ধাঁ ধাঁ সিরাজ আহমেদ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার এক বড় ভাই ও এক সময়ের সহকর্মী কৃষিতত্ব বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও বর্তমানে কিশোরগঞ্জ ঈশা খাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড: মো: সুলতান উদ্দিন ভূঁইয়ার - “বাস্তবমুখী কোন কিছু লিখো”- আবদারের পরিপ্রেক্ষিতে আমার আজকের এই ছোট্ট লেখা।
পৃথিবীর একটা বিরাট বড় অংশ জুড়ে রয়েছে উদ্ভিদ জগত। আর উদ্ভিদ জগতের সংগেই রয়েছে আমাদের জীবনের একটা নিবিড় সম্পর্ক। উদ্ভিদ না থাকলে অক্সিজেন শেষ, সাথে সাথে প্রাণীকুলও শেষ। উদ্ভিদ আছে বলেই আমরা মানবজাতি বেঁচে আছি, আর উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ খেয়েই বেঁচে রয়েছি আমরা - যেমন কোন উদ্ভিদের কচি পাতা (পুঁই শাক, পালং শাক, লাল শাক), কোন উদ্ভিদের রূপান্তরিত মূল ও কাণ্ড (মিষ্টি আলু, মূলা, গাজর, ওলকপি), কোন উদ্ভিদের নরম কাণ্ড ( ডাটা), কোন উদ্ভিদের পাকা ফল(আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা), কোন উদ্ভিদের কাঁচা ফল সবজি হিসাবে রান্না করে (লাউ, সিম, বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, কাঁকরোল), কোন উদ্ভিদের বীজ ভেজে বা তরকারী হিসাবে খেয়ে থাকি (মটর, সিম, ছোলা, ডাল), কোন কোন উদ্ভিদের ফুলও খাওয়া হয় (সরিষা, মিষ্টি কুমড়া, ফুল কপি) ইত্যাদি ইত্যাদি।
সাধারণভাবে আমরা জানি বা দেখি যে স্থলজ উদ্ভিদগুলো মাটিতে জন্মায়, মাটির উপরেই গাছের বিভিন্ন অঙ্গে ফুল দেয়, যেমন - গাছের গোড়ায় (ষ্ট্রবেরী, কাঁঠাল), কাণ্ড ও শাখা প্রশাখায় (টমেটো, লটকন, কাঁঠাল), পাতা ও কাণ্ডের কোণায় (লাউ, কুমড়া,পেয়ারা, বরই), ডগা বা আগায় (আম, কলা)। পরাগায়নের পর ফুলের ডিম্বাশয়টি আস্তে আস্তে ফলে পরিণত হয় এবং ফলের ভিতরে নিকেষিত (fertilised) ডিম্বকোষটি বীজ তৈরি করে। আমরা সকলেই সেই ফল এবং বীজ খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। কোন কোন ফল হয় মাংসালো ও রসালো (আনারস, কাঁঠাল), আবার কোন কোন ফল হয় শুকনা - উপরে থাকে শুধু একটা মোটা বা হাল্কা পাতলা আবরণ (তেঁতুল, সরিষা, মূলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদির ফল) এবং এসব ফলের ভিতরে থাকে বীজ।
কিছু কিছু উদ্ভিদ প্রকৃতিতে অদ্ভুত আচরণ করে - যেমন সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিক পরিবর্তনের সাথে সাথে সেও তার দিক পরিবর্তন করে, লজ্জাবতী গাছ স্পর্শ করলেই লজ্জা পেয়ে পাতা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলে। কয়েকটি উদ্ভিদের কিছু কিছু জাত বীজহীন ফল জন্মায় (আঙ্গুর, কলা, শসা, তরমুজ)। ষ্ট্রবেরী উদ্ভিদ ফলের উপরি অংশে বীজ উৎপাদন করে। এমন একটা উদ্ভিদ আছে যার বীজ ফলের বাহিরে জন্মায়, বীজগুলো গাছেই খোলা অবস্থায় ডিম্বাশয়ের (ovary) নীচের অংশে সংযুক্ত থাকে (নামটা উহ্য রাখছি), কোন কোন উদ্ভিদ যৌন পদ্ধতিতে বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে, আবার অনেক উদ্ভিদকে অযৌন পদ্ধতিতে রূপান্তরিত মূল ও কাণ্ড, শাখা প্রশাখার কাটিং ও বিভিন্ন কলমের মাধ্যমে বংশ বিস্তার করে বা করানো হয়।
প্রায় সব উদ্ভিদই ফুল জন্মায়, কোন কোন উদ্ভিদ একেবারেই ফুল দেয় না(ফার্ন), কোন কোন উদ্ভিদ কদাচিৎ ফুল উৎপাদন করে (পাতাবাহার, ইক্ষু) বা জীবনে একবারই ফুল দেয় (বাঁশ)। Giant American Agave নামে একটি উদ্ভিদ আছে যা ৭০-৮০ বছর পর একবার ফুল দিয়েই জীবনচক্র শেষ করে দেয়। Giant Lotus ( পদ্ম) নামে জলজ উদ্ভিদটি বিরাট থালা আকারের পাতা তৈরি করে এবং ৬-৭ ফুট লম্বা বোঁটার উপর বড় একটি ফুল জন্মায়।
এখন এমন একটি ব্যতিক্রমধর্মী গুল্ম জাতীয় ফসল উদ্ভিদের কথা বলছি, যার ফুল একেবারে মাটির কাছাকাছি গোড়া থেকে উৎপন্ন হয়। ফুলগুলো প্রস্ফুটিত হলে পরাগায়ন হয় এবং কিছুদিনের মধ্যে ফুলগুলোর বোঁটা (pedicel) লম্বা লতার মত দীর্ঘায়িত হলে ফুলগুলো আস্তে আস্তে মাটির নীচে গিয়ে লুকিয়ে পড়ে। তারপর ফুলের ডিম্বাশয়গুলো ফলে পরিণত হলে ভিতরের নিকেষিত ডিম্বকোষগুলো বীজ তৈরি করে। আমরা ঐ বীজগুলো খাই।পৃথিবীতে আবাল বৃদ্ধ বনিতা - বলতে গেলে এমন মানুষ পাওয়া কঠিন যারা কোনদিন এই ফলের বীজ খান নি। কৃষিবিদ এবং অকৃষিবিদ - সকলের কাছেই আমার প্রশ্ন এই উদ্ভিদ বা বীজের নামটি বলতে পারেন?
ড. সিরাজ আহমেদ, লন্ডন থেকে |