খুঁজছি (১)
জামাজোড়া চিঠিপত্র চাকরি বাকরি, গাড়ি বাড়ি পয়সাকড়ি যত্রতত্র খুঁজছি যেন অনাহারী।
পাত্রপাত্রী, বিত্ত বৈভব গয়নাগাটি পরিপাটি হৃদয় জুড়ে এক অনুভব খুঁজছি যেন জীবন মাটি।
হারিয়ে ফেলা রাস্তা ঘাট ঐ যে আমার ছেলেবেলা ‘আশঙ্কাতে বালাই ষাট’ মনে পড়ে রথের মেলা।
গুরু গম্ভীর পণ্ডিত মশায় পড়াশুনায় প্রথম সারি নাক ডাকাতে একটু হাঁসায় পিঠে পড়া বেতের বাড়ি।
বর্ষাকালে আমোদ কত কাঁদা রাস্তায় পিছলে পড়া বন্ধু ছিল শত শত মিলে মিশে জীবন গড়া। কনকচাঁপা, গন্ধরাজ আমের বাগান, কাঁঠাল তলা কঠিন কণ্ঠে পড়ল বাজ ছুটতে হবে সন্ধ্যে বেলা।
ভাসাও নৌকা, দাও পাড়ি চরের দিকের ঐ যে গ্রাম মুক্ত কণ্ঠে জারি সারি কে দেখে আর ডান বাম।
বাবুই পাখীর বাসার ডিম হলুদ পাখী হরিয়াল লাউ পাতা আর সতেজ সিম হেঁটে যাওয়া খেতের আল।
পাটের খড়ির বেড়ার পাশে লাল শাড়িতে হলুদ পাড় দেখব বলে রুদ্ধশ্বাসে মচকে ফেলা পায়ের হাড়।
খুঁজছি আমার কিশোর সাথী খুঁজছি জীবন মাতোয়ারা ‘নেই কিছুতেই’ মাতামাতি ‘সব কিছুতেই' আত্মহারা।
এমনি জীবন হারিয়ে গেছে কঠিন বাঁচার সংগ্রামে সুখের জীবন গেছে পিছে বেঁচে আছি বাঁচার নামে। | | খুঁজছি (২)
হারিয়ে গেলে ঘরের চাবি চশমা, ঘুঙুর, নাকের ফুল বৈশাখেরই মেলায় কেনা অনেক সখের কানের দুল;
জমির দলিল, বংশ-নামা পায়ের খড়ম, হাতের ছড়ি হারিয়ে গেলে ভাঁড়ের ছিকা, রেশমি দড়ি;
পয়সা-কড়ি, গল্পের বই পুরনো কোন প্রেমের চিঠি যা নিয়ে খুব কাড়াকাড়ি ভাই বোন যে পিঠাপিঠি।
কিস্তি টুপি, রূপার তাবিজ ফুল তোলা ঐ সাদা রুমাল চুলের ফিতা, হাতের চুড়ি কাশ্মীরি ঐ গায়ের শাল;
খোঁজ খোঁজ খোঁজ, চারিদিকে খোঁজ খোঁজে হন্যে সব কম্পিত বুক, শুষ্ক মুখ শুনশান সব নীরব।
কেউ খোঁজেনা ছেলেবেলার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির কথা সহজ সরল দুঃখ বোধ ‘মৌন কঠিন নীরবতা’।
কেউ খোঁজেনা দিঘীর জলে আঁকা প্রেমের আলপনা স্বপ্ন-তরীর জ্যোস্নারাতে গন্ধে মাতাল হাসনাহেনা।
বধূর অনেক চোখের জলের দহন-মরণ জীবন ছবি কেউ কি খোঁজে ‘পাখীর গানের প্রভাত রবি’?
কেউ খোঁজে না ভালবাসায় নুইয়ে পড়া মায়ের আঁচল সপ্ত-বর্না রংধনুতে লুকিয়ে থাকা চোখের কাজল।
সবাই খোঁজে এলেবেলে স্বপ্ন-বিহীন বাস্তবতা কে বলে ভাই খুঁজব এসো তোমার আমার জীবন কথা।
|