ টি স্টপ যেতেই চোখে পড়লো- এক বাসার সামনে নূতন ঝকঝকে চকচকে একটি এম্বুলেন্স দাঁড়ানো আছে। ভাবলাম, হয়তো কোন রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য এসেছে। বাসটা একটু এগুতেই দেখি ওটার গায়ে দুই লাইনে বড় করে লেখা রয়েছে - Animal Ambulance. এরকম এম্বুলেন্স এর আগে কখনো চোখে পড়েনি। লন্ডন শহরে অনেক পরিবারেই বাসায় কুকুর ও বিড়াল পোষে। হয়তো এমনই কোন অসুস্থ প্রাণীকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্যই এম্বুলেন্স টি দাঁড়িয়ে আছে। এম্বুলেন্সটি দেখে কয়েক মাস আগে ফেসবুকে দেখা বাংলাদেশের দুটি ছবির কথা মনে পড়ে গেল।

১ম ছবিতে ১৮/১৯ বছরের গ্রামীণ যুবক কাঁধে একটি ভাঁড় বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। ভাঁড়ে করে মানুষ সাধারণত জিনিসপত্র যেমন শাকসবজি, ধান, চাউল, গম, ইত্যাদি বাজারে বেচা-কেনার জন্য নিয়ে যায়। কেউ কেউ ভাঁড়ে করে জিনিসপত্র গ্রামে গ্রামে ফেরী করে বিক্রি করে। কিন্তু এই ভাঁড়টি ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকমের। ভাঁড়ের দুই প্রান্তে দুইটি খাঁচার মধ্যে ছিল দুইজন বৃদ্ধ মানুষ। সামনের খাঁচার মধ্যে হাত পা গুটিয়ে বসা ছিল তার ক্ষীণ দেহী অসুস্থ বাবা, আর পিছনের খাঁচায় একইভাবে বসা ছিল ক্ষীণ দেহী তার অসুস্থ মা, দুজনকেই দেখাচ্ছিল খুবই রোগাক্রান্ত। হয়তো ভাঁড়ে করে তাদেরকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল যুবক ছেলেটি। কাঁধে ভাঁড়ের ভারে ছেলেটিকে দেখাচ্ছিল খুবই ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত।

২য় ছবিতে একই বয়সের অন্য একজন তার রুগ্ন, শুকনো, অসুস্থ মাকে পিঠে করে নিয়ে যাচ্ছিল কোন এক হাসপাতালে। মা তার ছেলের পিঠে পিছন থেকে ছেলের গলা জড়িয়ে ধরে আছে, ছেলেটি তার মা’র হাঁটুর নীচে ধরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। দুটি ছবিই ছিল আমার কাছে খুব করুণ, মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক, তবে ২য় ছবিটা বেশী স্পর্শ করেছে আমার হৃদয়, আবেগ ও অনুভূতিকে, কারণ এ দৃশ্যটা ছিল মা এবং ছেলে উভয়ের জন্য খুবই বিব্রতকর। হয়তো অন্য কিছু উপায় ছিলনা, মনে হলো এ যেন তাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস।

এমন দুটি দৃশ্য আগে কখনো চোখে পড়েনি। দেখে নিমিষেই কারো অশ্রুজল গড়িয়ে পড়ার কথা। ভাবতে লাগলাম, বিদেশে যেখানে কুকুর বিড়ালকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য ঝকঝকে তকতকে এম্বুলেন্স ব্যবহার করা হয়, সেখানে আমাদের দেশে কাঁধে বা ভাঁড়ে করে বৃদ্ধ মানুষকে হাসপাতালে নিতে হয়। পশ্চিমা দেশের তুলনায় আমরা কতইনা পেছনে পড়ে আছি।

তবুও হতাশ না হয়ে আশায় বুক বাঁধি - দ্রুত না হলেও কয়েক যুগ পরেও হয়তো আমাদের দেশেও গ্রামীণ এম্বুলেন্স চালু হবে।




ড. সিরাজ আহমেদ, লন্ডন থেকে







Share on Facebook               Home Page             Published on: 25-Aug-2020

Coming Events: