bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


এক সপ্তাহের সে এক ভিন্ন জগৎ!

(২য় অংশ)


এই দীর্ঘ ক্রুজের একঘেয়েমি ও ঢেউয়ের দোলা-জনিত শঙ্কা থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে রাখার জন্য দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হল বিচিত্র ধরনের প্রচুর বিনোদনমূলক কর্মসূচি, যা ইতিপূর্বেই বলা হয়েছে (যেমন, গানের কনসার্ট, সার্কাস ও ম্যাজিক শো, বিংগো, সিনেমা শো, ইত্যাদি)। হাউজ-কিপিং বয় প্রত্যেক রাতেই পরবর্তী দিনের বিস্তারিত বিনোদনমূলক কর্মসূচির তালিকা দরজার সাথে লাগিয়ে রেখে যেত। আর ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ ও ডিনারের সময়ের ফাঁকে ফাঁকে পছন্দনীয় বিভিন্ন প্রোগ্রামগুলি দেখার মধ্য দিয়ে দিনের সময় কোত্থেকে পার হয়ে যায় টের পাওয়া যায়না। সার্কাস ও ম্যাজিক শোগুলি বেশ উপভোগ্য ছিল। বিংগো খেলাও বেশ আনন্দের। ১২ তলায় সুইমিং পুলের পাশে বিরাট স্ক্রিনে গান-বাজনা চলে এবং ফাঁকে ফাঁকে মুভি শো হয়। মনে পড়ছে ফেরার পথে কোন একদিন বিকেল বেলা এক অবসরে বড় স্ক্রিনে বিখ্যাত “Red Dog” ছবিটি দেখার সুযোগ হয়েছিল এবং বেশ উপভোগও করেছিলাম, যার নাম শুনেছিলাম অনেক আগেই কিন্তু ইতিপূর্বে দেখার সুযোগ হয়নি।

যাদের সাঁতার কাটা ও সূর্যস্নান (sunbath) করা পছন্দের তাদের জন্য জাহাজে বিনোদনের অন্যতম একটি মাধ্যম সুইমিং পুলে সাঁতার কাটা ও ইহার চারপাশে পেতে রাখা রিক্লাইনিং চেয়ারে বসে রোদ পোহানো। বিশেষ করে ঐ সময় স্কুল হলিডের জন্য অনেক বাচ্চা থাকায় ওরা সুইমিং পুলের পানির দোলায় (জাহাজের দোলার তালে তালে পুলের পানিও সমান তালে দুলতে থাকে) প্রচুর আনন্দ করেছে। এছাড়া পাঁচ তলা থেকে উপরে জাহাজের একেবারে পেছন দিকেও সান-বাথ করার ব্যবস্থা আছে, যেখানে অনেক যাত্রীরা নিরিবিলি পরিবেশে সান-বাথ করে থাকে। অনেককে সেই নিরিবিলি পরিবেশে বই পড়া কিংবা লেখাজোকা নিয়ে মনবিষ্ট থাকতে দেখা গেছে। এর বাইরে কর্তৃপক্ষ কিছু খেলাধুলার ব্যবস্থাও করেছিল। ফেরার পথে একদিন বিকেলে সুইমিং পুলে Passenger vs. Crew ওয়াটার পোলো খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল এবং Passenger Team জিতেছিল যেটা ছিল আনন্দের। সেইসাথে একটি পিং পং (টেবিল টেনিস) টুর্নামেন্টেরও ব্যবস্থা করে হয়েছিল, যেটাও বেশ উপভোগ্য ছিল বৈকি।

এছাড়া, প্রায় প্রত্যেকদিনই কেনাকাটার জন্য জাহাজের রিসেপসন এলাকার foyer-এ প্রায় প্রতিদিন খোলা মার্কেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, যেখান থেকেও মোটামুটি সহনীয় দামে আরো কিছু gift items কিনেছিলাম। জাহাজে ওঠার সময় এবং Isle of Pines-এ কর্তৃপক্ষ সব যাত্রীদেরই বিভিন্ন পোজে বেশ ছবি তুলেছিল, যা পরে জাহাজের মধ্যে ডেভেলপ করে যাত্রীদের কাছে বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আমরাও আমাদের দু’টি ছবি স্যুভেনির হিসেবে কিনেছি, যা অত্র ক্রুজের প্রামাণ্য স্মৃতি হিসেবে বহমান থাকবে।

তবে এই সমস্ত দীর্ঘ ক্রুজের এতসমস্ত ভাল ও উপভোগ্য দিকগুলি থাকার পরেও, বলতে গেলে মাত্র একটি সমস্যা সেই সমস্ত যাত্রীদের জন্য পীড়াদায়ক যাদের পানি ও ঢেউ ভীতি (motion sickness) আছে। এসমস্যার কিছুটা শিকার আমরাও হয়েছিলাম আমাদের ছোট মেয়ে ঈশানকে নিয়ে। আকাশভ্রমণে ইতিপূর্বেই তার অত্র পীড়াটি আছে এটা জেনেও সে সফরসঙ্গী হয়েছিল, কারণ এই ভ্রমণের আনন্দ থেকে সে বঞ্চিত হোক এটা সেও চায়নি আর আমরা চাইনি, এবং তাকে একা ফেলে রেখে আমরা এই ভ্রমণ থেকে নির্ঘাত কোন আনন্দই পেতামনা। সুতরাং কিছুটা শঙ্কার মধ্যে হলেও ঈশান সফরসঙ্গী হয়েছিল, আর “দিল্লীকা লাড্ডু” না খেয়ে পস্তাবার চেয়ে খেয়ে পস্তানোটাই আমরা শ্রেয় মনে করেছিলাম। এরপরও বলতে হবে সবকিছু মিলিয়ে এই ভ্রমণটি আমরা প্রচন্ডভাবে উপভোগ করেছি। উল্লেখ্য শুধুমাত্র পানির উপরে তার সমস্যার বাইরে ঈশান Noumea এবং Isle of Pines-এ আমাদের তীরের দু’টি দিন কিন্তু প্রবলভাবে উপভোগ করেছিল। এক্ষেত্রে “cabin position” নিয়ে একটি সুপারিশমূলক মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। বড় জাহাজে ভ্রমনজনিত এই অভিজ্ঞতার অভাবের কারণে এসংক্রান্ত একটি কৌশলগত ভুলের কারণে ঈশানকে নিয়ে আমাদের ভোগান্তিটা বেশি হয়েছিল বলতে হবে। দৃশ্য উপভোগের ব্যাপারে সম্মুখভাগের কেবিন বেশি উপযোগী হবে মনে করে আমরা একেবারে সম্মুখভাগের কেবিন বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু বাস্তবে বিশাল ঢেউয়ের ধাক্কা সামনের দিকেই প্রথম এবং সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়। একারণে আমরা ঈশানকে নিয়ে আরো বেশি সমস্যায় পড়েছিলাম এবং তার ‘motion sickness’-টি আরো বেশি প্রকট হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অন্যথায় আমাদের কেবিনের অবস্থান মাঝখানে কিংবা পেছনের দিকে হলে এই ঢেউ-জনিত ধাক্কা ও দোলা আরো কম অনুভূত হত, এবং ওকে নিয়ে ভোগান্তিটা একটু কম হত বোধ করি। আগ্রহী পাঠকদের এবিষয়টি গোচরে রাখা ভাল। এখানে উল্লেখ্য, যাদের ‘motion sickness’ আছে, তাদের বমি নিয়ন্ত্রণের ঔষধ সাথে নিয়েই জাহাজে ওঠা ভাল এবং ওঠার সাথে সাথেই দুই-একটি সেবন করে নেয়া ভাল। তবে এধরনের ঔষধ জাহাজের ভেতরকার দোকানেও পাওয়া যায় কিন্তু বেশি দামে। যাইহোক, অসুস্থতা তীব্র হলে জাহাজ কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ডাক্তারের ব্যবস্থাও রয়েছে, কিন্তু বেশ ব্যয়বহুল (শুধুমাত্র প্রত্যেক ভিজিট প্রতি ১০০ টাকা)। প্রসংগতঃ বিশেষভাবে ও গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ্য, যাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদি জাতীয় রোগের জন্য নিয়মিত ঔষধ খেতে হয়, তাদের জন্য সতর্কবাণী হল এই কয়দিনের জন্য ঔষধগুলি সঙ্গে নিতে অবশ্যই যেন ভুল না করেন। কারণ এসমস্ত prescription medicine জাহাজে কিংবা Noumea থেকে পাওয়ার আশা না করাই ভাল (জাহাজের ডাক্তার হয়তো ভাল বলতে পারবে)। সেইসাথে যেসমস্ত ঔষধগুলি আমরা সচারচর খেয়ে থাকি, যেমন প্যারাসিটামল, এন্টাসিড, স্ট্রেপসিল, ইত্যাদি প্রয়োজনমত সাথে নিয়ে যাওয়া ভাল। এগুলি জাহাজের দোকানে পাওয়া গেলেও অনেক দাম পড়বে। তবে, ব্যক্তিগত ভাবে নিজে অনেকটা বিপত্তির মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম স্ট্রেপসিল সাথে না নিয়ে গিয়ে। যাওয়ার পথে সম্ভবত: সাগরের হাওয়ার প্রভাবে আমার গলা খুসখুসানি ও কিছুটা ব্যথা অনুভূত হয়েছিল। ভেবেছিলাম Noumea-তে নেমেই কোন দোকান থেকে কিনে নেব (যেমনটি সিডনীতে সুপার মার্কেট কিংবা দোকান থেকে কিনে থাকি)। তাই প্রথমে চেষ্টা করেছিলাম জাহাজঘাটের নিকটস্থ সুপার মার্কেটটি থেকে কিনতে, কিন্তু নিজে নিজে অনেক চেষ্টা করেও খুঁজে পেলামনা। সেলস গার্লদের শরণাপন্ন হলে, ভাষাগত কারণে বুঝাতে ব্যর্থ হলাম। শেষপর্যন্ত অনেক ভাষাগত বিপত্তির মধ্যে দোকানের একজন কাষ্টমারকে (যার ইংরেজির দক্ষতা বেশ ভাল ছিল) সমস্যাটির কথা বললে জানতে পারলাম সাধারণ ঔষধ হলেও এইসমস্ত ঔষধ সুপারমার্কেটে পাওয়া যাবেনা, ফার্মেসিতে যেতে হবে। কিন্তু, ফার্মেসিতে গিয়েও সে আরেক বিপত্তি। ষ্ট্রেপসিল ব্রান্ডের এরকম কোন ঔষধ নেই। শেষ পর্যন্ত সেলসম্যান ‘ড্রিল’ নামের সমমানের আরেকটি ব্রান্ড দিল, অনেকটা নিরুপায় হয়ে যা প্রায় দ্বিগুণ দামে কিনতে হয়েছিল।

সবশেষে, বিল পরিশোধের বিষয়টি। জাহাজের মধ্যে কেনাকাটা, shore trip বুকিং, ইত্যাদির জন্য সাথে সাথে পে করার ব্যবস্থা নেই। ২৯ সেপ্টেম্বর জাহাজে boarding-এর জন্য check-in-এর সময় প্রত্যেক যাত্রীকে তার ব্যক্তিগত তথ্যাদি সম্বলিত একটি করে computer-printed আইডেন্টিটি কার্ড দেয়া হয়েছিল। কেবিনের দরজা খোলা থেকে শুরু করে জাহাজের মধ্যে যেকোনো ধরনের কেনা-কাটা, জাহাজ থেকে কূলে ওঠা এবং আবার জাহাজে ওঠা, ইত্যাদি সমস্ত কর্মকাণ্ডের জন্য এই কার্ডটিই সবকিছু। সুতরাং কেবিনের বাইরে এই কার্ডটি সার্বক্ষণিক সাথে রাখতে হয়েছিল এবং যাতে হারিয়ে কিংবা কোথাও পড়ে না যায় সেজন্য অনেকে জাহাজের দোকান থেকে ষ্ট্রাপ কিনে সেটিকে গলায় ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করেছিল। একইসাথে check-in-এর সময় প্রত্যেক যাত্রীর কাছ থেকে তার credit card কিংবা bank card
details নিয়ে নিয়েছিল। সুতরাং যদি যাত্রী তার বিল cash settlement না করতে চায় তাহলে তার যাবতীয় বিল সেই credit card কিংবা bank card থেকে কেটে নেয়া হবে। আর cash settlement করতে চাইলে তা শেষ রাতটির ১২টার আগে করতে হবে।

সাধারণতই প্রশ্ন জাগে এইধরনের ক্রুজের খরচের ব্যাপারে। ৭ রাতের জন্য আমাদের মাথাপিছু টিকেট মূল্য ছিল ১০৭৯ ডলার। এছাড়া Noumea-র shore trip, জাহাজের মধ্যে বাড়তি খাওয়া-দাওয়া ও পানীয়, ইত্যাদি বাবদ (gift items-গুলি বাদ দিয়ে) আমাদের মাথাপিছু খরচ পড়েছে ধরা যায় ১১০০ ডলারের মত। সেই হিসেবে থাকা, খাওয়া ও যাবতীয় বিনোদনমূলক প্রোগ্রাম বাবদ প্রতিরাতের জন্য খরচ পড়েছে ১৬০ ডলারের মত, যেখানে থাকা-খাওয়া ছিল প্রায় পাঁচতাঁরা হোটেল মানের। সেই তুলনায় কোন সাধারণ হোটেলেও থাকতে গেলে প্রতিদিনের থাকা ও খাওয়া বাবদ খরচ এর চেয়ে বেশি বই কম হবেনা।

প্রসঙ্গত: আরো একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়, তাহলো অতি-বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের বিশালত্ব, প্রশস্ততা ও সীমা-হীনতা। ভৌগলিক তথ্যানুযায়ী, পৃথিবীর পুরো আয়তনের (৫১০ মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ) এক তৃতীয়াংশেরও কম স্থল (১৪৯ মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ – ২৯%)। বাকি দুই তৃতীয়াংশেরও বেশী জলের (৩৬০মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ ৭১%) মধ্যে শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরই প্রায় অর্ধেক (১৬৫ মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ – ৪৬%) এবং বাকি অর্ধেক (৫৪%) আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরসহ অন্যান্য মহাসাগর, সাগর, হ্রদ ও জলাধারসমূহ মিলে। সুতরাং, এখানে লক্ষ্যনীয়ভাবে নিরেট বাস্তবতাটি হল, শুধুমাত্র প্রশান্ত মহাসাগরের আয়তন (১৬৫ মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ) পৃথিবীর পুরো স্থলভাগের আয়তনের (১৪৯ মিলিয়ন বর্গকিঃমিঃ) চেয়েও বেশি। বলা হয়, এই সুবিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের সবচেয়ে প্রশস্ত অংশটি ১২,০০০ কিলোমিটারের বেশি চওড়া এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূল থেকে সোজাসুজি দক্ষিণ আমেরিকার পেরু উপকূল পর্যন্ত ১০,০০০ কিলোমিটারের চেয়েও বেশি চওড়া। আর সিডনী থেকে একটানা দীর্ঘ ৬০ ঘণ্টারও বেশী প্রায় ২০০০ কিঃমিঃ পাড়ি দিয়ে নিউ ক্যালিডোনিয়া পর্যন্ত আমরা সুবিশাল সীমাহীন এই বৃহত্তম মহাসাগরটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ পাড়ি দিয়েছিলাম মাত্র।

পরিশেষে, এককথায় এ ছিল এক চরম শিহরিত, আমোদপ্রদ এবং দারুণ প্রমোদভ্রমণ যা ভাষায় প্রকাশ করা প্রায় কঠিন। একমাত্র এই ভ্রমণের বাস্তব অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই ইহার আনন্দের ব্যাপ্তি ও আতিশয্যকে বোঝা যাবে। সে ছিল যেন ক্ষণিকের জন্য বাকি পৃথিবীর সব কিছু ভুলে এক ভিন্ন জগতে হারিয়ে যাওয়া!

দ্রষ্টব্য:
লেখটি P & O কর্তৃক পরিচালিত Pacific Pearl জাহাজে শুধুমাত্র Sydney-New Caledonia ৭ রাতের ক্রুজের অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে লেখা। সুতরাং, অত্র ক্রুজের সুবিধাদির সাথে এই কোম্পানির অন্য কোন জাহাজের কিংবা অন্যান্য কোম্পানির কোন জাহাজের ক্রুজের সুবিধাদি একেবারে হুবহু ভাবাটা সমীচীন হবেনা।

sarderazam@gmail.com


Previous part







Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Dec-2014

Coming Events:



Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far