bangla-sydney
bangla-sydney.com
News and views of Bangladeshi community in Australia












এই লিংক থেকে SolaimanLipi ডাউনলোড করে নিন



বেশী কথা, না বাজে কথা
রিয়াজ হক



পচাত্তুরের মাঝামাঝি যখন কলেজে পড়ি তখন হাতের কাছে আত্মীয়া বড় বোনের ‘বি এ’ ক্লাসের একটি প্রবন্ধের বই পেয়েছিলাম। নাম ‘বিচিত্র প্রবন্ধ’, লেখক, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাতে একটি প্রবন্ধ আছে, ‘বাজে কথা’। এখনও তার একটি লাইন মনে আছে, "যেমন বাজে খরচ, তেমন বাজে কথা। বাজে কথাতেই মানুষ আপনাকে ধরা দেয়"।

"এটা একটা বাজে কথা"।

"রাখেন তো এইসব বাজে কথা"।

"এটা বেশী বলছেন ভাই"।

"এটা খুব বেশী হয়ে গেল"।

অলস গল্পে ও অহেতুক আড্ডায়, কথায় কথায় আমরা উপরের কথাগুলো এভাবেই বলি।

শ্যালিকার মেয়ের জন্মদিন।

উপলক্ষ হিসেবে চিত্তের অধীরতা স্বীকার্য; শ্যালিকা ও তার সামষ্টিক পরিবারের। আমি সেখানে ফুলবাগানের চার পাশের সবুজ ঘাসের মত। ফুলের সৌন্দর্য ও উৎকর্ষের জন্যই সবুজ মখমল গালিচার কদর; নয়ত এ কেবলই সবুজ ঘাস, একে মাড়ান যায়!

আমার সঙ্গে শ্যালিকা ও তার পতির বয়সের ব্যবধান পনের প্লাস। ফলে মন-মানসিকতায় ওরা অনেক জমকালো ও উজ্জ্বল; ক্ষেত্র বিশেষে অদ্ভুত রকম সাহসী। ওদের জীবনের বহু প্রশ্ন আছে, কিন্তু নিজ থেকে এর উত্তরের তল বা গভীরতায় যেতে চায় না। এরা শিল্প–সাহিত্য-সমাজতত্ত্বের খোঁজ বা আস্বাদনে মূল পুস্তক নয়, গ্যাজেটে আস্থাশীল – তা যতটুকুই পাওয়া যায়। ওরা সম্পর্কের অফিস-ডেকোরামে বিশ্বাসী তাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বিগলিত নয়। ওরা জীবন রহস্যে বিস্মিত হয় কিন্তু আত্মসমর্পণ করে না। যা চোখে দেখে তাকে প্রধান ভাবে, গৌণ হয়ে যায় চোখের আড়ালের অযাচিত কাব্য। ওদের বয়স চল্লিশের কোঠায়।

এমনি এক দশ-পনের জনের দলের মধ্যে আপনি থাকলে, কথা উঠবে (বেশী কথা বা বাজে কথা), তর্ক হবে, এ একরকম অবধারিত। আর আমার মত ‘না বলে থাকতে না পারা’ উসখুস লোকের সমস্যা আরো বেশী। স্ত্রীর অতি সতর্কবাণীও (‘খবর্দার বেশী বলবে না’ বা ‘অযথা তর্ক করবে না’ ইত্যাদি) ঠিক সময়ে কাজে আসে না। তর্কের সূচনাও অতি বর্ষণের প্লাবনের মতই – শুরু হলেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়; কারো সুবিধা-অসুবিধার বিবেচনা না করেই।

কথা উঠল, প্রবাসে (অস্ট্রেলিয়ায়) আমাদের সন্তানদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে। বেশী বিজ্ঞের মত আমিই সূচনা করেছিলাম। TIMSS (Trends in International Mathematics and Science Studies) এর ২০১৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের ইয়ার ফোর ও এইট এর ছেলে-মেয়েরা বিশ্বমানে অঙ্ক ও বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে আছে। এবং এই পিছিয়ে পড়ার শুরু ১৯৯৫ সাল থেকেই। ১৯৯৫-২০১৫ এর TIMSS study দেখাচ্ছে যে সিঙ্গাপুর, কোরিয়া, হংকং, চাইনিজ তাইপে ও জাপানের ধারাবাহিক অগ্রগতি ঘটছে। এমন কি কানাডা, ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ডও পিছিয়ে নেই। কেবল দুঃখজনক ভাবে পিছিয়ে পড়ছে অস্ট্রেলিয়া। যেখানে ইয়ার ফোর এ অঙ্কের আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সিঙ্গাপুরের পঞ্চাশ ভাগ ছাত্রছাত্রী অবস্থান করছে সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র নয় ভাগ। ঠিক তেমনি ইয়ার এইট এ যেখানে সিঙ্গাপুরের চুয়ান্ন ভাগ ছাত্রছাত্রীর অবস্থান সেখানে অস্ট্রেলিয়ার মাত্র সাত ভাগ। এক্ষেত্রে গড়ে ৫০ টি দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অবস্থান ২৯ তম; কাজাকস্তান, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া ও সার্বিয়ারও নীচে।



এ কথার সূত্রপাত করতেই শুরু হল অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উষ্মা ও ক্ষোভ। যাহোক তথ্যভিত্তিক, গঠনমূলক সমালোচনায় কোন অসুবিধা নেই যদিনা তা ব্যক্তিগত লাভা-লাভকে কেন্দ্র করে বর্ষিত হয়।

শিক্ষার মান বাড়ানোর বিষয়গুলো হচ্ছেঃ
- শিক্ষা সূচি
- শিক্ষা পদ্ধতি
- শিক্ষকের মান
- সমন্বিত শিক্ষা পরিবেশ (পরিবার ও শিক্ষক সমাজের পারস্পরিক সহযোগিতা ও Contribution )

তবে তার চেয়েও বড় কথা, শিক্ষার ভেতরে বোধের চেয়েও বেশী মাত্রায় আনন্দের সঞ্চার করা। এটা করা কঠিন, তবে এটিই হওয়া উচিত শিক্ষার মূল উপজীব্য। আলোচনাকে এ ধারায় না নিয়ে একজন বললেন, "আরে বলবেন না, এ কি শিক্ষা ব্যবস্থা বুঝি না। এমন রিপোর্ট কার্ড জীবনেও দেখি নি; দেখলে পিত্তি জ্বলে যায়। সব ‘Good’, ‘Excellent’, ‘Outstanding’ এ ভরা। বোঝার উপায় নেই, ক্লাসে আমার ছেলে মেয়েটির অবস্থান কোথায়! "

আমি বললাম, "তার অর্থ আপনি রিপোর্ট কার্ডে নম্বর দেখতে চান। যেমন দশে কত। কারণ দেশে জীবনভর আপনি ঐ নম্বর দেখে দেখে অভ্যস্ত। এখানে এর অনুপস্থিতি আপনাকে পীড়া দিচ্ছে"।

উনি বললেন, "আমাকে জানতে হবে, সে অঙ্ক বা বিজ্ঞানে কত পাচ্ছে বা ক্লাসে কোন পজিশনে আছে"।

উনি আরো বললেন, UNSW এর ICAS এর একটি পরীক্ষায় তার ছেলে গোল্ড মেডাল পেয়েছে (এটা আমরা কেউ জানতে চাইনি ) যা তিনি প্রত্যাশা করেননি। কিন্তু উনার দুঃখ ওর বিজ্ঞান ও অঙ্কের অগ্রগতি নিয়ে।

আমি বললাম, প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, "পিতা হিসেবে আমাদের জীবনের সব ব্যর্থতাকে আমারা সন্তানদের দিয়ে পূরণ করতে চাই, তাই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে উঠে পড়ে লাগি"।

উনি বললেন, "আপনার এসব কথা শুনলে, আমার ছেলের জীবনে কিছুই হবে না। ওকে ভাল ও উন্নতি করতে হলে গোড়া থেকে লাগতে হবে, স্কুলের ঘাটতি পোষাতে কোচিং এ দিতে হবে। আর আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদের কথা বললেন, উনি আমার শিক্ষক ছিলেন; আমি ঢাকা কলেজের ছাত্র" (এটাও আমারা জানতে চাইনি)।

যেহেতু আমি গোড়া থেকেই শিশুদের শিশুকাল উপভোগের পক্ষপাতী ও কোচিং এর আপাত – বিরোধী (অন্তত শিক্ষার প্রথম চার/পাঁচ বছর), তাই উনার ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছিল প্রকাশ্য।

স্ত্রীর চোখের বিরক্ত ভাষা ও শ্যালিকা কন্যার কেক কাটার সূচনায় আমাকে থামতে হল। আমি ভাবছিলাম, আসলে উনি কি চান? উনি চান (বোধহয় আমারা সবাইই চাই; এটা অনেকটা ব্রেনে Pre-programmed মনে হয়) যে উনার বা আমাদের সন্তানেরা সবাই ক্লাসে নিদেন পক্ষে প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় হবে। জীবনের সাফল্য যেন সব ঐ খানেই নিহিত।

অবশ্য আমার জিজ্ঞাস করতে ইচ্ছে করেঃ
- আপনার ছেলে বা মেয়েটি কি সামাজিক। কথা বলে, গল্প করে, অন্য মানুষ বা প্রাণীতে আগ্রহ আছে?
- ঘরের কাজে অংশ নেয়?
- ও কি বই পড়ে, গান করে, নাচে, ছবি আঁকে, সেতার বাঁজায়, বাঁশি বা গিটার?
- ও কি কোন একটি বিশেষ খেলায় প্রবল উৎসাহী বা পারদর্শী?
- ও কি জীবনের সব কিছু নিয়ে বিস্মিত হয়, প্রশ্ন করে, জানতে চায়?

তাহলে আমি বলব, ও নম্বর কম পেলেও, অঙ্কে – বিজ্ঞানে সাধারণ হলেও ও অনেক প্রতিভাবান। ওর যত্ন নিন, ওকে ভালবাসুন।

আমাদের সমাজ আমাদেরকে একে অন্যের প্রতিযোগী করে গড়ে তুলেছে। ফলে আমরা সহযোগিতার বদলে শিখেছি অন্যকে পেছনে ফেলে প্রথম হতে। ওরা শিখছে, সবাই সবার হাত ধরে একইভাবে সামনে এগিয়ে যাবার প্রণোদনা। ফলে ওদের প্রয়োজন নেই, শৈশব – কৈশোরেই প্রথম- দ্বিতীয় – তৃতীয় হবার।

মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীর একটি কথা দিয়ে শেষ করতে চাই, "কেউ যদি কুড়ি বছর বয়সে পৃথিবীটাকে যেভাবে দেখেছিল, পঞ্চাশ বছর বয়সেও ঠিক তেমনিভাবে দেখে, তাহলে বলতে হয় সে তার জীবনের ত্রিশটি বছর অপচয় করেছে" (উদ্ধৃতি, সৈয়দ আবুল মকসুদ, প্রথম আলো )।



রিয়াজ হক, সিডনী




Share on Facebook               Home Page             Published on: 27-Dec-2016

Coming Events:



A day full of activities, games and fun.







Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far





Lakemba Blacktown Mascot
Minto Money raised so far



Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far







Blacktown Lakemba Mascot
Minto Money raised so far