bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












"মিঠে আর কটু মিলে, মিছে আর সত্যি,
ঠোকাঠুকি ক'রে হয় রস-উৎপত্তি।
মিষ্ট-কটুর মাঝে কোনটা যে মিথ্যে
সে কথাটা চাপা থাক কবির সাহিত্যে"
রবীন্দ্রনাথের ‘আধুনিকা’ কবিতাংশের উপরের এই বানীকে সামনে রেখে কথোপকথনের শুরু


আগের পর্ব পরের পর্ব



কথোপকথন – (৪)
রিয়াজ হক



প্রতি রোববারের সকালে একটি নতুন রান্না ট্রাই করার বাতিক হয়েছে রাহীর। এ বাতিকের লক্ষণ দেখা দিয়েছে মাস খানেক হল। কোন বন্ধু বা ভাবীর প্ররোচনা, অনুপ্রেরণা অথবা ‘নতুন কিছু কর একটা, নতুন কিছু কর, (বাইসাইকেল থেকে না হয় আছাড় খেয়েই পড়)’ জাতীয় কোন মোটিভেশন যে এর পেছনে রয়েছে এ ব্যাপারে শতকরা একশ ভাগ নিশ্চিত জামি।

আজ রাহীর নতুন প্রচেষ্টা হচ্ছে একটি ‘Lemon Drizzle Cake’. এর জন্য গতকাল সকালে Coles, Woolworth, Aldi ঘুরে সে কিনে এনেছে প্রয়োজনীয় সব উপাদান। উপাদানগুলো যে খুব জমকালো ও দুর্লভ তেমন নয়। এই যেমন, Unsalted Butter, Caster Sugar, Eggs, Flour ও Lemon. কিন্তু এজন্য তিন তিনটি সুপার মার্কেট চেইন সপে যেতে হল কেন? কারণ রাহী প্রতিটি জিনিসের মূল্য ও গুণাগুণ পরখ (compare ) করে তবে জিনিস কিনতে আগ্রহী। জামি দুষ্টামি করে এর নাম দিয়েছে ‘Market Exploration & Adventure’.

যাক, এখন সকাল দশটা। রাহী ব্যস্ত উপাদানের সঠিক পরিমাণ ও মাত্রা নিয়ে। কিচেন স্কেলে সে পরিমাপ করছে তার প্রয়োজনের ২২৫ গ্রাম বাটার, সমপরিমাণের ক্যাশটার সুগার ও ময়দার। সঙ্গে চারটি ডিম ও মিহি গ্রেট করা লেমন-জেস্ট।

এমন সময় জামির প্রশ্ন;

• রাহী, তুমি কি নাদিয়া হুসেইন এর কথা শুনেছ?

রাহী কিচেন স্কেল ও তার উপাদানের প্রতি সম্পূর্ণ মনোযোগ রেখেও মুখে মৃদু হাসি ফুটিয়ে জবাব দেয়;

• হ্যাঁ, Face Book এ দেখেছিলাম। সে তো ২০১৫ এর “winner of the Great British Bake-Off”। আচ্ছা, সে নাকি কোন ইন্টার্ভিউ এ বলেছে আমাদের বাঙ্গালী কালচারে টেবিল-চেয়ারে ডিনার খাওয়ার প্রচলন নেই। আমাদের খাবারের শেষে ডেসার্ট বলে কিছু নেই। আমাদের রান্নার উপকরণে চিস বলে কোণ বস্তু নেই। এই নিয়ে সবাই মিলে তাকে গালাগাল দিচ্ছিল। বলছে, বাঙ্গালী কালচার সম্পর্কে সে সম্পূর্ণ অজ্ঞ ও বিভ্রান্ত। বলছে সে বাংলাদেশের কেউ না।

এ পর্যন্ত শুনে, জামি সোফার আরামে হেলে পড়া ঊর্ধ্বাঙ্গকে সটান সোজা করে, উত্তেজিত হয়ে বলতে শুরু করে;

• রাখো তোমার বাংলাদেশ ও বাঙ্গালীদের কথা। এত আবেগপ্রবণ ও যুক্তিহীন প্রজাতি এই বিশ্বে দ্বিতীয়টি আছে বলে মনে হয়না। কোন ইস্যু পেলেই হল। চিলে কান নিয়েছে বলে কানের দিকে না তাকিয়ে চিলের পিছনে দৌড়ানো শুরু করে।

রাহী চোখ তুলে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে;

• মানে?

• মানে, আমার মতে নাদিয়া যা বলেছে সত্যিই বলেছে। মানে, নাদিয়া যা দেখেছে তাই বলেছে। মনে রাখতে হবে নাদিয়ার বয়স এখন একত্রিশ/বত্রিশ। লন্ডনের লুটন শহরে তার জন্ম। সে বড় হয়েছে, লেখা-পড়া করেছে লন্ডনে। সে বাঙালি কালচার বলতে তার বাবা-মা ও কালে-ভদ্রে দেশে বেড়াতে এসে স্বজনদের চাল-চলন, আচার-ব্যবহার যা দেখেছে তাই বলেছে।

আমি আমার মা’র মুখে শুনেছি, পঞ্চাশ/ষাটের দশকে খোদ ঢাকা শহরেই খুব অল্প লোকের বাড়িতেই সেনেটারী ল্যাট্রিন ছিল। তখন অনেকেই মাটিতে বা মেঝেতে মাদুর পেতে খাবার খেত। তথাকথিত ডেসার্ট বলতে ছিল চালের ফিরনী বা পায়েস। আর ছিল, লাউ এর সঙ্গে শুকনো মিষ্টি বড়ই ও গুড় দিয়ে তৈরি একধরনের খাট্টা। এসব তো অস্বীকার করার উপায় নেই। আর বাংলাদেশ বলতে কৃষিজীবী জনগোষ্ঠীর শতকরা আশি/নব্বই ভাগকে বুঝব নাকি অর্থ-সম্পদে বেমানান-ভাবে স্ফীত শতকরা দশ ভাগকে বুঝব? এ প্রশ্ন রেখে রাহীর দিকে চোখ তুলে তাকায় জামি।

রাহী যেন এইমাত্র অনেক কিছু অনুধাবন করতে পেরেছে এমন ভঙ্গিমা নিয়ে বলতে থাকে;

• আরে বাবা, যাই বলনা কেন, এসব সব সত্য হলেও দেশ ও মানুষের কথা চিন্তা করে না বলাই ভাল ছিল। এখন কি হল, সবাই তাকে বাংলাদেশী মানতেও অস্বীকার করছে।

যেন এর একটা সমাধানে পৌছাতেই হবে, এমন দৃঢ় ভঙ্গিতে জামির জবাব;

• দেখ, বড় স্বপ্ন ও উদ্যমের জন্য বাংলাদেশকে নাদিয়ার মত মানুষের প্রয়োজন। অন্যদিকে ভাল করে চিন্তা করে দেখলে নাদিয়ার কিন্তু বাংলাদেশকে দরকার নেই। কারণ, ওর জন্ম ব্রিটেনে। ওর কৃতিত্ব ব্রিটেনে। আমি একে বিশাল কৃতিত্বই বলব।



২০১৫ এর ব্রিটেনের সাড়া জাগানো এই টিভি প্রোগ্রাম “গ্রেট ব্রিটিশ বেক-অফ” এর ষষ্ট প্রতিযোগিতায় সে বিজয়ী হয়েছে। প্রায় দেড় কোটি ব্রিটেনবাসী এই প্রতিযোগিতা প্রত্যক্ষ করেছে। তিন সন্তানের অতি সাধারণ ঘরের একজন গৃহিণী হয়ে, যে কালচারে কেক নামক ধারনারই আনাগোনা কম সেখানে “Lemon Drizzle Big Fat British Wedding Cake” তৈরি করে সে যে তমাল রয় ও ইয়ান কামিং এর মত দুর্দান্ত প্রতিযোগীদের পেছনে ফেলে বিজয়ী হয়েছে এটাই অসাধারণ। কোথায় আমরা এমন ব্যক্তিদের নমস্য ভাববো, তা না, তাদের নিয়ে সমালোচনা। এ জাতি নিজে ছাড়া অপরের কোন কৃতিত্বকেই মূল্য দিতে চায়না।

এতক্ষণে ওজন নেয়া শেষ করে রাহী তার কেকের দ্বিতীয় পর্ব ‘সব উপাদানের মিশ্রণ’ এ প্রবেশ করেছে। সেটা করতে করতে সরাসরি জামির চোখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায়, সেখানে ফুটে উঠেছে অবিশ্বাস ও বেদনার চিহ্ন।
রাহী বলে;

• আচ্ছা, তুমি নিজেই বল যে আমরা জাতি হিসেবে অসম্ভব আবেগপ্রবণ বলে যুক্তি দিয়ে স্বচ্ছভাবে কোন কিছুর বিচার করতে পারিনা। আর সেই তোমাকেই দেখছি, দেশের ব্যাপারে সবকিছুতেই তুমি বড় ইমোশনাল হয়ে যাও। কেন সবকিছু নিজের উপর নাও?

জামি নিস্তেজ হয়ে চুপ করে বসে থাকে। হঠাৎ আনমনে বলে উঠে, “আমিও তো বাঙালি, এ ছকের বাইরে আমিও নই”।




আগের পর্ব পরের পর্ব



রিয়াজ হক, সিডনি




Share on Facebook               Home Page             Published on: 13-Mar-2017

Coming Events:
বৃষ্টির সম্ভাবনার কারণে মেলার তারিখ ১ দিন পিছিয়ে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (রবিবার) করা হয়েছে......




A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far