উল্টো পিঠের সোজা কথা (১১) রিয়াজ হক
১৪ দিনের দুঃখ ভোগ
চোদ্দ দিনের সুখ ভোগ নামে একটি লেখা লিখেছিলাম কদিন আগে। এর পর সিডনি থেকে দুজন ও ঢাকা থেকে একজন ফোন করে যা বলেছেন তার সারাংশ হল, কেন নির্দিষ্ট করে দুচারটি বই বা পাঁচ ছজন লেখকের নাম বললাম। কেন হুমায়ুন আহমদের মত জনপ্রিয় লেখকের কথা বললাম না, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাহলে সবার জন্য বলি।
বেশী কথা না, প্রয়োজনীয় কথাঃ উইক এন্ডে ফোনে কথা বলছিলাম ঢাকায় আমার পরিচিত এক লেখক বন্ধুর সঙ্গে। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের জন্মলগ্ন থেকে তার সাথে আমার পরিচয় ও বন্ধুত্ব। তাও প্রায় চল্লিশ বছর। বাংলা ও ইংরেজি দুভাষাতেই তার ঈর্ষনীয় পাণ্ডিত্য। সে অনর্গল বলতে ও লিখতে পারে ফ্রেঞ্চ (ঢাকার আলিয়ন্স ফ্রন্সেজ এ একসময় কিছুদিন ফ্রেঞ্চ পাঠে আমি তার সহযাত্রীও ছিলাম)। তার রুচি, সংস্কৃতি বোধ ও বিজ্ঞান মনষ্কতা এক কথায় অতুলনীয়। আমরা কথা বলছিলাম লেখক, লেখার স্বাধীনতা ও পাঠক প্রসঙ্গে। সে আমাকে খুব মজার একটা কথা বলেছে, ধর, তুমি যদি তিন বছরের শিশু বা নব্বুই বছরের বৃদ্ধকে অর্ধ সেদ্ধ বিফ স্টেক খেতে দাও, কি হবে? সে কি আদৌ খেতে পারবে, না তার হজম হবে? লেখার ক্ষেত্রে পাঠকের অবস্থানও তেমনি। এমন পাঠকও বাংলাদেশ আছে যারা জয়গুন বিবির পুঁথি পাঠেই মুগ্ধ, মাসুদ রানার কাহিনী পড়তে যেয়ে প্রবল উত্তেজনায় অধীর অনেকেই, কেউ হুমায়ুন আহমেদের মিষ্টি প্রেমের গল্পেই মজে আছে। কেউবা জীবনকে সমর্পণ করেছে রবীন্দ্রনজরুল দর্শনে। কেউ আবার শীর্শেন্দু, সমরেশ মজুমদার, অরুন্ধুতি রায় বা সেক্সপিয়ার, গ্যাটে, ভলতেয়ার, দান্তে, ক্যামুতে খুঁজে পাচ্ছে জীবন রহস্যের অনেক ধাঁধাঁর উত্তর। এর আগের লেখায় আমি কেবল মাত্র কিছু নাম উদাহরণ হিসেবে বলেছি। অন্য কোন কিছু ভেবে নয়। বড় প্রশ্ন, লেখক কার দিকে তাকিয়ে লিখেন? উত্তর, কারো দিকে তাকিয়েই নয়। লেখকের দায় তার নিজের, কুসংস্কার মুক্ত সমাজ ও মানবিক মূল্যবোধের দিকে। একবার কোন এক অনুষ্ঠানে শরৎচন্দ্রকে একজন পাঠক বলেছিলেন, আপনার লেখা অপূর্ব, সহজে বুঝতে পারি। রবীন্দ্রনাথের লেখা দুর্বোধ্য, বুঝি না। শরৎচন্দ্র উত্তরে বলেছিলেন, আমি আপনাদের জন্য লিখি আর রবীন্দ্রনাথ লেখেন আমাদের জন্য। আমেরিকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কে মানুষ/মিডিয়া তারস্বরে চিৎকার করে বলছে অর্ধ উন্মাদ, জোকার, রেসিস্ট, নারী বিদ্বেষী সহ ভয়ঙ্কর সব কথা। তাতে ট্রাম্প বা তাকে নির্বাচিত জনগণের মান-সম্মানের কি কোন হানি হচ্ছে? হচ্ছে না। তা হলে? মানুষের আত্মসম্মানবোধ বা মর্যাদা কাঁচের তৈরি ঠুনকো আরশি নয় যে তা সহজে সামান্য আঘাতেই টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙ্গে যাবে ! তাই বলি, এমন নয় যে কেউ কারও নাম না উল্লেখ করলেই সে অপাংতেয় বা মূল্যহীন হয়ে পড়বে বা তার কদর কমে যাবে। আর উল্লেখ করলেই তিনি প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান হিসেবে চিহ্নিত হবেন। ইতিহাসে যার যার অবস্থান তার তার কর্মই ঠিক করে দিবে। আমি বা আপনি নয়। তাই সব বন্ধুদের বলছি, আসুন, জীবনটাকে সহজ করে দেখতে শিখি। একজন বিখ্যাত মনিষীর একটা কথা উদ্ধৃত করছি, জীবন যা সহজে দিতে পারে তা গ্রহণ করার মত বিনয় যার আছে জীবন তার কাছেই সুন্দর। তাছাড়া, বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি?
কত অজানারে: এবার বলি করোনার (COVID 19) নয়, কাজ করনার গল্প। গত বেশ কিছুদিন ধরেই বাসার কিচেনের মিক্সার ট্যাপ ফসেটটা বড় বাড়াবাড়ি রকমের ত্যাঁদড়ামি শুরু করেছে। ট্যাপ অন করলেই বিশ্রীভাবে সব প্রান্ত থেকে, ডিম্বাকৃতি আকারে, সূচের মত পানি পড়তে থাকে। স্বভাবতই আমার স্ত্রী ভীষণ ক্ষিপ্ত বা অসন্তুষ্ট (যেহেতু রান্নাঘরের বেশীরভাগ ঝামেলা তাকেই পোহাতে হয় )। আমাকে বলে, কিসের ইঞ্জিনিয়ার তুমি, (যদিও আমি জানি, আমি সিকিভাগ প্রকৌশলী, সিকি ভাগ ভাবুক, সিকি ভাগ বৈরাগী, সিকি ভাগ প্রেমিক মানুষ। এসবের ব্যাখ্যা আবার কেউ চাইবেন না ; তাহলে আমাকে এক আস্ত পি এইচ ডি থিসিস লিখতে হবে!) বাসায় বসে বসে সময় কাটাও, একটা কলও ঠিক করতে পার না? আমাদের স্ত্রীদের মৌলিক ধারনা হল স্বামী প্রকৌশলী হলেই স্বামীকে কলকব্জার নাট-বল্টু ঢিলা বা টাইট দেওয়া, দরজা-জানালা-ফ্যানের ক্যাঁচক্যাঁচানি বন্ধ করা, সুইচ-বাল্ব পরিবর্তন বা ঠিক করা, সিংক/গাটার ব্লক সারানো, কম্পিউটারের ভাইরাস তাড়ানো এদেরই আজন্ম দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। যা হোক, মোলায়েম কণ্ঠে স্ত্রীকে বললাম, চল যাই BUNNINGS এ। এই Warehouse Chain টি অস্ট্রেলিয়ার সব কলকব্জার ঘাঁটি। এখানে আলপিন থেকে শুরু করে উড়োজাহাজ পর্যন্ত পাওয়া যায় (যদিও উড়োজাহাজ কথাটা বাড়িয়েই বললাম)। এত বিশাল বড় বানিংস এ একজন সেলস পারসন পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। আমার পাশে মহিলা দেখেই কিনা এক মধ্য বয়স্ক ভদ্রলোককে ইশারা করতেই সহাস্যে এগিয়ে আসলেন। স্ত্রী বুঝিয়ে বলল, আমার সিংক ট্যাপের Nozzle থেকে নেট খুলে গেছে, কল খোলা মাত্র তীব্র বেগে পানি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এ সমস্যার সমাধান চাই। সেলস পারসনঃ বিগলিত হাসি দিয়ে, বুঝেছি, তোমার দরকার Tap Aerator Nozzle . তা তুমি কি তোমার ট্যাপের এখনকার নজল টা খুলে এনেছ? স্ত্রীঃ না, তবে তুমি এরেটর দেখালে আমি বুঝতে পারব।
সেলস পারসনঃ তুমি কি জান তোমার কি এরেটর দরকার? Male না Female?
স্ত্রীঃ অবাক বিস্ময়ে, দুহাত পিছিয়ে যেয়ে, WHAT?
সেলস পারসনঃ অত্যন্ত বিনয়ের সাথে, ম্যাডাম, আমি কোন ফান করছি না, জোকসও না। তোমাকে জানতে হবে তোমার কোনটা দরকার, মেল না ফিমেল।
আমিঃ কিন্তু মেল ফিমেল বুঝব কি করে?
সেলস পারসনঃ ঝকমকে আনন্দের হাসি দিয়ে, যেন পাওয়া গেছে প্রার্থিত মজার কোন বিষয়; এ বয়সে সেটাও তোমাকে আমার বুঝিয়ে দিতে হবে?
আমিঃ হাসতে, হাসতে, না, মানে যদি কোন স্যাম্পল...
সেলস পারসনঃ অনেক খুঁজে, দুটি স্যাম্পল হাতে নিয়ে বলল, বলতো দেখি কোনটা কি?
আমিঃ সিকিভাগ প্রকৌশলী ও চলতি সাধারণ জ্ঞান দিয়ে ঠিক ঠিক শনাক্ত করে ফেললাম।
সেলস পারসনঃ রাইট। অনেক ভেবে চিন্তে, এখন আমি তোমাকে একটি ফিমেল এরেটর দিয়ে দিচ্ছি। তোমার লাক ট্রাই করতে পার, না হলে আবার তোমাকে আসতে হবে।
এরপর বাসায় ফিরে আগের Nozzle খুলে দেখি আমার লাগবে MALE. এরপর আর বর্ণনার দরকার আছে?
রিয়াজ হক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
|