প্লিজ টেক কেয়ার রিয়াজ হক
টেক কেয়ারের পূর্ব কথাঃ
জীবনের অসংখ্য জিজ্ঞাসা আছে, অথচ সব জিজ্ঞাসার পরিচ্ছন্ন উত্তর নেই। উত্তরের খোঁজেই চলছে, জীবন-পরিক্রমা বা বলা যায় জীবন-অন্বেষা। একবিংশ এই শতাব্দীতে বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতি অনেক জটিল প্রশ্ন ও রহস্যের অবগুণ্ঠন উন্মোচন করলেও এখনও আমরা প্রকৃত জীবন রহস্যের মূল প্রতিপাদ্য থেকে বহু দূরে। এ জীবনের শুরু ও শেষ তাই এখন পর্যন্তও নাম না জানা নিভৃতচারী কোন লেখকের লেখা প্রেম-ভালবাসা, ঘৃণা–দুঃখ, দ্রোহ ও সংগ্রামে আকীর্ণ ঐ বিশাল উপন্যাসের মতই যার প্রথম ও শেষের কতকগুলো পৃষ্ঠা নিরুদ্দেশ। ঐ পৃষ্ঠাগুলো খুঁজে পেতেই অযুত বর্ষ ধরে চলমান মানব সাধনা।
এ সাধনার সরল স্বীকৃতি দিয়েও বলা যায়, একবিংশ শতাব্দীর এই যুগে মানুষ দিন দিন পরস্পর এক সূত্রে গ্রথিত হওয়ার চেয়ে বিচ্ছিন্নই হচ্ছে বেশী। এ বিচ্ছিন্নতা বর্তমানে ব্যক্তি (অনুকেন্দ্রিক পরিবার ও আধুনিক সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের ব্যাপক হার), সমাজ (ধর্ম ও রাজনীতির প্রশ্ন-হীন আনুগত্যে পরস্পর বিভক্ত) ও রাষ্ট্রে (রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন থেকে হুতু-তুতসি নিধন, ব্রিটেনের ইউরোপ থেকে বেড়িয়ে যাওয়া সহ আমেরিকায় ট্রাম্পের রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন) প্রকটভাবে দৃশ্যমান। জীবনাচরণে একক মনোভঙ্গি, স্বকীয়তা বা নির্মোহ স্বাতন্ত্র্যবোধ জীবনকে করেছে ব্যাপকভাবে অন্তর্মুখী ও বেপরোয়া-ভাবে স্বাধীন। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে যা হওয়ার কথা ছিল সমষ্টির লড়াই, তা হয়ে পড়েছে মাত্র এক ব্যক্তির সংগ্রাম।
ঠিক এমনি এক সংগ্রামেরই বাস্তব চিত্রায়ন bangla-sydney.com এর সৌজন্যে দেখা " Take Care" নামের বাংলা ছবিটির।
টেক কেয়ারঃ
ছবির গল্প অনেকটা ঘটনার ধারা বর্ণনার মতই গ্রথিত। ফলে বুঝতে অসুবিধা হয়না পরিচালক (না কি ‘পরিচালিকা’) কি নিয়ে কথা বলছেন (ব্রেস্ট ক্যান্সার) , কাকে উদ্দেশ্য করে বলছেন (বিশেষত নারী ও সমাজের বয়স্ক মানুষদের) ও কি বোঝাতে চাচ্ছেন (শরীরের যত্ন ও অসুখে লড়াইয়ের অদম্য মানসিকতা) । ‘তিস্তা’ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব বা মডেল। আধুনিক তরুণী। ঘটনার ধারাবাহিকতায় বোঝা গেল যে সে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত। এও বোঝা গেল যে এ রোগেই তার মায়েরও মৃত্যু ঘটেছে তার ছোট বেলায়।
এ রোগকে জয় করতে তার যুদ্ধ তার নিজের মানসিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে, প্রচার বাণিজ্যে আক্রান্ত হুজুগে সমাজের অতি আগ্রহের বিরুদ্ধে এমনকি ছেলে বন্ধুর নির্বিকার শারীরিক সম্পর্কের প্রবল ইচ্ছের বিরুদ্ধেও। এ সমাজের গঠন চরিত্রের কারণেই এ যুদ্ধটা অনেকটা তার একার। তবুও হতাশা, দুঃখ ও বিপর্যয়ে মানুষ খোঁজে অন্য মানুষের অভয়বাণীর, তার সাহায্যের হাত। এক্ষেত্রে পরিচালক এগিয়ে দেন ক্যান্সার স্পেশিয়ালিস্ট (অঙ্কলজিস্ট) স্বনামখ্যাত ডাক্তার পিল্লাইকে। যার একটি কথা "Take Care" অভয়বাণীর মত তিস্তার শ্রবণেন্দ্রিয় ও হৃদয়কে ভয়হীন সাহসী জীবনের অমেয় বার্তা দিয়ে যায়। সে মুহূর্তে তিস্তা তার সংগ্রাম ও যুদ্ধে আর একা থাকে না, হয়ে যায় সমাজেরই অংশ। এ বার্তাটি পরিচালক বেশ ভালোভাবেই চলচ্চিত্র দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছেন সন্দেহ নেই।
ছবির চিত্রনাট্য অনেকটা খন্ডচিত্রের আদলে আগ-পিছের শর্টে জোড়া। ওগুলোকে এক করে নিয়ে তবে ঘটনার মালা গাঁথতে হয়। শিল্প হিসেবে এর সার্থকতার পেছনে না যাওয়াই ভাল। শিল্পিত সৌন্দর্যের বিভায় একটি চলচ্চিত্রকে দেখতে গেলে ‘Take Care’ এর প্রতি অবিচার করা হবে। একমাত্র কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘তিস্তা’ র সঙ্গে তিস্তা নদীর সমিল (জলমগ্ন-জলহীন, স্রোতস্বিনী-স্রোতহীন) ছাড়া আর কোন শর্ট দেখতে পাইনি যা থেকে সমান্তরাল দ্বিতীয় চিন্তার উদ্ভব ঘটতে পারে। অন্যদিকে পরিচালকের ইচ্ছেও বোধহয় তা ছিল না।
পরিচালক একটি সোজাসাপ্টা মেসেজ দিতে চেয়েছিলেন এবং তিনি তা অকুণ্ঠচিত্তে বলিষ্ঠ ভাবেই দিতে পেরেছেন, আর তা হল "হে নারী, Love yourself first and take care of your health" . এতে তিনি পুরোপুরি সার্থক।
‘Take Care’ এর উত্তর কথাঃ
আমার প্রশ্ন ছবির উদ্দেশ্যের ব্যাপকতা ও এর প্রয়োগ নিয়ে। আমার ধারনা, Rouse Hill এর Reading Cinema য় উপস্থিত কম বেশী সব দর্শকেরাই ‘Breast Cancer’ সম্পর্কে জানেন ও মোটামুটিভাবে সচেতন। কিন্তু যারা জানেন না, সেই অগণিত, অশিক্ষিত, নিরক্ষর, জীবনাচরণে পশাদ্গামী (আমি বাংলাদেশের একজন তিন সন্তানের মা, পর্দানশীন মহিলার কথা জানি যার ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার পরও (অনুমিত) ধর্ম ও লোকলজ্জার ভয়ে কখনই ডাক্তারের শরণাপন্ন হননি। কেবল স্বামীর এনে দেয়া হোমিওপ্যাথি ওষুধ খেতে খেতে জীবনের সমাপ্তি টেনেছেন) মহিলাদের সহ অন্য মানুষদের জানানোর উপায় কি? তাদেরকে কে বলবেন, "Please, take care."
রিয়াজ হক, সিডনী
|