bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












"মিঠে আর কটু মিলে, মিছে আর সত্যি,
ঠোকাঠুকি ক'রে হয় রস-উৎপত্তি।
মিষ্ট-কটুর মাঝে কোনটা যে মিথ্যে
সে কথাটা চাপা থাক কবির সাহিত্যে"
রবীন্দ্রনাথের ‘আধুনিকা’ কবিতাংশের উপরের এই বানীকে সামনে রেখে কথোপকথনের শুরু



আগের পর্ব পরের পর্ব



কথোপকথন – (৯)
রিয়াজ হক



আজ শনিবার। লেবার ডে’র লং উইক এন্ডের শুরু। তিন দিনের ছুটি। জামির ইচ্ছে ছিল তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সহপাঠী আসাদ ও মুশফিকের ফ্যামিলির সঙ্গে পোর্ট ম্যাক্কুয়ারি থেকে বেড়িয়ে আসা। বড় জোর ছ’ঘণ্টার ড্রাইভ। অক্টোবরের হু হু করা উদ্দাম বাতাস, তরল সোনার মত ঝকঝকে রোদে ভরা আগাম দিনের আভাস ছিল আবহাওয়া বার্তায়। তা ছাড়া মাস ছ’য়েক হল সিডনীর বাইরে কোথাও যাওয়াও হয়নি। কিন্তু রাজী করাতে পারেনি রাহীকে।

জামি অনেক বিচার বিশ্লেষণ করে দেখেছে, রাহীর না যেতে চাওয়ার কারণ সম্ভবত মুশফিকের স্ত্রী শর্মিলী। শর্মিলীকে এখনও কেন জানি পছন্দ করে উঠতে পারেনি রাহী। যদিও মুখ ফুটে কথাটি কখনও বলেনি, তবে তার দেহের ভাসাতেই তা অনেকটা স্পষ্ট বলে মনে হয় জামির।

কি আছে শর্মিলীর মধ্যে? শর্মিলীর চোখে মুখে সারাক্ষণ বিস্ময় ও কৌতুকের হাসি। জীবনের ছোট ছোট বেদনা বা কষ্টের ব্যাপারে যেন জন্মগত ভাবেই উদাসীন সে। তুচ্ছ ঘটনা বা কারণ নিয়ে অকারণ বিস্মিত হওয়ার ও বল্গাহীন হাসির তুফানে চারপাশ প্রকম্পিত করার অদ্ভুত ক্ষমতা তার। হুল্লোড় আর আনন্দের এক্সপ্রেস ট্রেনের এক নম্বর যাত্রী সে। ফলে অনেকের আসরে সেই হয়ে যায় মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। ফলে অন্য অনেকেই এতে অসহায় হয়ে পড়ে। হয়ে পড়ে ম্লান। অপ্রতিভ।

“এই, সকাল বেলায়ই তুমি উদাসী দেবদাস কেন”? জামির মুখের সামনে দু আঙ্গুলে তুড়ি বাজিয়ে কথাটা বলে রাহী।

ভাবনার আবর্ত থেকে চমকে চোখ মেলে তাকায় জামি। কালো আর সবুজে মেশানো চমৎকার সালোয়ার কামিজে, হাল্কা মেক-আপ, শক্ত খোঁপায় বাঁধা চুলে উদ্যমী ও আকর্ষণীয় মনে হচ্ছে রাহীকে।

“আজ আমার ঘর গোছানোর দিন। মানে আমাদের লিভিং রুমটাকে প্রাণবন্ত ও মোহনীয় করে তোলার দিন। তোমার ভাষায় বললাম, কেমন, ঠিক বলিনি”? বলে বিমল হাসি ছড়িয়ে জামিকে উজ্জীবিত করে তুলতে চায় রাহী।

“দেখ, লিভিং রুমের এই ওয়ালে ঐ বড় জানালার আড়াআড়ি একটি মিরর বসাতে চাই; কেন জান?”

“কেন?” প্রশ্ন করে তাকায় জামি, যেন সত্যিই জানতে চায় এর উদ্দেশ্য।

“কারণ, মিররে ঐ জানালার বাইরের দৃশ্য প্রতিফলিত হয়ে ঘরে আরেকটি জানালার ইম্প্রেশন দিবে। তখন এই ছোট্ট লিভিং রুমটাকেও মনে হবে বেশ বড়। আমাদের এই ফুল সাইজ থ্রি সিটার ও টু সিটার সোফার কোনায় একটি ম্যাচিং সাইড টেবিল ও টেবিল ল্যাম্প রাখতে হবে। টু সিটারের পাশে থাকবে তাজা সবুজ কোন প্ল্যান্ট। ঘন সবুজ কোন প্ল্যান্ট ঘরে থাকলে তা চোখকে যেমন আরাম দিবে তেমনি পরিবেশটাকে করবে আন্তরিক ও মনোরম”।

“আমাদের এই পুরনো রংচটা কফি টেবিলটাকে সরিয়ে প্রাচীন আমলের আদলে তৈরি মেহগনি কাঠের একটি এন্টিক টেবিলের খোঁজ করতে হবে। তার উপরে থাকবে নকশি বোনা টেবিল ক্লথ। থাকবে পরসেলিন ক্যান্ডল স্টিকস ও ভিক্টোরিয়ান গ্লাস ভাস। আচ্ছা, খোঁজ করলে কোন এন্টিক শপে কি এগুলো পাওয়া যাবে না”? বলে, এমন ভাবে জামির দিকে তাকায় যেন স্বপ্নের জগত ছেড়ে বাস্তবতায় পা দিল রাহী।

“পাওয়া যাবে না কেন? যাবে। তবে আমার শঙ্কা এর দাম নিয়ে। হয়ত একটি ভিক্টোরিয়ান গ্লাস ভাসের দামই হবে পনের’শ ডলার”।

“বল কি! এত দাম! আজ পর্যন্ত নিজের মন মত কিছুই করতে পারলাম না। সামান্য একটা ঘর সাজানোর জিনিসও যদি কিনতে না পারি তবে কষ্ট করে অস্ট্রেলিয়ায় পড়ে থাকা কেন” বলে, প্রশ্নের উত্তরের জন্য জামির চোখের উপর চোখ রাখে রাহী।

কিছুটা সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে জামি। কথাটা তো সত্যি। তাদের দু’জনের যা আয় তা দিয়ে বেসিক প্রয়োজন মিটে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু সখের? তা তো হচ্ছে না। ওদিকে দেশের বর্ধিত পরিবারের জন্যও রয়েছে বড় অব্লিগেশন।

“আসলে, আমাদের মানে আমার রোজগার বাড়ান দরকার। যে পরিমাণে ড্রাইভ দেওয়া দরকার সে পরিমাণে মনে হয় হচ্ছে না”।

“দেখ, এটা যখন বুঝাই যাচ্ছে তখন নতুন করে পথ পেতে আমাদের কাজে লেগে যেতে হবে। যেভাবে চেষ্টা করলে ভাল উপার্জনের পথ খুলে যায় সে ভাবে চেষ্টা করতে হবে। সে জন্য আমার দিক থেকে সব ধরনের সাহায্য তুমি প্রত্যাশা করতে পার”। বলে, কিছুটা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়ে রাহী।

“থ্যাংক ইউ” বলে, রাহীর দিকে তাকিয়ে থাকে জামি।

পারা না পারার এক নো ম্যান্স ল্যান্ডের ভেতর আটকে পড়ার করুণ অসহায়ত্ব যেন কুঁড়ে কুঁড়ে খেতে থাকে জামিকে।

তারপরও জামি হতোদ্যম নয়। উদ্যমী হওয়ার শক্তিকে নিঃশেষিত হতে না দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে চায় রাহীর সতেজ-কোমল চোখের দু’টি তাঁরায়!





আগের পর্ব $next.bp(reaz-haque-kothopokothon-a)



রিয়াজ হক, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 3-Aug-2017

Coming Events:
*** মেলার তারিখ ১১ মে থেকে পিছিয়ে ১ জুন করা হয়েছে ***



Lakemba Blacktown Money raised so far



Blacktown Money raised so far