bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












উল্টো পিঠের সোজা কথা (৬)
রিয়াজ হক


উন্নাসিক প্রবাসী বাঙ্গালীরা ও অন্যান্য




ছবিঃ ঢাকা ট্রিবিউন
আমাদের চার ভাইয়ের সর্ব কনিষ্ঠ সে। জন্ম তার ষাটের দশকের শুরুতে, ঢাকায়, পড়াশুনাও ঢাকায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আই বি এ থেকে এম বি এ করা। সাল ৮৩। এখন যেমন রাস্তার পাশে শপিং মলের মতই সাইন বোর্ড সর্বস্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবাক অবস্থান তখন তো তেমন ছিল না। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের ছেলে মেয়েরা কে কোথায় কি করছে প্রশ্নের উত্তরে যখন ঢাকার রাস্তায় গাড়ির অবিরত শব্দ সন্ত্রাসের মতই শোনা যেত না বি বি এ-এম বি এ, বি বি এ-এম বি এ। (কেউ কষ্ট পাবেন না, প্লিজ। বাস্তবতার নিরিখে কথাগুলো বলছি!)

প্রায় ত্রিশ বছর শিক্ষকতার সাথে যুক্ত এমন একজন মেধাবী অভিজ্ঞ ব্যক্তি যখন বলেন, “তোমরা যখন ঢাকার দূষিত বাতাস, তীব্র যানজট, দুর্নীতিতে নিমজ্জিতে এ সমাজের মানুষদের নিয়ে কথা বল তখন আমরা যারা এখানে বাস করি তারা খুব ক্ষুব্ধ ও হতাশ হই। প্রশ্ন জাগে, দু-এক বছর পর পর ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় বেড়াতে এসে স্বল্প সময় অবস্থান করে, আত্মীয় বন্ধুদের আতিথ্য গ্রহণ করে ও ইচ্ছে হলে সবাইকে একবেলা শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কোন রেস্টুরেন্টে খাওয়ানো ছাড়া এদেশের সমস্যা সমাধানে তোমাদের অবদান কি? হ্যাঁ, কেউ কেউ কিছু পয়সা পাঠাও এই তো। তোমাদের চেয়ে অনেক গুনে বেশী পয়সা মধ্যপ্রাচ্যের শ্রমিকরা এই দেশে পাঠায়। অর্থনীতি সচল আছে ঐসব হাড়ভাঙা পরিশ্রম করা মজুরের এবং দেশে গার্মেন্টসে কাজ করা শ্রমিকের শ্রমের অর্থে। ওরা কেউ কিন্তু তোমাদের মত নালিশ জানায় না। তোমরা শিক্ষিত, দেশের সমস্যা সমাধানে তোমাদের কোন কার্যকর উদ্যোগ নেই, কেবল নালিশ”।

একটু দম নিয়ে, “বাতাস Polluted, অসহনীয় শব্দ দূষণ, অসহ্য যানজট, বাধাহীন উৎকোচ, বাক্যবাগীশ জনগণ ইত্যাদি শুনতে শুনতে আমরা ক্লান্ত, হতাশ। পারলে নিজেরা কিছু করে দেখাও”।

আমি ভাবি তাই তো! আমরা কেবল বিস্তর অভিযোগ করে যাই। আমাদের দিক থেকে উদ্যোগ কোথায়? আমরা কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছি? এ তো আমার দেশ। এদেশে আমার বাবা-মা ভাই-বোন আত্মীয় স্বজন এরাই তো বাস করছে। তাদেরকে অযথা বিব্রত করা কেন? এসব অভিযোগ জানিয়ে কোন লাভ হচ্ছে কি? নাকি ‘ফলাফল নিম্নচাপ’!

যে কোন একটি শুভ উদ্যোগই তো পারে পরিবর্তনের সূচনা করতে। তা করছি না কেন? নাকি মানসিক ভাবে আমরা পশ্চাদ্মুখী ও কেবল অভিযোগ দায়েরকারী। কারণ অভিযোগ দায়েরে কোন মেধা, শ্রম বা অর্থের বিনিয়োগ ঘটাতে হয় না। এটা নিরলস ও সহজ। আমরা সে পথটাই বেছে নিয়েছি!



পাঠাও ও চিত্রকর্মঃ

সি এন জি তে উঠেছি, কলাবাগান থেকে বনানীতে যাব। বিজয় সরণির কাছে যেতেই সি এন জি চালক বলে উঠলেন, “দেখছেন, দেখছেন হোন্ডাগুলিরে, ক্যামনে যায়, পারলে ড্রেন, ফুটপাথ, মানুষ সবার উপর উইঠা পড়ে”!

“এইগুলি কি পাঠাও”, আমি জিজ্ঞাসা করি।

“আর কইয়েন না স্যার, এইগুলি কোন আইন কানুন মানে না। ভাল কইরা চালাইতেও জানে না। কত যে বাড়ি খাইতাছে, উল্টাইতাছে তার কোন হিসাব নাই। দূর জেলা মফস্বল শহর থাইকা যারই একটা মোটর সাইকেল আছে, ঢাকায় আইসা ‘পাঠাও’ হইয়া যাইতাছে”।

বনানীতে পৌঁছা পর্যন্ত সে ক্রমাগত এই মোটর সাইকেল ‘পাঠাও’ এর বিরুদ্ধে বিষোদগার করে যেতে লাগল। পরে ছোট ভাইয়ের কাছে জানলাম, ‘পাঠাও’ সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে সি এন জি চালকেরা ভাড়ায় প্রতিযোগিতার মুখোমুখি। কারণ একেলা ও দ্রুত যাওয়ার ক্ষেত্রে যারা আগে সি এন জি ব্যবহার করতেন তারা এখন ‘পাঠাও’ এর সার্ভিস নিচ্ছেন, মোবাইল এপ্স এর মাধ্যমে। এদের পাওয়াও খুব সহজ।

এ কথার চাক্ষুষ প্রমাণ পাওয়া গেল আমার এক আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে। উনি পেশায় শিক্ষক, থাকেন পশ্চিম নাখাল পাড়ায়। উনার দু’কন্যার কনিষ্ঠটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, আর্ট কলেজে মাস্টার্স করছে। ছোট বেলা থেকেই ওর ডিজাইনের দিকে প্রবল ঝোঁক। ওর আঁকা নানা ডিজাইন ও কারুকাজ দেখে আমি রীতিমত মুগ্ধ। ওকেও দেখলাম পাঠাও এর হোন্ডাতে চড়ে বাসার দরজা থেকে আর্ট কলেজে রওনা হয়ে গেল। আমাকে বলল এটা খুবই সময় ও খরচ সাশ্রয়ী। তখন বলতেই হয়, ‘জয়তু পাঠাও’।



সায়ীদ স্যারের চোখঃ

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার আমার ঢাকা কলেজের শিক্ষক। তারপর আবার স্যারের সঙ্গে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের শুরু থেকে পথ চলা। ঢাকায় যেয়ে অব্ধি ক্রমাগত ফোন করেও স্যারকে পাচ্ছিলাম না। একদিন সময় করে কেন্দ্রে যেয়ে দেখা মিলল স্যারের পি এস সপ্রতিভ ফিরোজের সাথে। ওর মাধ্যমে স্যারের সঙ্গে দেখা করার সময় মিলল পরদিন, এলিফ্যান্ট রোডে স্যারের বাসায়। পরদিন যেয়ে স্যারের সঙ্গে সমাজ-শিল্প- সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে অনেক কথা হল।

আমি স্যারের বাসায় থাকতেই ব্র্যাক থেকে এক ভদ্রলোক এলেন ব্র্যাকের প্রধান ‘আবেদ ভাই’ এর চিঠি নিয়ে। ১৪ই মার্চ ব্রাক প্রদত্ত নারী বিষয়ক এক পদকে জুড়ি বোর্ডের সম্মানিত সদস্যের অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব নিয়ে। সেদিন ছিল ১১ই মার্চ। পরদিনই নির্ধারিত ছিল স্যারের ডান চোখের ক্যাটারাক্ট অপারেশনের। ফলে সেখানে স্যারের অংশগ্রহণ এক কথায় অসম্ভব। যিনি এ চিঠি নিয়ে এসেছিলেন তিনি এ অনুষ্ঠান ও স্বয়ং আবেদ ভাই কর্তৃক আমন্ত্রিত হওয়ার গুরুত্ব বোঝাতে বিভিন্ন কথা বলছিলেন। তখন চোখের গুরুত্ব বোঝাতে স্যার তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গী অনুযায়ী পুরনো ঢাকার একটি জোকস বলে আমাদের বেদম হাসালেন।

জোকসটি এরকম: পুরনো ঢাকার এক বাড়িতে রাত্রিবেলা প্রায় সবার অলক্ষ্যে এক চোর ঢুকে বিশাল খাটের তলায় আশ্রয় নিয়েছে। এক পর্যায়ে গৃহকর্তা টের পেয়ে মশারীর স্ট্যান্ড খুলে চোরকে খোঁচাতে শুরু করলেন। তখন চোর বলছে, “খোঁচান কেন, খোঁচান কেন, চোখে ভি লাগবার পারে। চোখ লইয়া ঢং নিহি!”




রিয়াজ হক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া





Share on Facebook               Home Page             Published on: 30-Jul-2019

Coming Events: