bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



মায়ানমারের নাট কাহিনী
আহমেদ সাবের



নাট শব্দ থেকে উদ্ভূত দুটো শব্দ-যুগলের সাথে শৈশব থেকেই জানাশোনা। হিন্দুদের পূজার মন্দির সংলগ্ন খোলা চত্বর ““নাট-মন্দির”“ নামে পরিচিত। সাধারণতঃ ধর্মীয় সমাবেশ, পালা-গান, কবি-গান – ‘এ সবের আয়োজন হয় এই যায়গায়। আর, আরেকটা শব্দ-যুগল হচ্ছে ““নাটের গুরু”“। যার সোজা বাংলা হচ্ছে - খলনায়ক। নাট থেকে কি ভাবে দুটো বিপরীতমুখী শব্দের উৎপত্তি - তার গূঢ় রহস্য ভেদ হলো আমার সাম্প্রতিক মায়ানমার ভ্রমণকালে।

নাট মন্দির আমাদের দেশে যতো ভালো অর্থে বা কাজেই ব্যাবহার হোক না কেন, মায়ানমারে নাট মানে অপদেবতা, আর ““নাট-মন্দির”“ মানে অপদেবতার মন্দির। আর তাদের নেতা বা নাটের গুরু অবশ্যই সকল কু-কর্মের কাজী হতে বাধ্য। মায়ানমারের প্রচলিত ধারনা, এসব অপদেবতারা এক সময় মানুষ ছিলেন। মনুষ্যজন্মে তাদের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। ফলশ্রুতিতে পর-জন্মে তাদের নাট রূপে পৃথিবীতে প্রত্যাবর্তন। মায়ানমারের প্রায় প্রতি গ্রামে নাটদের-মন্দির আছে। সে গুলো নাট-সিন (Nat sin) নামে পরিচিত। এ ছাড়াও অনেক বাড়ীর এক কোনে কাঠের বাক্সের মতো নাটের আবাসস্থল আছে। সেখানে নাটদের খুশী রাখার জন্য প্রতিদিন ভোগ দেয়া হয়। নইলে ওনারা রেগে গ্রাম বা বাড়ির অধিবাসীদের অকল্যাণ করতে পারেন।

মায়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস যীশু-খৃষ্টের জন্মের অনেক আগ থেকেই শুরু। খৃষ্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে, সম্রাট অশোকের সময় মায়ানমারে বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপ্তি ঘটে। বর্তমান ব্রহ্মদেশের প্রথম রূপকার সম্রাট আনাওরাটা মিন-স (Anawrahta Minsaw) তিনি তার শাসন কালে (১০১৪-১০৭৭ সাল) বৌদ্ধ ধর্মকে রাষ্ট্র-ধর্মের মর্যাদা দেন। সেই সময় রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ব্রহ্মদেশে বৌদ্ধ ধর্মের ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তবে মায়ানমারে নাটদের ইতিহাস বৌদ্ধ ধর্মের চেয়েও প্রাচীন। তৎকালীন ব্রহ্মদেশে অসংখ্য নাটের উপস্থিতি ছিলো। সম্রাট আনাওরাটা আপ্রাণ চেষ্টা করেও নাট উপাসনা বন্ধ করতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত তিনি নাট-উপাসকদের সাথে একটা রফায় আসেন। অসংখ্য নাটের বদলে ৩৭ জন নাট সেবা-যোগ্য বলে চিহ্নিত হয়। সম্রাট আনাওরাটা মিন-স’র রাজধানী ছিল বাগান নামের এক শহরে। সেই শহরের কথা পরে এক সময় বলবো।

মায়ানমার জনগোষ্ঠীর বেশীর ভাগ বৌদ্ধ-ধর্মাবলম্বী হলেও প্রাত্যহিক কাজে কর্মে তারা মারাত্মক ভাবে নাট-নির্ভর। এখনো, শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে অনেকে বিশ্বাস করেন, নাটদের খুশী রাখলে তাদের জীবনে উন্নতি হবে, বালা-মসিবত দূরে থাকবে; অন্যথায় নাট’রা তাদের জীবন অশান্তিময় করে তুলবে। তাই অনেক প্যাগোডায় বৌদ্ধ মূর্তির আশে-পাশে আছে নাটদের মূর্তির সহাবস্থান। বুদ্ধদেবের উপাসনার সাথে নাটদেরকে ধামা ভর্তি নারকেল এবং কলার ভোগ দেয়া হয়; টাকা-পয়সা তো অবশ্যই।

মধ্য বার্মার বাগান শহরের প্রায় তিরিশ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত পোপা পর্বত হচ্ছে একটা মৃত আগ্নেয়গিরি। এই পর্বতের সর্বোচ্চ চুড়া, সমুদ্র-পৃষ্ট থেকে প্রায় দেড় হাজার মিটার উঁচু। পোপা পর্বতে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট একটা খাড়া পাথরের নাম পোপাটাউং-কালাত – উচ্চতা প্রায় ১৫০ মিটার। এর উপরে নির্মিত বৌদ্ধ-আশ্রম এবং মন্দিরকে মায়ানমারের নাট উপাসনাকারীদের ভ্যাটিকান বলা চলে।

এবার মায়ানমার ভ্রমণকালে আমার পোপা পর্বতেও যাবার সুযোগ হয়েছিলো। পর্বতের পাদভূমি থেকে ৭৭০টা বেশ উঁচু উঁচু সিঁড়ি বেয়ে এবং অনেক বানরের উৎপাত সহ্য করে পোপাটাউং-কালাত শৃঙ্গের মন্দিরে গিয়েছিলাম এবং দেখা মিলেছিলো ৩৭ নাটের। নাটদের সামনে রাখা উপঢৌকনের বহর দেখে মনে হচ্ছিল, নাটদের মত জীবন হলে মন্দ হতো না।

নাট থাকবে আর তাদের উৎসব থাকবেনা, তা কি করে হয়। মায়ানমারে নাট উৎসব লেগেই আছে। বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে বিভিন্ন নাটের জন্ম ও কর্মস্থান অনুসারে, বিভিন্ন পূর্ণিমায়, বিভিন্ন নাটের উৎসব চলে। উৎসবের মেয়াদ সপ্তাহে গড়ায়। নাট উৎসবগুলোতে নাটদের নানা রকম উপহার দেবার সাথে সাথে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য ও বিশেষ করে পানীয়ের ব্যবস্থা থাকে। সাথে চলে বেচা-কেনা। যে নাট স্মরণে উৎসব, তার কাহিনী নিয়ে পালার আয়োজন করা হয়।

পোপা পর্বতের পোপাটাউং-কালাত শৃঙ্গের মন্দির হলো সর্ব নাটের মন্দির। সুতরাং এখানকার উৎসব সকল নাট উৎসবকে ছাড়িয়ে যায়। দেশ –বিদেশ থেকে হাজার হাজার লোক এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়। পোপা পর্বতের নাট উৎসব হয় ডিসেম্বরে। নাটদের সম্মান জানাতে সারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নাট উপাসকরা জড়ো হয় পোপা পর্বতে; সে সময় পোপাটাউং-কালাত শৃঙ্গে পা ফেলার যায়গা থাকেনা।




আহমেদ সাবের, সিডনি





Share on Facebook               Home Page             Published on: 2-May-2017

Coming Events: