bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



আশাবাদী সায়ীদ স্যার ও সিডনীর স্বচ্ছ নীলাকাশ
রিয়াজ হক

(২৫ শে জুলাই স্যারের ৭৭তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা সহ)



২০১৫ এর October এর এক সন্ধ্যায় শ্রীমন্ত দা ফোন দিয়ে বললেন, “সায়ীদ স্যার আসছেন, জানেন? আমি বললাম, “হাঁ, স্যার আমাকে ফোন দিয়েছিলেন, কথা হয়েছে”।

শ্রীমন্ত দা “আনন্দধারা” নামক একটি সংগঠনের অধিকর্তা ও অভিভাবক। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি বাংলা সাহিত্যের অনেক প্রতিথযশা লেখকদের সিডনীতে নিয়ে এসেছেন। সুনীল, শীর্ষেন্দু, সমরেশ মজুমদার সহ নাম করা যায় এমন অনেকের।

গত ২০১৪ এর এপ্রিলে তিনি বাংলাদেশ থেকে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার কে নিয়ে আসেন। অনুষ্ঠানটির নাম ছিল “বই সন্ধ্যা”। উদ্দেশ্য, কথা ও গল্পের মাধ্যমে লেখক-পাঠকের দৃশ্যমান আড়াল দূর করে একধরনের আত্মিক যোগাযোগ ঘটিয়ে দেয়া। এবং এতে তিনি ও তার অনুষ্ঠান বহুলাংশেই সার্থক।

সেই সময় দীর্ঘ তেইশ বছর পর স্যারের সঙ্গে আমার দেখা। সত্তুর এর দশকের মাঝামাঝি ঢাকা কলেজে আমি তার ছাত্রই কেবল ছিলাম না, বিশ্ব-সাহিত্য কেন্দ্রের জন্মলগ্ন থেকে আরও কয়েকজনের মত ছিলাম তার পাশাপাশি।

সেবার স্যারকে বলেছিলাম, পরবর্তীতে ভাবীকে সঙ্গে করে আবার আসবেন। স্যার বললেন, “তোমার ভাবীর তো কোমরের অবস্থা ভাল নয়, সে কি পারবে”?

পারতে এবার হলই, যেহেতু স্যারের দু’কন্যার ছোটটি তখন Melbourne এ অবস্থান করছিল। ও এসেছে Masters করার জন্য, course শেষের পথে, সুতরাং এটা একটা বড় সুযোগ, রথ দেখা ও কলা বেচা। মেয়ে নাতনীদের দেখে যাওয়ার পাশাপাশি Australia বেড়িয়ে যাওয়া।

শ্রীমন্ত দা কিছুটা দম নিয়ে বললেন, “একটু অসুবিধায় পড়ে গেছি”। আমি বললাম, “কি”? উনি বললেন, “অসুবিধার ব্যাপারটি হচ্ছে, স্যার আসার পরপরই আমি কলকাতা চলে যাচ্ছি, এখন বলেন তো উপায়”? আমি বললাম, “উপায় আবার কি, স্যার আমার বাসায়ই থাকবেন, আমিই স্যার এর Take Care করব”। যদিও আমার বাসাটি স্যার এর মত বিশাল ব্যক্তিত্বের জন্য নিতান্তই সাধারণ মানের ও ক্ষুদ্র।

স্যারকে তৎক্ষণাৎ ফোন করে বললাম, “স্যার, জুয়েল বলছি সিডনী থেকে, আপনি এবার এসে আমার বাসায়ই থাকছেন”। স্যার বললেন, “জুয়েল, একটা জিনিষ নিশ্চিত কর, কেউ যেন না জানে আমি Sydney আসছি। আমি কিছু লেখার পরিকল্পনা নিয়ে আসছি; জনসংখ্যা ঘিরে থাকলে তো লিখতে পারব না”। আমি নিশ্চিত করে জানি এটা কোনদিনও হবে না। কেউ না কেউ কোন না কোন ভাবে জেনে যাবেই, আর মানুষ পেলে স্যার এর লেখাও priority list এ দুই নম্বরে চলে যাবে। মানুষকে কাছে টানার ও মানুষের গল্প বলার অপ্রতিরোধ্য জাদুকরের নাম আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ।

২৬ শে October সন্ধ্যায় স্যার এসে সিডনীতে নামলেন। Airport এ আমরা, আমি, শ্রীমন্ত দা ও জিয়া ভাই যথারীতি হাজির। স্যারের দীর্ঘ ঋজু দেহ trolley ঠেলে যখন Departure Lounge দিয়ে বের হয়ে আসছিল তখন ভাবী স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন, “চিনতে পেরেছি”।

“কে, কাকে চিনতে পেরেছে”?

স্যার হেসে বললেন, ‘আরে তোমার কথা বারবার বলেছি যে জুয়েল হচ্ছে লোদীর বন্ধু, ওকে সেই ৭৫/৭৬ সাল থেকে দেখে এসেছ, কিন্তু কিছুতেই তোমার মুখটা মনে করতে পারছিল না, তবে এবার দেখে ঠিকই চিনতে পেরেছে”। মনে হল ভাবী অনেক দুশিন্তার সাগর পাড়ি দিয়ে যেন হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলেন। পরে জেনেছিলাম, ‘জুয়েল’ নামক আবছায়া, কল্পনার আধা জানা, আধা চেনা ব্যক্তির বাসায় কিভাবে পাঁচ পাঁচটা দিন কাটাবেন এ ভেবে ভাবীর চিত্ত বিকল হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আর ঐ যে স্যার বললেন ‘লোদীর বন্ধু’, সে আরেক দীর্ঘ ইতিহাস। যে ইতিহাস এখনও চলমান। আর ইতিহাসের সে গল্পের জন্য চাই অফুরন্ত সময় ও অনন্য আয়োজন।

যাক, মহিলাদের যা হয় আর কি, কি এক অলৌকিক মন-রসায়নের পারস্পরিক ক্রিয়ায় অল্প সময়েই অন্তরঙ্গ হয়ে যায় একজন আরেকজনের; যেমন হয়ে গেল ভাবী ও আমার স্ত্রী। মনে হল এরা বহুকাল ধরে একজন আরেকজনকে চেনেন, জানেন ও বোঝেন।

Airport থেকে আসার পথে স্যার একটার পর একটা গল্প বলে যাচ্ছিলেন। উত্তেজনার আধিক্যে স্যারের গল্পের সঙ্গে তাল দিতে গিয়ে আমি বারবার পথ হারিয়ে ফেলছিলাম। যদিও GPS follow করেই আসছিলাম, তথাপি ঘুরতে হচ্ছিল। স্যার বুঝতে পেরে বললেন, ‘কি হে চালক, তুমি কি পথ হারাইয়াছ”? আমি কিছুটা লজ্জিত হয়ে বললাম, “এই আর কি”। স্যার আমাকে অভয় দিয়ে বললেন, “পথই যদি না হারাবে, তবে পথ চলায় আনন্দ কোথায়”? এ কথাটা বলেই স্যার তাঁর USA ভ্রমণের সময়ের এক অপ্রত্যাশিত ঘটনার কথা বলতে শুরু করলেন। সেখানে আমার মতই এক ছাত্র স্যারকে সহ আরও চারজনকে নিয়ে রাতের শহর দেখতে বেড়িয়েছে। Driving seat এ ওঠার পর থেকেই সে কাউকে কোন সুযোগ না দিয়ে বিরতিহীন কথা বলে যাচ্ছিল ; কি করে সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এলো, কত সংগ্রামের পর আজ সে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। এ শহরটা যে আমেরিকার এক প্রসিদ্ধ শহর; এর জনসংখ্যা, রাজনীতি, ক্রীড়া, রাস্তা ঘাট, সিনেমা, থিয়েটার, পার্ক প্রভৃতি নিয়ে নানা গল্প করে যাচ্ছিল, সেক্ষেত্রে স্যার ও অন্যরা কেবল শ্রোতা। এমন কি দু’তিনবার সে রাস্তা হারিয়ে একই জায়গা দিয়ে ক্রমাগত ঘুরপাক খাচ্ছিল, কিন্তু কাউকে বুঝতে দিচ্ছিল না। সেজন্য সে খুব তাড়াহুড়াও করছিল। এক পর্যায়ে, ভীষণ আত্মতৃপ্তির সাথে সে বলছিল যে দীর্ঘ চৌদ্দ বছর যাবত সে এই শহরে একনিষ্ঠ ভাবে গাড়ি চালাচ্ছে, এ পর্যন্ত সে কোন Traffic Offence করেনি, পুলিশের খাতায়ও তার কোন নাম নেই। ঠিক এমনি সময় পেছন থেকে একটি unmarked police car তীব্র সাইরেন দিতে দিতে এসে হাজির। এবং ঠিক স্যারদের গাড়িটার পাশে এসেই ইঙ্গিতে গাড়ি সাইড করার কথা বলে। পুলিশের অভিযোগ ৭০ কিলোমিটারের (আমেরিকান ৪৫ এম পি এইচ) রাস্তায় সে প্রায় ৯০ (৫৫ এম পি এইচ) কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিল। যথারীতি তাকে হাত পেতে ফাইন এর টিকেট নিতে হোলো। এরপর সেখান থেকে বাসায় যাওয়া পর্যন্ত সে ছিল সংকুচিত, বাধ্য স্কুল ছাত্রের মতই নীরব শ্রোতা আর এখন থেকে বক্তা শুধু স্যার সহ ঐ চারজনই ।

স্যার এসেছিলেন October এর ২৬ তারিখ। তিনি আসার আগে থেকেই তিন-চার দিন আবহাওয়া ছিল বেজায় প্রতিকুল। কখনো গুমোট, কখনো মেঘলা, কখনো থেকে থেকে বৃষ্টি। আশ্চর্য বিষয় হল যে স্যার যে পাঁচদিন সিডনীতে ছিলেন আবহাওয়া ছিল অনেক সহনীয়। রৌদ্রস্নাত। আকাশ জুড়ে ছিল নীল আর নীল। স্যারকে বলতেই বললেন, “সিডনীর আকাশ বাতাসও বুঝে গেছে যে একজন আশাবাদী মানুষ সুদূর ঢাকা থেকে সিডনী এসেছে, কাজেই আবহাওয়া ভাল না হয়ে উপায় নেই”।

স্যারের সঙ্গে একদিন কাটল Blue Mountains এ। নিউ সাউথ ওয়েলস এর অনিন্দ্য সুন্দর একটি পর্যটন স্থল। এটি সিডনীর কেন্দ্র থেকে ৭৫ কিলোমিটার দূরে। আমরা যখন সেখানে যেয়ে পৌঁছলাম তখন প্রায় মধ্যাহ্ন। হালকা সোনালী রোদ হেসে বেড়াচ্ছে দূরবর্তী পাহাড়ের গায়। আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা থেকে পাহাড়ের মধ্যবর্তী মাইল-ব্যাপী শূন্যতার ভেতর খেলে যাওয়া বাতাসে কেমন যেন গুন গুন প্রজাপতি সুর। মনে হচ্ছে, আধো ঘুম আধো জাগরণে মায়াময় রূপকথার এক পরীর দেশে আমরা। স্যার বললেন, “এই বিশাল শূন্যতাই এই জায়গার বৈশিষ্ট্য – যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় জীবন শেষে জীবনের বিশাল শূন্যতার কথাই”।

আপনি সিডনীতে এসেছেন অথচ অপেরা হাউস দেখতে যাননি, এ তো হতে পারে না ! আমরা চারজন, স্যার, ভাবি, আমি ও আমার স্ত্রী শানু সহ ট্রেনে করে গেলাম, সমুদ্রে পাখা মেলা রাজহাঁসের মত দাঁড়িয়ে থাকা অপেরা হাউস দেখতে। গত দশ-বার বছরে বহুবার আমি অপেরা হাউসে এসেছি, কিন্তু স্যারের সঙ্গে এবার এসে, এর দিকে তাকিয়ে আমার উপলব্ধি ও অনুভূতিতে যুক্ত হল সম্পূর্ণ নতুন মাত্রা। অপেরা হাউস মানে এর হৃদয় খোলা উন্মুক্ত উঠোন (Terraced Platform ), মৌন পথিকের পথ (Pedestrian Concourse ) সহ এর ছাঁদ যা কতকগুলো পরস্পর সংযুক্ত Vaulted Shell. এই Shell গুলোর দিকে তাকিয়ে আমার মনে পড়ে গেল বেত ফলের কথা। ছাঁদের নকশাটা যেন বেত ফলের নকশা থেকে ধার করা। স্যারকে বলতেই স্যার বললেন, “হুম”। স্যার এমন ভাবে চারদিক ঘুরে ফিরে অপেরা হাউস দেখতে লাগলেন যেন মনে হোল মায়াবী রহস্যময় কোন নারীর অন্তরের কুঠুরিতে ঢোকার পথ খুঁজছেন।

স্যারের আলাপচারিতাকে সবসময় একটি বা দুটি বাক্যে তুলে আনা যায়না। এটা অনেকটা প্রতিধ্বনির মত, অনুরণন তুলে বিস্তৃত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। স্যার যখন একান্তে কথা বলেন, আমার মনে হয় অযুত জলপ্রপাতের নিঃসীম ধারা কি এক মধুর ছন্দে নেমে যাচ্ছে তার অন্তিম গন্তব্যের দিকে। স্যার যখন গল্প বলেন, সে গল্প আকাশ জুড়ে ঝাঁক ঝাঁক বিহঙ্গের মৃদু কলরবের মত ভাসতে থাকে চোখ ও হৃদয় জুড়ে।

সাধারণ কথা ও ঘটনাকে অসাধারণ করে বলার এক অস্বাভাবিক ক্ষমতার অধিকারী স্যার।

স্যারের সঙ্গে আমার পাঁচ-পাঁচটা দিন ছিল যেন স্বপ্নের মতন। জীবনের সবকিছুতেই আনন্দ নেয়া ও পাওয়াকেই তিনি করেছেন জীবনের মধ্যমণি। স্যার একজন বড় মাপের মানুষ; এ মানুষের দৈর্ঘ দীর্ঘতম, প্রস্থ প্রান্তর-হীন, উচ্চতা উদয়গিরি সম। স্যারের তুলনা কেবল স্যার।



পাদটীকা: একদিন গল্প প্রসঙ্গে স্যারকে বলছিলাম যে সিডনীতে আসার প্রথম দিন থেকে এযাবৎ কাল পর্যন্ত আমার প্রতিদিনের জমা-খরচ লেখা আছে। স্যার শুনে একটু চুপ করে থেকে বললেন, “প্রতিভাটাকে(!) লেখার কাজে লাগাও”।



রিয়াজ হক, সিডনী, পহেলা জুলাই, ২০১৬




Share on Facebook               Home Page             Published on: 7-Aug-2016

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far