bangla-sydney













মোহাম্মদ ইউনুস ও তার উপদেষ্টামন্ডলী সমীপে খোলা চিঠি
মোহাম্মদ রেজাউল করিম


আমি অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক। বর্তমান সরকারের প্রজ্ঞার প্রতি আমার শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু পরামর্শ ও প্রস্তাবনা রাখছি।

(এক) ‘অন্তর্বর্তী’ সরকারের বদলে আপনাদের নাম হোক ‘নির্ভিক সরকার’। দেশ উল্লেখযোগ্য ভাবে একটি দূর্নীতি মুক্ত সমাজ ব্যবস্থায় উপনীত না হওয়া পর্যন্ত আপনাদের ক্ষমতায় থাকা জরুরী বলে আমি মনে করি। ধর্ম, বর্ণ, অর্থনৈতিক অবস্থানের যে কোন আলোকে সব মানুষ যে সমান এই আদর্শে (egalitarian principles) যারা বিশ্বাস করে না তারা কোনোভাবেই যেন আপনার উপদেষ্টা পরিষদে অন্তর্ভুক্ত না হয়।

(দুই) আমাদের আজকের শ্লোগান হওয়া উচিৎ “দূর্নীতি মুক্ত বাংলাদেশ চাই”। ‘জয় বাংলা’ বা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের চেয়েও যা বেশি জরুরি। এই শ্লোগান সরকারের সব দপ্তর-অধিদপ্তরে, সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনে, সংস্থায়, মিডিয়ায়, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল নীতি হিসেবে প্রচার করা দরকার। সর্বত্র এটি বড় হরফে ছাপার আকারে ও নানা বিলবোর্ডে প্রকাশ করা প্রয়োজন।

আমরা জানি যে কোন সমাজকেই পুরোপুরি দূর্নীতিমুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে এটিকে মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ধরে সব পরিকল্পনা সাজালে আমরা অনেক দূর অগ্রসর হতে পারবো বলে আশা করা যায়।

সিঙ্গাপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ছয় বছর অধ্যাপনার সময় দেখেছি যে কিভাবে কতগুলি শ্লোগান ও তার ভিত্তিতে নেয়া প্রকল্পের মাধ্যমে লি কুয়ান ইউ সমাজকে বদলে দিতে পেরেছিলেন। যেমন কিছু শ্লোগান ছিল এমন, “আমরা সততা ও বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করব”, “আমরা সিঙ্গাপুরকে বিশ্বে একটি উদাহরন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করব”, “আমরা রাস্তায় থুথু ফেলব না” ইত্যাদি।

আমাদেরকে প্রাচীন আমলের বীর পূজা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। সিঙ্গাপুরে লি কুয়ান ইউয়ের কোন ছবি বা মূর্তি দেখা যায় না অথচ তাকে আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক বলা হয়।

(তিন) আমাদের বিশ্বাস যে আপনাদের ‘নির্ভিক সরকার’ দেশপ্রেম, সততা ও একগ্রতা নিয়ে কাজ করবেন। তারপরও দেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরছিঃ

(ক) আপনাদের উপদেষ্টাদের দেশে বিদেশে রক্ষিত সব সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রকাশ করুন। এক্ষেত্রে উপদেষ্টাদের স্ত্রী ও সন্তানদের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিও অন্তর্ভুক্ত করা হোক। আপনাদের বেতন-ভাতা জনসম্মুখে প্রকাশ করুন। বলা হয়ে থাকে যে “ঘর থেকেই সংস্কার শুরু হয়ে থাকে”, তাই আপনারা এক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করুন। আপনারা প্রত্যেকে আলাদা বড় গাড়িতে না চরে একটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন বা ছোট গাড়িতে করে অফিসে যাতায়াত করুন যা ভালো দৃষ্টান্ত তৈরি করবে। আপনারা সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারী সব কাজে বড় গাড়ি বর্জন করুন। এতে করে জ্বালানির সাশ্রয় হবে ও রাস্তার যানজট থেকে মুক্তি মিলবে।

(খ) আমাদের দেশের বৈদেশিক মুদ্রার যোগানদাতা কারা তা ঘোষণা ও প্রচার করুন। বিদেশে আমাদের শ্রমিক, গার্মেন্টসে কাজ করা মানুষদের কাজের স্বীকৃতি দিন। কৃষি ও নানা শিল্পে কাজ করা আমাদের নাগরিকদের কাজ থেকে কিভাবে আমাদের অর্থনীতি দাঁড়িয়ে আছে ও সরকার চলছে তা জনগণকে বুঝতে দিন। এদেশের মালিক যে জনগণ তা বলুন। এদেশের অর্থ সম্পদ যে তাদের তা প্রকাশ করুন। তাহলে দেশের প্রতিটি সম্পদের মূল্য তারা দিবে।

ডেপুটি সেক্রেটারি/মেজর লেভেলে গাড়ি প্রদানের সরকারি সব অযৌক্তিক ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসুন। পৃথিবীর কোথাও এগুলো নেই। এমনকি সচিবদেরও ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য গাড়ি প্রদানের বিলাসিতা পরিত্যাগ করুন। সেনা অফিসারদের জন্য ভূমি/জায়গা প্রদানের অসুস্থ উদ্যোগ পরিহার করুন। একমাত্র মিসর ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও এসব নেই। এমনকি ভারতেও সেনা অফিসারদের জন্য প্লট নয়, হ্রাসকৃত মূল্যে ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা আছে।

(গ) দেশের সচিব পর্যায়ের কিছু বাসা-বাড়িতে আমার ব্যক্তিগত পর্যায়ে যাওয়া-থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একটি গরিব দেশে যে বিলাসিতায় তারা থাকে তা রাষ্ট্রের অপব্যয় ছাড়া আর কিছু নয়। এগুলো অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। অবৈধ শাসনকে টিকিয়ে রাখতে চাপরাশি থেকে প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত ঘুষের প্রচলন করা হয়েছিল। এখন এগুলো থেকে দেশকে মুক্ত করতে যে কতটা সময় লাগবে তা খোদাতালাই বলতে পারবেন !

(ঘ)যারা মানবতা বিরোধী অপরাধ করেছে তাদের জন্য ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে বিচারের ব্যবস্থা করার আশু উদ্যোগ নিতে আহ্বান জানাচ্ছি।

(ঙ) এমূহুর্তে একটি গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন হল, সরকারের দিক নির্দেশনা, তারা কোনদিকে যাবে। আমার মতে শতকরা একশত ভাগ ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় না গিয়ে বরং একটি সমতা ভিত্তিক ভারসাম্যমূলক সমাজব্যবস্থার দিকে যাওয়া প্রয়োজন। আমার মতে আমাদের রাষ্ট্রের যারা অংশীজন যেমন কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষিত বুদ্ধিজীবি, চিকিৎসক, কৃষিবিদ, প্রকৌশলি, সামরিক-বেসামরিক আমলা, ছাত্র-জনতা সবারই উচিৎ একটি সর্বজনগ্রাহ্য সমতা ভিত্তিক সমাজ তৈরিতে সমর্থন ও অংশ নেওয়া। এভাবে আমরা বিশ্বের সামনে একটি আদর্শ রাষ্ট্রের উদাহরণ তৈরির পথে অগ্রসর হতে পারি।

(চ) ঢাকায় একজন রিক্সা চালক আমাকে বলেছিল যে তারা যান্ত্রিক রিক্সা চালনায় বাধার সম্মুখীন হন এই কারণে যে ব্যাটারি চার্জের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায় না। ঢাকার অভিজাত এলাকার বিভিন্ন বাসস্থানে ২৪ ঘন্টা এসি চলছে। কেউ কেউ তিনটি চারটি ফ্রিজ/ফ্রিজার ব্যবহার করছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরষ্পরের স্বার্থে কর্ম পরিকল্পনা হাজির করা প্রয়োজন। প্রয়োজন প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাজের ও রোজগারের পথ খোলার ব্যবস্থা নেওয়া।

(ছ) স্বজনপ্রীতি ও লুটপাটের কারণে সাধারন জনগনের জীবন আজ বিপর্যস্ত। আমরা জানতে চাই কি পরিমান সম্পদ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে। এই কোটি কোটি ডলার রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত আনার ব্যাবস্থা করতে হবে।

(জ) আমি মনে করি ছাত্র-জনতার গন অভ্যুথানের মাধ্যমে বর্তমানে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে তাদের দ্বারাই আগামীতে একটি নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা হোক। তাতে করে পুরোনো রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি মানুষের মোহ ও সমর্থন কমে আসবে। তাদের পুরোনো ধ্যান ধারণা চ্যালেঞ্জের মুখোমখি হবে। মানুষ ভালো বিকল্প খুঁজে পাবে।

আগামীতে আরো লেখার ইচ্ছে রাখছি

আপনাদের শুভাকাংখী,
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। বুয়েট ১৯৬৬
Email: rezakarim66@gmail.com
Founder of charity projects (vill:Shayampur, Upazilla: Melandah, Dis: Jamalpur):
(1) Rabeya-Rashid Miah memorial academy
(2) Rashid Miah health care centre
(3) Children playing park
(4) Free primary children school
(5) Rezu Miah onudan fund for the poor


ডঃ রেজাউল করিম এর প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই ওয়েব সাইটটি ভিজিট করুনঃ https://rkarim.org





Share on Facebook               Home Page             Published on: 30-Aug-2024

Coming Events: