সুখের লাগিয়া এ ঘর বাঁধিনু! মীর সাদেক হোসেন
স্কুলে থাকতে “Aim in Life” বা “তোমার জীবনের লক্ষ্য” নিয়ে রচনা পরীক্ষায় আসতে দেখতাম। রচনার উত্তরে বেশীর ভাগের জীবনের লক্ষ্য ছিল হয় শিক্ষক হতে চায় নয় ডাক্তার হতে চায়।
বাজারে যেসব রচনার বই ছিল তাতে শিক্ষকতা আর ডাক্তারির বাইরে আর কোন পেশার অস্তিত্বই ছিল না। তাই উত্তরে, ঐ শিক্ষক আর ডাক্তার হওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। পরীক্ষার বাইরে অবশ্য অনেকেই নায়ক, গায়ক, বিমান-চালক, এমন অনেক কিছু হবার স্বপ্ন দেখতো। এসব অনেকদিন আগের কথা। এখনকার বাচ্চারা “Aim in life” কি জানতে চাইলে বেশীর ভাগই দেখি ইউটিউবার হতে চায়। যুগের সাথে সাথে “Aim in Life” এর পরিবর্তন তো হবেই। অনেকেই অনেক কিছু হতে চায়, সিলেক্টিভ স্কুলে পড়তে চায়, শুধু জিপিএ ফাইভ না গোল্ডেন জিপিএ ফাইভ পেতে চায়, সবচেয়ে বড় বাড়ি আর লেটেস্ট মডেলের গাড়ি চায়, জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা পেতে চায়।
অনেকেই অনেক কিছু চায়, কিন্তু “আমি সুখী হতে চাই”, এ রকম কাউকে চাইতে শুনিনা। আচ্ছা সুখী হতে চাওয়া কি দোষের কিছু? সন্তান সুখে থাকতে চাক বা না চাক, পিতা-মাতারা অবশ্য বলেন আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে (মানে সুখে)। তাঁরা সুখে থাকার আশীর্বাদ করেন ঠিকই কিন্তু কি করে সুখে থাকা যাবে সেটা তো বলেন না। নাকি তাঁরাও ভাবেন সিলেক্টিভ স্কুলে পড়লে, সব পরীক্ষায় এ প্লাস পেলে, সবচেয়ে বড় বাড়ি আর লেটেস্ট মডেলের গাড়ি চালালে, এলাকার সবচেয়ে সুন্দর বা সুন্দরী জীবনসঙ্গী হিসাবে পাশে থাকলে আর সাথে জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা থাকলেই সুখ পই পই করে চলে আসবে? তাই যদি ঠিক হবে তাহলে সব থাকার পরও মানুষ অসুখী কেন? সুখ তো দেখি মহা ধড়িবাজ! দূর থেকে লোভ দেখায় কিন্তু ধরা দেয় না।
ভাবলাম এ নিয়ে একটু রিসার্চ করে দেখি। দেখলাম এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে যা করতে চাই তা যেমন চর্চা করতে হয়, সুখে থাকতে চাইলে সুখে থাকাও চর্চা করতে হয়। তাই নাকি? বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন সুন্দর-সুন্দর মেমরি আমাদের প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্ক দৃঢ় করে আর দৃঢ় সম্পর্ক আমাদের সুখে থাকতে সাহায্য করে। তার মানে সুখে থাকার মূলে আছে আমাদের প্রিয়জনদের সাথে সুন্দর-সুন্দর মেমরি। এক সময়ের জোরালো সম্পর্ক সময়ের সাথে সাথে আরো জোরালো হতে পারে আবার হাল্কা হতে হতে শেষও হয়ে যেতে পারে।
ভেবে দেখলাম তাইতো আমরা যা কিছুই করি সুন্দর মেমরি তৈরি করার জন্যই তো করি। বন্ধুরা মিলে ঘুরতে যাই, বাচ্চা-কাচ্চার সাথে খেলতে যাই, প্রিয়জনদের জন্য পয়সা খরচাই, সব কিছুরই মূল লক্ষ্য কিন্তু একটা সুন্দর মেমরি তৈরি করা, তাই না? কেউ কি শ্রম আর পয়সা খরচ করে অসুন্দর সময় পাড় করতে চাই? অসুন্দর সময় অসুন্দর মেমরি তৈরি করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক।
আমরা ভাবি প্রিয়জনদের সাথে একেকটা সম্পর্ক যেন একেকটা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, একবার চালিয়ে দিতে পারলে এনার্জি বেরুতেই থাকবে, বেরুতেই থাকবে। সমস্যা হল সম্পর্কগুলো নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট না বরং গাড়ির ফুয়েল ট্যাংকের সাথে তুলনা করা যেতে পারে। যত জোরেই এক্সেলেটর চাপি না কেন, ট্যাংকে ফুয়েল না থাকলে গাড়ি চলে না। প্রিয়জনদের সাথে সম্পর্কগুলোও তাই। আর তোমার-আমার সম্পর্ক/দাম্পত্য জীবন/রিলেশনশিপের বেলায় তো তা ষোলআনা সত্যি।
সুন্দর মেমরি তৈরির চেষ্টা না করে কিন্তু হাত-পা গুটিয়ে বসেও থাকা যায়। সুন্দর মেমরি তৈরি হবে সে আশায় বসে থাকলে কিন্তু সুন্দরের জায়গায় অসুন্দর মেমরি জায়গা করে নিতে পারে।
কল-কাঠি যেহেতু নিজের হাতে দেরী না করে বন্ধু নেমে পড়ো মাঠে তালি বাজাতে যদিও দু-হাত লাগে চেষ্টা করে ছিলে এই সান্ত্বনা পাবে মনে।
মীর সাদেক হোসেন, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|