bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












উল্টো পিঠের সোজা কথা (৮)
রিয়াজ হক


আমাদের যত ন্যায়-অন্যায়




আমরা বলি:
‘চরিত্র খারাপ হলেও লোকটা কিন্তু কাজের’
‘উনি টাকা মেরেছেন ঠিকই কিন্তু তার সময়ে কিছু কাজও হয়েছে’।
‘এরাও চোর জানি কিন্তু আমাদের তো আর কোন বিকল্প নেই’।
‘চুরি, বিশ্বাস-ঘাতকতা ও প্রতিশোধ পরায়নতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, আমরা যাব কোথায় বলেন’।

আবার আমরা বলি:
‘জায়গা মত লোক ছিল, আর কিছু পয়সা খরচ করেছি বলেই কাজটা তাড়াতাড়ি হয়ে গেল’।
‘আমার কাজটা হবে কিভাবে বলেন, আমার তো আর চাচা-মামা-খালু নেই’।
‘ওর রেজাল্ট যা হয়েছে তাতেই খুশী, ওতো আর পরীক্ষার আগে প্রশ্ন হাতে পায় নি’।
‘ভাইরে, আইনের শাসন না থাকলে যা হবার তাই হচ্ছে’।

এখন ভাল করে খেয়াল করে দেখুন , একদিকে আমরা বলছি একজনের চরিত্র খারাপ, দেদারছে টাকা লোপাট করছেন, চুরি তার স্বভাব ধর্ম আবার তিনি কাজ করেন বলে তাকে সমর্থনও করছি। শুধু তাই নয়, চুরি, বিশ্বাস-ঘাতকতা ও প্রতিশোধ পরায়নতাকে আমাদের চরিত্রের অন্তর্গত বলে বেশ স্বস্তি অনুভবেরও চেষ্টা করছি। অর্থাৎ সত্যিকারের ন্যায়-অন্যায়ের কোন সীমারেখা টানতে আমরা প্রবল ভাবে ব্যর্থ হচ্ছি।

আরেক দিক থেকে দেখুন, জায়গা মত লোক ও পয়সার সহায়তায় দু’নম্বর পথে কাজ হাসিল করে তা গর্বের সাথে বলছি। আবার যে কোন কাজে ব্যর্থতার জন্য আমরা আক্ষেপ করছি আমাদের চাচা-মামা-খালু নেই বলে। থাকলে ব্যাক-ডোরে কাজটা দ্রুত হয়ে যেত এরকম বোঝাতে চেষ্টা করছি। প্রার্থিত ফলাফলের জন্য প্রশ্ন পত্র না পাওয়াকে দায়ী করছি আবার আইনের শাসন নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করতেও পিছ-পা হচ্ছি না।

আমাদের জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যা বলছি, যা করছি তার সঙ্গে কেবল আমাদের অনৈতিক বিশ্বাস ও নষ্ট চেতনারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

মুখে গণতন্ত্রের জন্য আমরা বৈঠক খানায় আসর মাত করছি অথচ নিজের ঘরকেই করে রেখেছি গণতন্ত্র হীন। এখানে আমাদের স্ত্রী-পুত্র-কন্যারা স্বাধীন ভাবে তাদের মতামত প্রকাশে ভীত সন্ত্রস্ত। অন্যায় অর্থের জোর, শাসনের ত্রাস ও ভয়ের সংস্কৃতি আমাদের ঘরের মানুষ-জন কে করে রেখেছে নিদারুণ প্রশ্ন-কাতর অথচ প্রশ্ন-হীন। ফলে কোন কিছুতেই কিছু মিলছে না; কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

প্রসঙ্গক্রমে বলি, যারা প্লেটো’র রিপাবলিক গ্রন্থখানি পড়েছেন তারা জানেন যে এ গ্রন্থের প্রধান আলোচ্য বিষয় হল ‘ন্যায়’। ‘ন্যায়’ কাকে বলে বা মানুষের সমাজে কিভাবে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা সম্ভব তা নিয়ে কথোপকথনের মাধ্যমে এক বিশদ আলোচনা।

প্লেটো বলেছেন, ‘কথা ও কাজে সততার নামই ন্যায়’। তাই যদি হয় তাহলে আমাদের প্রতিজনের বিবেকের দিকে তাকিয়ে আমরা প্রশ্ন করি, আমরা কতটুকু ন্যায়ের মধ্যে আছি।

এই আমরা :
• একদিকে রাস্তা-ঘাট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি চাচ্ছি আবার যে কোনভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার নানা ফন্দি ফিকির খুঁজছি।
• সমানে ঘুষ দুর্নীতির সয়লাবে শাপ শাপান্ত করছি আবার টাকা হাতে ব্যাক ডোরে কাজ ও নিয়োগের আশায় দৌড়াচ্ছি।
• শিক্ষার মানের নিম্নগামিতার কথা বলে পেরেশান হচ্ছি আবার টাকার বিনিময়ে সার্টিফিকেট পাওয়ার আশায় এপথে ওপথে ঘোরাঘুরি করছি।

আমরা প্রতিনিয়ত ন্যায়ের আশা করছি অথচ অন্যায় সুযোগ সুবিধা নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিধাহীন চিত্তে এগিয়ে যাচ্ছি।

আমরা বলছি, এছাড়া আর কোন উপায় নেই। এ হল বাস্তবতা। সমাজের বর্তমান ব্যবস্থা আমাদের এভাবেই এপথে এগিয়ে দিচ্ছে। আমরা অন্যায়-অসততার বেড়াজালে আটকে গেছি !

আসলেই কি কোন উপায় নেই জীবনে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার !

আমি বলি, আগে আমাদের ঠিক করতে হবে নিজেদের। নিজেদের মানস-ভঙ্গির।

যে অসৎ, যে চোর, যে লুটেরা সে যতই কাজের হোক না কেন আমাদের মেরুদণ্ড সোজা করে তার দিকে তাকিয়ে বলতে হবে, “তুমি অসৎ, তুমি চোর, তুমি লুটেরা”। যে ঘুষ খায়, আমাদের বলতেই হবে, “তুমি ঘুষ-খোর”, হোক না সে আমার পরমাত্মীয়। যে আইনের শাসন মানে না, আইনকে নিজের সুবিধায় নিজের মত করে ব্যবহার করে, আমাদের বলতেই হবে সে সমাজ বিধ্বংসকারী। এর কোন মাঝামাঝি নেই।

যতদিন আমরা স্পষ্ট ও দৃঢ় কণ্ঠে সাদাকে সাদা ও কালোকে কালো বলতে না পারব ততদিন আমাদের থেকে সত্য ও ন্যায় থাকবে বহু দূরে; আমরা প্রতিনিয়তই আমাদের অগোচরে অন্যায় করে যেতে থাকব। আর বলব, এ আমাদের বিধিলিপি !!




রিয়াজ হক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Sep-2019

Coming Events:





A day full of activities, games and fun.







Blacktown Lakemba Mascot