bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












"মিঠে আর কটু মিলে, মিছে আর সত্যি,
ঠোকাঠুকি ক'রে হয় রস-উৎপত্তি।
মিষ্ট-কটুর মাঝে কোনটা যে মিথ্যে
সে কথাটা চাপা থাক কবির সাহিত্যে"
রবীন্দ্রনাথের ‘আধুনিকা’ কবিতাংশের উপরের এই বানীকে সামনে রেখে কথোপকথনের শুরু


আগের পর্ব পরের পর্ব



কথোপকথন – (৫)
রিয়াজ হক



"দ্যাখো, আজ যে ভাইয়ের বাসায় যাচ্ছি (দাওয়াতে), তুমি তো জানোই উনি ঘোরতর সরকার পন্থী, কাজেই তুমি সেখানে কোন কথা বলতে যাবে না"। দাঁত দিয়ে সেফটিপিন কামড়ে ধরে, দু’হাত দিয়ে শাড়ির পাড়ের ভাঁজ ঠিক করতে করতে, খানিকটা মগ্ন তন্দ্রার সুরে কথাগুলো বলে রাহী।
• "আমি কি সরকার বিরোধী নাকি"? ভুরু কুঞ্চিত করে, বিস্ময়ের ভাব ফুটিয়ে, সরাসরি রাহীর চোখের দিকে তাকায় জামি।
• "তুমি সরকার বা বিরোধী পক্ষের নও তা জানি। তবে তুমি যখন নিউট্রাল জায়গা থেকে কথা বল, তখন সরকার পক্ষের অনেকেই ভাবতে পারে তুমি বিরোধী পক্ষের লোক। তাই তোমাকে সাবধান করে দিলাম। তুমি তো জান, জামিল ভাবী, মানে নুসরাত আপা, বড়া’পার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। আমাকে অত্যন্ত স্নেহ করেন। কাজেই জামিল ভাইয়ের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে তুমি আজকের সন্ধ্যাটাকে বিপর্যস্ত করে তোল এ আমি চাই না"।

‘নিউট্রাল জায়গা থেকে কথা বলার যুক্তি দাড় করাতে হবে’ এমন ভাব নিয়ে জামি বলে উঠে -

• "আচ্ছা, রাজনৈতিক আদর্শ ও বিশ্বাসে সবাইকে কেন কোন না কোন দলের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে হবে? কেন আমরা পুরোপুরি দলের না হয়ে দেশের পক্ষে যা শুভ ও ন্যায্য, দেশের মানুষের জন্য যা কল্যাণকর তার কথা বলি?

এ প্রশ্নের জবাবে, কিছুটা আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে রাহী বলে -

• "দ্যাখো, আমরা সাধারণ মানুষেরা রাজনীতির অত ঘোরপ্যাঁচ বুঝি না। আজ আমরা রাজনীতিতে যে ভিন্ন স্ট্যান্ড নিচ্ছি তা অনেকটা বংশানুক্রমে, আত্মীয়, বড় ভাই বা বন্ধুর প্রভাবে অথবা বলা যায় নিছক আবেগ-তাড়িত হয়ে। এখানে যুক্তির আশ্রয় যথেষ্ট কম। কোন কোন ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে"।

যেন এখান থেকে একটা কিউ পাওয়া গেল ; এমন ভঙ্গিতে শুরু করে জামি -

• "তুমি ঠিকই বলেছ। আমরা বা আমাদের ক’জন আর রাজনীতির ভেতরের নীতি আদর্শের আদি-অন্ত বুঝে, যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে রাজনীতির মানস গঠনে সক্রিয় হয়েছি। আমাদের অনেক কিছুই তীব্র আবেগের বশে মোহিত হয়ে বা ঘটনা পরম্পরায় আলোড়িত হয়ে নিরুপায় আত্মসমর্পণ করা মাত্র। আমারা যা কিছুর সমর্থন করি, অন্ধভাবেই করি। যা কিছুর বিরোধিতা করি, প্রবল ঘৃণার সাথেই করি। আমরা এর বাইরে মাঝামাঝি কোন পথ কখনোই খতিয়ে দেখি না।

এ পর্যন্ত শুনে, যেন কথা শেষ করে দিতে চায় রাহী -

• "দ্যাখো, এসব তত্ত্বকথার উপরের কথা একটাই। তুমি আজ কোন রাজনৈতিক বিতর্কে যাবে না ; ব্যস"।

যেন কথা এখনও শেষ হয়নি এমন ভঙ্গিতে বলতে থাকে জামি -

• "তাতো বুঝলাম। কিন্তু আমি চুপ থাকলেই কি কথা থেমে থাকবে না কথা বন্ধ হবে। আর এসব বিতর্ক নিয়ে এত ভয় পাও কেন। যে সমাজে প্রশ্ন ও বিতর্ক নেই সে সমাজ তো হাঁজা-মজা পুকুরের মত। বা বলতে পার প্রবাহ ও স্রোতহীন নদীর মত। এগুলোকে চলতে দিতে হবে।

এবার অনেকটা অধৈর্য হয়ে রাহী বলে উঠে -

• "এইতো তোমাকে নিয়ে এক সমস্যা। যুক্তি দিয়ে টেনে একপাশে নিয়ে যাবে। আমি তো দেখেছি, তোমরা যা কর তার নাম বিতর্ক নয়, তার নাম গ্রাম্য ঝগড়া। শেষে হয় মন কষাকষি, মনোমালিন্য ও মুখ-ভার। সোজা কথা, আমি এসব চাই না"। বলে, দৃঢ় ভাবে জামির মুখের দিকে তাকিয়ে তা নিশ্চিত করতে চায় রাহী।

যেন একটা সমাধানে পৌঁছুতেই হবে এমন মনোবাসনা নিয়ে জামি শুরু করে -

• তোমার কথা হয়ত অনেকটাই সত্য। আমার ধারনা, বাঙালি একতরফা তর্ক করতে পছন্দ করে কিন্তু যুক্তিপূর্ণ ‘বিতর্ক’ নয়। বিতর্কে সবাইকে সমান জায়গা দিতে হয়, সবার কথা শুনতে হয়। বিতর্কের মাধ্যমে কোন বিষয়ে নানা দিক থেকে বিচার বিশ্লেষণ হলে তবেই তাতে একটা সমাধানের কাছাকাছি যাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যা হল, বাঙালি নিজের কথা ‘বলিতে ব্যকুল’ কিন্তু কোনভাবেই অন্যের কথা ‘শুনিতে আকুল’ নয়। সে জন্য বাঙ্গালির কথাতে আত্মকথা বেশী, অন্যের কথা কম।
এমনকি অনেক বাঙালি ভদ্রলোক বা ভদ্রমহিলাকে লক্ষ্য করে দেখবে, যেই কেউ একটা গল্প বা ঘটনার কথা বলা শুরু করল, তাকে শেষ করার কোনরকম সুযোগ না দিয়ে, তার কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে শুরু করে দেয় নিজের জীবনের তেমনি কোন গল্প বা ঘটনা।

রাহী শাড়ি পরা শেষ করে বিছানায় বসে জামির মুখের দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলতে থাকে-

• ঠিক আছে। মানলাম তোমার কথা। এমন হচ্ছে, এমন হয়। এসব চাইলেও আমরা রাতারাতি বদলাতে পারব না। এমন কি তুমি হয়ত একই ব্যক্তির একই কাহিনী একইভাবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শুনে থাকবে। এজন্য আমারা একজনের নামই দিয়েছি ‘অটো রিওয়াইন্ড’। কিন্তু তা যাই হোক, আমার শেষ কথা হল তুমি কোন ভাবেই এমন তর্কে জড়াবে না যা অন্যের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে তিক্ত ও বেদনাদায়ক করে তুলে। আবারও বলছি, "আমি মোটেও তা চাই না"। আমি তর্কের বিনিময়ে অশান্তি কিনতে চাই না। আমি চাই শান্তি ও সবার ভালোবাসা।

জামি ভাষাহীন, নীরব চোখ নিয়ে কেবল তাকিয়ে থাকে রাহীর মুখের দিকে। মনে হয়, সে মুখ থেকে যেন মোমের আলোর মত গলে পড়ছে স্বস্তি ও সৌন্দর্যের অম্লান আভা।





আগের পর্ব পরের পর্ব



রিয়াজ হক, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 3-Apr-2017

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far