bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












সুন্দর ফন্টের জন্য SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন...


এক সপ্তাহের সে এক ভিন্ন জগৎ!
সরদার আমীর আজম


ইংরেজি “Cruise” অথবা বাংলা পরিভাষায় “ক্রুজ” শব্দটির অর্থ নৌবিহার কিংবা প্রমোদভ্রমণ। তবে এই শব্দটির সাথে আমাদের বেশি পরিচয় অস্ট্রেলিয়াতে এসে এটা বললে অত্যুক্তি হবেনা বোধ করি। বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলিতে অনেকদিন ধরেই শুনে আসছিলাম সিডনী থেকে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশে এবং প্রশান্ত মহাসাগরস্থ বিভিন্ন দেশ ও দ্বীপসমূহে (যেমন, New Caledonia, Vanuatu, Fiji, New Zealand, ইত্যাদি) ক্রুজে যাবার কথা সেই প্রায় দুই দশক ধরে অস্ট্রেলিয়া আসার পর থেকে। সেই থেকে ক্রুজের ব্যাপারে একটি প্রচ্ছন্ন উৎসাহ ও আগ্রহ মনের মধ্যে দানা বেঁধে ছিল, বলা যায় একরকম স্বপ্নের মতই।

শেষ পর্যন্ত দীর্ঘদিন পরে সেই স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হল গত ২৯ সেপ্টেম্বর (বলা যায় ‘a dream comes true’-র ন্যায়) Sydney-New Caledonia ক্রুজের মাধ্যমে। যাইহোক, এব্যাপারে আমার স্ত্রী জেসমিন এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের (দুই কন্যা ইমি ও ঈশান এবং বড় জামাতা উত্তাল) একরাশ ধন্যবাদ এবং তাদের কাছে আমি প্রচন্ডভাবে কৃতজ্ঞ, যারা আমার ষাটবছর পূর্তি উপলক্ষে দৃঢ়তার সাথে এই ক্রুজ প্রোগ্রামটি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বিখ্যাত P & O ক্রুজ কোম্পানি কর্তৃক পরিচালিত বেশ কয়েকটি বিশাল আকারের জাহাজের মধ্যে অন্যতম একটি জাহাজ Pacific Pearl আমাদের পাঁচজনসহ (স্ত্রী, দুই কন্যা, বড় জামাতা এবং আমি) প্রায় ২০০০ যাত্রী নিয়ে (সেই সময় স্কুল হলিডে থাকার কারণে প্রায় ৪০০ স্কুল ছাত্রছাত্রী ও বাচ্চাসহ এবং সেইসাথে অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা যাদের মধ্যে জনা দশেক ছিল wheel-chair-এ চলমান) প্রশান্ত মহাসাগরস্থ নিউ ক্যালিডোনিয়া দ্বীপের (যেটি এখনো ফ্রান্সের আওতাধীনে শাসিত একটি territory) উদ্দেশ্যে Glebb Island-এ নির্মিত নতুন White Bay Cruise Terminal থেকে যাত্রা শুরু করল ২৯ সেপ্টেম্বর বিকেল ৪ টায় ৭ রাতের (৬ অক্টোবর পর্যন্ত) এক ক্রুজে।

একটানা তিন রাত ও দুই দিন (৬০ ঘন্টাধিক) সীমাহীন প্রশান্ত মহাসাগরের অথৈ পানির অজস্র বিশালাকারের ঢেউয়ের দোলায় (কখনো শান্ত কিংবা কখনো ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল) অবিরাম দোল খেতে খেতে প্রায় ১১০০ নটিকাল মাইল (১ নটিকাল মাইল = ১.১৫ মাইল = ১.৮৫ কিঃমিঃ) অর্থাৎ প্রায় ২০০০কিঃমিঃ পথ পাড়ি দিয়ে (ঘণ্টায় গড় cruising speed প্রায় ২০ নটিকাল মাইল বেগে) ২ অক্টোবর সকালবেলা পৌঁছলাম নিউ ক্যালিডোনিয়ার রাজধানী Noumea-য়। সে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ার মত অবস্থা – যাক অবশেষে তীর দেখা গেল! যাইহোক, বন্দরে পৌঁছামাত্রই যে বিষয়টি আমাদের চমকে দিয়েছিল তাহলো স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত local costume-এ সজ্জিত হয়ে সেখানকার অধিবাসীদের দ্বারা traditional dance পরিবেশনের মাধ্যমে আমাদের স্বাগতম জানানো। সারাদিন Noumea সিটিতে কাটলাম। P & O-র ব্যবস্থাধীনেই পরিচালিত অনেকগুলি “Shore Trip”-এর মধ্যে আমরা বেছে নিয়েছিলাম ট্রেনের (অবশ্য রাস্তা দিয়ে চলমান) দুই ঘনটার একটি শহর প্রদক্ষিণ ট্রিপ, যার মাধ্যমে আমাদের নয়নাভিরাম Noumea-র বিশেষ বিশেষ স্থান ও স্থাপনাগুলি একটি “bird’s eye view”-এর ন্যায় দেখার সুযোগ হয়েছিল। উল্লেখ্য, যদিও online-এও বুক করার ব্যবস্থা আছে, আমরা জাহাজের রিসেপসন ডেস্ক থেকেই এটি বুক করেছিলাম। বেশ সাজানো গোছানো ছোট্ট শহর। যেহেতু এখনো ফ্রান্স কর্তৃক শাসিত, তাই শহরটি গড়ে উঠেছে উন্নত পাশ্চাত্য দেশগুলির ধাঁচে। সেইসাথে জাহাজঘাটেই স্থাপিত বিভিন্ন tourism products-এর দোকানগুলি থেকে প্রয়োজনীয় কিছু gift items কেনাকাটাও করে নিয়েছিলাম।

ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে নিউ ক্যালিডোনিয়া দ্বীপটি প্রশান্ত মহাসাগরস্থ Ocenia অঞ্চলের অনেকগুলি দ্বীপসমূহের মধ্যে একটি এবং অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড রাজ্যের উপকূল থেকে প্রায় ১২০০ কিঃমিঃ সরাসরি পূর্বদিকে প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত (সঠিক করে বলতে গেলে ব্রিসবেনের প্রায় ১০০০ কিঃমিঃ উত্তরে Rockhampton সিটি থেকে সোজা আড়াআড়ি অবস্থানে)। কিন্তু সিডনীর অবস্থান অনেক দক্ষিণে বিধায় সিডনী থেকে নিউ ক্যালিডোনিয়ার অবস্থান বেশ কোনাকুনি ভাবে উত্তর-পূর্ব (ঈশান) কোনে এবং তাই দূরত্ব প্রায় ২০০০ কিঃমিঃ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, নিউ ক্যালিডোনিয়া থেকে প্রখ্যাত ভ্যানুয়াতু দ্বীপটি আরো প্রায় শ-তিনেক কিঃমিঃ দূরে উত্তর-পূর্বে এবং আমাদের অতি পরিচিত ফিজি রাষ্ট্রটি আরো প্রায় শ-পাচেক কিঃমিঃ উত্তর-পূর্বে অবস্থিত। একারণে ভ্যানুয়াতু কিংবা ফিজির cruise trip-গুলি কিংবা নিউ ক্যালিডোনিয়া-ভ্যানুয়াতু-ফিজির combined trip আরো দীর্ঘ সময়ের হয়ে থাকে (১০ থেকে ১৫ রাতের)।

প্রশান্ত মহাসাগরের ঐ অঞ্চলে নিউ ক্যালিডোনিয়া এবং ইহার অধীনস্থ আশেপাশের বেশ কয়েকটি ছোট আয়তনের দ্বীপসহ (যেমন, Isle of Pines) এখনো একটি সরাসরি ফ্রান্স-শাসিত dependent territory। অষ্টাদশ শতাব্দীতে ফরাসি নাবিকদের কর্তৃক আবিষ্কৃত হওয়ার পর, ফ্রান্স ১৮৫৩ সালে ইহাকে সংযুক্ত করে নেয়। এর পরে ১৯৪৬ থেকে overseas territory এবং ১৯৯৯ থেকে special collectivity মর্যাদায় ফ্রান্সের সাথে সংযুক্ত আছে। আয়তনে প্রায় ১৮,৫০০ বর্গকিলোমিটারের এই দ্বীপটির লোকসংখ্যা প্রায় ২৭০,০০০। নেটিভ ভাষা বেশ কয়েকটি থাকলেও, সবাই ফরাসি ভাষাভাষী। একারণে ফরাসি ভাষা জানা না থাকলে স্থানীয় লোকদের সাথে ভাষার মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপন বেশ কঠিন। তবে বিভিন্ন দোকান ও রেস্টুরেন্টের লোকজন সীমিত আকারে ইংরেজি বলতে পারে। সরাসরি ফ্রান্স-শাসিত হওয়ার কারণে ইহার পৃষ্ঠপোষকতায় ইউরোপীয় ধাঁচে গড়ে ওঠা এই দ্বীপের অর্থনৈতিক অবস্থা বেশ উন্নত এবং মাথাপিছু আয় প্রায় ৪০,০০০ ডলার। মুদ্রা CFP Franc (ঠিক French franc নয়, কিন্তু ইহার সাথে একটি নির্ধারিত রেটে বিনিময়-কৃত, যা ফ্রান্স-শাসিত প্রশান্ত মহাসাগরস্থ overseas territory-গুলিতে ব্যবহৃত হয়)। বর্তমানে 1 AUS$ = 79 CFP Franc-এর মত। মনে হল বেশ শক্তিশালী, যে কারনে জিনিষ-পত্রের দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি মনে হয়েছে। যাইহোক, কেনাকাটায় সুবিধা এই যে, অস্ট্রেলিয়ান ডলার ব্যবহার করা যায়, কিন্তু সাধারণতঃ ভাংতি CFP Franc-এ ফেরত দেয়, আবার বেশকিছু দোকানদার ভাংতি অস্ট্রেলিয়ান কয়েনেও ফেরত দেয় (যা আমাদের ক্ষেত্রে হয়েছে)। যাইহোক, স্থানীয় লোকজন বেশ শান্ত প্রকৃতির এবং বন্ধুবৎসল বলে মনে হয়েছে। এককথায়, নয়নাভিরাম নিউ ক্যালিডোনিয়ার Noumea সিটির একদিনের ভ্রমণটি পরবর্তী জীবনের জন্য একটি মধুর স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেল।

এরপর ঐদিনই বিকেল চারটায় আবার যাত্রা শুরু হল নিউ ক্যালিডোনিয়ার আওতাধীন অন্যতম একটি দর্শনীয় দ্বীপ Isle of Pines-এর উদ্দেশ্যে। আবারো অবিরাম ঢেউয়ের দোলায় সারারাত চলে ৩ অক্টোবর সকালে আমরা পৌঁছলাম শান্ত, নয়নাভিরাম ও চোখ জুড়ানো ছোট্ট সেই দ্বীপটিতে। বড় জাহাজ ভিড়বার ব্যবস্থা না থাকায় জাহাজটি ঐ দ্বীপটির অন্যতম একটি ছোট্ট bay-মুখে নোঙ্গর করল। এরপর আমরা যারা ইচ্ছুক ছিলাম তাদেরকে জাহাজের rescue/tender boat-গুলির মাধ্যমে (যার যাত্রীধারন ক্ষমতা ৮০ থেকে ১০০ জনের মত) কূলে নিয়ে যাওয়া হল। প্রায় ২০০০ আদিবাসী লোকের বাস। ছোট ছোট কয়েকটি beach এবং resort আছে। একটি airport-ও আছে, যা মনে হল একমাত্র পরিবহন ও যোগাযোগের মাধ্যম। বোঝা গেল বিদেশীরা এখানে একান্ত শান্ত ও সুনিবিড় পরিবেশে সময় কাটাবার জন্য আসে। ঘণ্টা চার-পাঁচেক ছিলাম মাত্র। তীরে P & O কর্তৃপক্ষ স্থানীয় খাবারের বন্দোবস্ত করেছিল (chicken ও yam তরকারি সমন্বিত বিশেষ স্থানীয় পদ্ধতিতে তৈরি এবং কলাপাতায় পরিবেশিত) যা খেতে মন্দ লাগলনা। বিশেষ করে মনে থাকবে তাজা ও কচি ডাবের পানি ও ভেতরের নরম/শক্ত নারিকেলের শাস খাওয়ার কথা। এককথায় ঐরকম একটি শান্ত ও নিবিড় পরিবেশে মাত্র ঐ কয়েকটি ঘণ্টা কাটানো সে যেন ভুলবার নয়!

ঐদিনই বিকেল চারটায় সিডনীর উদ্দেশ্যে ফিরতি যাত্রা। আবারো সেই একটানা তিন রাত ও দুই দিনের (৬০ ঘন্টাধিক) অজস্র ঢেউয়ের দোলায় (কখনো শান্ত কিংবা কখনো ঝড়ো হাওয়ায় উত্তাল) অবিরাম দোল খেতে খেতে সিডনী ফিরে আসলাম ৬ অক্টোবর সকাল সাতটায়।

পাঠকদের মধ্যে যারা ইতিপূর্বে এধরনের লম্বা সময়ের জন্য ক্রুজে যাননি, তাদের কাছে একটানা তিন রাত ও দুই দিন পানির উপর থাকার একঘেয়েমি ও বিরক্তি কিংবা ঢেউ-জনিত ভীতি/অসুস্থতা (যাকে অন্যথায় বলা হয় motion sickness) নিয়ে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু জাহাজ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক প্রোগ্রামের (যেমন, গানের কনসার্ট, সার্কাস, ম্যাজিক শো, বিংগো, সিনেমা শো, ইত্যাদি) মাধ্যমে যাত্রীদের ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে এসমস্ত কিছু থেকে ভুলিয়ে রাখার জন্য। এছাড়া রয়েছে, swimming pool, casino, bar, ইত্যাদি। যদিও Ocean Liner যাত্রীবাহী জাহাজগুলির মধ্যে P & O কোম্পানির জাহাজগুলি তুলনামূলক ভাবে ছোটই বলা যায়, তবুও বলতে হবে বিশাল। ২৫৪ মিটার (প্রায় ৮৫০ ফুট) লম্বা আমাদের জাহাজ pacific pearl-এ ১৪টি ডেক কিংবা তলা (কিন্তু বাস্তবে ১৩টি, যেহেতু unlucky number বিধায় ১৩তম ডেক নামকরণ করা হয়নি)।

জাহাজের ঠিক মাঝামাঝি ৫ ও ৬ তলা জুড়ে reception desk area এবং চারদিক ঘুরিয়ে কয়েকটি দোকান যেগুলিতে cosmetics, gift items-সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র পাওয়া যায়। এগুলির মাঝখানে দুইতলা জুড়ে foyer-এ অনুষ্ঠিত হয় সার্কাস, খোলা শপিং ও বিভিন্ন কনসার্ট, ইত্যাদি। এর পাশেই আছে ৬ ও ৭ তলা জুড়ে জাহাজের বিশাল অডিটোরিয়াম, যেখানে কনসার্ট, ম্যাজিক শো, বিংগো, ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। তবে মূলত: এই অডিটোরিয়ামটি বিশেষ/জরুরী পরিস্থিতিতে জাহাজের Central Meeting Point হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন, জাহাজ ছাড়ার আগে সমস্ত যাত্রীদের তাদের নিজ নিজ রুমে সরবরাহকৃত life vest নিয়ে এই অডিটোরিয়ামে সমবেত করানো হয়েছিল এবং কিভাবে জরুরী পরিস্থিতিতে এই life vest পড়ে নিতে হবে তার একটি মহড়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া, সিডনীতে জাহাজ থেকে নামার আগে এই অডিটোরিয়ামে সমস্ত যাত্রীদের সমবেত করানো হয়েছিল এবং সেখান থেকে বিভিন্ন গ্রুপে পালাক্রমে পরিকল্পিতভাবে নামানো হয়েছিল। ১২ তলায় মাঝখানে খোলা আকাশের নীচে পাশাপাশি বয়স্ক ও বাচ্চাদের জন্য একজোড়া সুইমিং পুল এবং ঐগুলির চারপাশে reclining চেয়ারে sun-bath করার ব্যবস্থা ও একইসাথে সাধারণ চেয়ার/টেবিলেও বসার ব্যবস্থা আছে। এর ঠিক পেছনে জাহাজের প্রায় অর্ধেকাংশ জুড়ে বিরাট রেস্টুরেন্ট। বিশাল এই জাহাজের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে বেশ কয়েক মিনিট লাগে। উপর-নীচ করার জন্য যথারীতি সিঁড়ি ছাড়াও জাহাজের মাঝখানে ও পেছন দিকে ৩টি করে ৬টি বড় বড় lift সর্বদা চলমান।

যাইহোক, প্রথমেই যে বিষয়টি সামনে চলে আসে তাহলো থাকার ব্যবস্থার মান। ১৩ তলা এই জাহাজের, যাত্রীদের থাকার ব্যবস্থা ৫ তলা থেকে ১১ তলার মধ্যে। সাধারনতঃ couple-দের জন্য টুইন বেড কেবিন থেকে শুরু করে এক বা একাধিক ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কিংবা তরুণ-তরুণীদের গ্রুপে থাকার জন্য একসাথে তিন কিংবা চারজনের থাকার কেবিন আছে। আমাদের কেবিনগুলি ছিল ৬ তলায়। রীতিমত হোটেলের রুমের মতই, সংযুক্ত বাথরুম ও টয়লেটসহ। সেইসাথে মিনি ফ্রিজ ও সেফ লকারেরও ব্যবস্থা আছে। রুম থেকে রুমে যোগাযোগের জন্য intercom সার্ভিস আছে। প্রত্যেকদিন সকালবেলা হাউস-কিপিং বয় এসে রুম গুছিয়ে দিয়ে যায়। এককথায় বলা যায়, যেন পানির উপরে ভাসমান এক ‘পাঁচতাঁরা’ হোটেল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের হাউস-কিপিং বয়টি ছিল ইন্দোনেশিয়ান। ইউরি নামের ছেলেটি ছিল খুবই হাসিখুশি, সদালাপী ও সহায়ক।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল খাবার-দাবারের ব্যাপারটি। ১২ তলার পুরো পেছনের অংশটিতে অবস্থিত সবার জন্য উন্মুক্ত এই বিশাল রেস্টুরেন্টটি সকাল ৬টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত breakfast-এর জন্য খোলা হয়। এরপর সাড়ে ১২টা থেকে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত একটানা lunch ও dinner-এর জন্য খোলা থাকে। বুফে (buffet) স্টাইলে বিভিন্ন রকমের (Australian, English, Indian, Mexican, ইত্যাদি) খাবারের সমাহার (এককথায় বলতে গেলে অফুরন্ত)। আর এসবই টিকেটের পয়সার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য পানীয়ের বেলায় শুধুমাত্র পানি, জুস ও চা/কফি ফ্রি। কিন্তু soft ও alcoholic drinks কিনে খেতে হয়। এছাড়া, পয়সা দিয়ে বিশেষ কিছু খাবার (যেমন, grilled food, prawns, ice-cream, pizza, ইত্যাদি) কিনে খাওয়ার জন্য আলাদা কিছু রেস্টুরেন্টও আছে। তবে ধর্মীয় কারণে রেস্টুরেন্টে মাংসজাতীয় খাবার পছন্দের বেলায় একটু সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়েছে খাবারের উপর লেখা sticker দেখে (যেমন, ham কিংবা pork লেখা আছে কিনা)। উদাহরণস্বরূপ, flank নামক মাংসের খাবারটির সাথে পরিচিত ছিলামনা বিধায়, সেটি কিসের মাংস দিয়ে তৈরি তা জেনে নিশ্চিত হতে হয়েছিল এবং এরকম আরো কিছু কিছু অপরিচিত খাবারের বেলায়ও পরিবেশকদের জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত হতে হয়েছিল। এছাড়া একটি জায়গায় চাইনিজ স্টাইলে নিজের পছন্দনীয় fried rice কিংবা noodles, ইত্যাদি instant তৈরি করে নেবারও ব্যবস্থা ছিল। বিশেষভাবে উল্লেখ্য, রেস্টুরেন্টের পাচক ও পরিবেশকরা খুবই সহায়ক ও সদালাপী। যাইহোক, খাবারের এই প্রাচুর্য ও যথেচ্ছ্ববার খাওয়ার এই সুবিধাদিও এই উত্তাল সাগরের এই দীর্ঘ ভ্রমণপথে যাত্রীদের ব্যস্ত রাখার একটি অন্যতম মাধ্যম। তবে অপরিমিত কিংবা যথেচ্ছ্ববার খাওয়ার কারণে ওজন বেড়ে যাওয়ায় শঙ্কাটি (বিশেষ করে যারা diabetes, cholesterol, ইত্যাদিতে আক্রান্ত) এসে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখার যথেষ্ট ব্যবস্থাও আছে বিভিন্ন ধরনের উপকরণ (যেমন, treadmill, exercise bike, ইত্যাদি) সম্বলিত gym-এর ব্যবস্থার মাধ্যমে। এছাড়া ইচ্ছা করলেই জাহাজের মধ্যে ১৪টি তলা জুড়ে বিনা বাধায় দিন-রাতের যেকোনো সময়েই প্রচুর পরিমাণে হাহাহাটির সুযোগ-তো রয়েছেই। উল্লেখ্য, সবার জন্য উন্মুক্ত ১২ তলার self-service রেস্টুরেন্টের বাইরেও formal dinner-এর স্পর্শ পাওয়ার জন্যও একটি বিশেষ ব্যবস্থা আছে। জাহাজের ৭ তলায় অবস্থিত অন্য একটি রেস্টুরেন্টে প্রত্যেক যাত্রী দুইবার করে এখানে ফর্মাল ডিনার করার সুযোগ পায়। এজন্য আগেভাগে রিজার্ভেশন করতে হয় এবং ফর্মাল ড্রেস পড়ে যেতে হয় (কিন্তু ১২তলার উন্মুক্ত রেস্টুরেন্টে ফর্মাল ড্রেসের কোন বাধ্যবাধকতা নেই), আর সেখানে alacarte মেন্যু থেকে নিজের পছন্দমত খাবার অর্ডার করতে হয়, যা পরিবেশন করে খাওয়ানো হয়।


পরের অংশ








Share on Facebook               Home Page             Published on: 29-Dec-2014

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far