bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












উল্টো পিঠের সোজা কথা (২)
রিয়াজ হক


“নাপলান, ওসি, সিলেক্টিভ ও এইচ এস সি’র কোচিং”



কোচিং স্কুলের চাষাবাদে রমরমা সিডনি। চাহিদা ও সরবরাহের সূত্র ধরে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে নাপলান, ওসি, সিলেক্টিভ ও এইচ এস সি’র কোচিং। উপমহাদেশ সহ এশিয়ার মাইগ্রান্ট ফ্যামিলির অভিভাবকেরা সন্তানদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন এসব কোচিং সেন্টারে। ত্বর সইছেনা কারোই। অনেকে ইয়ার ওয়ান থেকেই লেগে পড়েছেন সন্তানকে কোচিংএ সমর্পণ করতে। যেন কোনভাবেই সন্তানের নিশ্চিত ভবিষ্যৎকে হাত ফসকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে দিবেন না বলে কঠিন পণ করেছেন; যে করেই হোক সাফল্য তাদের চাইই চাই।

তাহলে প্রশ্ন আসে সিডনি তথা নিউ সাউথ ওয়েলসের পাবলিক এডুকেশন সিস্টেম কি এতোটাই দরিদ্র হয়ে পড়েছে যে অভিভাবকেরা এর বাইরে গাঁটের পয়সা খরচ করে সন্তানদের ঠেলে দিচ্ছেন কোচিং এ! সপ্তাহের পাঁচ দিন স্কুলের রুটিন মেনে ক্লাস, হোম-ওয়ার্ক, নানা এক্টিভিটিজ ও পরীক্ষার পরও সন্ধ্যায় বা বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সপ্তাহ শেষের ছুটির দিনের শনি/রোববারে সন্তানদের নিয়ে অভিভাবকদের ছুটতে হচ্ছে এইসব কোচিং সেন্টারে।

গলদ কোথায়? শিক্ষা ব্যবস্থায়? নাকি আমাদের দীর্ঘ দিনের অভ্যস্ত মন মানসিকতায়?

আমাদের সন্তানদের জীবনকে কি আমরা আমাদের থেকে আলাদা করে দেখছি নাকি আমাদের জীবনেরই বর্ধিত অংশ বলে মনে করছি। আমরা কি কোনভাবেই একের ভিতর দুই নাকি স্বতন্ত্র ব্যক্তি প্রণিধানে আমরা পরতকেই এক একজন আলাদা স্বত্বা! বোধ, চিন্তা ও ধ্যান ধারনায় আমাদের সত্ত্বা কি বহুত্বের ও বৈচিত্র্যের অনুগামী নয়? আমাদের জীবনের সমস্ত সীমাবদ্ধতা, অপূর্ণতা ও ব্যর্থতা কে কি আমরা আমাদের সন্তানদের ভেতর দিয়ে পূর্ণ করতে চাচ্ছি! সে জন্যই কি আমরা নিরন্তর ছুটে চলেছি তাদের জীবনকে সফল করার এক ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টায়!

ভালো কথা যে আমরা আমাদের সন্তানদের সফল দেখতে চাই। সফলতার মাপকাঠি কি?

- বোধ সম্পন্ন মন-মানসিকতা তৈরি নাকি দুর্দান্ত পারফরমেন্স
- জ্ঞান সঞ্চয় নাকি উচ্চ গ্রেডে উত্তীর্ণ হওয়া
- মানুষ ও সমাজের সেবা নাকি অর্থ বিত্তের প্রাচুর্য
- নিজের প্যাশন এর পেছনে শ্রম ও মেধার বিনিয়োগ নাকি নিশ্চিত জীবনের ডাকে অর্থকরী পেশার পেছনে ছোঁটা

কান পাতলে মাঝে মাঝেই আমাদের সন্তানদের ব্যাপারে নিচের অভিযোগগুলো শুনতে পাই।

এক. বাবা-মা আত্মীয়-স্বজন নয়, ওরা আছে ওদের বন্ধুদের নিয়ে। বন্ধুরাই ওদের সব। ওদের কথাই ওরা শুনবে, ওদের মতেই ওরা চলবে; আমাদের নয়।

দুই. আমাদের বাবা মা’র জন্য আমাদের যে আবেগ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মনোযোগ সেটা ওদের মধ্যে দেখতে পাই না।

তিন. ঘরের একটা কাজও ওদের দিয়ে হবে না।

চার. ঘরের নয়, বাইরের খাবারেই ওদের যত আনন্দ। এত বাইরে খেতে পারেরে বাবা!

এসব দ্বারা প্রমাণিত হয় কি? প্রতিদিনের জীবন যাপনের জন্য মৌলিক যে বিষয়গুলোতে প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন তার যোগান দিতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। নিজের বিছানা ঠিক করা, বই-খাতা, কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রাখা, কাপড় ধোওয়া ও ইস্ত্রি করা, নিজের কক্ষ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, সাধারণ খাবার তৈরি ও পরিবেশন, বাসনকোসন পরিষ্কার, তথা সবাই মিলে গার্হস্থ কাজ ভাগ করে নেওয়া কোনকিছুই আমরা তাদের ছেলেবেলা থেকে শেখাইনি। ফলে এখন একটু বড় হয়ে এসব না করা বা না করতে চাওয়ার দায়ভার চাপিয়ে দিচ্ছি ওদের উপর আর তা নিয়ে করছি হা-হুতাশ।

একটা গাছকে সোজা হয়ে, ডালপালা ছাড়িয়ে প্রকৃতিতে বেড়ে ওঠার জন্য যেমন যত্ন ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন মানুষের বেলাতেও তেমনি। শৈশব কৈশোরে সে আরো নাজুক। তাকে দেখাতে ও শেখাতে হবে তবেই না সেভাবে তার মন ও শরীর গড়ে উঠবে। আমরা কি সে চেষ্টা নিচ্ছি। আমাদের চেষ্টা কি সামগ্রিক নাকি আমরা কেবল ক্রমাগত দৌড়চ্ছি একাডেমিক ফলাফলের ঊর্ধ্ব চাপের কাছে আত্মাহুতি দিতে!

প্রসঙ্গক্রমে, আমার স্কুল জীবনের এক শিক্ষকের কথা বলে শেষ করছি। ক্লাস সেভেন এ আমাদের ‘দীনিয়াত’ বলে ইসলামী শিক্ষার একটি বিষয় ছিল। শিক্ষক ছিলেন মহৎ প্রাণ মহিবুল্লাহ স্যার। জীবনের বা কোন কাজের উদ্দেশ্যের কথা বলতে যেয়ে স্যার বলেছিলেন, ধরা যাক আমি একটি বাড়ি বানাচ্ছি, দক্ষিণ দিকে একটি জানালা রাখছি। ইচ্ছা দক্ষিণের বাতাসের প্রবল প্রবাহ কে প্রাণ ভরে উপভোগ করা। তা না করে যদি আমার উদ্দেশ্যটা হত দক্ষিণের মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি শোনা তাহলেও তো বাতাস পাওয়াটা বন্ধ হত না, বরং এর জন্য প্রচুর সওয়াব পাওয়া যেত। অর্থাৎ উদ্দেশ্যই হচ্ছে জীবনের মুখ্য, অন্য সব কান টানলে মাথা আসার মতই।




রিয়াজ হক, সিডনি, অস্ট্রেলিয়া




Share on Facebook               Home Page             Published on: 12-Apr-2019

Coming Events: